৯৯ শতাংশ ব্যর্থকে সফল বলি কিভাবে
- গোলাম মাওলা রনি
- ২১ এপ্রিল ২০২২, ২০:৩৫
পত্রপত্রিকায় নিয়মিত উপসম্পাদকীয় লিখছি ২০০৯ সাল থেকে। তার আগে সেই আশির দশকে সংবাদপত্রে কাজ করেছি তিন-চার বছর। সাংবাদিকতা দিয়ে শুরু করা কর্মজীবন পরবর্তী সময়ে হাসুলী বাঁকের উপকথার মতো কতশত অলিগতিতে ঘুরপাক খেয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। জীবনের প্রয়োজনে কত জায়গায় গিয়েছি, কত কিছু করেছি, কত মানুষের সাথে মিশেছি সেসব স্মরণ করলে রীতিমতো দম বন্ধ হয়ে আসে। কত আঘাত পেয়েছি, কত আঘাত প্রতিহত করেছি এবং জীবনযুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে কতবার মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েও বেঁচে থাকার প্রবল আগ্রহের কারণে ফিরে এসেছি তা যদি আজকের পরিণত বয়সে ভাবি তবে নিজের অতীত কর্মের কারণে মাঝে মধ্যে হতবিহŸল হয়ে পড়ি।
সম্মানিত পাঠক, হয়তো এখনো বুঝতে পারেননি যে উল্লিখিত শিরোনামে আমি এ পর্যন্ত যা লিখেছি তার দিয়ে আসলে কী বুঝতে চাচ্ছি অথবা কী বলতে চাচ্ছি। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য বলছি, আজ আমি আপনাদের আমার জীবনের কিছু গল্পকথা শোনাব যার ফলে আপনারা সহজেই বুঝতে পারবেন যে, আমি কিভাবে আমার জীবনের ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছি এবং বাকি এক শতাংশ যা কিনা আমার দৃষ্টিতে অলৌকিকতার কারণে কিভাবে সব ব্যর্থতার গ্লানি কাটিয়ে উঠে চলমান বাস্তবতায় অনেক সফলতার মুখ দেখতে পেয়েছি। আপনাদের হৃদয়ঙ্গমের সুবিধার্থে আমি আমার শৈশবকালের কাহিনী দিয়েই আজকের পরিক্রমা শুরু করতে চাই।
আমার জন্ম ১৯৬৭ সালে। আবহমান বাংলার একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা এবং ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার পূর্ব শ্যামপুর গ্রামের প্রকৃতি ও পরিবেশে শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। শৈশবের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি হিসেবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের তিনটি স্মৃতি খুব মনে পড়ে। প্রথমত প্রায়ই আকাশে বোমারু বিমান দেখতে পেতাম এবং ছোট ছোট শিশু কিশোর সেসব বিমানের দিকে গুলতি ছুড়ে উল্লাস করত। কোনো কোনো দুষ্ট বালক অবশ্য লুঙ্গি উঠিয়ে বা হাফপ্যান্টের একাংশ উঁচিয়ে গুলি করার কসরত করত আর সেই দৃশ্য দেখে বুড়া-বুড়িরা হেসে গড়াগড়ি দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স প্রায় পাঁচ বছর আর মেঝো ভাইটির বয়স দুই মাস। আমাদের গ্রামে একদিন গুজব রটল যে মিলিটারি আসছে। এই কথা শোনার পর প্রাণভয়ে ছেলে-বুড়ো-গুঁড়ো সবার সেকি ভয়ানক অবস্থা। বলতে গেলে সবাই সবাইকে ভুলে গেল এবং যে যার মতো করে ঝোপঝাড় জঙ্গল এবং ফসলের ক্ষেতে পালাতে গিয়ে কত যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটাল তা স্মরণ করলে শত দুঃখের মধ্যেও হাসি চেপে রাখতে পারি না।
স্কুলে যাওয়ার বয়স হলে আমাকে সদরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হলো। আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। সেই ছয়-সাত বছর বয়সে একাই যেতাম। তখনকার প্রকৃতি পরিবেশ এবং সামাজিক অবস্থা আমাকে নিদারুণভাবে পীড়া দিত। আমরা ছিলাম গ্রামের প্রধানতম সচ্ছল পরিবার। ৭০-এর দশকের আবহমান বাংলার দারিদ্র্য আমাদের গ্রামেও প্রকট ছিল। আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার বসতি ছিল এবং এত লোকের মধ্যে মাত্র ২০-২৫টি পরিবারে তিনবেলা খানাখাবারের আয়োজন হতো। বাকিরা এক বেলা কিংবা বড়জোর দু’বেলা খেয়ে দিনাতিপাত করত। কারো কারো ভাগ্যে এক বেলার খাবারও জুটত না। অথচ একমুঠো ভাতের জন্য তারা কতই না পরিশ্রম করত। আমি যে বয়সে জামাকাপড় পরে স্কুলে যেতাম সে বয়সে গ্রামের বেশির ভাগ শিশু পুরো উদোম হয়ে দুষ্টুমি করত নতুবা ক্ষেত-খামারে কাজ করত। আমি স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর কিছু দিন নিয়মিত স্কুলে গেলাম। কিন্তু তারপরে লেখাপড়া থেকে মন উঠে গেল। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই আমি কোনো বনবাদাড়ে ঢুকে পড়তাম এবং বড় কোনো গাছে উঠে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতাম। এ ছাড়া রাস্তার পাশে সমবয়সীদের সাথে কখনো খেলতাম অথবা কারো কারো সাথে ধানক্ষেত-পাটক্ষেতে গিয়ে কৃষকদের সাহায্য করতাম। আমার সবচেয়ে বেশি আনন্দ হতো বর্ষকালে। কচুপাতা বা কলাপাতা গিয়ে বইপত্র জামাকাপড় ঢেকে বৃষ্টির মধ্যে খাল-বিল-পুকুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গোসল করতাম অথবা কোনো কর্দমাক্ত মাঠে খেলাধুলার নামে কাদার মধ্যে গড়াগড়ি খেতাম। এ অবস্থায় চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাসের বোকাসোকা ব্যর্থ ছাত্রদের মধ্যে আমার অবস্থান ছিল একেবারে সম্মুখ সারিতে।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে আমার মাথার জট খুলল। আস্তে আস্তে কিভাবে যে ভালো ছাত্র হয়ে পরবর্তী পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে দেশসেরা ফলাফল করলাম তা আজ আর মনে করতে না পারলেও একটি কথা ভালোই মনে করতে পারি। আমি জীবনে কোনো দিন ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইনি। জজ-ব্যারিস্টার উকিল মোক্তার হওয়ার বাসনাও ছিল না। আমি প্রথম জীবনে গদাশা হতে চেয়ে ছিলাম। আমাদের বাড়ির পাশে একটি কালীমন্দির ছিল এবং নির্জন সেই মন্দিরের কাছে একটি বটগাছ ছিল যার নাম ছিল বৈরাগীর বটতলা। ওখানে বটগাছের তলায় ছোট্ট একটা টঙঘরের মতো দোকান ছিল। সামান্য কিছু কেরোসিন তেল, দুই-তিন কেজি সরিষার তেল, এক কেজির মতো নারকেল তেল, কিছু টোস্ট বিস্কুট, চানাচুর ও কয়েক প্যাকেট শালপাতার বিড়ি ছিল সেই দোকানের সম্বল। দোকানটির নাম ছিল মোল্লার দোকান আর সেখানে কর্মচারী হিসেবে সারা দিন বসে থাকতেন গদাশা। ৬৫-৭০ বছরের বৃদ্ধ গদাশা ছিলেন অকৃতদার।
গদাশাকে আমার কী যে ভালো লাগত তা বলে বুঝাতে পারব না। কিন্তু কেন তাকে এত ভালোবাসতাম তার উত্তর আজো খুঁজে পাইনি। আমার বয়স যখন একটু বাড়ল অর্থাৎ ৯-১০ বছর হলো তখন বন বাদাড় ফসলি জমি এবং কর্দমাক্ত মাঠের প্রতি আকর্ষণ কমে গেল। আমি তখন স্কুল ফাঁকি দিয়ে দূর-দূরান্তের হাটবাজারে যেতাম সাপখেলা ও তাবিজ বিক্রির মজমা দেখার জন্য। এ ছাড়া ওষুধ বিক্রির মজমা ও জাদু প্রদর্শনী আমাকে নিদারুণভাবে আকর্ষণ করত। আমি একজন সফল সাপুড়ে এবং জাদুকর হওয়ার স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করলাম। আমাদের গ্রামে মহাফকির নামের একজন বিখ্যাত সাপুড়ে ছিলেন। তিনি জাদুটোনা জানতেন এবং জিন-ভ‚ত তাড়ানোর ক্ষেত্রে খ্যাতি ছিল দশ গ্রামে। আমি মহাফকিরের শিষ্য হওয়ার জন্য পাগলপারা হয়ে গেলাম। কিন্তু ফকিরের কাছে যাওয়া বা কথা বলার সাহস কোনো কালে হয়নি। উল্লিখিত ব্যর্থতার পর আমি কিছু দিন জারিগানের গায়ক হতে চাইলাম। তারপর যাত্রা দলের নায়ক হওয়ার বাসনা পেয়ে বসল এবং যাত্রাপালা দেখতে দেখতে একরাতে কমলার বনবাস নামক পালাটি দেখে অলি আল্লাহ হওয়ার বাসনা জেগে উঠল। এই লক্ষ্যে সেই কিশোরবেলায় নিদারুণ ধর্মকর্ম শুরু করলাম এবং প্রায় বছরখানেক ধরে সব কর্ম করার পরও অলি আল্লাহর মতো উড়তে পাড়লাম না কিংবা ফুঁ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিতে পারলাম না। আমার এই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য অনেকের সাথে পরামর্শ করলাম। কেউ একজন বললেন, ওভাবে হবে না, সংসারের মায়া ত্যাগ করতে হবে। জঙ্গলে গিয়ে বছরের পর বছর ধ্যান করতে হবে। আমি বিষয়টি নিয়ে আমার চেয়ে বছর দুয়েকের বড় চাচাতো ভাই আরজুর সাথে কথা বললাম। আরজু একটি মাদরাসায় পড়ত। সে আমার কথায় সায় দিলো। আমরা উভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামের গহিন অরণ্যে গিয়ে তপস্যা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি তখন সবে সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উঠেছি। সম্ভবত বৈশাখ মাসের কোনো এক দুপুরে আমরা পালাতে গিয়ে ধরা পড়লাম এবং পরিবারের কঠোর অনুশাসনে জঙ্গলে যাওয়ার পরিকল্পনা পণ্ড হয়ে গেল।
নবম শ্রেণীতে ওঠার পরও আমার লেখাপড়া ভালো লাগত না, যদিও আমি তখন স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের একজন। সে সময় সিনেমা দেখার নেশা আমাকে ভীষণভাবে পেয়ে বসল। আমি স্বপ্ন দেখতাম আব্বার মতো বড় মহাজন হব এবং আব্বা যে মহাজনী নৌকায় করে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা, দশমিনা-বাউফল উপজেলার বড় বড় বন্দরে কাপড়ের দোকান করতেন ঠিক তদ্রƒপ দোকানদারি করার স্বপ্ন আমাকে পেয়ে বসল। রোজ লাখ টাকার লেনাদেনা ১০-১২ জন কর্মচারী, বিশাল নৌকার মাঝি-মাল্লা-বাবুর্চি, নদীর টাটকা মাছ, টলটলে স্বচ্ছ পানি, জোয়ার-ভাটার টান, অসংখ্য খরিদ্দারের বাকি নেয়ার অনুনয় বিনয়ের দৃশ্য এবং দিন শেষে নৌকায় খানাপিনা-ঘুমানো ইত্যাদি দেখার পর মনে হলো এর চেয়ে আর সফলতা কিছু হতে পারে না।
আমার আব্বা অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ফরিদপুরের বাসিন্দা হলেও ব্যবসাবাণিজ্য করতেন ভাটি অঞ্চলে। সুতরাং তিনি বছরে একবার কিংবা বড়জোর দুইবার গ্রামে আসতেন। ফলে আমিসহ আমার অন্য পাঁচটি ভাইয়ের সাথে তার চাক্ষুষ সম্পর্ক খুবই কম ছিল। আমরা কাকার জিম্মায় বেড়ে উঠছিলাম এবং আব্বা নিয়মিত সংসারের খরচ নির্বাহ করতেন। তো একবার আব্বার কর্মস্থল দেখার জন্য আমি যখন ফরিদপুর ছেড়ে পটুয়াখালী গেলাম এবং তার মহাজনী নৌকায় সপ্তাহখানেক থাকলাম তখন তিনি টের পেলেন যে, সন্তানদের সাথে তার দূরত্বের পরিণাম ভালো হবে না। তিনি তড়িঘড়ি করে আমাদের গলাচিপা উপজেলার উলানিয়া বন্দরে নিয়ে এলেন এবং তার সন্তানরা যেন লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হয় তার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করলেন। ফলে আমার মধ্যে এতকাল যে বোহেমিয়ান ভাবসাব ছিল তা সমূলে উপড়ে পড়ল। নয়া পরিবেশে অধ্যয়ন ছাড়া আমার অন্য কিছু করার সুযোগই ছিল না।
এসএসসিতে খুব ভালো ফলাফল করে দেশসেরা ঢাকা কলেজে ভর্তি হলাম। আব্বা আমাকে হোস্টেলে না রেখে আলাদা বাসা ভাড়া করে দিলেন। আমি প্রচুর পড়তাম এবং ছোট ছোট স্বপ্ন দেখতাম। ইন্টারমিডিয়েটে পড়া অবস্থায় আমি ফরিদপুর দর্পণ নামের একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করতাম। এই কারণে কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী-আমলা থেকে শুরু করে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সাথে আমার সখ্য সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। আমি নিয়মিত একটি বাংলা দৈনিক এবং একটি ইংরেজি দৈনিক বাসায় রাখতাম। এ ছাড়া ভারতীয় দেশ পত্রিকা, সানন্দা, ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ, ইকোনমিস্ট টাইম ম্যাগাজিন, নিউজ উইক ছাড়াও সাপ্তাহিক বিচিত্রা নিয়মিত রাখতাম এবং যথেষ্ট সময় নিয়ে এগুলো পড়তাম। ফলে দেশ-বিদেশের টাটকা খবর ছাড়াও বিশ্ব-রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্মতত্ত¡, ক‚টনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে আমার চিন্তাচেতনা-অনুভ‚তি ছিল আধুনিক। ঠিক এই সময়ে আমি সেনা কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকলাম এবং আইএসএসবিতে পাস করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা তদবির আরম্ভ করলাম। কিন্তু অতীতের ব্যর্থতাগুলোর মতো এ ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হয়ে একান্ত অনিচ্ছায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হলাম।
ছাত্রদের কাছে যেসব বিষয় অত্যন্ত আকর্ষণীয় সেগুলোর মধ্যে আইন প্রধানতম। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম এক বছর খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করলাম এবং কাক্সিক্ষত ফলাফলও পেলাম। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে এসে আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। আমি আইনসংশ্লিষ্ট পেশা যথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, হাইকোর্টের বিচারপতি, নিম্ন আদালতের বিচারক, অথবা উকিলদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করলাম। কিন্তু কোনো পেশাই আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হলো না। সুতরাং আমি পড়াশুনা কমিয়ে দিলাম এবং কেবল দ্বিতীয় বিভাগে পাস করার জন্য পরীক্ষার আগের রাতের অধ্যয়নই যথেষ্ট বলে মনে করলাম। ফলে আমার হাতে প্রচুর সময় এসে গেল। একদিন পত্রিকায় একটি বিদেশী কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখে দরখাস্ত করলাম এবং ইন্টারভিউ দেয়ামাত্র চাকরি হয়ে গেল। বছরখানেক চাকরির পর নিজের ব্যবসা আরম্ভ করলাম এবং দুই-তিন বছরের মধ্যে কিভাবে যে কোটিপতি হয়ে গেলাম তা আজো খুঁজে বের করতে পারিনি।
ব্যবসা, নতুন টাকা, গাড়ি-বাড়ি-ভোগবিলাসের বন্যায় কিছু দিন কাটানোর পর আমার মনে হলো টাকা-কড়ি বেশি থাকা ভালো না। আমি ব্যবসা বিস্তৃতির লাগাম টেনে ধরলাম এবং উপার্জিত অর্থের একটি অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করতে গিয়ে রাজনীতিতে জড়ানো, এমপি হওয়া এবং নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেয়ার পর মনে হলোÑ রাজনীতি আমার জন্য নয়। আমি পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে, গল্প কবিতা উপন্যাস লিখে এবং হালকাপাতলা ব্যবসা করে বাকি জীবন পার করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এর বাইরে টকশো, সভা-সমিতি সেমিনার দেশ-বিদেশ ভ্রমণের আগ্রহ আমায় পেয়ে বসল। আমি দেশের প্রথম শ্রেণীর চারটি জাতীয় দৈনিকে প্রতি সপ্তাহে একটি করে উপসম্পাদকীয় লেখা শুরু করলাম। বিভিন্ন টিভিতে টকশো করতে গিয়ে আমি এত ব্যস্ত হয়ে পড়লাম যে, দিন-রাতে দুই-তিটি টকশোতে অংশগ্রহণ করার পরও মনে হতো আরো পারি। এগুলো ছাড়াও দুটো ঐতিহাসিক উপন্যাস, দুটো ভ্রমণকাহিনী লিখে ফেললাম এবং একটি জাতীয় দৈনিক সেগুলো আবার ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে থাকল।
২০১৪ সালের নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করিনি- এমনকি দলের মনোনয়নপত্রও কিনিনি। কারণ রাজনীতি আমার ভালো লাগেনি। অন্য দিকে লেখালেখি ও টকশো নিয়ে যে আগ্রহ ছিল তাও চার-পাঁচ বছর পর ভাটা পড়ল। চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান এবং নয়া দিগন্তের উপসম্পাদকীয় লেখা ছাড়া বাকি সবকিছু ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে স্বেচ্ছায় বর্জন করে এখন নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল নিয়ে মাতামাতি করছি।
আমরা আজকের আলোচনার একদম শেষপ্রান্তে চলে এসেছি। আপনি যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমার অর্থবিত্ত-বাড়ি-গাড়ি-শিল্পকারখানা, ব্যবসাবাণিজ্য, জনপ্রিয়তা-পরিচিতি ইত্যাদি এক দিকে রাখেন আর অন্য দিকে উল্লিখিত ব্যর্থতাগুলো রাখেন তবে আমাকে কি আপনি ব্যর্থ বলবেন নাকি সফল? যদি সফল বলেন তবে এত ব্যর্থতা যেটিকে আমি ৯৯ শতাংশ বলে শিরোনামে উল্লেখ করেছি সেই স্ত‚পের মধ্য থেকে সফলতা কিভাবে এলো! এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা জানার আগ্রহ যদি আপনাদের থাকে তবে ভবিষ্যতে সফলতা নিয়ে ভিন্ন মাত্রার একটি নিবন্ধ লেখার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা