সীমান্তহত্যা নিয়ে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৫৬, আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১, ১৯:০৪
বিএসএফ-এর এখতিয়ার বাড়ানো নিয়ে তুমুল বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ।বাংলাদেশ দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ করছিল। এবার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভাতেও একই অভিযোগ উঠে এলো। বিএসএফ-এর এখতিয়ার বাড়ানোর প্রশ্নে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং বিধায়ক তাপস রায় রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে সীমান্তহত্যা, গুম, অপহরণের অভিযোগ তুললেন। যা নিয়ে বুধবারও উত্তপ্ত বিধানসভা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।
মূলত মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্য সরকার একটি প্রস্তাব পাশ করেছে। ১১২-৬৩ ভোটে পাশ হওয়া সেই প্রস্তাবে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে। কেন্দ্র বলেছে, পশ্চিমবঙ্গে, পাঞ্জাবের মতো রাজ্যে বিএসএফ-এর এখতিয়ার বাড়ানো হবে। সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অঞ্চলে তারা কাজ করতে পারবে। ওই অঞ্চলে তারা সাধারণ মানুষের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পারবে, আটক করতে পারবে। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই তা সে সব করতে পারবে।
রাজ্যের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বিরোধী। এভাবে রাজ্যের এখতিয়ার কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভায় বলেছেন, ‘কেন্দ্র পেছনের দরজা দিয়ে রাজ্যের এলাকা দখল করতে চাইছে।’ তার বক্তব্য, এর আগে বিএসএফ-এর যে এখতিয়ার ছিল, তাতে তারা সীমান্তের অপরাধ বন্ধ করতে পারেনি। কোন যুক্তিতে তারা নতুন এখতিয়ারে অপরাধ বন্ধ করতে পারবে?
তাপস রায় বিএসএফের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্য তুলে ধরেছেন বিধানসভায়। তার বক্তব্য, ‘গত পাঁচ বছরে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে ২৪০টি অত্যাচার, ৬০টি খুন এবং আটটি নিখোঁজের ঘটনার অভিযোগ আছে। সেই বিএসএফ-এর এখতিয়ার বাড়িয়ে বিজেপি রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশ দখল করতে চাইছে আর আমরা দাঁত বার করে দেখব?’
তাপসের এই অভিযোগের জবাবে তীব্র আক্রমণ করেছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিধানসভায় তিনি বলেছেন, ‘যারা সীমান্তে পাহারা দেয় বলে আমরা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি, তাদের নামে অশালীন, নিম্নরুচির কথাবার্তা বিধানসভায় ব্যবহার করা হয়েছে।’
বিজেপির আরেক বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী বলেছেন, ‘বিএসএফ শুধু গ্রেফতার বা বাজেয়াপ্ত করতে পারে। তাদের হাতে তদন্ত বা বিচারের ক্ষমতা নেই। পুলিশের সাথে তাদের কোনো বিরোধ নেই। তাহলে অসুবিধা কোথায়?’
অসুবিধা অনেক বলেই মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা। মানবাধিকার সংগঠন মাসুমের কর্মকর্তা কিরিটি রায় জানিয়েছেন, ‘সীমান্তহত্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিএসএফ-এর ক্ষমতা বাড়ার অর্থ সীমান্তে অশান্তি আরো বাড়বে। কোন যুক্তিতে সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার
ভেতরে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজন হয়?’
সম্প্রতি উপ-নির্বাচনে দিনহাটা থেকে জিতে আসা বিধায়ক উদয়ন গুহ বলেছেন, সীমান্তে পাচারের সাথেও বিএসএফ যুক্ত। তারা কার্ড দেখিয়ে কাঁটাতার পেরিয়ে কাজ করতে আসা নারীদের গায়ে তল্লাশির নামে হাত দেয়। কোনোভাবেই বিএসএফ-এর এখতিয়ার বাড়ানোর যুক্তি মানা যায় না। এতে অশান্তি বাড়বে। বস্তুত, বাম এবং কংগ্রেসও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা বিএসএফ-এর এখতিয়ার বাড়ানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রস্তাব পাশ করেছে। এর আগে পাঞ্জাব বিধানসভাও একই কাজ করেছে। কিন্তু তাতে কি লাভ হবে? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসএফ-এর এক সাবেক অফিসার বলেছেন, সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রের। ফলে বিধানসভার প্রস্তাব আইন বদলাতে পারবে না। কিন্তু কেন্দ্রীয় নীতির উপর চাপ তৈরি করতে পারবে। বুধবারই বিএসএফ-এর তরফে বলা হয়েছে, স্থানীয় পুলিশের সাথে কথা বলেই তারা কাজ করবে। তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। এখন দেখার, পাঞ্জাব এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি সীমান্ত অঞ্চলের চাপের সামনে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত বদল করে কি না।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা