০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

এখানেই আমার শৈশব

এখানেই আমার শৈশব - ছবি : সংগৃহীত

১৬ এপ্রিল। বাসা থেকে বেশ দূরে নাতি-নাতনিসহ সবাই গিয়েছিলাম নেচার পার্কে। চ্যাফোর্ড গর্জেস নেচার পার্ক হলো প্রায় ২০০ একরের প্রকৃতির রিজার্ভ যা ইংল্যান্ডের চ্যাফো হান্ড্রেডে অবস্থিত। পার্কের বেশির ভাগ এলাকা চক মাটি দ্বারা গঠিত। নুড়ি এবং চকের জন্য এই এলাকা ব্যাপকভাবে খনন করা হয়েছিল। চকমাটির উপর নির্ভরশীল, যার মধ্যে বিডনি বেচ, ব্লাডার ক্যাস্পিয়ান মৌমাছি অর্কিডসহ ৯ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। এখানে আছে খড়কুটো বালুকাময় পরিসরে বিপুল সংখ্যক অস্বাভাবিক পোকামাকড়, রয়েছে বনভূমিতে গ্রেট ক্রেস্টেড নিউটস, স্নোওয়ার্ম, অ্যাডার, বাদুড়, কিংফিশার এবং স্যান্ডমার্টিনসহ বিস্তৃত প্রাণী। রয়েছে ৮১ হেক্টর পরিমাণ পার্কেরও লাখো বছরের ইতিকথা। এটি ওয়েস্ট থুরক এবং চ্যাডওয়েল-সেন্ট-মেরিতে প্রায় দুই লাখ বছর আগে হোমো স্যাপিয়েন্সদের দখলীয় প্রাচীনতম স্থান। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, প্রায় ১০ হাজার বছর আগে মেসোলিথিক যুগে যসতি স্থাপন, কৃষিকাজ এবং শিল্প বিকাশেরও ইঙ্গিত বহন করে এলাকা।

প্রায় জনবিরল এলাকা। ছিটেফোঁটা বাড়িঘর। এক স্থানে গাড়ি পার্ক করে ঢালু পথ। অসাবধানে পা ফেলতে গেলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। প্রবেশপথের শুরুতেই নির্দেশিকা।
Enjoy your Nature park
Take care on paths and steps - they can become slippery
Take your litter home or use the bins provided
keep dogs under control at all times
Dog mess must be cleared immediately- use bins provided
Swimming in the lakes is prohibited
Only feed ducks and swans with EWT approved food available in the Visitor Centre . Do not light fires and report any sign of fire immediatly. Fishing only permitted thorough Lion Gorge Fishing Club. Please leave wild life undisturbed.

ঢালু পথ ধরে ক্রমেই নিচের দিকে হাঁটছি। হাঁটছি তো হাঁটছিই, হাঁটা আর শেষ হয় না। হাঁটতে হাঁটতে বহু নিচে নেমে দেখি এক বন। বনের মাঝখানে ছোট্ট জলাশয়। জলাশয়ে সাঁতার কাটছে চেনা-অচেনা অসংখ্য জলচর পাখি। শৈশবে আমাদের বিল-ঝিল ঝোপ-জঙ্গলে এসব পাখি দেখেছিলাম। দেখেছিলাম কোড়া, ডাহুক, ধনেশ, ঘুঘু, কানি বক, পানকৌড়ি, মাছরাঙা, গাঙচিল আর কত পাখি! ঘুঘুই দেখেছি কয়েক প্রকার। এদের সবাই এখানে। জলাশয়ের চার পাশে নানা উচ্চতার গাছ, গাছের গোড়ায় ঝোপ-জঙ্গল। ডাহুক বাসা বাঁধে ঝোপে, বক বাসা বাঁধে উঁচুগাছের মগডালে আর মাছরাঙা মাটিতে গর্ত করে ডিম পাড়ে। যেখানে গিয়ে প্রথম জলাশয় শেষ হয়েছে সেখানে সমতল ভূমি। সমতলভূমির দক্ষিণে আরো একটি বড় জলাশয়। দুই জলাশয়কে এক করেছে কালভার্ট। ভূমির সমান কালভার্টের নিচ দিয়ে দুই জলাশয়ে পানি চলাচল করতে পারে। অবাধে চলাচল করতে পারে জলচর পাখিও। কালভার্টের সিঁড়ি করা হয়েছে হাঁসসহ জলচর পাখ-পাখালির জন্যই।

বড় জলাশয়ের চার পাশেও একই রকম ঝোপ-জঙ্গল পাখির বাসা। ঝোপ-জঙ্গল ও গাছে পাখির কুজন, বাচ্চার চিৎকার চেঁচামেচি। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগৎ। ভিন্ন জগতে পাখ-পাখালিই সব। মনুষ্যজগত ছেড়ে যেন ভুল করে পাখ-পাখালির জগতে ঢুকে পড়েছি আমরা। এখানে হাঁসেরা সাঁতার কাটছে, ডিমে তা দিচ্ছে লক্ষ্মীপেঁচা, মগডালে বসে রোদ পোহাচ্ছে সারস। এক সময় আমাদের দেশেই ছিল এরা।

বাচ্চাসহ বংশ রক্ষার জন্য কোনো চেষ্টাই নাকি রাখেনি। সব পাখির বাসা বানানোসহ নির্ভয়ে বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। একদিন গাছ নির্মূলসহ বন্দুকের গুলি, বিষটোপ ও ফাঁদ পেতে যেসব পাখির বংশ ধ্বংস করেছি, সেসব পাখির প্রেতাত্মারাই যেন খুঁজে নিয়েছে নিসর্গের এই নিরাপদ স্থান। যেন এখানেই আমার শৈশব। কণ্ঠ থেকে বের হয়ে আসে কবি জীবনানন্দ দাশের-
তোমরা যেখানে সাধ চ’লে যাও- আমি এই বাংলার পারে
র’য়ে যাব; ....দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে ভোরে’

আমরা যে ঢালু বেয়ে নেমেছি তার বিপরীত দিকে জলাশয়ের খাড়া পাড়। খাড়া পাড়ের গর্তেই মাছ রাঙার বাসা। গর্তের মুখে মাথা বের করে বসে রয়েছে মাছরাঙা। পাড়ের উপরে নতুন ডিজাইনের কয়েকটা বাড়ি। বাড়ি সম্পর্কে জানা গেল, ১৮০০ সাল থেকে ১৯৫০ দশকের শেষ পর্যন্ত এ এলাকার বড় একটি অংশই বাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক কয়েকটি হাউজিং এস্টেট প্রতিষ্ঠান আবাসনের জন্য চ্যাফোর্ড গর্জেস নেচার পার্ক দখল করে চ্যাফোর্ড গর্জেস লিমিটেড নাম দিয়েছে বলে জানা যায়।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক


আরো সংবাদ



premium cement