নারী দিবসের ভাবনা
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ২৮ মার্চ ২০২২, ২০:৩৭
গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হলো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ’। মূলত নারীদের অধিকার সচেতন করার লক্ষ্যে ১৯১৭ সালের ৮ মার্চ রাশিয়াতে প্রথম এই দিবসটি পালিত হয়। ১৯৭৫ সালে জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব নারী দিবস ঘোষণা করেছিল। এরপর থেকেই এই দিনটি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু নারী নির্যাতন কিংবা নিপীড়নের ঘটনা কমেনি। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও নারী অধিকারের ফেরিওয়ালাদের মুখ থেকে কোনো উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ক্ষমতার চূড়ান্ত অবস্থানে নারীরা সমাসীন হয়েছেন। রাণী ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে এলিজাবেথ কিংবা আরব ইতিহাসের কিংবদন্তি নারী রাণী বিলকিসের কথা আমরা জানি। পবিত্র কুরআনের সূরা নামলে (২৯-৩৬ আয়াত) রাণী বিলকিসের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি চমৎকার একজন শাসক ছিলেন। ভারতবর্ষের প্রথম নারী শাসক সুলতানা রাজিয়া এবং মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীসমাজের গৌরব। এ ছাড়াও ব্রিটেনের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার, শ্রীলঙ্কার প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক, ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ক্ষমতায়নেরই ফল। দেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার ও মন্ত্রিসভায় একাধিক নারী রয়েছেন। বলা চলে বাংলাদেশ পৃথিবীতে নারীর ক্ষমতায়নের একটি ভালো উদাহরণ। তারা দেশ সমাজ ও জাতিকে তাদের কর্মদক্ষতা এবং বিচক্ষণতা দিয়ে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে তাদের বিচক্ষণতা ও কর্মদক্ষতা সর্বজনস্বীকৃত।
কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত উক্তিটি আজও প্রাসঙ্গিক। ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ এটাই সত্য। মানসিকভাবে এটি লালন করতে হবে। এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলেই কেবল নারীর মর্যাদা, ক্ষমতায়ন বাস্তবরূপ লাভ করবে। এ ছাড়া শুধু আইন করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আমরা যে চেতনায় নারী দিবস উদযাপন করছি তাতে নারীদের অধিকার সুরক্ষিত হয়নি, তাদের অবস্থান ও সম্মান সংহত হয়নি। মুখে নারীদের ক্ষমতায়নের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তালাকের হিড়িক। ঘর ভাঙার এক বাঁধ ভাঙা জোয়ার আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, মাঠে, ঘাটে, পরিবহনে,বাজারে, দোকানে, অফিসে, ব্যাংকে কোথাও নারীরা সুরক্ষিত নয়। নারীরা সর্বত্রই নির্যাতনের শিকার। যে ক্ষমতা কিংবা অবস্থান তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয় না, তাকে কী করে আমরা ক্ষমতায়ন বলি।
শুধু ক্ষমতায়ন হলেই নারী তার অধিকার পায় না। তার অবস্থান সুসংহত হয় না। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষার। নৈতিক শিক্ষা ব্যতীত কোনো জাতি উন্নত জাতিতে পরিণত হতে পারেনি। নৈতিকতা শিক্ষার ভালো উদাহরণ আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে দেখেছি। আমরা বিবি খাদিজা রা.কে দেখেছি। তিনি মক্কার এবং তৎকালীন আরবের অন্যতম ধনী, ক্ষমতাশালী এবং সম্মানিত একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। যুদ্ধের সময় তখন মহিলারা ময়দানে কাজ করেছেন। তৎকালীন সময়ে তাদের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত ছিল, আরবের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে একজন নারী কোনো সঙ্গী সাথী ছাড়াই ভ্রমণ করতে পেরেছেন। আজকে আমরা কি তা পারছি?
সুতরাং শুধুমাত্র নারী অধিকারের সচেতনতার স্লোগান দিয়ে নারীর ক্ষমতাকে, নারীর অবস্থানকে সমাজে সংহত করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষার। প্রয়োজন একটি আদর্শিক পরিকাঠামোর এবং সাথে সাথে দরকার একটি বাস্তবধর্মী আইন এবং তার বাস্তবায়ন। নৈতিক শিক্ষার সাথে সাথে মানুষকে সচেতন করতে হবে- নারীদের মর্যাদা ও অধিকার প্রসঙ্গে। এটা ছাড়া শুধু নারী দিবস পালন করলেই নারীর অধিকার এবং সম্মানকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।
লেখক : চক্ষুরোগ রিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা