সময়ের কথকতা
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৪
ব্যক্তিগত কাজে ক’দিন আগে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম । গ্রামীণ জনপদের বর্তমান অবস্থা স্বচক্ষে দেখলাম। বাইরে থেকে শান্তির নীড় বলে মনে হলেও গ্রামবাসীরা সত্যি ভালো নেই পরাজিত অপশক্তির রেখে যাওয়া বিভাজিত জাতিসত্তার বিষাক্ত ছোবলে।
অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে ঠাকুরগাঁও এর মতো প্রান্তিক শহরের পাসপোর্ট অফিসের ভিড় দেখে। সাধারণ সময়ের চেয়ে তিন থেকে চর গুণ পাসপোর্টের আবেদন বেড়েছে। স্থানীয় পাসপোর্ট অফিস কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, পাসপোর্টের আবেদন এমনভাবে বাড়বে, তারা তা কল্পনাও করতে পারেনি। আবেদনকারীদের বেশির ভাগই সনাতনধর্মী। পাসপোর্ট অফিসের এ চিত্র নিঃসন্দেহে ভালো প্রবণতার লক্ষণ নয়। এটা সবাইকে বুঝতে হবে। স্থানীয় দু’জন খ্রিষ্টধর্মী আমার সাথে দেখা করতে এসে, তাদের নিরাপত্তার অভাব বোধের কথা জানালেন। এর আগের বারে নির্বাচিত একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, যিনি একজন সনাতনধর্মী, তার নিরাপত্তা ও উদ্বেগের কথা জানালেন। জানালেন তাকে নিরাপত্তা কেনার পরামর্শ দিয়েছেন কিছু সদ্য গজিয়ে ওঠা রাজনৈতিক নেতা। সংখ্যালঘু এবং পতিত স্বৈরাচারের দলীয় লোকজনের বাড়িঘর, স্থাবর সম্পদ দোকান-পাট রক্ষায় নিরাপত্তা ক্রয় করতে হচ্ছে।
এক ধরনের হঠাৎ গজিয়ে ওঠা স্থানীয় রাজনৈতিক পরিচয়ধারীদের কাছ থেকে। এদের বেশির ভাগ ৪ আগস্ট পর্যন্ত শান্তি মিছিল করেছে- ঠেঙ্গিয়েছে বিরোধী দলের নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের। এরা এখন লুটপাট এবং চাঁদা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ভিন্ন পরিচয়ে। জাতীয় নেতাদের মাঠ পর্যায়ের এ চিত্রকে সামলাতে হবে কঠোরভাবে। নইলে গণবিপ্লবের লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে- এসব রঙ বদলানো গিরগিটিদের অপতৎপরতায়। এ রকম হাইব্রিড কর্মী যেকোনো দলের জন্য বিপজ্জনক। এদের ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করার ব্যাপারে জনগণ এখন আরো তীক্ষধী এবং সর্তক। গ্রামের হাটবাজার, অফিস-আদালত ও চায়ের দোকানে এদের নিয়ে এখন আলোচনা। আরো একটা উদ্বেগের বিষয়। এলাকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মানববন্ধনের হিড়িক। লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষকে অপমানজনকভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা। পেছন থেকে এটা করছেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা যারা বিগত সরকারের অনুগ্রহভাজন। গ্রামের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিগত সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট পরিচালনা পর্ষদ এ ক্ষেত্রে পালন করছে নেপথ্য ভূমিকা। ছাত্রছাত্রীরা এখন লেখাপড়ার পরিবর্তে নিজেদের সম্মানিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হেেচ্ছ। এ ব্যাপারে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সদাজাগ্রত ভূমিকার বিকল্প নেই। শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য কোনোক্রমে মঙ্গলজনক নয়।
যেকোনো ছাত্র গণবিপ্লবের পর জনগণের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা থাকে। আমাদের দেশ এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা- আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক দুর্বলতা-সর্বোপরী প্রলয়ঙ্কারী বন্যার তাণ্ডবের মুহূর্তে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার আড়ালে সচিবালয় অবরুদ্ধ করে প্রশাসনকে অকেজো করে দেয়ার অপচেষ্টা প্রতিবিপ্লবের সঙ্কেত দেয়। ইদানীং বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে নানাভাবে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা লক্ষ্য করা যােেচ্ছ। বন্যা-পরবর্তী সময়ে যখন প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের জীবন রক্ষাকারী ওষুধের, ঠিক তখন ওষুধ শিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলো অশান্ত করার অপচেষ্টা নিশ্চয় প্রশাসনকে স্বস্তিতে রাখার সঙ্কেত নয়। এটা দেশবাসী খুব ভালোভাবে বোঝেন। আর বোঝেন বলে তারা ধৈর্য ধরেছেন। এখনো পরাজিত শক্তির সহায়করা প্রশাসন, বিচার, আইনশৃঙ্খলা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বহাল তবিয়তে বিরাজ করছেন অথবা নতুনভাবে পুনর্বাসিত হচ্ছেন। তাদের পুনর্বাসন করে, ক্ষমতায় রেখে সার্বজনীন মুক্ত নির্বাচনের আশা করা কতটুকু যৌক্তিক তা অবশ্যই ভেবে দেখার দাবি রাখে।
এরা যে আবারো ‘শিশুলীগ’ মার্কা নির্বাচনের চেষ্টা করবে না তার নিশ্চয়তা আছে কি? নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, ভোটার তালিকা সংশোধন, প্রয়োজনে নির্বাচনী এলাকার পুনর্নিবন্যাস সর্বোপরি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, ভোটারদের আস্থা অর্জন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে দেশবাসীর সাথে সাথে সম্মানিত রাজনৈতিক নেতাদের প্রজ্ঞা এবং ধৈর্য এখন পরীক্ষার সম্মুখীন। বিভিন্ন বিভাগে এর আগে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ এখনো তাদের চাকরির বয়সসীমা অতিক্রান্ত হয়নি, তাদের সম্ভব হলে পূর্ণ জ্যেষ্ঠতা দিয়ে চাকরিতে পুনর্বাসিত করা যায় কি না- ভেবে দেখা যেতে পারে। এদের পুনর্বাসিত করা গেলে প্রশাসন অনেকটাই নির্ভার হতে পারে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষা-স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এটা করা যেতে পারে অনায়াসে। সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রেও সম্ভব হলে এটা করা গেলে তা হবে দেশের জন্য মঙ্গলজনক।
আর একটা ব্যাপারে সবার দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। তা হচ্ছে মামলার পর মামলা দেয়া। এসব মামলার বহরে জনগণ খুশি হবে নিঃসন্দেহে, কিন্তু যৌক্তিক কাঠামো ছাড়া এসব মামলার অভিযুক্তদের ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের শারীরিক নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। ইদানীং কয়েকজন আসামির ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। এটা কোনো ক্রমে বাঞ্ছনীয় নয়। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সবাই অভিযুক্ত, এটা সবার মনে রাখা দরকার। মানবিক আচরণ সুবিচারের বাহ্যিক প্রকাশ। ইদানীং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভাজন তৈরির একটি সুক্ষ্ম প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে জাতীয় নেতারা সজাগ আছেন বলে আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস। এ ব্যাপারে সর্তক হওয়া দরকার।
বিগত সরকারের আমলে কত অস্ত্র নামে-বেনামে তাদের লেঠেল এবং হেলমেট বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে তার একটা হিসেব তৈরি করা প্রয়োজন; এসব অস্ত্র মাঠে রেখে নির্বাচন ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে না। ভোটারদের নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং কারা কিভাবে এসব অস্ত্র পেয়েছে তা বের করে- অপরাধীদের আইনি শাস্তি বিধান করা প্রয়োজন নির্বাচনের আগে। অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, আইনশৃঙ্খলার স্থিতি, প্রশাসনিক সংস্কার, প্রতিবিপ্লবের হুমকি প্রতিরোধ, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রিয় সংস্কার বিষয়ে সরকার এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলোচনা হওয়া এবং ঐকমত্য তৈরি হওয়া এখন সময়ের দাবি।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email-shah.b.islam@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা