২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘বিচার চাই না’: কেন?

-

সম্প্রতি পরপর দু’টি দুর্ঘটনায় নিহত দু’জন তরুণীর অভিভাবক তাদের আপনজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার চান না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। একটি সভ্য সমাজে এ ধরনের বিচার না চাওয়ার ঘোষণা অত্যন্ত বিরল। এ ধরনের সংস্কৃতি বা মানসিকতা সমাজের জন্য অশনি সংকেত। এই ‘বিচার না চাওয়ার’ ঘটনার অবতারণা সামান্য কোনো বিষয় নয়। এটিকে কিছুতেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে আমাদের নেতা এবং সমাজপতিদের ভাবতে হবে। বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করতে হবে, কেন মানুষের মাঝে এভাবে বিচার চাওয়ার ব্যাপারে অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে।

গত ২৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গাড়িতে বাড়ি ফেরার পথে নিহত হন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু। তার খুনিদের এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রাণ হারান পাশের রিকশাযাত্রী তরুণী সামিয়া প্রীতি যিনি ছিলেন মা-বাবার উপার্জনক্ষম সদস্য। তার মৃত্যুর পর তার ভাই জনসমক্ষে অকপটে বলেন তিনি বা তার পরিবার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইবেন না! এরপর গত ১ এপ্রিল খিলগাঁও এলাকায় রাতে স্বামীর সাথে মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফেরার পথে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন নাসরিন খানম নামের এক গৃহবধূ। এই স্বামীও অকপটে ঘোষণা দিলেন তিনি বিচার চাইবেন না। কেন আমাদের সমাজটি এমন হয়ে গেল বা হয়ে যাচ্ছে? কেন মানুষ এভাবে বিচার চাওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে? এটা কি বিচার প্রাপ্তির প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাবের প্রতিফলন? মানুষ কি তা হলে সুবিচার পাচ্ছে না? অথচ আমাদের দেশে আইন আদালত, বিচারক, উকিল-ব্যারিস্টার, পুলিশ-র‌্যাব সবাই আছেন। সবাই কাজ করছেন। সবাই পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন বলে দাবি করছেন। তবে সমস্যাটি কোথায়?

বিচার প্রাপ্তির প্রতি এ ধরনের নেতিবাচক মানসিকতা এক দিনে তৈরি হয়নি। দেশে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের খুন-খারাবি, ছিনতাই-রাহাজানি, ধর্ষণ, ইত্যাদি অপরাধের ঘটনা ঘটে থাকে। সেই সাথে ঘটে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর অঘটন। মিডিয়ার কল্যাণে সেসব চাঞ্চল্যকর অপরাধ বা খুন-খারাবির ঘটনার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বা বিচার প্রক্রিয়া মানুষ অনুসরণ করে থাকে বা জেনে যায়। এসব নিয়ে হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এভাবে পুরো বিষয়গুলো নিয়ে একটি পারসেপশন বা ‘কল্পমূর্তি’ তৈরি হয়। প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মানুষ প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে নিজেদের মতো করে বিশ্লেষণ করে। তারপর তারা উপসংহারে পৌঁছে, সমাজে কারা বিচার পায় বা কারা বিচার পায় না!

সাগর-রুনি নামের সাংবাদিক দম্পতি নিহত হয়েছিলেন ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। ৬২ দিন তদন্তের পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ‘ডিবি’ রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থতা স্বীকার করলে হাইকোর্ট ‘র‌্যাব’কে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেয়। সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও তা জমা দেয়া হয়নি (প্রথম আলো, ৫ এপ্রিল ২০২২)। এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন গত ১০ বছরেও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এলিট বাহিনী এবং অত্যন্ত দক্ষ ও পারঙ্গম ‘র‌্যাব’ এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু আজ অবধি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত সম্পন্ন করতে ‘র‌্যাব’ কেন পারল না? এই তদন্ত কি এতটাই কঠিন? অথচ র‌্যাবের সামর্থ্যরে ব্যাপারে কারো সন্দেহ নেই। কাজেই জনমনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, কোনো অদৃশ্য কারণে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া অগ্রসর হচ্ছে না।

২০১৩ সালে ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জে খুন হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ২০১৪ সালে ৫ মার্চ র‌্যাব তদন্ত শেষে জানায়, ‘নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়। অচিরেই অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হবে।’ কিন্তু আজ ১০৯ মাস পরও সেই অভিযোগপত্র পেশ করা হয়নি (প্রথম আলো, ৯ এপ্রিল ২০২২)। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসে কুমিল্লা ভিক্টেরিয়া কলেজছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। এ বিষয়ে স্থানীয়রা অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিলেন। সিআইডি ২০১৭ সালে তিনজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ২০২০ সালে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এরই মধ্যে পাঁচজন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন (ঢাকা ট্রিবিউন, ২০ মার্চ ২০২২)। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো অগ্রগতি ছয় বছরেও দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে না। এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালীতে নিজের নির্দেশিত মার্কায় ভোট না দেয়ার অপরাধে একজন নেতা সাঙ্গোপাঙ্গসহ এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করেছিল! সিলেটের এমসি কলেজে একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এক গৃহবধূকে তার স্বামীর সামনেই গণধর্ষণ করেছিল। এসবের বিচার প্রক্রিয়ার অগ্রগতি জনগণের কাছে পরিষ্কার নয়। বিচার সাধারণত নিজস্ব গতিতে চললেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টিকারী অপরাধগুলোর ব্যাপারে মানুষ অপরাধীর বিচার সম্পর্কে জানতে চায়। কোনো কিছু জানা না গেলে মানুষ নিজেদের মতো করেই বিশ্লেষণ করে একধরনের নেতিবাচক উপসংহার টেনে ফেলে।

২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার কোনোটিরই বিচার মানুষ দেখতে পায়নি। এমনকি রাজধানীতেও বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সঙ্ঘটিত বিভিন্ন নির্বাচনী অপরাধের কোনো প্রতিকারের কথা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ধাপের স্থানীয় নির্বাচনে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী এমনকি সংসদ সদস্যরাও নানান ধরনের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেও কোনো প্রকার বিচার প্রক্রিয়া বা প্রশ্নের সম্মুখীন হননি। অন্য দিকে অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা অসংখ্য প্রকার অদৃশ্য অপরাধের মামলার আসামি হয়ে বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আটক হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে জেলহাজতে বিচারের অপেক্ষায় আছেন।

রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর, নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এবং সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের মহল্লায় হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর এসব হামলার বিচার এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিচার যথেষ্ট দক্ষতা ও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ে প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়লেও অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের বিচার কেন সময়মতো করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নটি উত্থাপিত হচ্ছে নাগরিকদের মাঝে। অর্থাৎ ব্যক্তি, পরিবেশ, ভিকটিম, অপরাধী ইত্যাদি বিবেচনায় অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা বা না আনার কার্যক্রম এগোচ্ছে কি না সেই প্রশ্নটি থেকেই যায়।

কিছু দিন আগে রাজধানীতে কলেজপড়ুয়া এক তরুণী ‘মুনিয়ার’ অপমৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশের একটি বড় শিল্প গ্রুপের মালিকের নামে মামলা করা হয় ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্যপ্রবাহ, প্রকাশিত ফোনকল রেকর্ড, মুনিয়ার আত্মীয়স্বজনের অভিযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে ওই ব্যক্তির এই তরুণীর হত্যাকাণ্ড বা আত্মহত্যায় জড়িত থাকার আলামত দেখা গেলেও কিছু দিন পর তাকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।

সুবিচারের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা আল্লাহর সাক্ষী হিসেবে ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা মা-বাবা এবং আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান বা বিত্তহীন যাই হোক আল্লাহ দু’জনেরই ঘনিষ্ঠতর; সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে গিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না; যদি ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলো অথবা (সত্যকে) এড়িয়ে চলো তবে আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত।’ (সূরা নিসা, ৪ : ১৩৫)

আবার একজন সংসদ সদস্য পুত্র ও বর্তমান কাউন্সিলরকে তার বাসায় অবৈধ মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র ও সিগন্যাল যন্ত্রপাতি রাখার অপরাধে র‌্যাব আটক করলেও পরে অন্য সংস্থার তদন্তের পর তাকে ওই অপরাধ থেকে খালাস দেয়া হয়। খুনের অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও আমরা সাজা মওকুফ করার ঘটনা দেখেছি একাধিকবার। অন্য দিকে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক তার বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে আটক হলেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে আটক করে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। আটকের দীর্ঘ দিন পর তার ওই স্ত্রী কর্তৃক ধর্ষণ মামলা করতে দেখা যায়। স্বেচ্ছায় যে নারী মামুনুল হকের সাথে হোটেলে অবকাশ যাপনে গেছেন, তার সাথে দীর্ঘ দিন স্ত্রী হিসেবে সম্পর্ক রেখেছেন, সেই নারী এত দিন পর তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করায় জনমনে অনেক প্রশ্ন ও সন্দেহ সৃষ্টি করেছে! যে দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে আদালত থেকে সাক্ষী অপহৃত হয়; যে দেশের প্রধান বিচারপতি সুস্থ থাকা সত্ত্বেও অপরের ইচ্ছায় ‘অসুস্থ’ হয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান, সেই দেশ আসলে সব সম্ভবের দেশ!

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর জন্য ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে; আর কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো ন্যায়বিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে; তোমরা ন্যায়বিচার করো, এটি আল্লাহ সচেতনতার নিকটতর; আর আল্লাহকে ভয় করো; তোমরা যা করো নিশ্চয় আল্লাহ তা ভালোভাবেই অবহিত।’ (সূরা মায়িদা-৫ : ৮) কিন্তু আমরা কি বস্তুনিষ্ঠভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পেরেছি?

সুতরাং এখানে কারা বিচার পাবে আর কারা বিচার পাবে না এটি বিচারপ্রার্থীরাই বিশ্লেষণ করে ফেলেন বলেই আজ ঘোষণা দিয়ে দেন, ‘আমি বিচার চাই না’। এ ছাড়াও ভুক্তভোগী বা বিচার প্রার্থী আরো নানান কারণে বিচারবিমুখ হয়ে পড়ছেন। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, খরচপত্র সঙ্কুলান করার সামর্থ্যহীনতা, যথাযথভাবে সাক্ষ্য দেয়া নিয়ে নানা রকম হেনস্তার শিকার হওয়া, বিবাদির পক্ষ থেকে হুমকি বা নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি সবই নাগরিকরা দেখেন, জানেন এবং অনেকেই জটিল বাস্তবতার সম্মুখীনও হয়েছেন। আর আজকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে মানুষ তার সুখ-দুঃখের কথা অন্যদের সাথে ভাগাভাগি করেন বলে এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সবারই জানা হয়ে যায়। এসব কারণেই হয়তো বা আজকে পরপর দু’টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভিকটিমের আত্মীয়স্বজন বিচার চান না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু ‘বিচার চাই না’ বললেই কি মামলা শেষ? না এটি বরং মামলার শুরু। এই মামলা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বা হত্যাকারীর বিরুদ্ধে নয়। বরং এই মামলা পুরো জাতির বিরুদ্ধে। তারা ধরেই নিয়েছেন মামলা করে এর কোনো প্রতিকার হয়তো পাবেন না। কেউ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সুবিচারটি দেবে কি না এ ব্যাপারে তারা অসহায়ত্ব অনুভব করছেন। এটি মূলত দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত সংস্কৃতি, সামাজিক ব্যবস্থা, ন্যায়পরায়ণতা, সুশাসন আর প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগুলোর প্রতি নেতিবাচক ধারণারই প্রতিফলন। কাজেই আমাদের রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক চিন্তকগণকে এখনই ভাবতে হবে আমরা আমাদের সমাজকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? কেমন সমাজ আমরা আমাদের পরবর্তী বংশধরদের হাতে হস্তান্তর করে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি? কারণ ‘আমি বিচার চাই না’ শুধু একটি বাক্য বা অভিব্যক্তি নয়। এটি একটি ‘অভিমান’; পুরো জাতির ওপর। এ ‘অভিমান’ যদি আমরা না ভাঙানোর ব্যবস্থা করি তবে আগামীকাল হয়তো বা অন্য একজনকেও এ ধরনের ‘অভিমান’ করতে হবে জাতির সাথে। এভাবে ধীরে ধীরে অভিমানীদের মিছিল বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হবে। সেই মিছিল একসময় ভয়াবহ স্রোত সৃষ্টি করে পুরো জাতিকেই ভাসিয়ে নিয়ে অথৈ সাগরে ফেলবে। কাজেই জাতির কাণ্ডারিদের এখনই সজাগ হতে হবে। সমস্যার গভীরতা খুঁজে বের করে তা মেরামত করতে হবে অতি দ্রুত। তা হলেই দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র রক্ষা পাবে সেই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে। আর এই কার্য তখনই সম্ভব হবে, যখন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল বা সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে শুধু দেশ ও জাতির কল্যাণটিই মুখ্য হবে। তবেই নাগরিকদের আর বিচার চাইতে হবে না, বরং সুবিচার তার প্রার্থীর দোরগোড়ায় গিয়ে নিজেই হাজির হবে।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement