২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গুজরাটে মোদীর বিজেপির বিরাট জয়

গুজরাটে মোদীর বিজেপির বিরাট জয় - ছবি : সংগৃহীত

গুজরাট ভোটের ফল শুধুই ট্রেলার! আসল ছবি মুক্তি ২০২৪-এ। দুই রাজ্যে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর এ কথা একপ্রকার স্পষ্টই করে দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লিতে দলের সদর দফতরে দাঁড়িয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন এবং বিহার ও উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনের ফল ‘আগামী দিনের স্পষ্ট সঙ্কেত’। সেই আগামীর যাত্রা যে গুজরাট থেকেই শুরু হয়ে গেছে, তা-ও জানালেন মোদী। বললেন, ‘বিকশিত গুজরাট থেকে শুরু হয়ে গেছে বিকশিত ভারতের অভিযান।’

বৃহস্পতিবার প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, গুজরাটে ১৮২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১৫৬টিতে জয়ী বিজেপি। এই জয়কে ‘মোদীর জয়’ হিসাবেই দেখছে দল। এদিন ফল ঘোষণার পর সদর দফতরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার কথাতেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন ভারতে রেকর্ড ভেঙে এই জয় আমরা পেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। প্রধানমন্ত্রী যে, দেশ এবং গুজরাটের মানুষের সেবা করেছেন, তা এই জয়ে স্পষ্ট।’

যদিও মোদী ভাষণ দিতে উঠে জয়ের কৃতিত্ব দিয়েছেন জনতাকে। অভিনন্দন জানিয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মী এবং নির্বাচন কমিশনকে। তিনি বলেন, ‘জনগণের সামনে মাথা নত করলাম। জনতার আশীর্বাদ অভিভূত করেছে। জয় শ্রীরাম। নড্ডার নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মকর্তারা যে পরিশ্রম করেছে, তার সুগন্ধ আজ চার দিকে অনুভব করছি।’

যে হিমাচল প্রদেশে হেরেছে বিজেপি, সেখানকার মানুষকেও ধন্যবাদ দিতে ভোলেননি মোদী। দিল্লির উপনির্বাচনে হেরে সেখানকার মানুষজনকেও ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, এখানে না জিতলেও আসলে ভোটের ফল বিজেপির প্রতি মানুষের আস্থাই প্রকাশ করে। তিনি বলেন, ‘যেখানে বিজেপি প্রত্যক্ষভাবে জেতেনি, সেখানেও তাদের ভোট শেয়ার আসলে দলের প্রতি জনগণের আস্থার সাক্ষী। গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ আর দিল্লির জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দেশের ভিন্ন রাজ্যের উপনির্বাচনের ফলেও এই আস্থা স্পষ্ট। রামপুরে বিজেপি জিতেছে। বিহারের উপনির্বাচনেও বিজেপির ফল আগামী দিনের স্পষ্ট সঙ্কেত।’

সুষ্ঠুভাবে ভোট করানোর জন্য এরপর নরেন্দ্র মোদী ধন্যবাদ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। তার কথায়, ‘আমি আজ নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানাই। ভোটের সময় একটা বিষয় নিয়ে কথা হওয়া উচিত ছিল। একটা বুথেও পুনর্নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল, কর্মীদেরও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

বৃহস্পতিবার মোদীর ভাষণের অনেকটাই জুড়ে ছিল হিমাচল প্রদেশ। ওই রাজ্যের ফলকে হার হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি। তার কথায়, ‘হিমাচলের মানুষদের কৃতজ্ঞতা জানাই। এক শতাংশেরও কম ভোটে হার-জিত স্থির হয়েছে। এত কম ভোট শতাংশের ফারাকে কখনও হিমাচলে ফল ঘোষণা হয়নি। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সেখানে সরকার পরিবর্তন হয়। কিন্তু জয়ী এবং পরাজিত দলের মধ্যে পাঁচ বা ছয় বা সাত শতাংশের ফারাক থাকে। এবার সেই ফারাক এক শতাংশ।’

এর পরেই মোদী জানান, হিমাচলের মানুষও আসলে বিজেপিকেই চেয়েছে। সেই চাওয়ার মর্যাদা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি বলেন, ‘হিমাচলের জনতাও বিজেপিকে জেতানোর জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই, আশ্বস্ত করি, এক শতাংশের জন্য সেখানে বিজেপি পিছিয়ে গেলেও বিকাশের জন্য পিছিয়ে আমরা থাকব না। দায়বদ্ধতা থাকবে ১০০ শতাংশ। হিমাচলকে তার উন্নয়নের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে না কেন্দ্রীয় সরকার।’

এর পর গুজরাটের প্রসঙ্গ তোলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি নড্ডা এবং দলীয় কর্মীদের ধন্যবাদ দিলেও নিজের কৃতিত্ব গোপন করেননি। নিজের মুখেই জানিয়েছেন, প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। তাতেই ভূপেন্দ্র পটেলের ক্ষমতায় ফেরার পথ প্রশস্ত হয়েছে। তার কথায়, ‘প্রচারের সময় বলেছিলাম, নরেন্দ্রের রেকর্ড ভাঙতে হবে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, ভূপেন্দ্র যাতে নরেন্দ্রের রেকর্ড ভাঙে, তাই নরেন্দ্র প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবে। এই পর্যন্ত সব রেকর্ড ভেঙেছে। নতুন ইতিহাস গড়েছে। ২৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও এত ভালবাসা অভূতপূর্ব, অদ্ভুত।’

এর পরেই মোদী আঙুল তুলেছেন বিরোধীদের দিকে। তিনি বলেন, ‘বিভাজনের ওপরে উঠে ভোট দিয়েছে মানুষ। বিজেপি গুজরাটের সকল পরিবারের অংশ। এক কোটিরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যারা কংগ্রেসকে দেখেননি। শুধু বিজেপিকেই দেখেছেন।’ তার কারণ হিসেবেও বিজেপির বিকাশের কথা বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, দেশের মানুষ বিকাশ চায় বলেই বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। দেশের যুবসমাজ অনেক যাচাই করে ভোট দেয়। আর তা করেই তারাও বিজেপিকেই নির্বাচিত করেছেন। বিজেপির ওপর আস্থার কারণে করোনা অতিমারীর সময় বিহার নির্বাচনে বিজেপিকেই বেছে নিয়েছিলেন সেখানকার মানুষ। সে কথাও মনে করিয়ে দেন মোদী।

সূত্র : আনন্দবাজার

 


আরো সংবাদ



premium cement