২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি সহিংসতায় ৮০ জনের বেশি নিহত

পাকিস্তানে শিয়া-সুন্নি সহিংসতায় ৮০ জনের বেশি নিহত - সংগৃহীত

পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বলছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ৮০ জন নিহত হওয়ার পর সেখানকার বিবদমান গোষ্ঠীগুলো সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সেখানকার কর্তৃপক্ষই এ আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছে।

এ সহিংসতার প্রতিবাদে লাহোরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবাদ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।

আফগান সীমান্তের কাছে উপজাতীয় জেলা কুররামে তিন দিনের এ সহিংসতায় আহত হয়েছে আরো অন্তত ১৫৬ জন।

সহিংসতার সূচনা হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। শিয়া মুসলিমদের একটি গাড়ি বহরে একজন বন্দুকধারীর হামলার পর সহিংসতা শুরু হয়। এতে অন্তত ৪০ জন নিহত হওয়ার পর শুরু হয় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা।

সেখানকার শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে কয়েক দশক ধরে ভূমি নিয়ে বিরোধের জেরে এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়ে আসছে।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও এএফপির খবর অনুযায়ী, রোববারের মধ্যস্থতার পর সরকারি মুখপাত্র মুহাম্মদ আলী সাইফ বলেছেন শিয়া ও সুন্নি উভয় সম্প্রদায়ের নেতারা সহিংসতা বন্ধ করতে একমত হয়েছেন।

স্থানীয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, ‘সংঘর্ষ ও গাড়ি বহরে হামলায় ২১ নভেম্বর থেকে তিন দিনেই মারা গেছে ৮২ জন ও আহত হয়েছে ১৫৬ জন।’

নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে তিনি বলেছেন, নিহতদের মধ্যে ১৬ জন সুন্নি সম্প্রদায়ের, বাকিরা শিয়া।

আবার বৃহস্পতিবার গাড়ি বহরে হামলার যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল।

এর আগে একজন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা জাভেদ উল্লাহ মেহসুদ এএফপিকে বলেছেন, প্রায় ১০ জনের মতো হামলাকারী গাড়ি বহরে হামলায় জড়িত ছিলেন। তারা ‘রাস্তার উভয় দিক থেকে নির্বিচারে গুলি করেছে’।

যাত্রীদের বেশিভাগ শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলের পার্বত্য এলাকার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।

গাড়ি বহরটি যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল সেটি নতুন করে চালু করা হয়েছে যেখানে পুলিশের সহায়তা নিয়ে এখনো সীমিত সংখ্যক গাড়ি চলাচল করে।

পাকিস্তানের খুবই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বৃহস্পতিবার বন্দুকধারীরা যখন হামলা শুরু করে তখন ওই গাড়ি বহরে অন্তত ২০০ জনের মতো যাত্রী ছিল।

সেখানকার একটি গাড়িতে থাকা যাত্রী সাঈদা বানু বলেন, তার মনে হচ্ছিল যে তিনি মারা যাবেন। তিনি তার সন্তানদের নিয়ে গাড়ির নিচে লুকিয়ে ছিলেন।

এরপর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে শুক্র ও শনিবার ওই এলাকার অধিবাসীদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান।

সুন্নি অধ্যুষিত একটি গ্রামের একজন অধিবাসী জানান, তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ স্থানে চলে গেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা রাতভর গুলির শব্দ শুনেছি। আমি আমাদের পরিবারের নারী ও শিশুদের পাহাড়ের ভেতরে লুকিয়ে রেখেছি। আপনি দেখছেন যে এখন কেমন শীত পড়েছে। কিন্তু এছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। এখানকার বাকি সবাইও তাই করেছে।’

গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় হামলা ও পাল্টা হামলার আরো ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন লোক নিহতও হয়েছে।

সে কারণে স্থানীয় ট্রাইবাল কাউন্সিল যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল উভয় সম্প্রদায়ের কাছে।

পেশোয়ারের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, মধ্যস্থতাকারীদের হেলিকপ্টার ওই অঞ্চলে যাওয়ার পর সেই হেলিকপ্টার লক্ষ্য করেও গুলি করা হয়েছে।

ওই অঞ্চলে প্রায়ই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটে। বিশেষ করে ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধের কারণে এসব সহিংসতা বেশি হয়ে থাকে।

তবে কুররাম এলাকাটির সাথে আফগানিস্তানের কয়েকটি প্রদেশের সীমান্ত আছে। আফগানিস্তানেরও ওই এলাকাটিতে শিয়া-বিরোধী উগ্রবাদী গোষ্ঠীর অবস্থান আছে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement