২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রশাসনে গণ-আস্থা গুরুত্বপূর্ণ

প্রশাসনে গণ-আস্থা গুরুত্বপূর্ণ - ছবি : সংগৃহীত

কোনো সরকারের শাসন কার্যক্রমের ওপর জনগণের আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হলে, তার পতন না ঘটলেও সে সরকারের পক্ষে দেশের জন্য আর উল্লেখযোগ্য কিছু করা সম্ভব হয় না। কেননা সরকারের ওপর মানুষের আস্থা যখন উঠে যায়, তখন তার কার্যক্রমের ভেতর প্রচুর ত্রæটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। এর অনিবার্য প্রতিক্রিয়ায় মানুষের ওপর চরম দুর্ভোগের ঝড় বয়ে যেতে থাকে; সব দিক যেন অন্ধকার হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের দায়িত্বশীল তথা মন্ত্রী মহোদয়গণ এমন সব কথা বলতে থাকেন, যা পূর্বাপর সামঞ্জস্যহীন। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, বাণিজ্যমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য। কিছুদিন আগে তিনি ভোজ্যতেল (সয়াবিন তেল) নিয়ে বলেছিলেন, ব্যবসায়ীদের ওপর বিশ্বাস রেখে তিনি ভুল করেছেন। এ কথা তো একজন ‘সক্ষম’ মন্ত্রীর মুখে মানায় না, এ তো ‘লে-ম্যানদের’ মতো কথা। এ দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে যারা ব্যবসাবাণিজ্য করেন, তারা কবে কখন বিশ্বাসযোগ্য মানুষ ছিলেন! এই মাত্র তো গেল রমজান, তখন ব্যবসায়ীরা কী করেছিলেন? নিজেদের লাভের অঙ্ক বাড়াতে পণ্যমূল্য আকাশচুম্বী করেছিলেন মজুদদারি করে। সরকারের গোয়েন্দা কী করেছিল, যখন হাজার হাজার লিটার সয়াবিন তেলের মজুদ গড়ে তুলেছিল ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী কি জানতে চেয়েছিলেন এই মজুদদারদের খবর, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা পূর্বাহ্ণে কেন তাকে অবহিত করেননি। এখন এমন সন্দেহ কি মনে জাগবে নাÑ এসব দুরাচারী ব্যবসায়ীদের প্রতি সেসব গোয়েন্দা কর্মকর্তার একটা সফ্ট কর্নার আছে, অথবা তাদের মধ্যে গোপন তথ্য সংগ্রহ করার ব্যাপারে কর্মকর্তাদের দক্ষতার অভাব বিদ্যমান। এমনও তো হতে পারে, তথ্য পাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষের তেমন হুঁশ হয়নি। এমন সম্ভাবনার মধ্যে যেটাই ঘটুক না কেন, শেষ পর্যন্ত তো জনগণকেই ভুগতে হয় এবং হচ্ছে।

বলেছি, আমাদের রাজনৈতিক নির্বাহীদের কথাবার্তায় বহু ক্ষেত্রেই পূর্বাপর সাজুয্য পাওয়া ভার, তার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় দেখলাম ফের বাণিজ্যমন্ত্রীর একটি বক্তব্য, ‘সয়াবিন তেল কম খান, তা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ।’ এ প্রসঙ্গ নিয়ে দৈনিক সমকাল লিখেছে, ‘ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীলতার মধ্যে সয়াবিন ও পাম অয়েল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তা চিকিৎসকসহ সবাইকে বলতে হবে।’ ... পত্রিকটি আরো বলেছে, ‘বাজারের অব্যবস্থা দূর করা ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধের পরিবর্তে বাণিজ্যমন্ত্রীর ভোক্তাদের স্বাস্থ্যসচেতন করার পরামর্শে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ভোক্তারা। ‘কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী এতদিন সয়াবিন তেল খাইয়েছেন। এখন বলছেন, সয়াবিন তেল শরীরের জন্য খারাপ। তাহলে খারাপ তেলটা এতদিন আনতে দিয়েছেন কেন? এখন বলছেন, রাইস অয়েল করব। রাইস ব্র্যান অয়েল ৫০-৬০ হাজার টন থেকে সাত লাখ টনে নিয়ে যাবো। এটা কি সহজ কথা! নিছক ছেলেভোলানো কথার মতো। উৎপাদন কি জ্যামিতিক হারে বাড়বে?

সাধারণ মানুষ, বোদ্ধাসমাজ মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যে শুধু হতাশ নয়, এসব অসার অলীক বক্তব্য তাদের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে, তারা কি কল্পনার জগতে বসবাস করছেন, নাকি ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হওয়ার পর এখন উল্টাপাল্টা কথা বলতে শুরু করেছেন? মন্ত্রীর বাস্তবতাবর্জিত বক্তব্যের ভাগীদার তো গোটা মন্ত্রিপরিষদকে হতে হবে। দেশের অর্থনীতিবিদরা আগামী দিনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির যে চিত্র তুলে ধরে আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন তাতে মন্ত্রীদের কথাবার্তার ধরন কী হবে, সে কথা ভাবলে নিকষ কালো আঁধারই সম্মুখে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এমনটা হোক তা আমরা তো আশা করি না। কেননা এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতির মুখোমুখি মানুষ। পরিস্থিতির যদি আরো অবনতি ঘটে তবে কর্তৃপক্ষের দিশাহারা এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়ার সম্ভাবনা তো শতভাগ। তেমন পরিস্থিতির মোকাবেলা নিয়ে করণীয় সম্পর্কে তাদের পদক্ষেপ, কোনো কথা শুনতে না পেলেও বাগাড়ম্বরের কোনো কমতি নেই, বাকপটুতায় তারা অতুলনীয়।

সংসদীয় শাসনব্যবস্থার কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিন্তু এখানে সেই শাসনব্যবস্থা এতটাই ত্রæটিযুক্ত যে, সেটি সব ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায়। জোড়াতালি দিয়ে এখন এই শাসনব্যবস্থা চলছে। অথচ সংসদীয় ব্যবস্থার বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দায়িত্বশীলতা, সম্মিলিতভাবে মন্ত্রীদের জনগণের প্রতি তাদের দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন, মানুষের যাবতীয় চাহিদা-আকাক্সক্ষা পূরণে নিবেদিত থাকা, তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুরো মনোযোগের লক্ষ্যবস্তু থাকবে জনগণ, তাদেরকে যাতে কষ্ট-দুর্ভোগে পড়তে না হয় সে জন্য দূরদৃষ্টির সাথে কর্মসম্পাদন করা।

আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর অতি সাম্প্রতিক কর্তব্য পালনের স্বরূপটা সংবাদপত্র পাঠ করে জানতে পেরেছি। এভাবে যদি সব দায়িত্বশীলের কাজের মূল্যায়ন করতে বলা হয়, তবে সর্বত্র একই চিত্র হয়তো চোখের সামনে দেখতে শুনতে পাবো। সংসদীয় ব্যবস্থায় বস্তুত পুরো মন্ত্রিসভা সংসদের কাছে তাদের কাজের জবাবদিহি করতে বাধ্য। সংবিধানে চেতনা এমনটি; কিন্তু কোথায় সেই সংসদ! তাই তো কেউ জানে না কোথায় কী হচ্ছে। সংসদীয় ব্যবস্থায় মন্ত্রীদের পদ স্থায়ী নয়, তাদের সক্ষমতা পারঙ্গমতার ওপরই তাদের দায়িত্বে থাকার কালটা নির্ভর করে। আমাদের এখানে সে মূল্যায়ন হচ্ছে কি?

সংসদীয় ব্যবস্থার আর একটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রতিনিধিত্বমূলক শাসন। জনমতের ভিত্তিতে শাসন পরিচালনার জন্য ‘ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন’-এর মাধ্যমে যোগ্য জনপ্রতিনিধিদের বেছে নেয়া হয়। প্রশ্ন হলো, এখন কি সেই ‘ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন’ হচ্ছে! তাই কে যোগ্য কে নয়, এটা দেখার প্রক্রিয়াটি তো ‘ভ্যানিশ’ হয়ে গেছে। তাই তেঁতুলের বীজ বুনে মিষ্টি ফল আশা করা যায় কিভাবে? বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক লাস্কির মতে, রাজনৈতিক অভিজ্ঞ এবং আইন পরিষদে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম এমন সদস্যদের মন্ত্রিসভায় নিয়োগ দানের ফলে সংসদীয় ব্যবস্থায় যোগ্য লোকের শাসন কায়েম হয়। এখন কি আমাদের দেশে যেভাবে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হচ্ছে?

যেহেতু আমাদের এখানে নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগের ভেতর প্রচুর গলদ রয়েছে, তাই সুষ্ঠু শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাহী ও আইন বিভাগের যৌথ প্রয়াস দরকার, একে অপরের সম্পূরক। এর অনুশীলন শুধু আজ নয়, বহুদিন থেকে নেই। অথচ সংসদীয় শাসনব্যবস্থা থেকে যদি জনগণকে সুফল পেতে হয় এই দুই বিভাগের কার্যকর ভ‚মিকা অতীব জরুরী। দীর্ঘ দিন থেকে নির্বাহী বিভাগের অদক্ষতার কারণে যে ভোগান্তি তা নিয়ে আইন বিভাগ বলতে গেলে নিষ্ক্রিয়। নির্বাহী বিভাগের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নেয়া তো আইন বিভাগের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব; কিন্তু সেটি তো হচ্ছে না। বরং নির্বাহী বিভাগের প্রাধান্য এখন এতটাই জোরালো যে, আইন বিভাগ তার কার্যকারিতা পুরোপুরি যেন হারিয়ে ফেলেছে। এমন সঙ্কট থেকে উত্তরণ না ঘটলে কোনো দেশের সুশাসনের আকাক্সক্ষা কেবলই দিবাস্বপ্ন হয়ে থাকবে।

প্রশাসন সম্পর্কে বিষদভাবে কিছু কথা বলতে চাই। সংসদীয় ব্যবস্থার সব দেশেই রাজনৈতিক নির্বাহীগণ তথা মন্ত্রিসভার সদস্যগণ সবাই বলতে গেলে দলের ক্ষমতাসীন ডাকসাইটে নেতা। বস্তুত সে বিবেচনাতেই মন্ত্রিত্ব তো কোনো উপাধি নয়, অবশ্যই তাদের যোগ্য দক্ষ প্রশাসক হতে হয়। যারা পূর্ণকালীন রাজনীতিক, তারা রাজনীতি যতটা বোঝেন, এর মারপ্যাঁচ সম্পর্কে তাদের যত সক্ষমতা, প্রশাসন পরিচালনায় তেমন দক্ষ হওয়ার সুযোগ কম। তাই দলকে নেতা বানানোর প্রচেষ্টার পাশাপাশি দক্ষ প্রশাসক তৈরির বিষয়ে দলগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। অথবা প্রশাসনসহ অন্যান্য সেক্টরের কৃতী ব্যক্তিদের টানতে হবে, যাতে সব দিকে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।

দেশের বিজ্ঞজন তো জানেন, এমনকি সাধারণ মানুষও বোঝে সবাইকে দিয়ে সব কাজ হবার নয়। ইংরেজিতে একটা মশহুর কথা আছে, ম্যান বিহাইন্ড দ্যা মেশিন, বাংলা করলে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, কলকব্জার গুরুত্ব আছে বটে কিন্তু সেই কলকব্জা যিনি চালাবেন তার গুরুত্বটা অনেক বেশি। যাকে তাকে দিয়ে যে কাজটি হওয়ার নয়। যন্ত্রপাতি চালানোর ক্ষেত্রে পারঙ্গম-সক্ষম ও দক্ষ হতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিষয়টিও তেমনি। রাষ্ট্রযন্ত্রের যারা কারিগর তথা মন্ত্রিবৃন্দ, তারা আমাদের নেতা। নেতাদের সম্পর্কে তাত্তি¡কদের মত হচ্ছে ‘নেতৃত্ব আসলে ক্ষমতা: নেতাদের শোনার ও পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা থাকতে হয়, সর্বস্তরের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আলোচনা শুরু করার উৎসাহ দানের জন্য নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগানোর ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে সঠিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষমতা জবরদস্তি করে চাপিয়ে না দিয়ে নিজেদের মূল্যবোধ ও দূরদর্শিতাকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা। নেতৃত্ব অর্থ শুধুই সভায় আলোচ্য বিষয়সূচির প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখানো নয়, নিজে সেই কর্মসূচি স্থির করা, সমস্যা চিহ্নিত করা এবং শুধুই পরিবর্তনের সাথে সামাল দিয়ে না চলে নিজেই এমন পরিবর্তনের সূচনা করা, যা উল্লেখযোগ্য উন্নতির পথ প্রশস্ত করে।

লিঙ্কন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এন মেরির নেতৃত্ব সম্পর্কে এমন অভিমত; তিনি নেতৃত্ব সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তার ব্যবহৃত কিছু বাক্যাবলি নিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দের গুণপনার প্রেক্ষাপটে যৎকিঞ্চিৎ কথা বলার প্রয়াস নেব। যেমন, সিদ্ধান্ত নেয়ার সঠিক প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতাকে প্রাধান্য দেয়া। আমরা কি বলতে পারব সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে সঠিক পথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আমাদের নেতৃবৃন্দ কাজ করছেন? কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে উপযুক্ত ফোরামে আলোচনা করে সেটি হচ্ছে? আলোচনার সর্বোৎকৃষ্ট ফোরাম হচ্ছে সংসদ, সেখানে আলোচনা হলে দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে, তথা জনগণ সেটি জানতে বুঝতে পারবে। কিন্তু সেভাবে সব সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত যে ত্রæটিযুক্ত প্রমাণিত হয়, তার কারণ এটাই। অধ্যাপক এন মেরি বলেছেন, কোনো সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে না দিয়ে নিজেদের মূল্যবোধ ও দূরদর্শিতার মূল্যায়ন করতে হবে। আমরা তথা দেশের নেতৃবৃন্দ কি সব স্তরে মানুষের অভিমত অভিপ্রায়কে সম্মান দেখাতে পারছেন। কোন কাজটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর বা উপযুক্ত হবে সেটি কি নেতৃবৃন্দের চিন্তাচেতনায় সার্বিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে? দূরদর্শিতার বিষয়টি নেতৃবৃন্দের অন্যতম একটা গুণ বা তাদের মনমগজে থাকতে হবে। অথচ আমাদের নেতৃবৃন্দ দূরদর্শিতা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন এমন কোনো উদাহরণ তুলে ধরা যাবে কি? সম্প্রতি ভোজ্যতেলসহ আরো অনেক বিষয় তুলে ধরা যাবে, যেখানে তারা আগাম সতর্কতা দেখাতে পেরেছেন? জনগণকে দুর্ভোগমুক্ত রাখতে পেরেছেন? কিছুকাল আগে কোভিডের টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি এমন লেজেগোবরের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন যে, শেষে স্বয়ং সরকার প্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেছে। তার সেই কর্মপ্রয়াস দেশে-বিদেশে প্রশংসিত এবং কোভিড মোকাবেলায় বাংলাদেশ বাইরের প্রশংসা ও স্বীকৃতি পেয়েছে। অধ্যাপক মেরি উল্লেখ করেছেন, ‘নেতৃত্ব মানে শুধুই সভার আলোচ্য বিষয়সূচি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা নয়’। কিন্তু আমরা তো নিছক বাকপটুতা বা বাগাড়ম্বর করতে সক্ষম। নেতাকে কর্মসূচি স্থির করতে হবে যেকোনো প্রতিক‚ল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের, কর্মসূচি স্থির করার যোগ্যতা অর্জন করে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নেতৃবৃন্দ কতটা যোগ্য ও সক্ষম? মানুষ যেমন স্রোতের শ্যাওলা হতে চায় না, তেমনি গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিতেও চায় না, জনগণ স্থবিরতাকে ঘৃণা করে। তারা নিয়ত ইতিবাচক পরিবর্তন কামনা করে। নেতৃবৃন্দকে অবশ্যই পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে। ভবিষ্যতে উন্নতির পথ প্রশস্ত করা এবং সে পথ মসৃণ করতে হবে। তাদের ভুলতে হবে রাজপথে শুধু হুজ্জত হাঙ্গামা, মিছিলে নেতৃত্ব দেয়া।

নেতার মূল কাজ হলো নেতৃত্ব দেয়া, যা এ লেখার মূল প্রতিবাদ্য। নেতা বলতে প্রধানত মানুষ সরকারি দলের নেতৃবৃন্দকে মনে করে। এই ‘ন্যারো সেন্স’ আমরা সঠিক বলে মনে করি না। সরকারি দলে নেতৃবৃন্দ যেমন জাতীয় নেতা। পক্ষান্তরে বিরোধী শিবিরের দায়িত্বশীলরাও জাতীয় নেতা; তবে এটা ঠিক, সরকারি দলের নেতাদের কর্তব্য অনেক বেশি এবং দায়িত্ব পালন নিয়ে সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হয় বহু ক্ষেত্রেই। কিন্তু বিরোধী দলের তেমন দায়িত্ব নেই বরং সরকারের একতরফা সমালোচনার সুযোগ তাদের ষোলোআনা। তা ছাড়া দেশে যে সংসদীয় গণতন্ত্রের কথা আমরা বলি তা এতটা ত্রæটিপূর্ণ যে, বিরোধী দলকে বিকল্প সরকার ভাবার কোনো অবকাশ নেই, সে জন্য বিরোধী দলের নেতাদের দায়িত্বশীল হয়ে ওঠার সুযোগ ও চেষ্টাও নেই। সে যাই হোক, দেশে সত্যিকারভাবে বড় দল বলতে আওয়ামী লীগসহ চারটি, বাকি তিনটি বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। সত্য কথা বলতে, চারটি দলের সদস্যদের সবার পক্ষে নেতা হওয়ার, নেতা হয়ে ওঠার সুযোগ যথেষ্ট ও সহজ; কিন্তু নেতাদের দক্ষ প্রশাসক হওয়ার অবকাশ ততটাই কম। কেননা দল নেতা বানাতে পারে; কিন্তু প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষ করার প্রক্রিয়া ও প্রশিক্ষণ দেয়ার কোনো ব্যবস্থাই আমাদের দলগুলোতে নেই। তাই এখানে দক্ষ যোগ্য রাজনৈতিক নির্বাহীর অভাব অনেকখানি, যা রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনার জন্য ক্ষতিকর।
ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement