উত্তরপ্রদেশে জয় : নেপথ্য কারিগর প্রিয়াঙ্কা!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুন ২০২৪, ১৩:২০
উত্তরপ্রদেশ যে ভারতের রাজনীতির হটস্পট, তা স্বীকার করেন ক্ষমতাসীন বিজেপি কিংবা বিজেপিবিরোধী শিবির। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ল্যাবরেটরি সেই ‘রামরাজ্যে’তেই এবার বিজেপির অপ্রত্যাশিত হার হয়েছে। ভোট গণনা যত এগিয়েছে, লাল-সবুজ পতাকায় সাইকেল চিহ্ন উজ্জ্বল হওয়ার সাথে সাথে ফ্যাকাসে হয়েছে গেরুয়া। অখিলেশের পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে ইন্ডিয়া ব্লকের চিত্তাকর্ষক পারফরম্যান্সে তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ভূমিকাও স্বীকার করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস জোট ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৪৪টিতেই জয়লাভ করেছে।
গঙ্গা তীরের বারানসিসহ পূর্ব ও মধ্য উত্তরপ্রদেশ ঐতিহাসিকভাবে সমাজবাদী রাজনীতি, গান্ধীবাদী রাজনীতি, বামপন্থী রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র থাকলেও সাম্প্রতিক কালে দেখা গেছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি তথা বিজেপি’র জয়-জয়াকার। ২০১৪ সালে বিজেপির ৭১টি আসনে এবং ২০১৯ সালে ৬২টি আসনে জয়লাভ করেছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি যথেষ্ট লড়াইও দিয়েছিল এই রাজ্যে, কিন্তু ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে যোগীরাজ্যে বিজেপি-বিরোধী রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হল।
রাহুল গান্ধী মঙ্গলবারের ফলাফল প্রকাশের পর বলেন, ‘উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী লড়াইতে আমার বোন প্রিয়াঙ্কার একটি বড় ভূমিকা ছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশের মানুষ চমৎকার ভূমিকা নিয়েছেন। ইউপি’র লোকেরা দেশের রাজনীতি এবং সংবিধানের বিপদ বুঝতে পেরেছিলেন, তারা সংবিধানকে রক্ষা করলেন। কংগ্রেস পার্টি এবং ভারত জোটকে সমর্থন করার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত সমালোচনা কম হয়নি। তিনি বিভিন্ন সাক্ষাত্কারে স্পষ্ট করেছেন যে তার প্রার্থী না হওয়া ছিল একটি কৌশলগত বিষয়। একটি একক নির্বাচনী এলাকায় আবদ্ধ না হয়ে, তিনি আমেথি এবং রায়বরেলির মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফোকাস করে রাজ্যজুড়ে ব্যাপকভাবে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই দুটি আসনেই কংগ্রেস জয়লাভ করেছে। আমেথিতে গান্ধী পরিবারের অনুগত কিশোরী লাল শর্মা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে পরাজিত করেছেন। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্র থেকেই রাহুল গান্ধী পরাজিত হয়েছিলেন স্মৃতি ইরানির কাছে।
রাহুল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আরো বলেন, ‘এই নির্বাচন ছিল সংবিধান বাঁচানোর লড়াই। তারা আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাতিল করেছিল, একজন মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে ভরেছিল। বিরোধী দলগুলোকে নানাভাবে আক্রমণ করেছিল বিজেপি সরকার, তখন আমার মনে হয়েছিল, ভারতীয়রা সংবিধানের জন্য একসাথে লড়াই করবে। আজ এটি সত্য প্রমাণিত হলো।’ রাহুল এই সংবাদ সম্মেলন থেকে ৫ তারিখ ইন্ডিয়া জোটের অংশীদারদের সঙ্গে আগামীর কৌশল এবং সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি বৈঠকের কথাও জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ প্রবণতা অনুসারে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ ২৯৫টি আসনে এগিয়ে বা জিতে রয়েছে। অন্যদিকে ইন্ডিয়া ব্লক ২৩১টি আসনে এবং অন্যান্য ১৭টিতে এগিয়ে রয়েছে। এক সংখ্যা গরিষ্ঠতা না পাওয়ায় বিজেপি এখনো সরকার গড়তে পারেনি। তবে যে পক্ষই সরকার গড়ুক, ২০২৪ সালের নির্বাচনী জনমত দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে দেশের আগামী রাজনীতির জন্য।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস