০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১,
`

চীনের পয়সা গ্রহণ নিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের তুমুল ঝগড়া

চীনের পয়সা গ্রহণ নিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেসের তুমুল ঝগড়া - ছবি : সংগৃহীত

চীনা সরকার বা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কাছ থেকে কারা কবে কত সুবিধা নিয়েছে, তা নিয়ে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মধ্যে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।

২০০৪-০৫ সাল নাগাদ কংগ্রেসের এনজিও বা থিঙ্কট্যাঙ্ক রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন চীনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাহায্য নিয়েছিল, বিজেপি এই অভিযোগ সামনে আনার পর কংগ্রেসও তাদের উদ্দেশে পাল্টা দশ দফা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে। বিজেপির শীর্ষ নেতারা কে কবে চীনের আমন্ত্রণে সে দেশে গেছিলেন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তার ফিরিস্তিও পেশ করা হয়েছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই দলের এই ঝগড়ায় চীন সীমান্তে নিহত ভারতের জওয়ানদের ইস্যুটাই আসলে চাপা পড়ে যাচ্ছে।

দিনদুয়েক আগেই প্রথম বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা বেশ কিছু নথিপত্র পেশ করে কংগ্রেস প্রভাবিত এনজিও রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেন। কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী নিজেই এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপার্সন।

‘চীনের পয়সা নিয়ে তাদের হয়েই রিপোর্ট’
নাড্ডা জানান, প্রায় পনেরো বছর আগে তারা দিল্লির চীনা দূতাবাস তথা চীন সরকারের কাছ থেকে তিন লক্ষ ডলারেরও বেশি আর্থিক অনুদান নিয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি জেনে আশ্চর্য হয়ে গেছি তারা চীনের কাছ থেকে কী বিপুল টাকাপয়সা পেয়েছে। আসলে এটা কংগ্রেস আর চীনের গোপন সমঝোতারই অংশ।’

‘শুধু তাই নয়, ওই ফাউন্ডেশন এরপর নানা স্টাডি করিয়ে মুক্ত বাণিজ্যের পক্ষেও সওয়াল করায়, যাতে চীনের সুবিধে হয়। তাহলেই দেখুন, দেশে কত বড় বড় খেলা খেলা হয়েছে!’

সীমান্তে চীনের কথিত অনুপ্রবেশ, চীনা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষ আর ভারতীয় সেনাদের প্রাণহানি নিয়ে বিরোধী কংগ্রেস যে লাগাতার সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলে যাচ্ছে, তার মোকাবিলাতেই যে বিজেপি এই রাস্তা নিয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কংগ্রেস এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার না-করলেও দাবি করেছে, চীনের অনুদান নিয়ে ওই এনজিও কোনো আর্থিক অপরাধ করেনি।

কংগ্রেস নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, ‘সাধারণ বোধবুদ্ধি আছে এমন যে কেউই জানেন, ভারত-সহ সারা দুনিয়ায় এই ধরনের থিঙ্কট্যাঙ্কগুলো চলে গ্রান্ট বা অনুদান, এনডাওমেন্টের পয়সাতেই।’

‘প্রশ্ন হল, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন বিদেশি অনুদানের শর্ত মেনেছে কি না, অডিটেড অ্যাকাউন্ট জমা দিয়েছে কি না এবং সরকার তা মেনে নিয়েছে কি না। এই সবগুলোই হওয়ার পর তো আর কথা চলে না!’

‘বিজেপির নেতারাও চীনের পয়সায় সে দেশে ঘুরে এসেছেন’

চীনের সাথে বিজেপি ও তাদের আদর্শিক অভিভাবক আরএসএসের সম্পর্ক নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এরপর পাল্টা দশটি প্রশ্নও ছুঁড়ে দিয়েছেন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে ২০০৯ সালে আরএসএস প্রতিনিধিদল কিংবা ২০১১তে তৎকালীন বিজেপি সভাপতি নীতিন গডকড়ি কী করতে সে দেশে গিয়েছিলেন, জানতে চাওয়া হয়েছে সেটাও।

এমন কী ২০১৪-র নভেম্বরেও বিজেপি নেতা অমিত শাহ দলের এমপি-এমএলএদের চীন সফরে পাঠিয়েছিলেন, মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে সে কথাও।

কংগ্রেস মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনাতে-র কথায়, ‘চীন সীমান্ত থেকে যখন বিচলিত হওয়ার মতো একের পর এক খবর আসছে, তখন সেগুলোর জবাব না-দিয়ে সরকার আসলে মনোযোগ ঘোরানোর কৌশল নিয়েছে।’

‘সরকার যেভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে তাতে তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।’

দ্য হিন্দুর সাংবাদিক বিজয়েতা সিং-ও বিবিসিকে বলছিলেন, ‘দুটো পার্টি একে অন্যকে কী বলে আক্রমণ করছে তার মধ্যে আমি ঢুকতে চাই না – কিন্তু এর ফলে গালওয়ান উপত্যকায় নিহত বিশজন জওয়ানের কথা যে আর কেউ বলছে না সেটা কিন্তু দেখাই যাচ্ছে।’

‘এই রাজনৈতিক তরজার মধ্যে সবাই সেই ভারতীয় সেনাদের কথা ভুলে যাচ্ছে যারা এখনও লাদাখের দুর্গম প্রান্তরে চীনা বাহিনীর চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে।’

ভারতে পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই বলছেন, সীমান্তে যখন যুদ্ধের পরিস্থিতি তখনও দেশের দুই প্রধান দল যেভাবে কে কবে চীনের টাকা নিয়েছে বা চীনের আমন্ত্রণে সে দেশ ঘুরে এসেছে তার হিসেব কষছে – সেটা আসলে খুবই দুর্ভাগ্যজনক!

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement