ভারতে গুরুতর অপরাধে যুক্ত নাবালকদের ‘সাজা’ নিয়ে কেন বারবার বিতর্ক
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:২২
ভারতে অপরাধের সাথে যুক্ত নাবালকদের প্রতি ‘নমনীয়’ মনোভাব দেখানো হচ্ছে। দিল্লির গণধর্ষণ মামলা থেকে ‘আইনসভা কোনো শিক্ষাই নেয়নি’- সম্প্রতি এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে মধ্য প্রদেশ হাইকোর্টের ইন্দোর বেঞ্চের এক রায়ে।
মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের ইন্দোর বেঞ্চের বিচারপতি সুবোধ অভয়ঙ্কর তার রায়ে বলেন, ‘আদালত আবারো বেদনার্ত। কারণ এই দেশে অপরাধের সাথে যুক্ত নাবালকদের প্রতি খুবই নমনীয়তা দেখানো হচ্ছে এবং আইনসভা নির্ভয়া কাণ্ডের ভয়াবহতা থেকে এখনো কোনো শিক্ষা নেয়নি, যা ভুক্তভুগীদের জন্য হতাশাজনক বিষয়।’
যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার এই পর্যবেক্ষণ, সেখানে অভিযুক্ত নাবালকের বিরুদ্ধে চার বছরের এক শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল।
২০১৭ সালের এই মামলায় নিম্ন আদালত ২০১৯ সালে রায় দিয়েছিল, কিন্তু সেটি চ্যালেঞ্জ করে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই কিশোরের পরিবার।
সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের ইন্দোর বেঞ্চের বিচারপতি সুবোধ অভয়ঙ্কর ভারতে নাবালক অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে ‘নমনীয় মনোভাব’, এবং তার প্রভাব সম্পর্কে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেন।
নাবালকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা, অপরাধের ভয়াবহতা এবং তাদের বয়সের কথা মাথায় রেখে বিচার বা সংশোধনের ব্যবস্থা নিয়ে আদালত বা ওয়াকিবহাল মহলের উদ্বেগ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
কিন্তু কেন বারবার বিতর্ক দানা বাঁধছে অপরাধের সাথে যুক্ত নাবালকদের বিচার বা তাদের সংশোধনের জন্য নেয়া পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে? এই প্রসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেন বিশেষজ্ঞরা।
মধ্যপ্রদেশের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সদস্য মনোজ জৈন বলেন, ‘২০১৫ সালের পর জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টে যে বদল এনেছে তাতে অপরাধের গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে ১৬-১৮ বছরের নাবালকদের সাবালকদের মতো দেখা হয়। বিচারও সেভাবেই হয়। মধ্যপ্রদেশের হাইকোর্টের ওই মামলায় অভিযুক্ত তরুণের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে আবার একভাবে বিচার হবে না। নাবালকদের ক্ষেত্রে প্রতিটা মামলা আলাদা আলাদা করে বিচার করা হয় বিভিন্ন বিষয়ের কথা মাথায় রেখে।’
তার মতে, নাবালকদের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়া, তার কারণ এবং সেই অপরাধের বিচারের সাথে একাধিক বিষয় যুক্ত।
তার কথায়, ‘চাইলেই একজন নাবালককে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেয়া যায় না। বিষয়টার সাথে তার মনোস্তত্ত্ব যেমন জড়িয়ে আছে তেমনই তার সাইকো-সোশ্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড (মনোসামাজিক প্রেক্ষাপট),পারিবারিক অবস্থা এবং সর্বোপরি যে অপরাধ সে করেছে তার পরিণতি সম্পর্কে জানত কিনা এমন অনেক বিষয় জড়িয়ে থাকে।’
মধ্যপ্রদেশের শিশু অধিকারকর্মী প্রশান্ত দুবে আবার মনে করেন, আইন থাকলেও তার বাস্তবায়নে ফাঁক রয়েছে। যে কারণে সমস্যার সমাধান মিলছে না।
নাবালকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর সাম্প্রতিকতম তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে নাবালকদের বিরুদ্ধে ৩১ হাজার ১৭০টা অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ২০২১ সালে এই পরিসংখ্যান ছিল ২৯ হাজার ৭৬৮। অভিযুক্তদের মধ্যে বেশিভাগই কিন্তু ১৬-১৮ বছরের মধ্যে।
গত কয়েক বছরে একাধিক ঘটনা উঠে এসেছে, যেখানে ধর্ষণ বা সহিংস অপরাধে অভিযুক্তরা নাবালক। অল্প বয়সীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই বিতর্ক দানা বেঁধেছে গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকা সত্ত্বেও নাবালক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপ নিয়েও।
দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তদের মধ্যে একজন নাবালক হওয়ায় তার বিচার হয়েছিল তৎকালীন জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের আওতায়। সেই সময়েও এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়।
তারপরই ২০১৫ সালে একাধিক পরিবর্তন আনা হয় জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টে। যোগ করা হয় ১৬-১৮ বছরের অভিযুক্তদের প্রয়োজনে সাবালক হিসাবে দেখা, অপরাধের গুরুত্বের উপর ভিত্তি করে তার বিচারসহ একাধিক বিষয়ের কথাও।
তারপরেও একাধিক ঘটনায় নাবালকদের বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বেঁধেছে।
চলতি বছরের মে মাসে মহারাষ্ট্রের পুণেতে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল বাইকে সওয়ার এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ও তার বন্ধুর। অভিযোগ উঠেছিল যে পোর্শে গাড়িটা বেপরোয়া গতিতে এসে ওই বাইকে ধাক্কা মেরেছিল তা চালাচ্ছিলেন ১৭ বছরের এক ছাত্র।
সে সময় ওই নাবালক ছাত্র মাতাল ছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। এরপর অবশ্য এই মামলায় একাধিক মোড় আসে।
অভিযুক্ত নাবালক হওয়ায় তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পেশ করা হয়েছিল। তার বেল মঞ্জুর করে সংশোধনী ব্যবস্থা হিসেবে ৩০০ শব্দের রচনা লেখা, সেফ ড্রাইভিং কোর্স করার নির্দেশ দেয়া হয়। একে ঘিরে বিস্তর বিতর্কও হয়েছিল।
তারপর মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে নাবালকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা এবং তাদের বিরুদ্ধে নেয়া আইনি ব্যবস্থাকে ঘিরে আরো একবার প্রশ্ন উঠেছে।
কী বলেছে মধ্য প্রদেশ হাইকোর্ট?
যে মামলায় বিচারপতি অভয়ঙ্কর এই রায় দিয়েছেন, সেই মামলায় ২০১৯ সালে নিম্ন আদালত অভিযুক্তকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল অভিযুক্তর ২১ বছর বয়স হলে সেই শাস্তি ভোগ করতে হবে তাকে। কিন্তু নাবালক হওয়ায় তাকে আপাতত ‘অবসারভেশন হোমে’ রাখা হবে।
এই নির্দেশের মাস কয়েকের মধ্যেই ওই কিশোর অন্য কয়েকজন কিশোরের সাথে সেই হোম থেকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর নিম্ন আদালতের সাজা থেকে অব্যহতি চেয়ে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে আবেদন করেছিল যা খারিজ করে দেন বিচারপতি অভয়ঙ্কর।
আগের সাজা বজায় রেখে এই ঘটনায় তার পর্যবেক্ষণ জানান।
নির্যাতনের পর ওই শিশুর গুরুতর অবস্থার কথা উল্লেখ করে বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে জানান, ‘এই মামলায় যে মেডিক্যাল এভিডেন্স রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে অভিযুক্ত কী নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছিল তা স্পষ্ট। বিষয়টা বুঝতে কোনো বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয় না। অবজারভেশন হোম থেকেও সে পতালক, হয়তো রাস্তায় কোথাও ঘাপ্টি মেরে বসে রয়েছে তার পরবর্তী শিকারের খোঁজে। এবং দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো তাকে থামানোর কেউ নেই। নির্ভয়া মামলার এক দশক পরেও এই জাতীয় বিষয় নিয়ে সাংবিধানিক আদালত বারবার সোচ্চার হওয়া সত্ত্বেও আইন সভায় তার কোনো প্রভাব পড়েনি।’
নমনীয়?
মধ্যপ্রদেশ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সদস্য জৈন এই প্রসঙ্গে তার বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে প্রশ্নের মুখে সবচেয়ে বেশি পড়তে হয় তা হলো ভয়াবহ অপরাধ করেও কেন কোনো নাবালককে জেলে পাঠানো হলো না।’
তার কথায়, ‘একজন নাবালককে গ্রেফতার করা হয়েছিল এক ব্যক্তিকে পাথর ছুঁড়ে খুনের অভিযোগে। তদন্ত করে দেখা যায়, ছেলেটির মাকে প্রতিবেশী এসে মারধর করছিল। ওই কিশোর তার মাকে বাঁচাতে একটা ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারে এবং আহত ব্যক্তির মৃত্যু হয়। কিন্তু সে তো তার মাকে বাঁচাতে গিয়েছিল বুঝতে পারেনি ওই ব্যক্তির মৃত্যু হবে। আবার ধর্ষণের ক্ষেত্রে একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে, ওই নাবালক নিজে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে একসময়। পরে তার মধ্যেও অপরাধ প্রবণতা দেখা গেছে। আইনের চোখে সে দোষী। কিন্তু জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড তাকে শুধু দোষীর চোখে দেখতে পারে না।’
তার যুক্তি এর পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে।
জৈন বলেন, ‘বিভিন্ন ফ্যাক্টর কাজ করে থাকে। ঠিক এই কারণে সাইকো-সোশ্যাল অ্যানালিসিস করা হয় অভিযুক্তের। প্রতিটা কেস আলাদা করে দেখা হয়। তারপর বিচার হয়। আবার অনেক সময় সাইকো-সোশ্যাল অ্যানালিসিস হয় না কারণ সেই সুযোগ নেই বহু জায়গায়। সেক্ষেত্রে সমস্যা আরো বাড়ে।’
শিশু অধিকারকর্মী প্রশান্ত দুবে অবশ্য মনে করেন নাবালকদের অপরাধের ক্ষেত্রে আইন যথেষ্ট পোক্ত।
তার কথায়, ‘নির্ভয়া কাণ্ডের পর আইনে বদল এসেছে। সেখানে আলাদা করে ১৬-১৮ বছরের অভিযুক্তদের কথা বলা হয়েছে, অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে তাদের সাবালকদের মতো বিচারের কথাও বলা হয়েছে। ১৬-১৮ বছরের মধ্যে নাবালক যারা ভয়াবহ অপরাধের সাথে যুক্ত নয়, তাদের জন্য যেমন স্পেশাল হোম রয়েছে। ওই বয়স সীমার ওপরে যারা ভয়াবহ অপরাধের সাথে যুক্ত তাদের জন্য একইভাবে প্লেস অফ সেফটি নামে বিশেষ হোমের ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের অন্য নাবালক আবাসিকদের থেকে দুরেও রাখা হয়।’
অনেকেই আবার ভিন্ন মোট পোষণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিমবঙ্গ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের এক সদস্য বলেন, ‘আইনের ফাঁক ফোঁকরের সুবিধা যে বহু ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা নেয় তা সত্যি। একজন গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত যার ১৮ বছর হতে মাত্র মাস কয়েক দেরি তারও এই আইনের আওতায় বিচার হবে। এবার সমস্যা হলো অপরাধের সময় যেহেতু তার ১৭ বছর ছিল, তাই তাকে হোমেরাখা হবে। দেখা গেল, তার মামলায় আইনি প্রক্রিয়া চলল তিন বছর অর্থাৎ ২০ বছর বয়সে তার সাজা ঘোষণা হলো।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু অপরাধের সময় যেহেতু নাবালক ছিল তাই তাকে প্লেস অফ সেফটির মতো বিশেষ হোমে রাখা হবে। যেখানে ওই বিশেষ ব্যবস্থা নেই সেখানে অন্যান্য নাবালকদের সাথে একই হোমে রাখা হবে। সেক্ষেত্রে তার প্রভাব অন্যান্য নাবালকদের মধ্যে পড়ে।’
সমস্যা কোথায়?
কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী তাপস ভঞ্জ বলেন, ‘এক্ষেত্রে অনেক বিষয় নির্ভর করে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের ওপর। তারা মামলাটাকে কিভাবে দেখছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের অনেকেই জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট সম্পর্কে জানেন না। তাই তদন্তও ঠিক করে হয় না। তাদের তদন্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এক এক সময়, আদালতকেই ঊর্ধ্বতন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা আবার নিয়োগ করতে হয় তদন্তের জন্য।’
একইসাথে নাবালকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা না কমার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তার কথায়, ‘নাবালকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে তার একাধিক কারণ আছে। ধর্ষণের মতো গুরুতর ঘটনায় অবাধ ইন্টারনেট ব্যবহার করে বয়সের উপযোগী নয় এমন বিষয়বস্তু দেখা যেমন কারণ তেমনই বয়সের দোহাই দিয়ে অপরাধ করে বেঁচে যাব এই ভাবনাটাও একটা কারণ।’
দুবের মতে, সমস্যা হলো আইনের বাস্তবায়নে।
তার কথায়, ‘যে বিষয়ে কাজ হয়নি তা হলো নাবালকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমানোর জন্য যে ব্যবস্থা নেয়া উচিত সেখানে। যে পরিবেশ তাদের এই অপরাধ প্রবণতার জন্য দায়ী, সে সম্পর্কে কোনো পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। যে শিশুরা দারিদ্যের কারণে অপরাধে জড়াচ্ছে সেটা রোধ করার জন্য কিছু হচ্ছে না।’
আইনজীবী তাপস ভঞ্জ পশ্চিমবঙ্গের জুভেনাইল একাধিক হোমের অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন।
তার কথায়, ‘আমি পশ্চিমবঙ্গের বহু জুভেনাইল হোম ঘুরে এসে দেখেছি সেখানে কেমন বেহাল দশা। একাধিক হোমে বয়সে বড় ও ছোট আবাসিকদের একইসাথে রাখা হয়েছে অপরাধের গুরুত্ব বিচার না করেই। অনেক সময় বয়সে বড় আবাসিকরা ছোটদের ওপর নির্যাতন চালায়। আবার হোমের কর্মীদের হাতেও নিগৃহীত হতে হয় তাদের। যে কারণে অনেক সময় হোম ছেড়ে পালানোর প্রবণতা দেখা দেয়।’
জৈনও একই কথা জানিয়েছেন। তার কথায়, ‘অনেক হোমে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নেই। হোমে একজন নাবালকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। তাই তারা আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।’
বয়সসীমা নিয়ে প্রশ্ন
পেরেন্টিং কনসালটেন্ট পায়েল ঘোষ বলেছেন, ‘নাবালকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা খুবই বেড়েছে। তারা শুধুমাত্র বাইরে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তা নয়, বাড়িতেও মা-বাবাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে নিগ্রহ করছে। বয়ঃসন্ধির ছয়টা কেসের মধ্যে দুটি অন্তত এমন ঘটনা।’
অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বয়সসীমা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার প্রসঙ্গও এনেছেন তিনি। তার কথায়, ‘আমার মনে হয় অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বয়সের সীমাটা একটু এগিয়ে আনা উচিৎ। আজকাল কিশোর-কিশোরীরা বয়সের তুলনায় তারা অনেক পরিণত। ইন্টারনেটের হাত ধরে তারা অনেক কিছু জানে। শারীরবৃত্তিয় দিক থেকে দেখতে গেলে মেয়েদের ঋতুচক্রও এগিয়ে এসেছে। কাজেই প্রশাসনিক দিক থেকে বয়স সীমা আরও এগিয়ে নিয়ে আসা উচিৎ। আমি মনে করি টিন এজের আগে পর্যন্ত একটা ধাপ রাখা উচিৎ এবং তেরো থেকে সতেরোর জন্য আলাদা ভাবে ভাবনা-চিন্তা করা উচিত।’
মূলস্রোতে ফেরার সুযোগ
জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের উদ্দেশ্য হলো অপরাধের সাথে যুক্ত নাবালকদের সংশোধনের সুযোগ দেয়া এবং মুলস্রোতে ফিরিয়ে আনা।
দুবে বলেন, ‘একজন নাবালককে সংশোধনের এবং মুলস্রোতে ফেরার সুযোগ দিতেই হবে। এটাও ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সে আবার একই পথে না হাঁটে।’
তিনি জানান, শুধুমাত্র নাবালককে কাউন্সেলিং, তাকে কঠোর নিয়মানুবর্তিতায় রাখা বা তাকে সংশোধনের চেষ্টা করলেই হবে না, তার পরিবারেরও কাউন্সেলিং প্রয়োজন। তার যুক্তি, ‘নয়ত অনেক ক্ষেত্রেই নাবালকরা ওই একই পরিবেশে ফিরে যায় যা তাদের অপরাধপ্রবণতার একটা কারণ ছিল। একইসাথে তাকে পুনর্বাসনের সুযোগ দিতে হবে। সমাজকেও তাকে গ্রহণ করতে হবে।’
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস’-এর উপদেষ্টা সুদেষ্ণা রায় বলেন, ‘একজন নাবালককে সংশোধনের এবং মুলস্রোতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া উচিত। আমি এমন একজনকে জানি যে ভয়াবহ এক অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল। নিয়মিত কাউন্সেলিং, নিয়মানুবর্তিতা এবং সঠিক পরিবেশ পেয়ে সে এখন স্নাতক হওয়ার পথে। অল্প বয়সে সে কোনো অপরাধ করেছে বলেই তাকে জেলে পাঠিয়ে দেয়া ঠিক নয়। বরং সুযোগ দেয়া হোক।’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা