রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা
- মাসুম খলিলী
- ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:০৯
রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সংবেদনশীল ইস্যু। এ বিষয়ে বাংলাদেশের দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন দৃশ্যত এখনো মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অবস্থানকে সমর্থন করছে। দুই দেশ তাদের কৌশলগত নীতির অংশ হিসেবে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগসূত্র বজায় রাখলেও এখন পর্যন্ত জান্তা শাসনের বিপক্ষে সেভাবে অবস্থান নেয়নি।
অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান সুস্পষ্টভাবে জান্তাবিরোধী। একসময় তারা মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া সমর্থন করেছিল। সর্বশেষ ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে তারা প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করছে বলে মনে হয়। আর এই অঞ্চলের আসিয়ান জোটের অবস্থান অনেকটা এর মাঝামাঝি। আসিয়ানে মুসলিম সদস্য দেশ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশও। আবার এসব দেশের মধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই বলয়ের দেশও রয়েছে।
বাংলাদেশ হলো মিয়ানমার পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় শিকার। ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন বাংলাদেশে। এর মধ্যে আট লাখের মতো এসেছে ২০১৭ সালে। এখন নতুন করে রোহিঙ্গাপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ৮-৯ হাজার প্রবেশ করেছে সীমান্তের এপারে। আরো প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার আগের সরকারের রোহিঙ্গানীতি কোনো সমাধান আনতে পারেনি। তখনকার সরকারপ্রধান কৌশলগত মিত্র হিসেবে বেছে নেয় ভারতকে। আর ভারত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে এখনো পর্যন্ত সহযোগিতা বজায় রেখে চলেছে। এমনকি কোয়াডের অংশীদার হওয়ার পরও দিল্লি বার্মা আইনের লক্ষ্য অর্জনে তথা মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগে ওয়াশিংটনকে সহযোগিতা করেছে এমন তথ্য পাওয়া যায় না। হাসিনা সরকারের একসময়ের দ্বিতীয় প্রধান মিত্র দেশ চীন জান্তা সরকারের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে। কিন্তু বেইজিং এখনো পর্যন্ত এই ইস্যু নিষ্পত্তির বিষয়ে কার্যকর কিছু করতে পারেনি। বরং বেইজিং রোহিঙ্গাদের দুর্গম দ্বীপে পাঠানোর আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সংবেদনশীল কক্সবাজার-বান্দরবান সীমান্ত থেকে তাদের দূরে নিয়ে যেতে চেয়েছে। ঢাকাকে উৎসাহিত করেছে তৃতীয় কোনো দেশে তাদের পুনর্বাসনের বিষয়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গানীতি কী হবে?
জনরোষে হাসিনার পলায়নের পর নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কী নীতি অনুসরণ করবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন গত সোমবার বলেছেন যে, রোহিঙ্গাদের এখন প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। এখনো আশা আছে যে, তৃতীয় দেশের পুনর্বাসন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ২০ হাজার করে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও গত রোববার বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের তৃতীয় দেশের পুনর্বাসন ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। ঢাকায় তার কার্যালয়ে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার পর প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
ওয়াশিংটন এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার রোহিঙ্গার পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে; কিন্তু প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের প্রক্রিয়াটি দ্রুত-ট্র্যাক করতে বলেছেন। আইওএম বাংলাদেশের প্রধান বলেন, ১২ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন আবার শুরু হয়, তবে এই বছরই প্রক্রিয়াটি কিছুটা গতি পেয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। সেখানে (মিয়ানমার) স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা গেলে এটি শুরু করা সম্ভব হতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে তাদের মূল স্থানে ফিরে যেতে পারে সে জন্য বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রয়োজন। এর আগে, তিনি প্রায় আট হাজার রোহিঙ্গা সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র সঙ্ঘাত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির কাছে মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে বাংলাদেশের শিবিরে বসবাসকারী ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ‘মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছায়’ প্রত্যাবর্তনের জন্য সমর্থন চান। হাইকমিশনার গ্র্যান্ডি সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সাথে ফোনালাপ করেন এবং তাকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আসার জন্য অভিনন্দন জানান। ইউএনএইচসিআর প্রধান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে নিউ ইয়র্কে আসন্ন জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি বৈঠকে যোগ দেয়ার অনুরোধ জানান। গ্র্যান্ডি প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, চলতি বছরের অক্টোবরে তিনি বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন।
নতুন ঘটনাবলি
সর্বশেষ এসব ঘটনা থেকে মনে হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুটি আবার আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সাত বছর আগে যখন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার অবস্থা বেশ খানিকটা আলাদা। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন আরাকানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির হাতে। প্রতিনিয়ত জান্তাবাহিনী রাখাইনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।
অন্য দিকে আরাকান আর্মি এখন রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে দখল সম্প্রসারণ করে তাদের বাস্তুচ্যুত করছে। একসময় জান্তাবাহিনী রোহিঙ্গাদের যেভাবে চিহ্নিত করত একইভাবে এখন করছে আরাকান আর্মি। বলা হচ্ছে, বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ মিয়ানমার জান্তার সাথে অনাক্রমণ চুক্তি করে সহযোগিতা করছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের লক্ষ্যবস্তু করছে। এর মধ্যে আরো একটি উদ্বেগজনক খবর হলো, আরাকান আর্মি পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের মধ্য থেকে তাদের সৈন্য সংগ্রহ করছে। এর অর্থ হলো আরাকান আর্মির প্রভাব রাখাইন ছাড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে চাইছে তারা।
এই পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকারের নীতিপদক্ষেপ শুধু রোহিঙ্গা ভবিষ্যতের ওপরই নয়, একই সাথে সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগের কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। একই সাথে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশের আশ্রয় দেয়ার জন্য ভোগান্তি বা সামাজিক প্রভাবে এটি সীমিত থাকবে না। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতার জন্যও নিরাপত্তাসঙ্কট নিয়ে আসতে পারে।
রাখাইনে আধা স্বাধীন দেশ গড়ার চেষ্টা
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের দিন দশেক আগের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের শেষের দিকে রাখাইন রাজ্যের জন্য পুনরায় লড়াই শুরু করার পর, আরাকান আর্মি মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে এখন ১০ লক্ষাধিক লোকের একটি প্রোটো-রাষ্ট্র তৈরির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। যদিও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নির্বিচারে হামলা এবং অবরোধে এই অঞ্চলে বড় অর্থনৈতিক দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তবে প্রধানত রাজ্যের রাখাইন বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থিত আরাকান আর্মি এখন উত্তরের জনপদগুলোতে পৌঁছে মুসলিমদের ওপর হামলা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরাকান আর্মি সম্ভবত রাখাইন রাজ্যের ডি ফ্যাক্টো গভর্নিং অথরিটি হিসেবে আবিভূর্ত হতে চাইছে। এ সময়ে বাইরের কুশীলবদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কিভাবে এবং এর সাথে যুক্ত হবে কি না। ক্রাইসিস গ্রুপ বলেছে, স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য, আরাকান আর্মির উচিত হবে রোহিঙ্গাদের সাথে সম্পর্ক সংশোধন করা, রোহিঙ্গা নির্যাতনের ওপর স্বাধীন তদন্তে সমর্থন দেয়া এবং ঢাকা ও দাতাদের কাছে পৌঁছানো। তাদের উচিত এই গ্রুপের সাথে যৌথ মানবিক ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করা।
মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে একটি অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় এলাকা তৈরি করেছে। আকার এবং জনসংখ্যা উভয় দিক থেকেই তারা এখন রাখাইনের বড় অংশ সুরক্ষিত করার পথে। তাদের এ সাফল্যের জন্য দাম দিতে হয়েছে, রাজ্যের বেসামরিক লোকদের। রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় সম্প্রদায়ের কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জান্তাবাহিনী প্রতিদিনের ভিত্তিতে মারাত্মক বিমান হামলা চালাচ্ছে। মে মাসের শেষের দিকে, শাসক বাহিনীকে রাজ্যের রাজধানী সিত্তওয়ের উপকণ্ঠে একটি গ্রামে রাখাইন নাগরিকদের গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অতি সম্প্রতি, আরাকান আর্মিকে রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের মংডু শহরে হামলা করে ২০০ জন রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে।
যদিও আরাকান আর্মি সামরিক সাফল্য পাচ্ছে, তবে এটির রাজনৈতিক শাখা, ইউনাইটেড লিগ অব আরাকান, অঞ্চলটি পরিচালনা করার জন্য ক্ষমতা রাখে কি না এবং এর শাসনাধীন লোকদের স্থিতিশীলতা নিয়ে আসে কি না তা স্পষ্ট নয়। এই অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনের মধ্যে দৃঢ় সমর্থন গোষ্ঠীকে কঠিন জীবনযাত্রার পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সময় ব্যয় করতে বাধ্য করবে। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের অভাব, প্রয়োজনীয় পরিষেবার ক্ষতি এবং সঙ্ঘাতের কারণে ধ্বংস হওয়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কতদিন লাগবে তা অনিশ্চিত।
বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, আরাকান আর্মিকে একটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। রাখাইনে খুব সহজে উত্তেলনের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। তবে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও নিকটবর্তী ভারতের সাথে বাণিজ্য ও পরিবহন যোগাযোগের দুর্বলতা রয়েছে, যা চীন বা থাইল্যান্ডের তুলনায় মিয়ানমারের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে জড়িত হওয়ার পক্ষে কম উপযুক্ত। ফলস্বরূপ, রাজ্যটিকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য জান্তা শাসন-নিয়ন্ত্রিত মধ্য মিয়ানমারের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল থাকতে হবে এবং বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও ব্যাংকিং পরিষেবাগুলোর জন্য প্রায় সম্পূর্ণরূপে নেইপিডোর ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। চীন ও ভারত উভয়েই ভূ-কৌশলগত কারণে রাখাইনে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, অন্য দিকে বাংলাদেশ ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর দ্রুত প্রত্যাবর্তন দেখতে চায়। এই জটিল পরিবেশে অগ্রসর হওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য ছোট কাজ হবে না।
রাখাইন-রোহিঙ্গা অবিশ্বাস
আরাকান আর্মি রাখাইনের মধ্যে কঠিন জাতিগত সম্পর্ক পরিচালনা করতে হবে। এটি এমন একটি রাজ্য যেটি ১৯৪২ সাল থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ রাখাইন এবং সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইয়াঙ্গুনের শাসক গোষ্ঠীও এটাকে সবসময় উসকে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সংখ্যা রাখাইনের তুলনায় কম হলেও উত্তর রাখাইন ও সিত্তওয়ের একটি অংশে তাদের আধিপত্য রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সামরিক সরকার অবরুদ্ধ রোহিঙ্গাদের চাপ দিয়ে আরাকান আর্মির সাথে লড়াইয়ে নামাতে চেয়েছে। এর বিপরীতে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা গ্রামে গণহত্যা চালিয়েছে আর তাদের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আরাকান আর্মির রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার স্বীকার করার বাপারে অনীহার কারণে যে অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছিল তা আরো বাড়িয়েছে এটি।
যেহেতু উত্তর রাখাইন রাজ্যের মংডু, রাসিডং ও বুথিডাং প্রধানত রোহিঙ্গা জনপদ; এই জনপদে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে ৫ আগস্টের হামলাও রয়েছে। এর ফলে রাখাইন রাজ্য একটি বিপজ্জনক সন্ধিক্ষণে রয়েছে, যেখানে রাখাইন ও রোহিঙ্গা উভয় সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে বোঝাপড়া না হলে তারা এই অঞ্চলে ওয়া স্টেটের মতো স্বায়ত্তশাসন ভোগ করার অবস্থায়ও পৌঁছাতে পারবে না।
ঢাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ
বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো- এই উপলব্ধি সৃষ্টি হওয়া দরকার যে, হাসিনার রোহিঙ্গানীতি সাফল্যের মুখ দেখেনি; বরং এটি পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। বাংলাদেশ বড় প্রতিবেশীদের আশায় যদি বসে থাকে যে তারা হস্তক্ষেপ করে সব সমস্যার সমাধান করে দেবে তাহলে বলতে হয়, গত সাত বছরের অভিজ্ঞতা বলে যে, সে আশা পূরণ হওয়ার নয়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের পশ্চিমা দেশগুলোতে পাঠিয়ে এই সমস্যার সমাধান করার আশা করতে চায় বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কথায় মনে হতে পারে; কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে, বাংলাদেশ বাধ্য করার মতো কোনো টুলস তৈরি করতে না পারলে রোহিঙ্গাদের শুধু এই জনপদ থেকে বিতাড়িত হতে হবে তাই নয়, সে সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোকি-চিনরা যে আলাদা দেশ গড়ার কথা ঘোষণা করেছে সেটি অনেক দূর গড়াতে পারে। পার্বত্যাঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ে অনেক অত্যাধুনিক অস্ত্র প্রদর্শনীর খবর এখন পাওয়া যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, আরাকান আর্মির মাধ্যমে এসব অস্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকছে। দেশের নিরাপত্তা পরিষেবার বিষয়গুলো গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিহিত তাদের জনপদে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার সাথে বসবাসের ব্যবস্থা করার মধ্যে। এ জন্য জাতিঙ্ঘের তত্ত্ববধানে হলেও সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করতে হবে। আর যারা এই ইস্যুতে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে তাদের সাহায্য নিতে হবে। প্রয়োজনে সামরিক চাপ সৃষ্টির মতো উদ্যোগও নেয়া দরকার। কারণ, কেউ বাইরে থেকে এসে সমস্যার সমাধান করে দেবে না। এতে পার্বত্য অঞ্চলকে নিরাপদ করার ব্যবস্থাও হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি দেখা দেবে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস নিশ্চয়ই পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা