২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাজনীতিতে গেড়ে বসেছে রাজতন্ত্র

-

রাজনীতি এখন আর প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়; বরং একজন মানুষ যে নিঃশ্বাস নেয় তার জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। রাজনীতিতেও ঢেউ লাগে, হাওয়ার জোরে উত্তরের বাতাস দক্ষিণে বহে এবং দক্ষিণের হাওয়াও উত্তরে প্রবহমান হয়ে যায়। এ ছাড়াও ডানের রাজনীতিকরা বামে মনোনিবেশ এবং বামও ডানে গিয়ে নিজেকে জাহির করে ভিন্নভাবে।

এ দেশের ধনীক শ্রেণীর সুবিধাবাদী চক্র বিভিন্ন উপাধি গ্রহণের মাধ্যমে ব্রিটিশদের গোলামি স্বাচ্ছন্দ্যে মেনে নিয়েছিল। ‘রায় বাহাদুর’, ‘খান বাহাদুর’, ‘স্যার’ জমিদারি সনদসহ বিভিন্ন শ্রেণীর খেতাব দিয়ে ব্রিটিশরা প্রভাবশালী ভারতীয়দের পোষ মানাতে ছিল অত্যন্ত পারদর্শী। এলাকাভিত্তিক গড়ে উঠা কিছু উদ্যোক্তা শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী সংগঠন গড়ে তোলেন, পীর/মাশায়েখ (যেমন ফকির মজনুশাহ গং) ও সন্ন্যাসীরা তাদের ভক্তদের ঐক্যবদ্ধ করে, কবি সাহিত্যিকরা লেখনীর মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী সেন্টিমেন্ট গড়ে তোলেন। সমষ্টিগতভাবে না হলেও দেশপ্রেমিকদের দ্বারা অনুশীলনের মাধ্যমে গড়ে উঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সশস্ত্রবাহিনীর মাধ্যমে খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ বা গুপ্ত হামলা করে ব্রিটিশদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, যা তখন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের ভিত জোরদার করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তখনো কোনো রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠেনি।

তবে আন্দোলনটি স্বদেশী আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। তারা ব্রিটিশ তৈরি সামগ্রী বর্জন অব্যাহত রাখে। গান্ধী মনে করতেন, শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনে ব্রিটিশ থেকে ভারতকে স্বাধীন করা সম্ভব এবং ১৯৪২ সালে ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার ঘোষণা দেন। পক্ষান্তরে নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু মনে করতেন, সশস্ত্র বিপ্লব ছাড়া ব্রিটিশদের ভারত থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব নয়। ওই থিউরিগুলো কোনোটিই যখন পরিপূর্ণ শতভাগ সফল হচ্ছিল না তখনই রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়, ভারতে যার অগ্রভাগে ছিল জওয়াহেরলাল নেহরু পরিবার এবং পাকিস্তানের তথা পশ্চিম পাকিস্তানের অগ্রভাবে ছিলেন কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পূর্ববাংলার অগ্রভাগে ছিলেন শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, স্যার নবাব সলিমউল্লাহ।
বঙ্গভঙ্গের অগ্রদূত স্যার সলিমউল্লাহকে উচ্চবর্ণের ধনী হিন্দুদের ষড়যন্ত্রে কলকাতায় বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। এখানেই শেষ নয়, মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য ঢাকাস্থ পারিবারিক কবরস্থান থেকে পোস্টমর্টেমের জন্য লাশ যেন উত্তোলন করা না যায় সে জন্য ব্রিটিশ সেনারা কয়েক মাস কবরটি পাহারা দিয়ে রাখে। ভারতে কংগ্রেস ও পাকিস্তানে মুসলিম লীগই রাজনৈতিক ময়দানে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল। তবে সৃষ্টিলগ্নে কংগ্রেস নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না; বরং এটি ছিল ব্রিটিশবিরোধী একটি প্ল্যাটফর্ম। কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজেও কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও মুসলিম লীগের সাথে একনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। পাকিস্তান গঠন আন্দোলনে তার ছিল সক্রিয় ভূমিকা। কিন্তুক মুসলিম লীগের শাসনামল জনগণের আশা-আখাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। ফলে সেনাছাউনির পৃষ্ঠপোষকতায় ‘কনভেনশন মুসলিম লীগ’ ফিল্ড মার্শাল জেনারেল আইউব খানের নেতৃত্বে সামরিক আইনের আদলে পাকিস্তান শাসন করে। পাকিস্তান স্বাধীনতার দুই যুগ পার হতে না হতেই জনগণের মুখে ভিন্ন সুর শুরু হয়। এক সময় যেখানে বলা হতো ‘হাতমে বিড়ি মুখমে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান।’ সেই জনগণের পক্ষ থেকে আবার আওয়াজ উঠল ‘লাখো আদমি ভুখা হ্যায়, এ আজাদি জুটা হ্যায়।’

হালে বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর একটি পরিষ্কার ধারণা নেয়ার লক্ষ্যে ইতিহাস পর্যালোচনা করা হলো। বাঙালি তো বটেই, নিজ আত্মীয়স্বজনদের ষড়যন্ত্রে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় পক্ষান্তরে সিরাজউদদৌলার পতনের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্য ডুবে যায়। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লব স্বাধীনতার প্রশ্নে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক ছিল। আসাম ও পূর্ববঙ্গকে নিয়ে ঢাকাকে রাজধানী করে লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে আলাদা প্রদেশ ঘোষণা করেন। রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ‘রাখি বন্ধনী’ শিরোনামে দুই বাংলাকে এক করার জন্য আন্দোলন শুরু হলে লর্ড হার্ডিঞ্জ বঙ্গভঙ্গ রদ করে ১৯১১ সালে পূর্ববাংলাকে পুনরায় কলকাতার নিয়ন্ত্রণাধীন করেন। ১৯০৬ সালে স্যার সলিমউল্লাহ মুসলিম লীগ গঠন করার উদ্যোগ নেন, অন্যদিকে, অরবিন্দ ঘোষ শুরু করেন স্বদেশী আন্দোলন, যার মধ্যে সশস্ত্র বিপ্লবের বীজ রোপিত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শরুর পরপরই ১৯৩৯ সালে কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব থিওরি ও ১৯৪০ সালে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের উদ্যোগে লাহোর প্রস্তাবে মুসলমানদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সুনির্দিষ্ট দাবি উপস্থাপিত হয়। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ২৩ মাসের মাথায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনে অবস্থিত কে এম বশির হুমাউনের মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন এবং নিম্নবর্ণিত কমিটি দিয়ে তাদের অগ্রযাত্রা শুরু।

১. মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সভাপতি; ২. আবুল মুনসুর আহমেদ, সহ-সভাপতি; ৩. আতাউর রহমান খান, সহ-সভাপতি; ৪. আবদুল সালাম খান, সহ-সভাপতি; ৫. শামছুল হক, সাধারণ সম্পাদক; ৬. শেখ মুজিবুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক; ৭. খন্দকার মোশতাক আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক; ৮. রফিকুল আহসান, যুগ্ম সম্পাদক।

পরবর্তীতে মুসলিম কথাটি বাদ দিয়ে দলের নাম আওয়ামী লীগ রাখা হয়। ১৯৫৭ সালের ২৫ জুলাই রূপমহলে সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী মুসলিম লীগের তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি মওলানা ভাসানী ন্যাপ (ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি) গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতারা আওয়ামী লীগে থাকতে পারেননি। তবে যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল আহসানের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে লেখকের কোনো তথ্য জানা নেই। লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামছুল হকের কবর খুঁজে পাওয়া যায়নি দীর্ঘদিন। মাত্র কয়েক বছর আগে টাঙ্গাইল জেলায় কোনো এক গ্রামে তার কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সংসদে আইন পাস করে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক শ্রমিক লীগ’ নামান্তরে বাকশাল গঠন করে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল একদলীয় শাসন। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর পর্যায়ক্রমে যখন বহুদলীয় রাজনীতির চর্চা শুরু হয় তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য ড. কামাল হোসেনের উদ্যোগে শেখ হাসিনাকে দেশে এনে সভানেত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়, যা দলীয় আস্থার সাথে তিনি এখনো পালন করছেন। মুজিবকে গ্রেফতার করে যখন পাকিস্তানে নিয়ে যায়, তখন ড. কামাল হোসেনকেও সাথে নেয়। এতেই বোঝা যায়, তিনি মুজিবের কতটুকু আস্থাভাজন ছিলেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে পারেননি; বরং হালে তিনি শেখ হাসিনা সরকারের কঠিন সমালোচক।

জিয়াউর রহমান যাদের নিয়ে জাগদল, পরবর্তীতে বিএনপি গঠন করেন তার মধ্যে প্রথম স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রথম স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. কর্নেল অলি আহমদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, তানভীর আহম্মেদ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন, দল ছেড়ে চলে গেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, পরে দলে ফিরেছেন, একই অবস্থা হয়েছে মহাসচিব ওবায়দুর রহমানের, আ: মান্নান ভূঁইয়াসহ বহিষ্কৃত হয়েছেন দলের প্রভুত বাঘা বাঘা নেতা।

রাজনীতির মাঠে হালে নীতিগতভাবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে। দলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক মতপার্থক্য হওয়াটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মতবিরোধ হতেই পারে। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতি ব্যক্তিকেন্দ্রিক তথা ‘ওয়ান ম্যান শো’ হয়ে যাওয়ার কারণ ‘ব্যক্তিকে’ তুষ্ট রাখাই এখন রাজনীতি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা পিতা-মাতার সাথে এমন আচরণ করবে না যাতে তারা দুঃখ পেয়ে ‘উহ’ শব্দটি করে। অর্থাৎ কোনো কারণে পিতা-মাতা মাইন্ড করতে পারে এমন কোনো কথা বা মনোভাব প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু বর্তমানে গণতান্ত্রিক কোনো কোনো দলে শীর্ষ নেতা মাইন্ড করতে পারেন এমন কোনো আলোচনা-সমালোচনা বা উক্তি করা যায় না, করলেই রাজনৈতিক ভাষায় ‘সাইজ’। বিভিন্ন আলোচনার জন্য সভা ডাকা হয় বটে; সে আলোচনার প্রারম্ভেই বলে দেয়া হয়, নেগেটিভ আলোচনা করা যাবে না। অর্থাৎ বক্তব্য শুরু করতে হবে শীর্ষ নেতার প্রশংসা দিয়ে এবং শেষ করতে হয় নেতার সফলতার গান গেয়ে। ফলে শীর্ষ নেতাও দলের ক্রটি-বিচ্যুতির কথা জানতে পারেন না, জানতে পারেন না সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা, মনের আত্মতৃপ্তি লাভ করতে হয় প্রশংসা শুনে শুনে যা এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। মনে রাখা দরকার, তেলযুক্ত খাবার আর তেলযুক্ত কথা, দুটোই সুস্বাদু ও মিষ্টি, প্রথমটি নষ্ট করে শরীর, আর দ্বিতীয়টি নষ্ট করে সমাজ, অথচ সব কিছু জেনেশুনেও কর্তারা এটিই পছন্দ করে। নানাবিধ কারণে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সরকার তাদের জনসমর্থন ধরে রাখতে পারছে না। অন্য দিকে, বিরোধীদলীয় আন্দোলন অর্থাৎ সরকার পতনের অবস্থা সৃষ্টির আন্দোলন কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। তবে কি উভয়পক্ষের প্রতি জনগণ আস্থাহীন? নাকি বিচার বিভাগ-প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জাঁতাকলে নির্বাক হয়ে পড়েছে? নাকি জনগণ উভয় পক্ষের নেতাদের কর্মকাণ্ডে রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছে?

চামচাগিরির চর্চায় যারা অভ্যস্ত নয় তারা সিটকে পড়ে যাচ্ছে, তবে অভ্যন্তরীণ এ লড়াই কেউ ব্যক্তিত্ব আঁকড়ে আছেন, কেউ বা আপস নীতি অবলম্বনে কোনোমতে নিজের ঠাই করে নিচ্ছেন। একজন চাকরিজীবী যে কৌশলে নিজের চাকরি রক্ষাসহ প্রমোশন বাগিয়ে নেয়, রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। সরকারি দলের নেতা ও মন্ত্রীদের বাগাড়ম্বরে মনে হয় না, দেশবাসী কষ্টে আছে- তবে সরকারি ঘরানার লোকেরা তো সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে অবশ্যই আছে। সরকারি ঘরানাদের সেকেন্ড হোমসহ গাড়ি, বাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্সের তো অভাব নেই। দুদকের মামলার খড়গ সবই বিরোধী দলের ওপর এবং মামলার রায়ও অনুরূপভাবেই হচ্ছে। সবার জামিন হলেও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হয় না, বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়াও তার জন্য নিষিদ্ধ। একই আইন দুভাবে প্রয়োগ হচ্ছে। এ মর্মে পাবলিক পারসেপশন হয়তো বিচার বিভাগ আঁচ করতে পারছে না। তবে দেশনেত্রী বেগম খালেজা জিয়া মুক্ত হলে আন্দোলনের দৃশ্যপট পাল্টে যেত। শূন্য থেকে দলকে ক্ষমতায় আনার অভিজ্ঞতা তার রয়েছে।

রাষ্ট্রের আইন-কানুন, বিচার কোনো কিছুই নিজস্ব গতিতে চলছে না, যা চলছে তা একপেশে, শুধু সরকারি ঘরানার স্বার্থরক্ষার জন্য যা করা দরকার তাই করা হচ্ছে। সত্য কথা বা হককথার সংস্কৃতি উঠে গেছে। গণমানুষ প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ফ্রান্সে পুলিশ কর্তৃক কিশোর নাহেল হত্যার প্রতিবাদে গোটা দেশ ছয়দিন বিক্ষোভ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে অনুরূপ ঘটনায় মানুষের ঘুম ভাঙে না। পাছে লোকে কিছু বলে বা ঝুঁকি এড়িয়ে চলার মানুষের মানসিকতাই জুলুমবাজদের অত্যাচারী হাতকে শক্তিশালী করে দিয়েছে। নিয়ম, নীতি, আদর্শ, মানবাধিকার, মানবিক অধিকার, মানবিক আচরণ, বিবেক, বিচার ও আমলাতন্ত্রের নিরপেক্ষতা সাংবিধানিক অধিকার সবই এ দেশে অচল, একটি নীতিই এখন প্রতিষ্ঠিত, জোর যার মুল্লুক তার।

এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা ‘মাছির’ চরিত্র নিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ যে দিকে ‘মধু’ সেখানেই তাদের বিচরণ, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যার ধার ধারে না, শুধু মধু থাকলেই হলো। ফলে সমাজের বিবেকবান মানুষগুলো এখন অবহেলিত সর্বস্তরে। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে শুরু হয়েছে ল্যাং মারার সংস্কৃতি। দলে কার কি অবদান তা পরিমাপ করার ফুরসত কারো নেই। বড় দলে নেই একে অপরের প্রতি ভাতৃত্ববোধ, শুধু রয়েছে ক্ষেত্রমতে হালুয়া-রুটি ও পদ-পদবির ভাগাভাগি। খাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার পথে ধাক্কা মেরে খাদে ফেলে দেয়াটাই যেন একটি রাজনৈতিক কৌশল যা কারো কারো জন্য শূন্যপদ দখলের সহায়ক শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়, যে প্র্যাকটিস অবশ্যই জামায়াতে ইসলামীসহ কট্টর ডান বা বামপন্থী দলে নেই। ল্যাং মেরে ফেলে দেয়া ব্যক্তির শূন্যস্থান পূরণে দলে অবদান থাকুক বা না থাকুক প্রার্থীর অভাব হয় না, চেহারা নমুনা সুন্দর নাদুসনুদুস হলেই হলো, ফলে ফেলোশিপ এখানে অচল। রাজনৈতিক দলে এ ধরনের প্র্যাকটিস গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলা যায় না; বরং এগুলো দলে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে রাজতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে বিএনপির আহবায়ক কমিটি সাংবাদিক তুরাব ছিলেন সত্যের পক্ষে, মানবতার পক্ষে : সেলিম উদ্দিন নাটোরের সেই তরুণ দাস মন্দিরের পাহারাদার নয়, ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে সারজিসের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চায় জামায়াত : মোবারক হোসাইন নিজেদের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করল যুক্তরাষ্ট্র! হাসিনা যত টাকা লুট করে নিয়ে গেছে তা দিয়ে ১০০টি পদ্মা সেতু তৈরি করা যেত : টুকু খুলনায় হত্যাসহ ৪ মামলায় সালাম মুর্শেদীর জামিন নামঞ্জুর কারো লুটপাটের দায়ভার আমি নেব না : মেজর হাফিজ ‘যারা চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করছে দেশের মানুষ তাদেরকেও বর্জন করবে’ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার দিয়ে এনসিএলের ফাইনালে ঢাকা মেট্রো

সকল