২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কাশ্মিরে বিজেপির সাথে জোটসঙ্গী হওয়ার খেসারত দিলো পিডিপি?

পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি - ছবি : সংগৃহীত

দশ বছরেই আমূল বদলে গেল ছবিটা! সালটা ছিল ২০১৪। জম্মু-কাশ্মিরের নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশের পর দেখা গেল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে চূড়ান্ত সফল হয়েছে উপত্যকার পিপল’স ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)।

এরপর, পিডিপির সাথে এবং পিডিপির নেতৃত্বে জম্মু-কাশ্মিরে জোট বেঁধে সরকার গঠন করে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সেই সরকারের মেয়াদ ছিল ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এরপর, বর্তমানে, অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১০ বছর পর জম্মু-কাশ্মিরে আবারো বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

হিসাব ও তথ্য বলছে, এবারের নির্বাচনে পিডিপির ফলাফল শোচনীয়। শুধু তাই নয়, পরিসংখ্যান অনুসারে, ১৯৯৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ গত ২৫ বছরে জম্মু-কাশ্মিরের নির্বাচনে সবথেকে খারাপ ফল করেছে মেহবুবা মুফতির দল।

১৯৯৯ সালে পিডিপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ সাঈদ। এর মাত্র তিন বছর পর, প্রথবারের জন্য জম্মু-কাশ্মিরে সরকার গঠন করে তারা। সহায়তা করে কংগ্রেস।

বর্তমানে সেই দলের অবস্থা যে চূড়ান্ত শোচনীয়, তার আভাস গত গ্রীষ্মেই পাওয়া গিয়েছিল। কারণ, এবারের লোকসভা নির্বাচনেও পিডিপি কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো নির্বাচনী লড়াইয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল তারা।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) ভোট গণনা শুরু হওয়ার পর দেখা যায়, পিডিপি মাত্র মাত্র দু’টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। যেখানে তাদের চির-প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) এগিয়ে ছিল মোট ৯০টির মধ্যে ৪২টি আসনে।

এখন পর্যন্ত যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাতে অনুমান করা হচ্ছে, ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মিরের ‘স্পেশাল স্ট্যাটাস’ খারিজ হওয়ার পর যে প্রথম সরকার উপত্যকায় গঠিত হতে চলেছে, তা গঠন করতে চলেছে এনসি-কংগ্রেসের জোট।

কারণ, এখন পর্যন্ত এই জোট এগিয়ে রয়েছে ৫২টি আসনে। যেখানে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি এগিয়ে রয়েছে মাত্র ২৭টি আসনে।

শুধু তাই নয়, এবারের নির্বাচনী ফলাফল বলছে, এতদিন যে বিজবেহারা কেন্দ্রকে পিডিপির শক্ত ঘাঁটি, বিশেষ করে মুফতি পরিবারের গড় বলে মনে করা হতো, এবার সেখানকার জনগণও মেহবুবার দলকে হতাশ করেছেন।

এবারের নির্বাচনে এই আসনে লড়াইয়ে নেমেছিলেন মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা মুফতি। কিন্তু তিনি হেরে যান। ইলতিজা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি জনগণের এই রায় মাথা পেতে নিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে পিডিপি যে শুধুমাত্র একটি আসনও জয় করতে পারেনি, তাই নয়। তাদের ভোট হার ছিল মাত্র ৮.৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে, কাশ্মির উপত্যকার তিনটি আসনের মধ্যে এনসি জিতেছিল দু’টি আসনে। তাদের ভোট শেয়ার ছিল, ২২.২ শতাংশ। অনন্তনাগ-রাজৌরি লোকসভা আসনে মেহবুবা মুফতি নিজে পরাজিত হয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ ৮১ হাজার ভোটের ব্যবধানে।

তথ্য বলছে, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে পিডিপির লড়াই আরো কঠিন করে দিয়েছিলেন জামায়াতে ইসালামীর মদদপুষ্ট স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যে দক্ষিণ কাশ্মিরে এতদিন পর্যন্ত পিডিপির ভালো ভোট ব্যাংক ছিল, সেখানেই পিডিপিকে কড়া টক্কর দেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

২০১৯ সালে জামায়াতে ইসলামীকে ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সূত্রের দাবি, আগে এই সংগঠন আড়ালে থেকে পিডিপিকে সমর্থন করত।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ২০১৬ সাল থেকেই পিডিপির ভোট ব্যাংকে ধস নামতে শুরু করে। সেই সময় জম্মু-কাশ্মিরে পিডিপি ও বিজেপির জোট সরকার ছিল। হিজবুল মুজাহিদীনের তরুণ নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর উপত্যকার বাসিন্দাদের একাংশ আন্দোলনে নামেন।

সেই আন্দোলন দমাতে সরকারের পক্ষ থেকে যে দমন-পীড়ন শুরু করা হয় বলে অভিযোগ, তাতে অসংখ্য সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়। তার ফলে পিডিপি-বিজেপি জোটের জনভিত্তি ক্রমশ কমতে থাকে।

এরপর ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মির তার স্পেশাল স্ট্যাটাস ও রাজ্যের স্বীকৃতি হারায়। সেই সময় মাসের পর মাস জম্মু-কাশ্মিরের স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের বন্দী করা হয়।

এই পরিস্থিতির জন্য বিজেপির পাশাপাশি পিডিপিকেও দায়ী করেন বহু মানুষ। কারণ, ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই দুই দলের জোট সরকার জম্মু-কাশ্মিরের প্রশাসনিক ক্ষমতায় ছিল।

এবারের নির্বাচনে পিডিপির শোচনীয় পরাজয় গত ১০ বছরের ঘটনাক্রমের ফলশ্রুতি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস


আরো সংবাদ



premium cement