২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দূষণ কি অপ্রতিরোধ্য

দূষণ কি অপ্রতিরোধ্য - ফাইল ছবি

দেশের যে দিকে তাকানো যাক না কেন, সবকিছুই যেন কেমন এলোমেলো। কোনো কিছুই যথাযথ নিয়মশৃঙ্খলার পথ ধরে চলছে না। সব ক্ষেত্রে তদারকির যে অভাব রয়েছে তা খুব সহজেই চোখে পড়ে এবং বোধগম্য হয়। সেটি রাস্তাঘাটের কথা বলা হোক, হাটবাজারে পণ্য সম্ভারের বিকিকিনির কথা হোক, জনজীবনের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য যা-ই হোক না কেন, সব ক্ষেত্রে ন্যায়, অন্যায়ের পার্থক্য যেন ঘুচে গেছে।

উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্ঞানচর্চার কোনো সুখবর নেই; বরং পেশিশক্তির মহড়া রাজনৈতিক অঙ্গনের দলগুলোর ভেতর। তাদের মধ্যে সহাবস্থানের কোনো সুযোগই যেন নেই, ধৈর্য-সহ্যের অনুপস্থিতি, পরস্পরে সহমর্মিতার মনোভাব সব তিরোহিত, পরস্পরের ভেতর বিবাদ বিসস্বাদ, সুনীতির চর্চা ফেলে ক‚ট-নীতি নিয়ে চলছে লম্পঝম্প। অর্থাৎ শান্তি স্বস্তিকে সবাই মিলে যেন নির্বাসনে পাঠিয়েছে। সেটি এ দেশে আদৌ ফিরবে কি ফিরবে না কিংবা ফেরানোর চেষ্টা হবে কি না, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে তা বিবেচনা করা এক দুরূহ ব্যাপারে হয়ে পড়েছে। যদি এই জনপদের অগণিত সাধারণ মানুষ শান্তি-স্বস্তির আশা নিয়ে শান্তির সমাবেশে শামিল হয় তাতেও কিছু এসে যায় না।

যেহেতু এসবের সাথে রাজনৈতিক সংগঠনের সম্পৃক্ততা অবিচ্ছেদ্য। তারাই এই ময়দানের খেলোয়াড় এবং তারাই সমাজের কেউকেটা। বর্তমান পরিস্থিতি তো তাদের স্বার্থের কোনো ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে না বা স্পর্শ করছে না। সবাই যেন হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দিয়ে চলছেন।

সুখানন্দে যাদের জীবন যত বেশি ভরে আছে, তারা কিন্তু পৃথিবীটা তত বেশি ভালোবাসেন ভোগ সম্ভারের জন্য, তাই তারা চান দীর্ঘ জীবন, চান যাতে বিভোর ও আনন্দ-উল্লাসে জীবন কাটাতে পারা যায়। কিন্তু তাদের জন্য বড় এক দুঃসংবাদ আছে। গেল ১৫ জুন দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিকে ‘বাজ’ পড়ার মতো সেই দুঃসংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশীদের আয়ু কমছে সাত বছর।’ এ সত্যকে ধরে নিয়ে যদি আমরা অগ্রসর হই, তবে এ দূষণসহ আরো বহু দূষণ কমানোর জন্য যদি দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না যায় তবে দেশের মানুষের আয়ু ক্রমাগত হ্রাস পেতেই থাকবে। এসব তথ্য বিখ্যাত সব গবেষকের ‘ফোরকাস্ট’।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বায়ুদূষণকারী ভাসমান খুদে কণা (পিএম ২ দশমিক ৫) জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। আমাদের এই নিবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয় বিভিন্ন দূষণ নিয়ে। এখানে সব দূষণ ও দেশের মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে সব লেখা যাবে না। আমরা দূষণে বিপর্যস্ত কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাত্র কথা বলার চেষ্টা করব। প্রথমেই বায়ুদূষণের কথা যদি বলি, বায়ুদূষণ এমন এক বিষয় যা টের পাওয়া যায় না; মাছ যেমন পানিতে ভেসে বেড়ায় তেমনি প্রাণিকুলও বায়ু বা বাতাসে ভেসে আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বায়ুর গুরুত্বের বিষয় আমরা বুঝি না। কোন মানের বায়ু আমাদের ঘিরে আছে।

বিশ্বের ছয় হাজার ৪৭৫টি শহরের দূষণের তথ্যভিত্তিক এক সমীক্ষায় দেখে গেছে, একটি দেশও ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ু মানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। এই সংস্থা জানায়, নতুন মানদণ্ডের পিএম ২ দশমিক ৫ নামে পরিচিত ছোট এবং বিপজ্জনক বায়ুবাহিত কণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশ আগের বছরের মতো ২০২১ সালেও সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকাভুক্ত হয়েছে। চলতি বছরে এর কমতির কোনো অবকাশ নেই।

ঢাকা শহরে বাতাসে দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ এখন সহনীয় মাত্রার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। মহানগরীর মধ্যে আবার এলাকাভেদে দূষণের রকমফের আছে অর্থাৎ কোথাও দূষণ অনেক বেশি, কোথাও কিছুটা কম। চার বছর ধরে সব চেয়ে দূষিত এলাকা হিসেবে ফার্মগেটকে টপকে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকা, দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে ফার্মগেট। এর পরই যথাক্রমে দূষণের শীর্ষ সারিতে রয়েছে পুরান ঢাকার ইংলিশ রোড, সেগুন বাগিচা, ধানমন্ডির শংকর, নয়াপল্টন ও হাজারীবাগ এলাকা।

এক পর্যবেক্ষণে ঢাকা শহরের দূষণের উৎস সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়া গেছে। পরিবেশ অধিদফতর থেকে এত দিন বলা হতো, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস ইটভাটা। এর পরই পর্যায়ক্রমে নির্মাণকাজের ধুলা, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্পকারখানা থেকে নির্গত দূষিত বায়ুর ভ‚মিকা রয়েছে। কিন্তু নতুন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকার বাতাসে অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২ দশমিক ৫-এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি আসে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো থেকে; অর্থাৎ যানবাহন, শিল্পকারখানায় জৈব বস্তু পোড়ালে যে ধোঁয়া বের হয়, তা থেকে।

পানি পান না করে আমাদের বাঁচা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে শর্ত হচ্ছে সুপেয় পানি তথা দূষণমুক্ত পানি হতে হবে। দূষিত পানি পান করলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা শতভাগ। ভৌত, রাসায়নিক ও জীবাণুঘটিত মিশ্রণে পানি নিরাপদ ও হিতকর ব্যবহারের অনুপযোগী বা অপেক্ষাকৃত কম উপযোগী হয়ে পড়ে। জীবাণু সংক্রমণজনিত দূষণ এবং পানির স্বাভাবিক গুণাগুণ বিনিষ্টকারী উপাদানের সংমিশ্রণজনিত দূষণকে সম্মিলিতভাবে পানিদূষণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীতে দূষিত বস্তু বা তরল পদার্থের মিশ্রণ অহরহ সম্মিলিতভাবে পান করার পানিকে দূষিত ও বিবর্ণ করে ফেলছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন নগরীতে ঘরে ঘরে যেসব সাব লাইন দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয় সেগুলো বহু দিনের পুরনো। সেসব লাইন ছিদ্র ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেছে। সেসব পাইপ থেকে পানি বেরিয়ে যায় তেমনি সেসব ছিদ্র দিয়ে দূষিত তরল বর্জ্য খাবার পানিতে মিশে যায়। তাতে মানুষ রোগাক্রান্ত হয় এবং তার জীবনী শক্তি হ্রাস পায় এবং একপর্যায়ে তাদের অকালমৃত্যু ঘটে।

যাই হোক, পানিসম্পদ হলো পানির সেসব উৎস যেগুলো মানুষের নিয়মিত ব্যবহারের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কৃষি শিল্প গার্হস্থ্য ব্যবহার এবং পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণসহ মনুষ্যজীবনের সব ক্ষেত্রেই পানির ব্যবহার অপরিহার্য। পানির প্রধান তিনটি উৎস হলো বৃষ্টির পানি, ভূপৃষ্ঠের উপরের পানি ও ভূগর্ভের পানি।

বাংলাদেশে প্রায় শতভাগ গ্রামের মানুষ খাবার পানির জন্য ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভর করে। শহরাঞ্চলেও পানির সরবরাহ প্রধানত ভূগর্ভের পানির ওপরই নির্ভরশীল। ঢাকায় মোট পানি সরবরাহের ৮৭ শতাংশের বেশি আসে ভূগর্ভের পানি থেকে। অন্যান্য শহরে পানির সরবরাহ প্রধানত ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরশীল। ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা বিশুদ্ধ পানি; এই পানির প্রতিটি ফোঁটাই যেন এক অমূল্য সম্পদ। তবে দীর্ঘ দিন ধরে দূষণকবলিত রাজধানীর আশপাশের নদী ও অন্যান্য জলাশয় থেকে যে পরিমাণ পানি ভূগর্ভে জমা হচ্ছে, তা উত্তোলনের চেয়ে অনেক কম। তা ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে দূষণকবলিত এসব নদী ও জলাশয়ের বিষাক্ত পানি নেমে গিয়ে দূষিত করছে ভূগর্ভের পানির প্রথম স্তর। প্রথম স্তরের পানির দূষণের কারণে রাজধানীর নদী-তীরবর্তী এলাকার টিউবঅয়েলের পানি এখন অনেকটাই পানের অযোগ্য। ভূগর্ভের পানিতে দূষণের বিষয়টি রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে বিজ্ঞানীদের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর ও সিডিসি প্রোগ্রাম সূত্রে জানা যায়, পানির প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে দিচ্ছে দূষণ। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের ফলে আবাসিক এলাকা, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, শিল্পকারখানা, পয়ঃনিষ্কাশন কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। তেলের ট্যাংকারের মতো উৎস থেকেও প্রচুর ধাতু, তৈলাক্ত পদার্থ, সিসা, পারদ, দস্তা ও ক্রোমিয়ামের মতো বিষাক্ত দ্রব্য নদ-নদী ও সাগরের পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক বছরে বস্ত্রশিল্প, চামড়া শিল্প, শোধনাগার, ছাপাখানা ও বড় শিল্পের তরল বর্জ্য পানিদূষণের অন্যতম কারণ হয়ে পড়েছে।

রাস্তাঘাট ও বাজার থেকে যে পানি আমরা কিনে পান করছি, তা কি বিশুদ্ধ? কোনো কর্তৃপক্ষ এসব পানির বিশুদ্ধতার গ্যারান্টি দিচ্ছে কি! জনস্বাস্থ্য নিয়ে এমনই হীন বাণিজ্য চলছে! অথচ কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।

ওয়াসা নগরবাসীর জন্য যে পানি সরবরাহ করছে তার মানও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। ঢাকা ওয়াসা যেসব জায়গাকে পানির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে তা এতটাই দূষিত যে পরিশোধনের পরও তা পুরো ব্যবহারযোগ্য নয়। এ ছাড়া পানি শোধনাগারগুলোতে সঠিকভাবে পরিশোধন হয় না। পানি দুর্গন্ধমুক্ত করতে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় তা নিয়েও আরেক সমস্যা, পরিমাণে বেশি হলে পানিতে কেমিক্যালের গন্ধ পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞ মতে বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ায় পানি শোধন করতে হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন, চুন ও ফিটকারি দিয়ে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা মহানগরী ছাড়াও বড় শহরগুলোতে শব্দদূষণ এখন মারাত্মক এক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালায় স্পষ্ট করে বলা আছে, কোন এলাকায় দিনের কোন সময়ে কী ধরনের শব্দদূষণ করা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু কোথাও এই বিধান মানা হচ্ছে না। শব্দদূষণকে বলা হয় নীরব ঘাতক। বিশেষ করে ঢাকা শহরে শব্দদূষণের বহু উৎস রয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। গাড়ির হর্ন, নির্মাণকাজ, যত্রতত্র মাইকের ব্যবহার, শিল্পকারখানার শব্দ কোনো ক্ষেত্রেই শব্দদূষণ বিষয়ে যেসব নিয়মকানুন রয়েছে, তা কেউই গ্রাহ্য করছে না।

এসব কারণে আবারো শব্দদূষণে বিশ্বে শীর্ষস্থানটি দখল করেছে ঢাকা মহানগরী। জাতিসঙ্ঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এর আগেও একাধিকবার বাংলাদেশ শব্দদূষণের শীর্ষপর্যায়েই ছিল। গবেষণায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি বড় শহরের শব্দদূষণের কারণে সৃষ্টি সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয়। বলা হয়, কানাডার টরন্টো শহরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ শতাংশ ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে শব্দদূষণের কারণে।

এমন কোনো স্টাডি যদি ঢাকায় করা হতো তবে নিঃসন্দেহে বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, শ্রবণ সমস্যা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আক্রান্ত হওয়ার হার বহুগুণ বেশি হতো। শব্দদূষণ তো দেশে দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশেই এই দূষণ ক্রমবর্ধমান। কোথাও যানজট সৃষ্টি হলে চার পাশ থেকে সজোরে হর্ন দেয়া শুরু হয় সবধরনের যানবাহন থেকে। স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুযায়ী শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেল বা তার বেশি হলে তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সচিবালয়সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট মোড়ে, একটি সাউন্ড প্রেসার লেভেল (এমপিএল) মিটারে ওই স্থানের শব্দের মাত্রা পাওয়া যায় ১২৮ দশমিক ৬ ডেসিবেল; অথচ শব্দদূষণ বিধি অনুযায়ী, নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত সচিবালয়ের ওই স্থানে শব্দের মাত্রা থাকার কথা ৫০ ডেসিবেল।

বাসযোগ্যতার দিক থেকে যদি বিবেচনা করা হয় তবে ঢাকা মহানগরীর কোনো অগ্রগতি নেই। গোটা বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় আজো অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে ঢাকা। বিভিন্ন নগরীর বাসযোগ্যতা নিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা শহরের অবস্থান ১৭২টি শহরের মধ্যে ১৬৬তম। ‘বিশ্ব বাসযোগ্যতার সূচক-২০২২’ শীর্ষক সে রিপোর্টটি অতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়। সে বিচার নগরীগুলোর সবধরনের দূষণের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা আছে। জরিপে শহরগুলোর স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ শিক্ষা ও অবকাঠামো- এসব সূচক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

বাসযোগ্যতার সূচকে শেষ দিক থেকে সপ্তম অবস্থানে থাকা এ বছর ঢাকা ১০০-তে ৩৯ দশমিক ২ নম্বর। এ অবস্থানে আমাদের প্রশাসন উন্নতির অনেক কিছু করে ফেলছে বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। অথচ এসব ব্যত্যয় সমগ্র উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

প্রতিবেদনে অনুযায়ী, স্থিতিশীলতার সূচকে ঢাকার নম্বর ১০০-তে ৫৫। এই সূচকের নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে শহরে অপরাধপ্রবণতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড এবং সামরিক সঙ্ঘাত বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে নম্বর পেয়েছে তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশের কোনো অবকাশ নেই। অন্যান্য বিষয় সংস্কৃতি ও পরিবেশের সূচকে বাংলাদেশ নম্বর পেয়েছে ৪০ দশমিক ৫। বাসযোগ্য বিচারের সর্বশেষ সূচক হচ্ছে মাত্র ২৬ দশমিক ৮। এই তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, তলানিতে থাকা ১০ শহরের মধ্যে অবকাঠামোর দিক থেকে ঢাকার নম্বর সবচেয়ে কম।

দেশের বর্তমান অবস্থা সামনে রেখে উন্নয়নের যত কথাই, বলা হোক তার সবই ফার্স মনে হয়, সামগ্রিক বিবেচনায় এ কথাই বলতে হবে এসব বিষয়ে উন্নতি সাধন ব্যতিরেকে কোনো কর্তৃপক্ষের পক্ষে অহমিকার আদলে কথা বলা লোক হাসানো ছাড়া আর কিছু নয়। এসব মূল্যায়ন তো চোখে বালি পড়ার মতো সারাক্ষণ কচকচানির মধ্যে থাকা; কিন্তু কোথায় স্বস্তিবোধ? তার বিন্দুমাত্র রেশ তো দেখতে পাওয়া যায় না।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement