১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উত্তর-পূর্ব ভারতে ধাক্কা খেল বিজেপি!

উত্তর-পূর্ব ভারতে ধাক্কা খেল বিজেপি! - সংগৃহীত

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হতে আরো কয়েক ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। দেশটির নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা প্রচলিত প্রবাদ, ‘নর্থইস্ট ইজ সেন্ট্রেলি ইনক্লাইনড।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দিল্লি যার দেশের উত্তরপূর্বও তারই। এ কথা পরীক্ষিতও বটে। তবে এবারের লোকসভা ভোটে যেন ফুটে উঠল অন্য এক ছবি। প্রাপ্ত ফলাফল বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়েছে মণিপুর। আসামে মান রাখলেও উত্তরপূর্বে ধাক্কা খেয়েছে হিমন্ত মডেল।

প্রায় দেড় মাস ধরে চলা নির্বাচনের পর ফলপ্রকাশ হয়েছে মঙ্গলবার।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল বলছে, জাতি সঙ্ঘাতে দীর্ণ মণিপুরের দুটি আসনেই শেষ হাসি হাসতে চলেছে কংগ্রেস। মেঘালয়ের দু’টি সিটের মধ্যে তুরা আসনে এগিয়ে কংগ্রেস প্রার্থী সালেং এ সাংমা। কোণঠাসা এনপিপি দলের প্রার্থী তথা রাজ্যের শাসকদলের বিদায়ী সাংসদ আগাথা সাংমা। নাগাল্যান্ডের একমাত্র আসনেও জয়ের পথে কংগ্রেস। সেখানে এগিয়ে হাত শিবিরের প্রর্থী সুপংমেরেং জামির। মিজোরামের একমাত্র সিট দখল করতে চলেছে নতুন আঞ্চলিক দল ‘জোরাম পিপল’স মুভমেন্ট’। তবে অরুণাচল প্রদেশে দু’টি আসনেই এগিয়ে বিজেপি। ত্রিপুরাতেও তাই। আসামের ১৪টির মধ্যে আট আসনে এগিয়ে বিজিপি। তিনটিতে পাল্লা ভারী কংগ্রেসের। জোরহাট আসনে অবস্থান মজবুত গৌরব গগৈয়ের। ধুবরিতে এগিয়ে রুকিবুল হোসেন। নগাঁওয়ে জয়ের পথে প্রদ্যোৎ বরদলৈ। অন্যদিকে, একটি করে আসনে এগিয়ে এনডিএ শরিক ইউপিপিএল ও আসাম গণপরিষদ। সব মিলিয়ে, উত্তর-পূর্ব ভারতের ২৪টি আসনের মধ্যে অভাবনীয়ভাবে কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে সাতটিতে। এই অবস্থা বজায় থাকলে কংগ্রেস শিবিরের হৃত মনোবল যে অনেকটাই ফিরবে তা বলাই বাহুল্য।

এখানেই উঠছে প্রশ্ন। উত্তর-পূর্বের ২৪টি আসনের মধ্যে ২২টিতেই গেরুয়া ঝড়ের দাবি করেছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। ‘সেভেন সিস্টারে’ বিজেপির চাণক্য হিসেবে যার খ্যাতি রয়েছে। অনেকেরই দাবি, একা হাতে আসামসহ সংলগ্ন রাজ্যগুলো থেকে কংগ্রেসকে নাকি মুছে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে ‘নেডা’ বা নর্থইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স গড়ে জনজাতি অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে গেরুয়া ছাপ ফেলেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস। তাহলে এমন কী হলো যে এবারে ধাক্কা খেল সেই ‘হিমন্ত মডেল’?

ভোট বিশ্লেষকদের মতে, মেতেই-কুকি সঙ্ঘাতে মণিপুরে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। রাজ্যের শাসকদলের প্রতি বিরূপ হয়েছে মেতেই জনগোষ্ঠী। মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগে বারবার সরব হয়েছে তারা।

মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই মেতেইরাই। এতদিন এরাই ছিল বিজিপি মূল ভোট ব্যাংক। আর পাহাড়ের কুকি-জো’রা ঢেলে ভোট দিয়েছে কংগ্রেসকে। আসামে মুসলিম ভোট এককাট্টা হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেসের, যার সব থেকে বড় প্রমাণ হচ্ছে ধুবরী আসনে দাপুটে এআইইউডিএফ প্রধান তথা বিদায়ী সাংসদ বদরুদ্দিন আজমলের পিছিয়ে পড়া। জোরহাট আসনেও মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর। সেখানে সংখ্যাগুরুদের মধ্যেও কংগ্রেসের প্রভাব লক্ষণীয়। নগাঁও আসনেও মুসলিম ভোট বড় ফ্যাক্টর। তাই নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের মন পেতে সচেষ্ট হতে দেখা যায় হিমন্তকে। অর্থাৎ বিজেপির ধর্মের তাসে ফায়দা তুলেছে কংগ্রেসই। সবমিলিয়ে, এবার উত্তরপূর্বের গলায় যেন মিথ ভাঙার সুর।
সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন


আরো সংবাদ



premium cement