ভারতের রাজনীতিতে ৩ 'যুবরাজের' উত্থান
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৫ জুন ২০২৪, ০৭:০৫
তরুণ প্রজন্মের হাতে ভারতের দায়িত্ব তুলে দিলো জনতা! ‘যুবরাজ’দের উত্থানে রঙিন হয়ে উঠল ভারতের ২০২৪ লোকসভা ভোট। উত্তরপ্রদেশে শুধু জিতলেন না মুলায়মপুত্র অখিলেশ যাদব , তরুণ নেতার নেতৃত্বে ফিকে হয়ে গেল যোগী ম্যাজিক। ইন্ডিয়া জোট পিছনে ফেলল এনডিএকে। পশ্চিমবঙ্গে সেই কাজ করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সেনাপতি’ অভিষেক ব্যানার্জি। রেকর্ড ভোটে জেতার পাশাপাশি দিশা দেখালেন পশ্চিমবঙ্গকে। অন্যদিকে কর্নাটক এবং উত্তরপ্রদেশের দুটি আসনে জেতার পাশাপাশি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে উত্থান হলো কংগ্রেসের। তিন ‘যুবরাজ’ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ভারতের বিরোধীদের।
অখিলেশ যাদব
উত্তরপ্রদেশ হয়ে ঢোকা যায় দিল্লিতে। হিন্দি বলয়ের প্রধান রাজ্য যেমন, তেমনই জাতীয় রাজনীতির অন্যতম ভরকেন্দ্র। সেই উত্তরপ্রদেশই বিড়ম্বনা বাড়ল বিজেপির। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরে যাকে বিজেপির মুখ হিসেবে ভাবা হয়, সেই যোগী আদিত্যনাথ এরাজ্যের দাপুটে নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী। ২০২২ সালে বিধানসভা ভোটেও নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিল বিজেপি। সেখানে লোকসভায় এনডিএ-র আসন সংখ্যা থামকাল ৩৮-এ। ৪১ আসন জয় পেল ইন্ডিয়া জোট। এর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি একাই পেয়েছে ৩৫ আসন। নেপথ্যে উত্তরপ্রদেশের যুবরাজ অখিলেশ যাদবের চৌখস নেতৃত্ব। গেরুয়া ঝড় রুখে দেয়ার পাশাপাশি কনৌজ নিজের আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির যুবরাজ।
অভিষেক ব্যানার্জি
‘আমাকে এই কেন্দ্র থেকে জেতানোর দায়িত্ব আপনাদের। বাকি ৪১টি কেন্দ্র থেকে দলকে জেতানোর দায়িত্ব আমার।’ ভোট ঘোষণা হওয়ার পরই জানিয়েছিলেন অভিষেক ব্যানার্জি। ‘ঘরের ছেলে’র কথা রাখলেন ডায়মন্ড হারবারবাসী। দেশের মধ্যে রেকর্ড ব্যবধানে জিতলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেনাপতি। ৭ লাখের বেশি ব্যবধান প্রতিপক্ষকে হারালেন তিনি। কেবল নিজে চমকে দেয়া জয় পেয়েছেন তাই নয়, ভোটের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য চষে ফেলেছেন অভিষেক। দলের গুরু দায়িত্ব সামলেছেন। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত সেরেছেন প্রচার। এর পর এদিনের পরিসংখ্যান বলছে তৃণমূল ২৯, বিজেপি ১২। এই জয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির ভূমিকা প্রশ্নাতীত, তেমনই সেনাপতির কৃতিত্বও কম নয়।
রাহুল গান্ধী
অভিষেক যদি পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের কাণ্ডারি হন, গোটা ভারতে কংগ্রেসের হয়ে সেই ভূমিকা পালন করেছেন রাজীবপুত্র রাহুল গান্ধী। ভারত জোড়ো যাত্রা এবং ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা পায়ে হেঁটে ভারতভাগ্য বিধাতার মন বুঝেছেন। রাহুলের এই জনসংযোগ লোকসভা ভোটের ফলে বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এইসঙ্গে ভোটের প্রচারে গোটা দেশ চষে সভা করেছেন। বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতির বিপরীতে রাহুল অবিচল থেকেছেন ‘সংবিধান বাঁচানো’র নিজস্ব ধারার লড়াইয়ে। জাতিগত জনগণনার দাবি তুলেছেন। ক্ষমতায় এলে কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারিত সংরক্ষণের ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালাবেন দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ করে কংগ্রেস নেতা বলেন, দলিত, অনগ্রসর শ্রেণি ও জনজাতিদের স্বার্থেই এই প্রয়াস চালাবে কংগ্রেস। ভোটের ফলে স্পষ্ট অনেকাংশে মানুষ বিশ্বাস করেছে এই বার্তা। সব মিলিয়ে ভরসাযোগ্য নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীকে প্রতিষ্ঠা করল লোকসভা নির্বাচন ২০২৪। এর জলজ্যান্ত প্রমাণ কেরলের ওয়ানড় এবং উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি দু’জায়গাতেই বড় ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন রাজিবপুত্র। ওয়ানড়ে জিতেছেন ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪২২ ভোটে। অন্যদিকে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৩০ ভোটে জিতেছেন রায়বরেলিতে।
তরুণ প্রজন্মের তিন নেতার এই জয়জয়কার স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিরোধী শিবিরকে। পরিণত তথা অভিজ্ঞ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অখিলেশ, অভিষেক এবং রাহুলের উত্থান নিঃসন্দেহে নজরকারা। আগামী দিনে এই যুব নেতারাই দেশ গড়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন