১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জামিনের পর যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন কেজরিওয়াল

জামিনের পর যেভাবে প্রচার করছেন কেজরিওয়াল - সংগৃহীত

জামিন পেয়েই সারাদিন ধরে ভারতের দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানায় প্রচারণা চালাচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

রাজনীতিতে খুবই দ্রুত পরিবর্তন হয়। এক বছর আগেও কেউ কি ভাবতে পেরেছিলেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল কংগ্রেস প্রার্থীদের নিয়ে রোড শো করবেন? দিল্লিতে সেটাই করেছেন।

ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্ট বলছে, এক হাতে কংগ্রেস, অন্যহাতে আপের প্রতীক নিয়ে তিনি হরিয়ানায় রোড শো করেছেন।

এ জন্যই বলে, রাজনীতিতে চিরস্থায়ী বন্ধু বা শত্রু বলে কিছু নেই। কেজরিওয়াল যখন জেলে ছিলেন, তখন কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের নেতারা দিল্লিতে বিশাল প্রতিবাদ সভা করেছেন। আর এখন কেজরিওয়াল কংগ্রেসের প্রার্থীদের জন্য প্রচার করছেন।

শুধু তাই নয়, কেজরিওয়াল এখন শুধু দিল্লি বা হরিয়ানায় প্রচার করছেন না। ইতোমধ্যে তিনি উত্তরপ্রদেশ ও পাঞ্জাবেও প্রচার করেছেন। আর সেই প্রচারে নেমে সরাসরি বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করছেন।

আপ নেতারা জানান, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, বিহার থেকেও ইন্ডিযা জোটের নেতারা কেজরিওয়ালকে প্রচার করার অনুরোধ করেন। তিনি যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

যা বলছেন কেজরিওয়াল
জামিন পাওয়ার পর দিল্লিতে প্রথম রোড শো ও পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ৭৫ বছর হয়ে গেলে বিজেপি নেতাদের রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে। আডবাণী, জোশী, যশবন্ত সিনহারা সেই মতো অবসর নিয়েছেন।

কেজরিওয়ালের বক্তব্য, ‘আগামী বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদির ৭৫ বছর পূর্ণ হবে। তিনি যদি এখন আবার প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে তো তখন তাকে অবসর নিতে হবে। নিজের তৈরি করা নিয়ম তো তিনি ভাঙতে পারেন না। তখন অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রী হবেন। আর ক্ষমতায় এলে যোগীকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেবেন মোদি।’

বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বিজেপি ও এনডিএ জিতছে না। তারা ২৫০টি আসনও পাবে না। আর তারা ৪০০ আসন পেলে সংবিধান বদল করে প্রথমেই দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসরদের জন্য সংরক্ষণ তুলে দেবে।’

হরিয়ানায় তিনি বলেন, হরিয়ানার ছেলে যাতে ভোটে প্রচার করতে না পারে, সেই চেষ্টা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিহারে তাকে ইনসুলিন দেয়া হয়নি সেই অভিযোগও করেন।

কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমি জেলে যাব কিনা, তা এখন আপনাদের হাতে। আমায় যদি জেলে পাঠাতে চান, তাহলে বিজেপিকে ভোট দিন, না হলে আপ বা ইন্ডিয়া জোটের দলগুলোকে ভোট দিন।’

সরাসরি কথা বলছেন
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেন, ‘কেজরিওয়াল এমন বিষয় তুলছেন, বিজেপি যেগুলো উপেক্ষা করতে পারছে না। তারা জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছে। সেই সাথে কেজরিওয়াল এমন বিষয় বেছে নিচ্ছেন, যা সরাসরি ভোটদাতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।’

শরদ বলেন, ‘কেজরিওয়াল বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে সেই রাজ্যের প্রসঙ্গ তুলছেন। তিনি আদতে হরিয়ানার মানুষ। তাই সেখানে গিয়ে আবেগের তাস খেলেছেন। উত্তরপ্রদেশে সংরক্ষণ হলো খুব বড় বিষয়। তাই সেটা নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করেছেন। তিনি নির্দিষ্ট কিছু বিষয় তুলছেন। যা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে।’

আবেদন খারিজ
কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন জানায় ইডি। তারা বলছে, কেজরিওয়াল জামিনের শর্ত ভেঙেছেন। শর্ত ছিল, তিনি মামলা নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। কেজরিওয়াল বলেছেন, মানুষ যদি চান, তিনি আর জেলে না থাকুন, তাহলে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিন।

বিচারপতিরা বলেন, ‘ওটা কেজরিওয়ালের ধারণা হতে পারে। রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ২ জুলাই কেজরিওয়ালকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সেদিন তার জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।’

অমিত শাহর মন্তব্য
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, অনেকে মনে করেন, কেজরিওয়ালকে প্রচার করার জন্য জামিন দিয়ে তাকে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, ‘আইনের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের আছে। আমার মনে হয় এটা নর্মাল বা রুটিন রায় নয়। অনেকে মনে করছেন এটা স্পেশাল ট্রিটমেন্ট।’

কেজরিওয়ালের মন্তব্য নিয়ে অমিত শাহর বক্তব্য, ‘এটা আদালত অবমাননা। কেজরিওয়াল বলতে চাইছেন যে কেউ যদি জয়ী হয়, তাহলে সুপ্রিমকোর্ট অভিযোগ সত্ত্বেও তাকে জেলে পাঠাবে না।’

সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওকা ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইঞা বলেন, আদালতের রায় নিয়ে সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ হতেই পারে। তবে তারা মনে করেন, কেজরিওয়ালকে নিয়ে যে রায় দেয়া হয়েছে, তা কোনো বিশেষ রায় নয়, রুটিন রায় মাত্র।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement