২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কাণ্ডারি হুঁশিয়ার

কাণ্ডারি হুঁশিয়ার - ছবি : সংগৃহীত

৫ আগস্ট সমস্ত বিশ্ববাসী দেখেছে এক আশ্চর্য, অকল্পনীয় ছাত্র গণজাগরণ। এরকম ঘটেছিল ঊনসত্তরে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে, যা জন্ম দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের। ঘটেছিল নব্বইয়ে যা বিদায় করেছিল এক স্বৈরশাসককে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপক, উত্তাল, রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থান এবারের বাংলা বসন্ত। দুর্বার গণজোয়ার; যার নেতৃত্বে ছিল এদেশের অকুতোভয় ছাত্রসমাজ; নতুন করে রক্তের অক্ষরে লিখল বিজয়ের ইতিহাস। শাসক দলের রক্তচক্ষু, তাদের লেলিয়ে দেয়া রক্তপিপাসু খুনি বাহিনীর মোকাবেলা করে এসেছে এ বিজয়; এ মুক্তি।

১৫ বছরের নির্মম অত্যাচার, গুম, খুন, দুর্নীতি, অর্থপাচার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের পর নিতান্তই করুণভাবে- পালিয়ে যেতে হয়েছে স্বৈরশাসককে। ইতিহাসের ধারা এটাই। জনগণ যখন রুখে দাঁড়ায়, পালানোর পথ থাকে না অত্যাচারীর। ইরানের শাহ পালিয়ে আশ্রয় পাননি কোথাও, পোল্যান্ডের নিকোলাই চসেস্কু মাটির নিচে নিরাপদ প্রাসাদ তৈরি করে বাঁচতে চেয়েছিলেন; পারেননি। জনরোষের মুখে হিটলার মুসোলিনির ঘটেছিল নির্মম পরিণতি। স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেন এবং লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন তাদের দেশের মানুষকে খুশি করতে পারেনি। শ্রীলঙ্কার উন্নয়নের উদ্ভাস রাজাপাকসেকে রক্ষা করতে পারেনি জনরোষ থেকে। তাদের পরিণতি থেকে আমাদের দেশের সদ্য পতিত স্বৈরশাসক শিক্ষা নেননি। এদেশের ১৮ কোটি জনগণকে ভেবেছিলেন তাদের দাস।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফেরিওয়ালা পুরো মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনাদের যতœ আতিথ্যে ছিলেন, এ কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে অন্যের সমালোচনায় ছিলেন মুখর। তার চতুর্দিকে দলদাসেরা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বানিয়ে দিয়েছিলেন দেবাসুর, তার মন মানসিকতায় তৈরি করেছিলেন অমর এবং অক্ষয়ের চেতনা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এরা রঙ বদলিয়ে গিরগিটির মতো আবার ক্ষমতায় আলো-আঁধারিতে উঁকি মারছেন। এদের চিনে রাখতে হবে। এদের থেকে সাবধান।

বিজয়ের এ ক্ষণে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি স্থাপনায় এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করা প্রথম দায়িত্ব। যারা সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম উসকে দিচ্ছেন তারা দেশের শত্রু। এরা পরিকল্পিতভাবে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছেন। এদের থেকে সাবধান। যে সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে তা এ দেশের। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নির্মিত। আইনকে নিজ গতিতে চলতে দেয়া সামাজিক নিরাপত্তার অপরিহার্য শর্ত। সবার আইন মেনে চলার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা থাকা দরকার। স্থানীয়ভাবে জনগণ যেন যে কোনো আইনবিরোধী কাজ ঠেকাতে পারেন এ ব্যাপারে উদ্বুব্ধ করা প্রয়োজন সর্বাগ্রে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসতে হবে।

আমাদের তরুণরা, ছাত্র-ছাত্রী ভাইবোনেরা যে রক্তঝরা বিজয় অর্জন করেছেন, প্রমাণ করেছেন- ক্ষমতা স্থায়ীকরণের রাজনীতি নয়; দেশ গড়ার রাজনীতির প্রয়োজন নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য, তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ অভিবাদন। মাগফিরাত কামনা করি যারা তাদের রক্তে এদেশের সবুজ প্রান্তরকে লালিমায় ঢেকে দিয়েছেন। আশু রোগমুক্তি কামনা করি যারা আহত হয়েছেন। একই সাথে শ্রদ্ধার সাথে বিনয়ের সাথে সবাইকে সচেতন করতে চাই; যারা এ অর্জন ব্যর্থতায় পরিণত করতে চাচ্ছে তাদের ব্যাপারে। সবার মনে রাখা দরকার- এ দেশে সবাই বাংলাদেশী। এক জাতীয়তাবাদের অচ্ছেদ্য বন্ধনে সম্পর্কিত। যারা এর ভেতর সঙ্ঘাত সৃষ্টি করতে চায়, তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকা সময়ের দাবি। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করার ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

আমাদের ভুলে অসাবধানতায় যেন রক্তার্জিত বিজয় বেহাত হয়ে না যায় এ ব্যাপারে সবার, বিশেষত রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা অপরিসীম। এখন ক্ষমতার চেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের নিরাপত্তা। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। যারা এসবের সাথে যুক্ত তাদের ব্যাপারে এখনই কঠোর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। বিজয় পরবর্তী সময়ে যখন বিজয়ের সৈনিকরা রাস্তা পরিষ্কার করতে হাতে নিয়েছেন ঝাড়–, সামলাচ্ছেন রাজপথে গাড়ি চলাচল, এদের সাহায্য করার পরিবর্তে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরানোর কার্যকর ভূমিকার পরিবর্তে বিজয় সমাবেশ নিতান্ত বেমানান। এ বিজয় এসেছে তরুণ, অকুতোভয় ছাত্র-ছাত্রীদের অকাতর অসম সাহসী রক্তদানের বিনিময়ে। বিজয় উৎসব তাদের মানায়। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতা এ বিজয় এগিয়ে নেবে নিঃসন্দেহে। এখন প্রয়োজন অস্থিরতা প্রশমনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে, সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ পর্যায়ে কর্মতৎপরতা। প্রয়োজন একীভূত কর্মসূচি। মনে রাখা দরকার এখন যেকোনো হঠকারিতা, যেকোনো বিভাজন অস্থিরতা বাড়িয়ে দেবে, যা কারো কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় কবির একটি উক্তিই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি তা হচ্ছে- ‘কাণ্ডারি হুঁশিয়ার’।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
জবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক হিমেল, সদস্যসচিব আরেফিন এমন একটি দেশ চাই যাকে কেউ ভাগ করতে পারবে না : জামায়াত আমির কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তার ঘটনায় আটক ৫ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের দেখতে হাসপাতালে রিজভী জাতীয় ফুটবল দলকে আওয়ামীকরন করে ধ্বংস করা হয়েছে : মেজর হাফিজ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের নতুন ডিজি আবু সুফিয়ান আ’লীগের মতো অপকর্ম করব না, বাংলাদেশ গড়ব : পিন্টু মানবকল্যাণে সম্পৃক্ত থাকলেই স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবো : তারেক রহমান নিখোঁজের ৬ দিন পর বিক্রয়কর্মীর লাশ উদ্ধার বেড়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত খোকনের লাশ উত্তোলন আসর সেরা আবু হায়দার, ব্যাটে-বলে সবার উপরে নাইম-আলাউদ্দিন

সকল