২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মানুষ কি সর্বংসহা হয়ে যাচ্ছে!

-

মাত্র কিছু দিন আগে বাণিজ্যমন্ত্রী সয়াবিন তেল নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন, পরে দেখা গেল হাজার হাজার লিটার তেল মজুদদারদের গুদাম থেকে বের হতে শুরু হয়েছে। আরব্য উপন্যাসের আলিবাবার সেই ডাকাতদের রত্নভাণ্ডার পাওয়ার মতোই ঘটনা। খাদ্যমন্ত্রীও একই কায়দায় সেই মজুদদারদের পাতা ফাঁদে পা আটকে বসে আছেন। চালে উৎপাদন তেমন না কমলেও সবধরনের চালের প্রতি কেজিতে পাঁচ-সাত টাকা করে দাম বেড়ে গেছে। এ যেন সাধারণ মানুষের ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’-এর মতো। এখন অভিযান চালিয়ে দেখা যাচ্ছে মজুদদারদের গুদামে হাজার হাজার টন চাল মজুদ করে রাখা হয়েছে, কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা লুটে নেয়ার জন্য। সয়াবিন নাটকেরই যেন পুনরাবৃত্তি। এতকাল জানতাম, ন্যাড়া বেল তলায় তো একবারই যায়, এখন দেখছি, না, বারবার যায়। বাণিজ্যমন্ত্রী মাত্র কয়েকদিন আগে সয়াবিন নিয়ে ভারি নাকানি-চুবানি খেয়েছেন। তার জের এখনো পুরোপুরি কেটে যায়নি। এবার খাদ্যমন্ত্রী সেই একই কায়দায় বেহাল অবস্থায় পড়েছেন। বাজারে চালের দাম বাড়ছে, পক্ষান্তরে চালের ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে এখন টনকে টন চাল বের হচ্ছে। তারপরও কিন্তু চালের দাম পড়ছে না। চাল ব্যবসায়ী তাদের আড়তে চালের একটা মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখছেন বটে; কিন্তু সে দামে চাল বিক্রি হয় না। বহু আড়তে কোনো তালিকাও নেই। এমনো খবর প্রকাশিত হয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন, কিন্তু তাদের কোনো লাইসেন্স নেই।

লক্ষ করা যাচ্ছে, যখনই কোনো বিষয়ে গভীর সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে, তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সেটি মোকাবেলায় সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। এ পর্যন্ত গত কিছুকালের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ত্রাণ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সর্বশেষ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বেহাল অবস্থা। সর্বত্র একই চিত্র; পারঙ্গমতার ঘাটতি, দূরদৃষ্টির অভাব। এভাবে যদি সম্মুখে বিভিন্ন সেক্টরে সঙ্কট দেখা দেয়, তবে সব মন্ত্রণালয়ের ‘পারফরম্যান্সে’ এমন বিপর্যস্ততা ফুটে উঠবে, তা কল্পনার বাইরে।

মাত্র কিছুদিন আগে কথা হচ্ছিল একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং সাবেক শিল্প সমিতি ফেডারেশনের শীর্ষ নেতার সাথে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক বলয়ে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে, তার ঢেউ বাংলাদেশের গায়েও প্রচণ্ড ধাক্কা দিতে বাধ্য। এমন সব তথ্য শোনার পর মনে বারবার এমন আশঙ্কার উদয় হচ্ছে যে, অক্ষমতা আমাদের প্রশাসনে গত কিছুকাল থেকে দেখে আসছি। তাতে ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখন শিহরিত হতে হচ্ছে। দেশের মানুষ এখনই তো আকাশছোঁয়া দামে দ্রব্যমূল্য নিয়ে পেরেশান।

চাল নিয়ে যেসব তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে, তা নিয়ে কথা বলা যেত। প্রথম কথা হচ্ছে, এখন বোরো ধান উঠছে। দেশে বোরো ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য, তবে কেন এখন চালের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে? চালের উচ্চমূল্যের কারণে বিপর্যস্ত মানুষকে এর জবাব কোন কর্তৃপক্ষ দেবে? আসলে মানুষের কষ্ট দুর্ভোগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যদি ভাবনা থাকত, জবাবদিহি করার জায়গা থাকত। তবে হয়তো আরো কিছু জানা যেত।

আসলে সব কারসাজি অনেক গভীরে। বেশ কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, আড়তদাররা বাজার-গুদাম তল্লাশি ও ব্যবসায়ীরা তথ্য সংগ্রহের অভিযানের খবর পেয়ে পালাচ্ছে, আত্মগোপন করছে। এতদিন জানতাম জনগুরুত্বসম্পন্ন ‘ইনফরমেশন লিক’ করা সংবাদকর্মীদের পেশাগত দায়িত্বের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি মজুদদাররা তল্লাশি অভিযানের আগাম খবর পেয়ে গুদাম বন্ধ করে আত্মগোপন করে। সাধারণের প্রশ্ন, তল্লাশির আগাম খবর তারা কোন সূত্রে পান? তবে কি সেই সব সরিষার ভেতরই ভূত রয়েছে। এমন করে সেই সরিষা দিয়ে কিভাবে ভূত তাড়ানো যাবে? আসলে সর্বত্রই লক্ষ করা যাচ্ছে কর্তৃপক্ষীয় যত দুর্বলতা, বাজার ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যে তৎপরতা তা কচ্ছপের গতির কাছেও হার মানবে। তা ছাড়া সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিরতিহীন অনুসন্ধান ও তদারকি। আর আমাদের তদারকির দায়িত্বশীলরা এখন মগ্নমৈনাকের মতো বরফপিণ্ডের মধ্যে মাথা গুঁজে গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।

কালেভদ্রে কখনো মাথা জাগিয়ে মুহূর্তের জন্য চোখ মেলে আবারো বরফপিণ্ডের মধ্যে মাথা গুঁজে গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন হয়। আমাদের তদারকি কর্তৃপক্ষের এমন দুর্বলতার সুযোগে স্বার্থান্ধ মজুদদার বরাবর বগল বাজিয়ে ব্যবসার নামে দেশে চুটিয়ে মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছে।

এসব নিয়ে পরিসংখ্যান দলিল দস্তাবেজ পেশ করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কেননা মধ্য দিনে সূর্যের কিরণে সব কিছু যেমন ফকফকা হয়ে ওঠে, আমাদের দুর্নীতি অনিয়ম শোষণ নিপীড়নের শিকড় তেমন গভীরে। তাও স্পষ্ট হয়েছে; মানুষের জীবনযাপনের দিকে তাকালে তা পরিষ্কার বোঝা যাবে। এসব দেখভালের যেসব সংস্থা তাদের অনেক দুর্বলতা আছে বটে। কিন্তু তাদের অবস্থা এমন যে তারা যেন ‘দন্তহীন নখহীন’/এসব সংস্থার অসহায়ত্ব দুর্নীতিবাজদের জন্য ‘পোয়াবারো’ হয়ে ওঠে। আজকের পরিস্থিতি কোথায় দুর্নীতি আছে সেটি এখন আর দেখার প্রয়োজন হয়তো নেই, বরং কোথায় দুর্নীতি নেই সেটিই আবিষ্কারের বিষয়। এ সূত্র ধরে একটি দৈনিক জানায়, বেশ কয়েক জায়গায় নামীদামি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর গুদামে মওজুদ করা চালের অস্তিত্ব পেয়েছেন অভিযান পরিচালনকারী। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান রাজনৈতিক নির্বাহীরা সরাসরি বলেছেন, ছয়টি বৃহৎ কোম্পানি অবৈধভাবে চাল মজুদ করেছে। ধরণী দ্বিধা হও। এই বড় করপোরেট হাউজগুলোর অনেক বড় বড় শিল্প স্থাপনা রয়েছে তবে তারা কেন আবার ‘চালের ব্যাপারি’ হতে গেলেন! তাদের প্রতি জাতির অগাধ বিশ্বাস ছিল, তারা তো কিছু জনহিত কাজও করছেন। তবে সেসব কি শুধু ‘ক্যামোফ্লাজ’? তারাও কি নীতি আদর্শ সব ভুলে বসে আছেন, দুই হাতে টাকা কামানোর জন্য? মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ দোকানের ফুড লাইসেন্স নেই, তা ছাড়া এরা প্রয়োজনের অনেক বেশি চাল মজুদ করে রেখেছে গরিবের টাকাকড়ি লুটেপুটে খাওয়ার জন্য। মন্ত্রণালয়ের কর্তৃতপক্ষ তো এ দেশের মানুষ, তারা কি জানেন না এ দেশে সব শ্রেণীর ব্যবসায়ী জাতির সঙ্কট সমস্যাকে নিয়ে অসৎ ব্যবসা করেন। এরা ক্রান্তিকালের সব পরীক্ষায় ‘গোল্লা’ পেয়ে থাকেন। তবে এখন কেন আফসোস করেন? এত আপনাদের ঘটের বুদ্ধির প্রমাণ। কেন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আগে হুঁশিয়ার হলেন না, এসব আগেই আঁচ করতে পারলেন না? আপনারা এসব কারসাজির কারণে কতটা ‘অ্যাফেকটেড’ জানি না; কিন্তু সাধারণ মানুষকে মোটা চাল কিনতে কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে, তাতে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে, বহু মানুষ এখন অতিরিক্ত টাকা গুনতে না পারায় আধপেট খেয়ে থাকছেন। কর্তৃপক্ষের এমন খাটো বুদ্ধির কারণে বারবার দেশের মানুষ হচ্ছে নাকাল। এসব দেখে মনে হয় আমাদের সর্বস্তরের নির্বাহীরা খণ্ডকালীন দায়িত্ব পালন করেন, পুরো সময় অখণ্ড মনোনিবেশ থাকে না তাদের নিজ কাজে। অথচ আমাদের সংবিধান বলছে (২১(২) অনুচ্ছেদ) ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ এই অনুচ্ছেদের সহজ ব্যাখ্যা তো এটাই যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য সচেষ্ট থাকা।

নিত্যদিন চাল, ডাল, নুন, তেল, শাকসবজি, ফলমূল, ওষুধপত্র সবকিছুর দাম বাড়ছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, হয়তো এ লেখা প্রকাশের আগে বিদ্যুৎসহ আরো অনেক কিছুর দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসবে। যারা এমন সব ফরমান জারি করেন, তাদের তো আর কিছু এসে যায় না। তারা তো ‘স্যাচুরেটেড’ পারসন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যে শাঁখের করাতের নিচে। কে সে কথা ভাবে? সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে একটি খবর পিপিআরসি-বিআইজিডি-এর জরিপের উদ্ধৃতি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, করোনাকালে দেশে তিন কোটির বেশি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছিল। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়াতে এই সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশে ২১ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। রিপোর্টে তারা আরো বলেছেন, মূল্যস্ফীতি এবং দারিদ্র্যের ঝুঁকি থাকা জনগোষ্ঠীর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হওয়ায় নতুন দরিদ্রের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলো তাদের প্রকৃত আয়, খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় খরচের ক্ষেত্রে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানো তাদের জন্য এখন বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি নতুন ঝুঁকির সম্মুখীন।

যা হোক, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ যেসব দুর্যোগ আর সঙ্কটে তার জের এই জনপদের অধিকাংশের জীবনকে এতটাই বিপর্যস্ত করেছে যে, তারা যেন তাদের সব চেতনা হারিয়ে ফেলে জীবন্মৃত অবস্থায় এসে উপনীত। যত দুঃখ কষ্ট আসুক না কেন, তারা নির্বিকার। কোথাও কোনো আশা ভরসার স্থল আর অবশিষ্ট নেই, প্রতারণা-বৈষম্য যা-ই হচ্ছে তাতে কোনো চেতনাই যেন তাদের জাগ্রত করতে পারছে না। তারা বোধশক্তি হারিয়ে ফেলে এখন যেন ‘সর্বংসহা’ হয়ে উঠেছেন। অনিন্দ্যসুন্দর হাজার গল্প কাহিনী হোক, তাতে আর কোনোভাবেই কান পাতছেন না। এমন হতাশা বহুদিন এ দেশে ছিল না। এখন সব যেন আলেয়া আর মরীচিকা, মানুষের মনের এমন গভীর চেতনাহীনতার পরিণতি খুব খারাপ। কোনো জনপদের মানুষ যদি আশাহত হয়ে পড়ে সেটি নিমজ্জিত হওয়ার পূর্ব লক্ষণ। এখন কোথাও কোনো আস্থার অস্তিত্ব নেই। যারা এই রাষ্ট্রতরীর মাঝিমাল্লা তারা কি শুনতে পাচ্ছেন জাতির ব্যথা-বেদনার করুণ রাগিণী? সময় ফুরিয়ে গেলে বজ্রপাতে প্রচণ্ড শব্দও আর শোনা হবে না।

আবারো এই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে শুরুর দিকের কিছু কথা এখানে স্মরণ করতে চাই। আমরা একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও বিজনেস কমিউনিটির সাবেক নেতার সাথে মতবিনিময়ের কথা বলেছি। তিনি এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক বলয়ে গভীর এক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে। আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসহ সার্বিক অবস্থা এখনই যে সঙ্গিন, তা ছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা মুখ থুবড়ে পড়েছে, মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণে বোঝা বহু বেড়েছে, আমদানি-রফতানির ব্যালেন্স অব পেমেন্ট শোচনীয় পর্যায়ে, ভবিষ্যতে জরুরি পণ্য আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহতে ঘাটতি হবে, যে বাজেট প্রস্তাব আসছে তাতে রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি হচ্ছে, এখনই এমন অনুমানের কথা শোনা যাচ্ছে। এমন সব নেতিবাচক তথ্যই সম্মুখে ভেসে উঠছে। যে শিল্পপতির কথা উল্লেখ করেছি তার প্রেডিকশন যদি সঠিক হয় তবে কল্পনা করা যায় না, আমরা কী গভীর দুর্যোগের মুখে পড়তে যাচ্ছি। আমাদের সরকারি কর্তৃপক্ষ যে, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে কতটা দুর্বল এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় কতটা যে, অসহায় এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন তা কিন্তু সাম্প্রতিকালের দু-তিনটি ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেছে। আর নতুন সঙ্কটের প্রবাহ যদি উপরে এসে পড়ে তবে অবস্থা কতটা ভয়াবহ হবে তা খোদাই জানেন। সাধারণত এটা সর্বত্র দেখা যায়, হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে সবাই শিক্ষা ও প্রিকশন নিয়ে থাকে। আমরা তিনটি সঙ্কটের কথা নিবন্ধের শুরুতে স্মরণ করেছি; কিন্তু তা থেকে শিক্ষা ও প্রস্তুতি সম্পর্কে কোনো আলামত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ধারাবাহিকভাবে কোনো রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ যদি একাধিক মেয়াদে জনগণের ‘আস্থা’ নিয়ে ক্ষমতায় আসে তখন স্বাভাবিকভাবে মানুষের মধ্যে এই প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়, প্রথম মেয়াদের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে পরবর্তী মেয়াদের অনেক ‘বেটার পারফরম্যান্স’ তারা দেখাতে সক্ষম হবে। এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতু সম্পন্ন করতে পেরেছে বটে। কিন্তু আরও বহু বিষয় রয়েছে সেখানে তাদের ভূমিকা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই। একটা কথা বলা কিছুটা হয়তো আগাম হলেও এখন তা বলতে হবে; পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, সেটি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য। গত দু’টি কমিশনের যে কীর্তিকলাপ, তা এক কথায় বলতে গেলে, সর্বনাশা। তারা গণতন্ত্রের ‘গ’কে বঙ্গোপসাগরে চুবিয়ে তার সলিল সমাধি রচনা করে গেছে। এখন নতুন নির্বাচন কমিশনের মাত্র মাস কয়েকের ভূমিকা নিয়ে এক তথ্যভিত্তিক পর্যালোচনামূলক নিবন্ধ ছাপা হলো একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে। নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও এসব বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল ‘সুজন’-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সেই নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেছেন নতুন কমিশন কিন্তু পুরনো পথ ধরে হাঁটছে। পুরনো পথ ধরে হাঁটলে তাদের দ্বারা নতুন কিছু করা হবে না। তিনি অভিযোগ করেন, ইতোমধ্যে দু’জন কমিশনার ইভিএমের পক্ষে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। অথচ এ ব্যাপারে কমিশন কোনো বিশেষজ্ঞের সাথে এখনো কথা বলেনি। সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক অধ্যাপকের ভূমিকার কথা তিনি উল্লেখ করে বলেন, ইসির সংলাপে সেই অধ্যাপক কী বলেছিলেন, এখন হঠাৎ করে ইভিএমের পক্ষে কথা বলা শুরু করেছেন। যা হোক, এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে, পুরনো দুই কমিশনের ফেলে যাওয়া জীর্ণ পাদুকা পা দিয়েই নতুন কমিশন যদি হাঁটতে শুরু করে, তার অর্থ কিন্তু পুরনো ঢংয়ের মতো করে আগামী নির্বাচন হবে। নতুন কোনো আশাবাদ এ কমিশন সৃষ্টি করতে পারেনি।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের ভালো নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করায় সবসময়ই ভূমিকা থাকে। গত দু’দফা তেমন সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের তেমন কোনো অবদানই লক্ষ করা যায়নি। এখন বরং তাদের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয়, তারাই যেন ক্ষমতায় যাচ্ছেন, এটা সুনিশ্চিত। তাহলে আর কিসের ওপর ভরসায় থাকবে দেশের মানুষ? তাহলে নির্বাচনের প্রয়োজন কী, একটা ফরমান জারি করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement