২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেশ জাতি রাষ্ট্র

তামাশার নির্বাচন : অতঃপর

তামাশার নির্বাচন : অতঃপর - নয়া দিগন্ত

নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী তামাশার শেষ নেই। সংসদীয় রীতি-নীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বেপরোয়াভাবে অবজ্ঞা করে তারা ক্ষমতার মসনদকে চিরস্থায়ী করার জন্য যা করার তাই করছে। ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের অধীনে যে নির্বাচন হয়, তাতে সত্যিকারভাবেই তাদের বিজয় নিশ্চিত ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বকারী দল হিসেবে তাদের জনপ্রিয়তা তখনো এমন হয়ে যায়নি যে, নমনীয় হলে তাদের মসনদ উবে যাবে। সেখানেও তারা বিরোধী দল, ব্যক্তি ও শক্তিকে দাঁড়াতে দেয়নি।

প্রার্থী হাইজ্যাক, ভোটের ফলাফল রদবদল ও হেলিকপ্টারে ব্যালট পেপার ঢাকায় নিয়ে আসা- তামাশা কম হয়নি। অবশেষে সব তামাশার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনব্যবস্থাকে চিরতরে নির্বাসনে পাঠানো হয়। বাকশাল- এক দল, এক নেতা, এক দেশ ঘোষিত হয়। অবশেষে ২১ বছর পর যখন তারা বিভাজন ও প্রতারণা কৌশলে আবার ক্ষমতায় আসে, তখনো তারা বদলায়নি এতটুকু। ২০০১ সালের নির্বাচনে যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ সাইদ ও প্রেসিডেন্ট শাহাবুদ্দিন তাদের আবদার মোতাবেক নির্বাচনকে বাতিল করতে অস্বীকার করেন, তখন তারা বিশ্বাসঘাতকতার খেতাবে ভূষিত হয়। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠার তাণ্ডব ঘটিয়ে যখন ওয়ান-ইলেভেনকে তারা অনিবার্য করে তোলে, তখন তারা ‘আমাদের আন্দোলনের ফসল’ বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়, তা দেশে অভিহিত হয়েছে ‘অভিনব’ নির্বাচন হিসেবে। লন্ডনের দ্য ইকোনমিস্টের ভাষায়- ‘বস্তা বস্তা ভারতীয় টাকা আর প্যাকেজ ডিলের নির্বাচন হিসেবে’ গণ্য হয়েছে তা। আসলে সেটিও ছিল এক বড় তামাশা। তারপর সেই যে তারা ক্ষমতায় জেঁকে বসেছে তা আর নড়নচড়ন নেই।

১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে তারা শিক্ষা নেয় যে, বাংলাদেশের মানুষের ভোটে তাদের ক্ষমতায় আসার স্বাভাবিক কোনো পথ নেই। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর তারা কিছুটা সংযমের পরিচয় দিলেও ২০০৯ সাল থেকে তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ক্ষমতার প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে দেয়ার জন্য তারা নির্মম হতে মোটেও দ্বিধা করেনি। দেশের সবচেয়ে নন্দিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়। তার উত্তরাধিকার তারেক জিয়াকে উৎখাত করার জন্য মামলায় অস্বাভাবিক রায় দেয়া হয়। এই সেদিনও তিনি বলেছেন, ‘ওটাকে ধরে এনে শাস্তি দেবো’। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার যত কলাকৌশল আছে তা সবই প্রয়োগ করেছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, বিএনপি তাদের ভাষায় শেষ হয়ে গেছে- ২০২৪ সালের তথাকথিত নিরঙ্কুশ বিজয়ের পরও তাদের বিরুদ্ধে আস্ফালনের অন্ত নেই।

যে নির্বাচনব্যবস্থা সংসদীয় ব্যবস্থার প্রাণ ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তাকে এরা তামাশায় পরিণত করেছে। ১৫৩ জনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে তারা সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক চাপে আরেকটি শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। ওই নির্বাচনে যাতে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে তার জন্য কূটকৌশল কম করেনি আওয়ামী লীগ। ওয়ান-ইলেভেন নিয়ে লিখে লেখক মহিউদ্দিন আহমদ কলমান্তরে সত্যটি ফাঁস করেছেন। সে সময়ে তিনি প্রকাশ্যে বিএনপিকে আহ্বান জানিয়েছিলেন নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিতে। অপ্রকাশ্যে এমন সব ব্যবস্থাদি নিয়েছিলেন যাতে বিএনপি গোস্যা করে নির্বাচনে না যায়। শেষ মুহূর্তে যখন বিএনপি শিডিউল পরিবর্তনের কথা বলেছিল, তখন বশংবদ নির্বাচন কমিশন তা করেনি। বেগম জিয়াকে নিজে ফোন করে চমক দেখিয়েছিলেন, আবার সেই ফোনালাপ ফাঁস করে দিয়ে তাকে বিব্রত করতেও তাদের দ্বিধা হয়নি। এর চেয়ে তামাশার বিষয় আর কী হতে পারে!

২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি বলে সুবিধাবাদী মানুষেরা গালাগাল করেছে। ২০১৮ সালে সেই বদনাম ঘোচানোর জন্য বিএনপি ড. কামালের নেতৃত্বে গঠিত ফ্রন্টে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণভবনে বিশাল সংলাপ হলো। তিনি বললেন, আমায় বিশ্বাস করুন। জাতি তাকে বিশ্বাস করল। অবশেষে দিনের ভোট রাতে হলো। নিশীথ নির্বাচনের দেশ বলে পরিচিতি পেলো বাংলাদেশ। আগের ধারাবাহিকতায় সেটিও একটি তামাশা।

২০২৪ সালের সমাগত নির্বাচন নিয়ে আর কোনো তামাশা হবে না- শতবার এরকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হলো। আওয়ামী সরকার তাদের পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী বিএনপির ২৮ অক্টোবরের জনসভাকে পণ্ড করে দিয়ে কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়। পুলিশ হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আগুন ও হাসপাতালে হামলার মতো অঘটন ঘটানো হয়। এভাবে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচনী ফায়দা লোটার ব্যবস্থা করে। বিএনপির সব শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।

হামলা-মামলা ও কোর্টের সাজা দিয়ে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুপযোগী করে দেয়া হয়। বিএনপির অফিস ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত তথাকথিত নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এবং এখনো তা বন্ধ রয়েছে। সংলাপের মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছার মার্কিন আবেদনকেও অবশেষে তারা অগ্রাহ্য করে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়। তামাশার নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণের ফাঁদ হিসেবে তফসিল পরিবর্তনের কথা বলা হয়। এটি ছিল লোকদেখানো বিষয়। অবশেষে ৭ জানুয়ারি তামাশার নির্বাচনটি করে তারা প্রমাণ করেছে, আসলে নির্বাচনী খাঁচায় বিএনপিকে ঢুকানোর জন্য তাদের এটি ছিল কূটকৌশল। ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যে নির্বাচনী ইতিহাস আওয়ামী লীগের তাতে যেকোনো নাগরিক নিশ্চিন্তভাবে বুঝতে পারে যে, তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সে জন্য বিএনপি শর্ত দিয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনী সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
রোজ গার্ডেন থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ইতিহাস প্রমাণ করে, ক্ষমতা লাভের জন্য তারা মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও খুন জখম সব কিছুই করতে পারে। কারচুপি ও কারসাজিতে তাদের জুড়ি নেই। ন্যায় ও নৈতিকতার বালাই তাদের নেই। ২০১১ সালে এরকম একটি বড় প্রমাণ মেলে। তাদের আন্দোলনের অর্জন হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজিত হয়। বিচারালয়ের ঠুনকো অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে তারা সেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ করে। পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য গঠিত কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার সুপারিশ করে। অ্যামিকাস কিউরি বা বিজ্ঞ আইনজ্ঞরা প্রায় সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি বিচারালয়ের রায়ে আরো দু’-এক বারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার সুপারিশ করা হয়। সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে তিনি তার প্রভূত ক্ষমতাবলে সংবিধানের এমন সব সংশোধনী আনেন, যা তার ক্ষমতাকে চিরতরে পাকাপোক্ত করার কাজে লাগে। যেমন সংসদ বিলোপের তিন মাস আগে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এটি ছিল সংসদ বিলোপের তিন মাস পরে। মজার ব্যাপার, ৭ জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচন যখন চলছিল, তখন সব সংসদ সদস্য স্বপদে বহাল ছিলেন। সংসদ সদস্য থেকেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এর আগে রাজনৈতিক আন্দোলনের ফলে আওয়ামী গদি যখন কিছুটা টালমাটাল হয়ে উঠে, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আওয়ামী শিক্ষক প্রস্তাব করেছিলেন, সংসদ এক ঘোষণায় তার মেয়াদ আরো চার বছর বাড়িয়ে নিতে পারে। এই তামাশার নির্বাচনটি না করতে পারলে হয়তো আওয়ামী নেতৃত্ব মেয়াদ বাড়ানোর চিন্তা করত- এরকম গুঞ্জন ছিল।

২০২৪ সালের তথাকথিত নির্বাচনটি সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে একটি স্পষ্ট তামাশা বলে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই নির্বাচনে সরকারবিরোধী ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠী অংশগ্রহণ করেনি। গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ব্যতীত এরকম নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। এটি এরকম নয় যে, বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি; বরং যাতে তারা কেউই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সে জন্য চরম নিপীড়ন নির্যাতনের পথ বেছে নেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। অন্যান্য সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলকে আদৌ নিবন্ধন দেয়া হয়নি। ওবায়দুল কাদের বারবার নির্বাচনকে খেলা বলছিলেন। শেষ খেলায় প্রতিযোগীদের হাত-পা বেঁধে নির্বাচন করতে বলে তিনি আসলেই বড় রাজনৈতিক তামাশার অবতারণা করেছেন। নির্বাচনী খেলায় যখন সব বিরোধী প্রতিযোগী নিঃশেষ তখন ডামি খেলোয়াড়ের আয়োজন করতে হয়েছে। ডামি খেলোয়াড়ের নাম করতে তাদের একটুও বাধেনি। নির্বাচনের পরে দেখা যাচ্ছে, ডামি খেলোয়াড়দের দাপটেই তারা কুপোকাত। আসল খেলোয়াড়ের সাক্ষাৎ পেলে তারাই বরং নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতেন। এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

দেশের জনসাধারণ কতটা ক্ষুব্ধ হলে ডামি নামের খড়কুটোকে আঁকড়ে ধরে- তা সহজেই বোধগম্য। সবাই জানে- স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী সবাই আওয়ামী লীগের লোক। তবুও নৌকাকে ডুবানোর জন্য তারা ঈগল পাখির ডানায় ভর করেছে। ট্রাকে উঠেছে। অথবা কেটলি ধরে এগিয়েছে। এ নির্বাচনী খেলার একটি মজার উদাহরণ হচ্ছে- ১৪ দলের ছয়জনকে নমিনেশন দেয়া। তার মানে, দল প্রতি আধাজনও পাননি তারা। আরো মজার ব্যাপার আমরা দেখলাম যে, সিকি-দুআনির দাবিদাররা কুপোকাত হয়েছেন। মানুষ কত ক্ষিপ্ত হলে নেতার এপিএসকেও জিতিয়ে দেয়। নির্বাচনে সবচেয়ে বড় তামাশা দেখিয়েছে জাতীয় পার্টি। ৭ জানুয়ারির আগেই তাদের অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহার করেছেন। ২৬ জনের যে ম্যান্ডেট তারা পেয়েছিলেন সেখানেও ঘাটতি। নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ১১ জন। রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের নিশ্চিহ্ন হওয়ার অবস্থা। রসিকতা হচ্ছিল যে, এই নির্বাচনটি আসলে বিরোধী দল নির্ণয়ের নির্বাচন। এখন ৬১ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, এরা যদি একত্রিত হন- অবশ্য এ ধরনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তাহলে তারাই বিরোধী দল হতে পারতেন। কিন্তু আসল তামাশা হলো সবাই তাদের লোক। দুই-চার দিন পর দেখবেন, তারা দলে দলে সরকারি দলে যোগদান করছেন। অবশেষে হারাধনের সাতটি ছেলে টিকে কিনা সন্দেহ। সদ্য নির্বাচিত কল্যাণ পার্টি প্রধান জেনারেল ইবরাহিম নির্বাচনপূর্বে বিরোধী নেতা হওয়ার আশা প্রকাশ করেছিলেন। এখন কতটা কী হয় তা ভবিষ্যৎই বলতে পারে। গণমাধ্যমে বিশ্বাসঘাতক বলে কথিত কেউই নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেননি। মীর জাফরদের উচিত শিক্ষা হয়েছে বলে মানুষ মনে করে।

৭ জানুয়ারির ইলেকশনকে ইলেকশন না বলে সিলেকশন বলা ভালো। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি ডিক্লারেশনও বলে। গৃহপালিত ও নতজানু নেতাদের কেউ কেউ এখন বলছেন, তারা বিশ্বাসভঙ্গের মাশুল দিচ্ছেন। অনেকে প্রতারিত হয়েছেন। অপমান অপদস্থের সম্মুখীন হয়েছেন। বস্তুত নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হয়নি। জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বাইরে রেখে নির্বাচন বৈধতা পেতে পারে না। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কারণ আমরা আর মামুরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট বর্জন তারই সাক্ষ্য দেয়। নির্বাচন কমিশন নিজেদের অন্যায়কে জায়েজ করার জন্য বোগাস পরিসংখ্যান দিচ্ছেন। দেশে ও বিদেশে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। পর্যবেক্ষক নামের কিছু কিছু রাজকীয় মেহমান সার্টিফিকেট দিলেও তা ধোপে টিকবে না।

তামাশা হোক আর প্রতারণাই হোক নির্বাচন একটি হয়ে গেছে- এটিই সত্য। এ নির্বাচনকে প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার প্রয়াস দেশে ও বিদেশে থাকবে। তিনি কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। ভোট দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কে কী বলছে তা নিয়ে মাথা ঘামাই না’। কথাটি কবিগুরুর একটি জনপ্রিয় গানের কলিকে মনে করিয়ে দেয়- ‘তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই’। যেহেতু আওয়ামীবিরোধী শক্তির আহ্বানে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ নির্বাচন বর্জন করেছে সেহেতু সেই বর্জনের প্রাতিষ্ঠানিকতা দেয়ার প্রয়াস নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। রাজনৈতিক দলগুলো সে ডান-বাম সেক্যুলার বা ইসলামিক- সবাইকে এক হয়ে একটি অভিন্ন আন্দোলনে শরিক হতে হবে। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার এই যে, সরকারপ্রধান নির্বাচন-পরবর্তী গণআন্দোলন সম্পর্কে ইতঃপূর্বে উল্লেখ করেছেন। সেটি তাদের রাষ্ট্রিক ব্যর্থতা ঢাকার অপকৌশল বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে।

রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব ও কূটনৈতিক ব্যর্থতা একটি দুর্ভিক্ষ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। সে অবস্থায় সরকারের অস্তিত্ব তথা এই তামাশার নির্বাচন চরম অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করতে পারে। প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলেই জনগণ আশা করে। যতদিন পর্যন্ত জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হবে তথা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত রাজনৈতিক সঙ্কটের সুরাহা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement