পাকিস্তানে টিকটক ও নজরদারি নিয়ে শুনানি, ডিজিটাল অধিকার কর্মীরা উদ্বিগ্ন
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৭
পাকিস্তানের হাইকোর্টে জুলাই মাসের দু’টি শুনানিকে দেশটিতে ডিজিটাল অধিকার হ্রাসের আরো একটি লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসলামাবাদে হাইকোর্টে একটি আবেদনে বলা হয়েছে, টেলিকম সংস্থাগুলোকে একটি গণ নজরদারি ব্যবস্থা সংযোগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর পেশাওয়ারে চীনা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক হাইকোর্টকে জানিয়েছে, তারা টেলিকম মন্ত্রণালয়কে ‘ধর্ম অবমাননাকর’ যেকোনো পোষ্ট বা কনটেন্টগুলোকে সরিয়ে ফেলার সুযোগ দেবে। ডিজিটাল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক প্রবক্তারা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন।
বাইটস ফর অল-এর ডিজিটাল অধিকার-কর্মী হারুন বালুচ বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজে গণ-নজরদারির কোনো স্থান নেই।
তিনি বলেন, ‘শারীরিক বা অনলাইন নজরদারির একটি আইনগত যৌক্তিকতা প্রয়োজন। সরকারের অনলাইন নজরদারির প্রয়োজনীয়তার যৌক্তিকতা এবং পরিমাপ করা উচিত।’
সংবাদ ওয়েবসাইট ডন জানিয়েছে, ইসলামাবাদের মামলার বিষয় হচ্ছে নাগরিকদের ওপর নজরদারি, যাদের ফোন কল রেকর্ড করে পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই ঘটনার যারা শিকার, তাদের মধ্যে সাবেক নেতা ইমরান খানের স্ত্রী এবং সাবেক প্রধান বিচারপতির ছেলেও রয়েছেন। তারা দু’জনেই তাদের কল ফাঁস হওয়ার ঘটনাটি নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন।
ক্ষমতাবান গোয়েন্দা সংস্থা
আদালতে জমা দেয়া একটি আবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি টেলিকম সংস্থাগুলোকে নজরদারি সেন্টারে লফুল ইন্টারসেপ্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপনের জন্য ‘অর্থায়ন, আমদানি এবং সংযোগ’ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল নির্ধারিত অ্যাজেন্সির ব্যবহারের জন্য।
পাকিস্তানে ‘অ্যাজেন্সি’ বলতে প্রায়ই দেশটির ক্ষমতাবান গোয়েন্দা সংস্থাকে বোঝানো হয়।
আদালত উল্লেখ করে যে সফটওয়্যারটি ‘যেকোনো সময়ে’ তাদের গ্রাহকদের ২ শতাংশ বা ৪০ লাখ নাগরিকের ওপরে নজরদারি করার মতো ক্ষমতা রাখে।
ইসলামাবাদ-ভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আফতাব আলম বলেন, ‘এই ধরনের নজরদারির মাধ্যমে মানুষ তার গোপনীয়তা হারাবে। এই জিনিস (গণহারে নজরদারি) সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী।’
মেটা কোম্পানির ওভারসাইট বোর্ডের সদস্য নিঘাত দাদ ডনকে বলেন, পাকিস্তানের টেলিকম সংস্থাগুলো ‘তাদের নিজস্ব গ্রাহকদের প্রতি স্বচ্ছ হওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না, যা অবিশ্বাস্য।’
পেশাওয়ারে টিকটক পৃথকভাবে ১ জুলাই আদালতকে জানায় যে তারা পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটিকে তাদের অ্যাপে ঢোকার অধিকার দেবে।
একজন আবেদনকারী, তার ভাষায় ‘ইসলাম-বিরোধী পোস্ট’ প্রকাশ করতে দেয়ায় টিকটককে দেশব্যাপী নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার স্বাধীনতা
ইনস্টাগ্রামের মতো, টিকটক পাকিস্তানের একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন মতামত, বিনোদন এবং বিপণনের জন্য টিকটক ব্যবহার করে থাকে।
ভয়েস অব আমেরিকা পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টির ওপর মন্তব্য করার অনুরোধ জানালে তারা কোনো সাড়া দেয়নি।
ঐতিহ্যবাহী গণমাধ্যম হয় বিধি-নিষেধের মধ্যে আছে, না হয় কোনটা নিয়ে কথা বলা যাবে আর কোনটা নিয়ে যাবে না, সে বিষয়ে নানা কড়াকড়ি মেনে চলতে হয়। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম এর ব্যতিক্রম যাতে স্বাধীনভাবে বা বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করা যায়।
যেসব বিষয় স্পর্শ করা যাবে না, সম্প্রচার সাংবাদিকদের বেলায়ও, সেসব বিষয়ের মধ্যে আছে জাতীয় স্বার্থ বিরুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এমন যেকোনো বিষয়, পাশাপাশি নিখোঁজ ব্যক্তি, সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা, ভিন্নমতাদর্শীদের বাণী এবং পশতুন তাহাফুজ আন্দোলন বা পিটিএম।
সরকারি নিপীড়ন
সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র ২০১৯ সালে সংবাদমাধ্যমকে পিটিএম সম্পর্কিত খবর দেয়া এরিয়ে যেতে বোলার পর বেশিরভাগ স্থানীয় স্টেশনগুলো পিটিএম আন্দোলন এবং তাদের সমাবেশ সম্পর্কে রিপোর্ট করা বন্ধ করে দেয়।
তবে পাকিস্তানে যত বেশি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছেন তত বেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপরে আরো বিধি-নিষেধ আরোপ করতে দেখা গেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া এক্স’র (প্রাক্তন নাম টুইটার) ব্যবহারকারীরা ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর পাকিস্তান টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি এক্সকে নিষিদ্ধ করে দেয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই নিষেধাজ্ঞার কথা ঘোষণা করা হয়নি।
কর্মকর্তারা এপ্রিল মাসে হাইকোর্ট বলেন যে ‘জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখতে, জন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং আমাদের জাতির অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে’ ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।
ভিপিএনের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই প্ল্যাটফর্মটিতে এখনো ঢোকা যায়।
ডিজিটাল অধিকার-কর্মী ফারিহা আজিজ বলেন যে পাকিস্তান প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্মের ওপরে আরো ‘নিয়ন্ত্রণ’ আরোপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের ভুগতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা