২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দার্শনিক দৃষ্টি ও অহি

-

জ্যোতির্ময় বার্তাবাহকের কণ্ঠস্বর শোনা গেল। আকাশ-পৃথিবী অবধি গুরুগম্ভীর অনুরণন তুলে প্রত্যাদেশ ধ্বনিত হলো। বিশ্বাসের উৎসমূল, শান্তির উৎসমূল এবং সুন্দরের উৎসমূল যে মহাসত্য, সেখান থেকে অনির্বচনীয় হিল্লোল তুলে পরম সত্যের গূঢ়তত্ত্ব হজরত মুহাম্মদ সা:-এর অন্তঃকরণে দুর্বার প্লাবনের সৃষ্টি করল। তিনি ডানে-বামে, সামনে-পেছনে, অলৌকিক বার্তাবাহকের বিস্ময়কর ঔজ্জ্বল্য দেখতে পেলেন। তাঁকে ব্যাকুল ঔৎসুক্যে বারবার নির্দেশ করা হচ্ছিল, ‘হে মোহাম্মদ পড়ো, পড়ো।’

পড়তে না জানাটাই মানুষের প্রথম স্বাভাবিকতা। না জানা থেকে জানতে চাওয়া ও জানার সাধনা এবং সত্যকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারার প্রজ্ঞা মানুষের একান্ত স্বত্ব, যার মাধ্যমে মানুষের সত্তার ভেতর ঘুমিয়ে থাকা বিস্ময়কর সুন্দরগুলো প্রাণবন্ত হয় এবং মানুষ আবিষ্কার করে তার অত্যুচ্চ মর্যাদা ও প্রকৃত গন্তব্য। এ পথের প্রথম পদক্ষেপ হলো জ্ঞানের সামনে দাঁড়িয়ে ‘জানি না’ বলতে পারার বিনয়।

কিন্তু ইসলাম মানবসত্তাকে দিলো নতুন এক বার্তা। মানবসত্তায় নিহিত আছে প্রয়োজনীয় সব পারা। জীবন ও জগতের সম্ভাব্য ও অনিবার্য সব সক্ষমতা মানুষের ভেতরে লুকিয়ে। তাকে খুঁজে এবং বুঝে নিতে হয়। এ পথের একটি ধাপ, ‘জানি না’।

প্রিয়নবী সা: সেখানে অবস্থান করছিলেন। হজরত মুহাম্মদ সা: অন্তঃকরণে স্বর্গীয় অনুভূতিরাশির যে স্বনন সৃষ্টি হয়েছিল, তার স্বাভাবিক আর্তি ছিল সত্যের সর্বোচ্চ সম্বোধনের সামনে নিজেকে নিবেদন করা এবং তার অনাদি অফুরন্ত স্রোতধারায় নিজেকে একাকার করে দেয়া। হজরত মুহাম্মদ সা: জ্ঞান, মহিমা ও সৃষ্টিশীলতার অফুরন্ত উৎসারণের সামনে নিজের অনবধানতাকে ব্যক্ত করলেন। প্রতিবারই স্বর্গীয় নির্দেশের জবাবে যে সরল অজ্ঞতা অতিক্রম করে মানুষকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার লক্ষ্যপানে যাত্রা করতে হয়, একান্ত অকৃত্রিমভাবে সেই স্বাভাবিকতাকে তিনি উচ্চারণ করলেন। প্রতিবারই বললেন, ‘আমি পড়তে জানি না, আমি পড়তে জানি না।’ এরপর বিষয়টা একান্তভাবে সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে যায় যে, তাকে বুঝানো হবে তিনি আসলে জানেন এবং পারেন। কিন্তু তিনি মনে করছেন, তিনি জানেন না এবং পারেন না। তিনি যে পারেন এবং জানার ক্ষমতাও তাঁর আছে, সেটা তাঁর সামনে স্পষ্ট ও প্রমাণিত করার ধাপটি সামনে এলো।

মহান প্রতিপালকের দিক থেকে এটাই ছিল স্বাভাবিক যে, তিনি মানুষের সামনে তাঁর ভেতরের গোপন সম্ভাবনার প্রকাশ ঘটাবেন, দুর্জ্ঞেয় বিষয়াবলিকে তাঁর সামনে উন্মোচিত করবেন এবং তাঁর অনুসন্ধানের উপকরণগুলো যে দরজা পর্যন্ত গিয়ে থমকে গেছে, তার চাবিটা তিনি মানুষের হাতে তুলে দেবেন। মানুষের প্রকৃত মর্যাদা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার অঙ্গীকার জীবন্ত করে তোলার জন্য এটাও অনিবার্য ছিল যে, সৃষ্টির পিছনে স্রষ্টার জ্ঞান ও তার প্রতিনিধি হিসেবে কর্তব্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে কী কী বিশ্বাস ও কর্মসূচিকে মানুষের জন্য অবলম্বন স্থির করা হয়েছে, এর গূঢ়ার্থের সাথে মানুষের প্রজ্ঞাকে একাত্ম করে দেবেন। শব্দের খোলসে বিষয়টা আবৃত করার মতো নয় এবং কোনো বর্ণনা দ্বারা সত্যিকার অর্থে তা সম্পাদিতও হতো না। এটা এমন এক প্রক্রিয়ায় হওয়া উচিত ছিল, যা কেবল সর্বশক্তিমানের রুচি ও মাহাত্ম্যের সাথে সঙ্গতিশীল হয়। অতএব মানুষের চিন্তা ও সাধ্যের সুদূরবর্তী তাৎপর্যময় এক পদ্ধতির প্রয়োগ লক্ষ করা গেল।

জ্যোতির্ময় বার্তাবাহক হজরত মুহাম্মদ সা:কে নিজের বক্ষস্থিত স্বর্গীয় আলোর সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরলেন। সর্বশক্তিমানের ইচ্ছা এমনই ছিল। তিনি মানুষের সত্তার শক্তিকে ঢেকে রাখা পর্দা ও অন্ধকারকে খোদায়ী উৎসমূল থেকে উৎসারিত প্রজ্ঞার অভিসঞ্চারে দূরীভূত করে দিলেন। তারপর মানুষের বন্ধ দুয়ার খুলে গেল। বক্ষ হয়ে গেল উন্মুক্ত। ভাষায় এসে গেল স্রোতের আবেগ। মুহাম্মদ সা: পড়তে লাগলেন। এ যেন পড়া নয়, সুগভীর সুতীব্র পাঠ। তিনি পাঠ করলেন যা আগে ছিল দুর্জ্ঞেয়। তিনি পাঠ করলেন রহস্য ও গূঢ়তত্ত্ব।

তিনি পাঠ করলেন স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে। পাঠ করলেন অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। পাঠ করলেন আত্মা ও দেহ বস্তু ও অবস্তু। পাঠ করলেন মর্ত্য-আমর্ত্য, ইহকাল-পরকাল। তিনি পাঠ করলেন আলো-অন্ধকার, যুদ্ধ-শান্তি, শয়তান ও মানুষকে। পাঠ করলেন মুক্তি, প্রগতি ও কল্যাণ। পাঠ করলেন অধঃপতন, বিপর্যয় ও বন্দিত্ব। পাঠ করলেন দৃশ্য-অদৃশ্যের তাৎপর্য এবং মানুষের প্রেম ও ক্রোধের সারাৎসার। পাঠ করলেন জীব, পদার্থ ও তাবৎ সৃষ্টিকুল। পাঠ করলেন নারী-পুরুষ, সমাজ ও সংসার। পাঠ করলেন আকাশ-পৃথিবী এবং জগৎ ও জীবনের আদি-অন্ত। পাঠ করলেন আবিষ্কার, উদ্ভাবন ও গবেষণা। পাঠ করলেন প্রার্থনা, উপাসনা ও আত্মনিবেদন। পাঠ করলেন জীবনের সূত্র ও জীবন সংগ্রামের গতিপথ। সেই পাঠের সূত্রপাত হলো ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকা ... দ্বারা।

তারপর তো ক্রমাগত পাঠ ও আত্মআবিষ্কারের সিঁড়ি অতিক্রমের ধারাবাহিকতা। মানুষের সর্বব্যাপী আত্মআবিষ্কার ও আত্মশক্তির এই হলো ব্যাপক উদ্ভাসন। এর আগে মানুষের দৃষ্টি ও আত্মবোধ অনতিক্রম্য রহস্যের দ্বার দেশে কুণ্ঠিতচিত্তে আত্মমগ্ন ছিল। তাঁর পাঠ ছিল সীমিত। সে আত্মবোধ তথা আনন্দ-বেদনা ইত্যাদির পাঠে নিমগ্ন ছিল। এটা তাঁর জন্য অপরিহার্য ছিল বৈকি। মানুষ তার প্রয়োজনের তাগাদায় প্রকৃতিগত সত্যের পাঠে আত্মনিয়োগ করে। মানুষ ইন্দ্রিয়ের অনুভব ও বুদ্ধির সিদ্ধান্ত দ্বারা জ্ঞানের অধ্যায় তৈরি করে। মানুষ তৈরি করে দর্শন ও বিজ্ঞান। মানুষ কাজের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মানুষ এককভাবে এবং সমষ্টিগতভাবেও সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। কিন্তু তারপরও তার প্রবৃত্তি থেকে, ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা থেকে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি থেকে ক্রমাগত জিজ্ঞাসার তীর নিক্ষিপ্ত হতে থাকে। নিজের ভেতর থেকে একটা বিষয় সে মীমাংসার ভিত দাঁড় করায়। কিন্তু পরে নিজের ভেতর থেকেই অন্য এক ঝড় এসে লণ্ডভণ্ড করে দেয় সবকিছু। এভাবে মানুষ শুদ্ধ ও অশুদ্ধের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু নিজের সত্যের ওপর সে কখনো দৃঢ়চিত্ত হতে পারে না। সর্বক্ষেত্রে নিজের নানা জটিলতা ও সীমাবদ্ধতা প্রত্যক্ষ করে অপার্থিব কোনো সাহায্যের প্রতীক্ষায় দৃষ্টি উন্মোচন করে। স্বল্পপরিসর জীবনে সীমিত জ্ঞান ও যোগ্যতা দিয়ে সে তার কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারে না। সে পারে না তার মৌলিক প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ও পরিকল্পিত বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা পরিচালনা করতে। তাকে বিপুল স্বাধীনতা দেয়া হলেও সে তার সীমাবদ্ধতার ভিতর আবর্তিত হতে থাকে।

এই সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের পথে তাকে সহায়তা করে ঐশী অভিপ্রায়ের অবগতি। যা হয় অহি বা প্রত্যাদেশের মধ্য দিয়ে। অহি প্রত্যক্ষ বা অব্যবহিত উদঘাটন নিশ্চিত করে সেই প্রসঙ্গের, যা জীবনের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হলো পৃথিবীতে সে আল্লাহর কী কী অভিপ্রায় কার্যকর করবে এবং কীভাবে করবে? এর অনুকূলে মানুষকে সহায়তা করবে খোদার দেওয়া ইন্দ্রিয়াদি, যুক্তি, বোধশক্তি, স্বজ্ঞা, ঐশী অভিপ্রায়কে জানা ও বোঝার সব রকমের উপাদান ও পূর্ণতা, যা তাকে সরবরাহ করে জ্ঞান ও কর্মে চূড়ান্ত সাফল্যের ক্ষমতা।

অহি কথাটার অর্থ হলো, কোনো ব্যক্তির মনের বাসনা ঠোঁট নাড়াচাড়া ছাড়াই অন্যের কাছে গোপনে প্রকাশ করা। কিন্তু নবীর কাছে যে অহি আসে, সেটা পদ্ধতির বিচারে গোপন হলেও প্রকৃত অর্থে তা গোপন কিছু নয়। জীবনের ঊষর প্রান্তর হতে সর্বশক্তিমানের কাছে নির্দেশনার বৃষ্টির জন্য নির্বিরাম যে প্রার্থনা ও প্রয়োজনীয়তা ধ্বনিত হচ্ছে, তার জবাবে সেটা এক অলৌকিক সাড়া। কিংবা এভাবেও বলা যায় যে, অহি হচ্ছে সৃষ্টির আয়োজন ও জীবনের রঙ্গশালার মর্ম, মনুষ্যত্বের আত্মা এবং বিবেক ও প্রজ্ঞার সারসংক্ষেপ। পরম সত্যের রব্বানী উৎসমূল থেকে জ্যোতির্ময় বার্তাবাহকের মাধ্যমে মানুষের অন্তঃকরণে এর অবতরণ ঘটে। রুহানি জগতে এক অখণ্ড অভিজ্ঞতা নবীর মধ্যে অসামান্য রূপান্তর ঘটায়। বুদ্ধির চঞ্চল স্রোত সেই সমুদ্রের গভীরতম গহনে প্রবেশ করতে পারে না।

জীবনের যা কিছু শাশ্বত, যা কিছু নিত্য এবং যা কিছু সুদূর বিসর্পিত- সবকিছু সহকারে, কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে অসীম সত্তার এ এক দ্যুতির বিভাস, যার অনন্ত বিস্তৃতির মধ্যে সব আত্মা অবনত। অহি আসে আর জীবনের আত্মা জেগে ওঠে। মানুষ তার উদ্দেশ্য খুঁজে পায়। জবাব খুঁজে পায়। তার পরিচয় সম্পর্কে, কর্তব্য সম্পর্কে এবং গন্তব্য সম্পর্কে। সেখানে নির্দেশনা থাকে, সমর্পণের তাগিদ থাকে, থাকে তাওহিদের আহ্বান। মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয় বিশ্বাস, জীবন, শক্তি, সময় এবং বস্তুরাজি ব্যবহারের নীতিসংবলিত কিতাব। সৃষ্টিকর্তার প্রকৃত পরিচয় ব্যক্ত করে মানুষের সাথে সৃষ্টিকর্তার সম্পর্কের আদি-অন্ত ব্যক্ত করে এবং ব্যক্ত করে মানুষের সাথে সৃষ্টিজগতের সম্পর্কের ধরন ও নীতিমালা। নবীর জীবন হয়ে ওঠে সেই কিতাবের বাস্তব রূপায়ণ। কিতাবের প্রতিটি সত্য নবীর জীবনাচারে মূর্ত হয়ে ওঠে। ব্যক্তি, সমাজ ও গোটা মানববিশ্বকে এক সত্যের রেখার ওপর দাঁড় করাতে চায়। এভাবেই গড়ে ওঠে ঐশী জীবনাদর্শ।

যদিও জীবন-দর্শনের এই বুনিয়াদকে বস্তুবাদী দর্শন অস্বীকার করেছে। সে একে পরিহাসের বিষয় হিসেবে দেখেছে এবং প্রত্যাদেশ ও এর উৎস ধারাকে প্রত্যাখ্যান করতে চেয়েছে। ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮) বলেছেন, ‘পৃথিবীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা না করে ঘড়ি সংযোজনকারীর মতোই ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন’ এবং তিনি আরেকটু অগ্রসর হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন- ‘কিন্তু আমরা ঘড়ি বানাতে দেখেছি, পৃথিবী কেউ বানিয়েছে তা দেখিনি। আর কেউ যদি তা বানিয়েই থাকে, তিনি অনুপযুক্ত কর্মী অথবা কাজ সমাপ্ত করে অনেক আগে মারা গেছেন। কিংবা তিনি পুরুষ অথবা মহিলা ঈশ্বর বা অনেক সংখ্যক ঈশ্বর। তিনি সম্পূর্ণ ভালো, সম্পূর্ণই খারাপ অথবা কোনোটাই নন। সম্ভবত তিনি খারাপ।’

সিগমন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯) একে ‘বালকসুলভ মায়াবীবিভ্রম’ বলে আখ্যায়িত করলেন। যে বিভ্রমের শক্তি নাকি নিহিত রয়েছে ‘আমাদের সহজাত আকাঙ্ক্ষার মধ্যে।’ লেনিনের ভাষায়, ‘খোদার সত্তা অত্যন্ত দুরূহ ও জটিল চিন্তা-চেতনার ফল। প্রাকৃতিক নিয়ম-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতা রয়েছে, সেই অজ্ঞতাই খোদার অস্তিত্ব সৃষ্টি করেছে। দার্শনিক হিউম অহি নিঃসৃত জীবনাদর্শের সত্যকে এই বলে বাতিল করলেন যে, ‘এগুলো বিজ্ঞান বা মানবীয় প্রজ্ঞার দ্বারা প্রমাণ করা যায় না।’ ডেভিড হিউমে (১৭১১-১৭৭৬) স্বীয় চিন্তায় প্রমাণ খুঁজে পাননি বলে দৃশ্যমান বাস্তবতার বাইরে যা কিছু থাকতে পারে, তাকে মিথ্যা বলে ঘোষণা দিলেন। অহি তার কাছে মিথ্যা, জীবনাদর্শ মিথ্যা, ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রক মিথ্যা, মানুষের কর্মফল মিথ্যা, একমাত্র জড়ই সত্য; যেহেতু জড়ের অস্তিত্বের কথা তিনি জানেন। নিজের অবগতির বাইরের সত্যকে হিউমে অবাস্তব সাব্যস্ত করলেন। নিজের দেখাকেই সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত মীমাংসা বলে অভিহিত করলেন। যে মীমাংসা এতটাই অসহিষ্ণু যে, তার সীমাবদ্ধ আওতার ভিতরে স্থান পায়নি বলে অন্যসব বৃহৎ ও সম্ভাব্য বাস্তবতাকে অবাস্তব বলে চিৎকার জুড়ে দিলো। হিউমের এই চিৎকারকে কী বলা যায়?

আমাদের পাঁচটি ইন্দ্রিয় যে বাস্তবকে প্রত্যক্ষ করতে পারে, সে বাস্তবের সীমানা কতটুকু? এটা একান্তই দূর কল্পনা যে, ইন্দ্রিয়ের অগোচরে আর কোনো অস্তিত্বই নেই। হিউমের এই চিৎকার মানুষকে যা সে দেখতে ও মাপতে পারে, তাছাড়া অন্য সব কিছুকে অস্বীকার করতে শিখায়। অথচ অস্বীকার করে বসে থাকা, দর্শনের প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিশীল নয়।

দর্শন হলো জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতি অনুরাগ। বৈচিত্র্যময় জগৎ ও জীবনের সত্যসার আরো বেশি করে জানার কৌতূহল। রহস্য, তা যতই দুর্জ্ঞেয় হোক, মানুষ একে অতিক্রম করবে এবং বিস্ময়, জিজ্ঞাসা, জীবনের প্রয়োজন, আধ্যাত্মিক প্রেরণা, উদগ্র বাসনা ও সত্যের দ্বারোদঘাটন চেষ্টা থেকেই দর্শনের অগ্রযাত্রা। কোনো ব্যক্তির হৃদয়োৎসারিত চিন্তা বা জিজ্ঞাসা সত্যের নিঃস্বার্থ অনুরাগ এবং সুনিয়ন্ত্রিত ভাবনার মাঝে একটি দীর্ঘ পথ রয়েছে নিশ্চয়ই। সেখানে ইন্দ্রিয় একটি পথ, একটি উপায়, কিন্তু সে সব কিছু নয়।

সত্যের জন্যে সব রাস্তা ভ্রমণ করতে হয়। ঘটনা ও তথ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ও নির্ভুল ধারণা ইন্দ্রিয়ানুভূতির চূড়ান্ত লক্ষ্য। ইন্দ্রিয়ানুভূতি সবদিক থেকে সফল হলেই কেবল লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। যদি লক্ষ্য অর্জিত হয়, তাহলে তা হবে জ্ঞানের একটি উৎপত্তিস্থল। সেই জ্ঞান অন্তর্দৃষ্টি, নির্ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচার-বিশ্লেষণের ভারসাম্যের সামঞ্জস্যের মধ্য দিয়ে প্রজ্ঞায় উপনীত হবে। মানুষ জ্ঞানের সার্থক পরিণতি বিধানের মধ্য দিয়ে প্রজ্ঞায় উপনীত হতে পারে।

কিন্তু ব্যক্তির প্রজ্ঞা মানে অমোঘ সত্য নয়। মানুষের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা এ ক্ষেত্রে তাকে অপারগ করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় কোনো ব্যক্তির ইন্দ্রিয়ানুভূতি, যা জ্ঞানের প্রথম পর্যায় মাত্র। এর উপর ভর করে কোনো বিষয়কে সর্বশেষ সত্য বা চূড়ান্ত অসত্য বলে ঘোষণা দেয়া বুদ্ধিবৃত্তিক হঠকারিতা কিংবা সীমালঙ্ঘন নয় কি?হ

লেখক : কবি, গবেষক
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
লক্ষ্মীপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু দৌলতদিয়ায় ৫২ হাজারে পদ্মার বোয়াল বিক্রি দেশের মেরিন অ্যাকাডেমিগুলোকে আন্তর্জাতিক মানের করা হবে : নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে : অধ্যাপক মুজিবুর সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুলের নামে মামলা ইমরান খান ও বুশরার বিরুদ্ধে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায় স্থগিত এখন পর্যন্ত পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের আয়োজনের জন্য কোন বাস্তব তাগিদ নেই : ক্রেমলিনের মুখপাত্র চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গতবারের চেয়ে বেশি হবে : টি বোর্ড চেয়ারম্যান ইয়েমেনের হাউছিদের বিরুদ্ধে ‘শক্তি, প্রত্যয়’ নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি নেতানিয়াহুর স্ত্রী-মেয়েসহ সোলায়মান জোয়ার্দারের ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পেছনে মাস্কের নেপথ্য শক্তি হওয়াকে অস্বীকার ট্রাম্পের

সকল