‘কপ-২৬’ থেকে দেয়া প্রতিশ্রুতি কি এখন শিকায় উঠবে!
- সালাহউদ্দিন বাবর
- ০৫ মার্চ ২০২২, ২০:২৩
ইউক্রেন নিয়ে অনেক দিন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমের বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে রাশিয়া এবং তার মিত্রদের স্নায়ুযুদ্ধ চলে আসছিল। এখন তো ইউক্রেনে প্রচণ্ড সম্মুখ সমর চলছে। পশ্চিমের ইউক্রেনের মিত্ররা সামরিক, মানবিক ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে চলেছে। জাতিসঙ্ঘও সরব সক্রিয়। দএই যুদ্ধের শেষ পরিণতি কী হবে, কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, বলা কঠিন। এ দিকে সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষই সম্ভবত অন্য সব ভাবনা এখন অন্য দিকে সরিয়ে রেখে ইউক্রেন সঙ্কটকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অপর অবশিষ্ট বিশ্ব ভীত সন্ত্রস্ত দুই পক্ষের যুদ্ধংদেহী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।
আশঙ্কা, যদি সত্যিই এমন পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষ আরো সক্রিয় হয়ে যুদ্ধকে ছড়িয়ে দেয়, তবে তা বড় যুদ্ধের রূপ নেবে। আর সেটি তো হবে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুর্ভাবনার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশেই অর্থনৈতিক টানাপড়েনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দূর থেকে আমাদের স্রষ্টার কাছে এই প্রার্থনা, প্রভু সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দাও। মজলুম ইউক্রেনকে তুমি আগ্রাসন থেকে রক্ষা কর, বিশ্বে যেন শান্তি বজায় থাকে। রাশিয়ার বোধোদয় যেন ঘটে।
অপর দিকে কোভিডেরও অতিমারীতে এমনিতেই বিশ্ব বিপর্যস্ত, সেই সাথে পৃথিবীর জলবায়ু ভয়ঙ্কর বিরূপতা নিয়ে বিশ্বসভ্যতাকে গ্রাস করার ক্ষেত্রে ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। খোদ জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস পৃথিবীর শতাধিক স্বনামখ্যাত বিজ্ঞানীর এক সতর্কবাণী উদ্ধৃত করে বলেছেন, বিশ্বের জলবায়ুর ভয়াবহ পরিবর্তনে বিশ্বসভ্যতা বিলীন হয়ে যাওয়ার বিপদসঙ্কেত সজোরে বেজে ওঠে আমাদের ঘরে দুয়ারে আছড়ে পড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর ১২ দিনব্যাপী বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস্’ (কপ)-২৬ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে। কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু ভয়াবহ আগ্রাসন তথা প্রলয় রুখতে একগুচ্ছ প্রস্তাব সুপারিশ গৃহীত হয় এবং গরিব ও সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থসহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। বিশ্বের অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী তথা শিল্পোন্নত দেশগুলো, যে সম্মেলনে জলবায়ুর মারাত্মক পরিবর্তনজনিত বিরূপতা রুখতে অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি করেছে।
যেসব ওয়াদা, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার দেয়া হয়েছে, তা জলবায়ু বিনষ্টকারী পশ্চিমের হাতেগোনা দেশ, আর চীন রাশিয়ার পক্ষ থেকে। তা ছাড়া ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জাপানও জলবায়ু বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ করা কমাবে। কিন্তু ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে এখন যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, পশ্চিমের দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার পরস্পরকে মোকাবেলা করা নিয়ে দ্বন্ধ্বের সৃষ্টি হয়েছে তাতে কপ-২৬-এর বিষয় কি তাদের মন-মগজে বিরাজ করছে? ধারণা করা হচ্ছে, এখন হয়তো তাদের মাথা থেকে সেসব শিকায় উঠেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছেন, জলবায়ু চুক্তিতে বাধা হতে পারে ভূ-রাজনীতি। তিনি আরো বলেন, ইউক্রেন পরিস্থিতিসহ ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার প্রভাবিত হতে পারে। এ দিকে সময় তো বসে নেই। জলবায়ুবিষয়ক বিজ্ঞানীরা আগে বলে দিয়েছেন পরিস্থিতি মোকাবেলার কাজ শুরু করতে এক মুহূর্ত বিলম্ব করা যাবে না। কিন্তু এ সতর্ক বাণী কি এখন সংশ্লিষ্ট সবাই মনে রেখেছেন? বিশ্ববাসী গভীর উদ্বেগের মধ্যে থাকলেও এ নিয়ে কি তারা আমলে নিচ্ছে, তার কোনো আভাস ইঙ্গিত নেই, আমরা কোন প্রলয়ের আবর্তে পড়ছি তা বোধগম্য হচ্ছে না। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, কপ-২৬ থেকে যেসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছিল, তার প্রধান লক্ষ্য ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে নামিয়ে আনা, যা অর্জন করতে হলে কার্বনের নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমাতে হবে। আর ২০৫০ সালের মধ্যে নির্গমন নামিয়ে আনতে হবে শূন্য শতাংশে। এ সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘের লক্ষ্য ছিল, দরিদ্র দেশগুলোকে জলবায়ু সঙ্কটে আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধি করা, যাতে তারা অভিযোজন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যয় করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার করে সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে।
বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের মধ্যে এই সহায়তা কার্যকর হবে। তবে তা আবার ২০২৩ সাল পর্যন্ত পেছানো হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিও পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হওয়া গরিব দেশগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘের আইপিসিসি বলেছে, বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর জন্য কিছুই নয়। এখন তাদের ক্ষতি মোকাবেলায় বছরে এক ট্রিলিয়ন ডলার করে লাগবে। আইপিসিসি আরো বলেছে, জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় অবকাঠামো নির্মাণ, কৃষিকাজ, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সংরক্ষণের মতো খাতগুলোতে আগামী এক দশকে ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করলে তা থেকে ৭ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে। অন্য দিকে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এখনই যদি ‘কঠিন জলবায়ু নীতি’ বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে ২০-৫০ সাল নাগাদ বছরে ২০ কোটি মানুষের জন্য নতুন করে মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে যা এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ।
যা হোক, কপ-২৬ সম্মেলনে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা হ্রাস করার পদ্ধতির ব্যাপারে ঐকমত্য না হওয়ায় পরপর তিনটি খসড়া চুক্তি তৈরি করা হয়। শেষাবধি চীন ও ভারতের চাপে চুক্তিতে কয়লার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘ফেজ আউটের পরিবর্তে ফেজ ডাউন’ কথাটি সংযোজন করা হয়।
কপ-২৬ সম্মেলনের চুক্তির বাইরেও ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন হ্রাস করার জন্য কয়েকটি অঙ্গীকার করা হয়েছে। যেমন : কয়লার ব্যবহার বন্ধ, বনভূমি রক্ষা, মিথেন গ্যাস হ্রাস, জলবায়ু সহনীয় করতে নিম্ন কার্বন নিঃসরণমূলক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক গাড়ি নির্মাণ বন্ধ, ‘নেট জিরো’ ইত্যাদি। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি (লেস অ্যান্ড ড্যামেজ) মোকাবেলায় অর্থায়নের স্কটল্যান্ড প্রতীকী অর্থবরাদ্দ দিয়ে ১৪ লাখ ডলার অর্থায়নের সূত্রপাত করেছে। কপ-২৬ সম্মেলনের সবচেয়ে বড় চমক, জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় আমেরিকা ও চীনের একসাথে কাজ করার কথা ঘোষণা করা। অপ্রত্যাশিত এই ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই দুই দেশ এই দশকের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে একসাথে কাজ করবে। জাতিসঙ্ঘ ও ইইউ এই ঘোষণাকে বেশ জরুরি ও উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের মোট কার্বন নির্গমনের প্রায় অর্ধেকই করে এই দুই দেশ। আর কার্বনই উষ্ণায়নের মূল কারণ। কয়লার ব্যবহার বন্ধের জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ১৯০ দেশ ও সংস্থা। স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ কয়লাভিত্তিক ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব বাতিল করেছে।
বাংলাদেশে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ বলতে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে যে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তার যাবতীয় চুলচেরা বিশ্লেষণকে বোঝাচ্ছে; ইউএনএফসিসিসি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যা কিনা মানুষের কারণে সৃষ্ট, আর জলবায়ুর বিভিন্নতাকে অন্য কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন বোঝাতে ব্যবহার করে। কিছু কিছু সংগঠন মানুষের কারণে সৃষ্ট পরিবর্তনগুলোকে মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন বলে। তবে একথা অনস্বীকার্য, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন শুধু প্রাকৃতিক কারণেই নয়, এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও শামিল আছে। এই নিবন্ধে ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন’ বলতে স্রেফ প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ু পরিবর্তনকে বোঝানো হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের বিপর্যয়ের এই ঘটনাকে বাংলাদেশ সরকারের ‘বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়’ কর্তৃক নব্বইয়ের দশকে প্রণীত ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশান প্ল্যান-এ দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মনে রাখা দরকার যে, প্ল্যান হালনাগাদ রয়েছে। কোনো দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সত্যি পড়ছে কি না, সেটি চারটি মানদণ্ডে বিবেচনা করা হয়;
(ক) জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত,
(খ) কোথায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেশি হচ্ছে,
(গ) সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে
(ঙ) ক্ষতিগ্রস্ত দেশটি ক্ষতি মোকাবেলায় বা অভিযোজনের জন্য এরই মধ্যে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে।
একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন উজাড়, বন্যা ইত্যাদি সব দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং হবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক বেড়েছে। মালদ্বীপ, টুভালু, টোবাগো- এদের সবার ক্ষেত্রেই এসব মানদণ্ড কার্যকর নয়। তা ছাড়া মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যা বাংলাদেশের অনেক জেলার জনসংখ্যার চেয়ে কম। তাই এই চারটি মানদণ্ডেই বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০ সালের প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতি বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে। এই সমীক্ষা চালানো হয় ১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৯৩টি দেশের ওপর। উল্লেখ্য, ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে প্রতিবেদনেও বাংলাদেশকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রস্তরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলে বর্ষা মৌসুম। এ সময় মৌসুমি বায়ু প্রভাবে দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যা অনেক সময়ই বন্যায় ভাসিয়ে দেয়। এ ছাড়া মৌসুমি বায়ু প্রবাহের আগমুহূর্তে কিংবা বিদায়ের পরপরই স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, কিংবা সাগরের নিম্নচাপ, জল-ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয় যার আঘাতে বাংলাদেশ প্রায় নিয়মিতই আক্রান্ত হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে এই জনপদের এই স্বাভাবিক চিত্রটি এখন অনেকখানি বদলে গেছে। তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্তর সব দিক দিয়ে সংঘটিত এসব পরিবর্তন বাংলাদেশে, যা জলবায়ুগত স্থূল পরিবর্তন এনেছে।
১৯৫১ সাল থেকে ২০০৪ সালের সংগৃহীত প্রাপ্ত তথ্য থেকে বৃষ্টিপাতের ব্যাপ্তি, মৌসুমের ব্যাপ্তি, বৃষ্টিপাতের পরিমাপ ইত্যাদি যাচাই করে নয়াদিল্লির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সেন্টার অ্যাটমোস, ফেরিক সায়েন্স বিভাগের উদ্যোগে বৃষ্টিপাতের ব্যাপ্তি, বর্ষা মৌসুমের ব্যাপ্তি, বৃষ্টির পরিমাণ ইত্যাদি যাচাই করে দেখা গেছে যে, ভারতীয় উপমহাদেশে বৃষ্টিপাত কমছে।
বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় নদ-নদীর পানিপ্রবাহ শুকনো মৌসুমে স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে না, ফলে নদীর পানির চাপ কমার কারণে সমুদ্রের লোনা যতটুকু এলাকাজুড়ে আটকে থাকার কথা, ততটুকু থাকে না; পানির প্রবাহ কম থাকায় সমুদ্রের লোনাপানি স্থলভাগের কাছাকাছি চলে আসে। প্রায় সময়ই তা চাঁদপুরের কাছাকাছি চলে আসে। ফলে লবণাক্ততা বেড়ে যায় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুল এলাকায়। দক্ষিণ-পশ্চিম যশোরে এমনটা দেখতে পাওয়া যায়, সেখানে শুকনো মৌসুমে গঙ্গার পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়। সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায়, এ দেশের দাকোপসহ দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র নিকটবর্তী ভূ-ভাগের ভেতর লোনাপানি ঢুকে পড়েছে। এই সমস্যা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এবং কুমিল্লা পর্যন্ত উত্তর দিকে বিস্তৃত হচ্ছে। আরো উত্তরে বিস্তৃত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ১৯৯০ সালে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ৮,৩০,০০০ হেক্টর, ২০০১ সালে তা এসে হয়েছে ৩০,৫০,০০০ হেক্টর। বরিশাল ও পটুয়াখালীতে লবণাক্ততার ২ পিপিটি (লবণাক্ততা পরিমাপক মাত্রা) থেকে ২০০৯৭ পিপিটি হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম শহর সন্নিকটের হালদা নদীর পানির লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে ৮ পিপিটি হয়েছে ২০০৯ সালে।
বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতির গঠনই এমন যে, কোথাও কোথাও ভূ-ভাগ যথেষ্ট ঢালু। খুলনা সুন্দরবনের অবস্থান এমন একটা জায়গায়, যা ত্রি-ভূজাকৃতির বঙ্গোপসাগরের শীর্ষবিন্দুতে গাঙ্গেয় মোহনায় অবস্থিত। এই গাঙ্গেয় মোহনার মহীঢাল খুব মসৃণভাবে সমুদ্রে নেমেছে গেছে। ফলে আন্দামান সাগরে উৎপন্ন জল-ঘূর্ণিঝড়গুলো উত্তরমুখী যাত্রায় মহীঢালের অগভীরতার কারণে জলোচ্ছ্বাস অত্যন্ত উঁচু হয়ে আসে। সাগরের জোয়ারও অপেক্ষাকৃত উঁচু হয়। তাই সাগরের লোনা পানি ঢুকে পড়ে উপকূলভাগে। লবণাক্ত করে তোলে ভূ-অভ্যন্তরে।
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও বিগত কয়েক বছরে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক আচরণ পূর্বের পরিচিতি ম্লান করে দিচ্ছে। ১৯৬০ সালে বঙ্গীয় এলাকায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পর আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ০ দশমিক ৫ শতাংশ, এমনি ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তাপমাত্রা গড়ে ১ দশমিক ৪ শতাংশ সেলসিয়াস বাড়বে। গ্রীষ্মকালে যেখানে তাপমাত্রা বাড়বে অপর দিকে ঠিক একইভাবে শীতকালে তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে কমবে। ২০০৩ সালের পর ২০১১ সালে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। দিনে দিনে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া ছাড়াও সময়মতো বন্যা হচ্ছে না। ২০০৮ সালে বাংলাদেশের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৩০০ মিলিমিটার, বরেন্দ্র এলাকায় গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১১৫০ মিলিমিটার। এরকম স্বল্প বৃষ্টিপাত দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর ফলে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গিয়ে খরায় আক্রান্ত হবে বিপুলসংখ্যক মানুষ, এর মধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লোক বেশি। এ রকম খরায় কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে ব্যাপারে বিভিন্ন উৎস থেকে আলাদা আলাদা উপাত্ত পাওয়া যায়। কারো মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ খরায় উদ্বাস্তু হবে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ।
বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভের পানির স্তর হ্রাস পেয়ে দেখা দিচ্ছে স্থায়ী মরুকরণ। রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় বৃষ্টি কমে যাওয়ায় নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এসব মানবসৃষ্ট, কারণ বিশেষ করে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবও এ জন্য দায়ী। তবে অনাবৃষ্টির কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাওয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া সুপেয় পানির অভাবে ভূগর্ভের পানির ব্যাপক ব্যবহার বেড়ে যাওয়া ছাড়াও সেই সাথে ভূগর্ভের পানি কমে যাচ্ছে। ২০০৯ সালে মার্চ মাসে জাতিসঙ্ঘের আন্তঃসরকার জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত প্যানেলের পানি সম্পদের ওপর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ সমুদ্র তীরের বেশ কয়টি দেশে সামনের দিকে মিঠা পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেবে। ২০২০ সাল নাগাদ এ সমস্যা ভয়াবহ রূপ নেবে।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তন্মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙন এবং ভূমিধসের মাত্রা উল্লেখযোগ্য। আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পরপর বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এখন দুই থেকে তিন বছর পরপরই বড় ধরনের দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। এমনকি ব্রিটিশ এক গবেষণা সংস্থার তালিকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শীর্ষে। অপর দিকে স্থলভাগে ঘূর্ণিবায়ু বা ঘূর্ণিঝড় বা টর্নেডোর আঘাত প্রায় নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় ঝড়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত অন্যান্য ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে শীর্ষে রাখা হয়েছে। সেই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৩৩ জন মারা যায়। একইভাবে জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের বিধিলিপিতে স্থান করে নিয়েছে। ভারত মহাসাগরের উত্তর দিকের এ অঞ্চলটি যথেষ্টই ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ অঞ্চল। প্রতি বছরের এপ্রিল, মে, জুন এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় ও তা জল-ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। আর সেই তাণ্ডবে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায় উপকূলবর্তী হাজার হাজার একর স্থলভাগ। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর ১৯৯৫, ১৯৯৭, ২০০০, ২০০১ সালে জল-ঘূর্ণিঝড় হলেও তা তেমন ক্ষতি করেনি। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বলতে গেলে তেমন কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়নি।
কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনে এ দিকে যেমন বাড়ছে জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা, তেমনি বাড়ছে এদের সংখ্যা। ২০০৭ সালে ১৫ নভেম্বর দেশে আঘাত করে ঘূর্ণিঝড় সিডর। তার মারাত্মক প্রভাব রেখে যেতে না যেতেই পিছু পিছু ২০০৮ সালে ২ মে ধেয়ে আসে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস, একই বছর ২৬ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় রেশমি, ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় খাইমুক, ২৬ নভেম্বর নিসা, ২০০৯ সালে ১৭ এপ্রিল বিজলী এবং ওই বছর ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা। এসব ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত নিয়ে এখনো মানবেতর জীবন যাপন করছে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক উপকূলীয় মানুষ। এসব ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সমুদ্রের লোনাপানি অনেক নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি করছে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা।
দিনে দিনে শিলাবৃষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশে। ২০১০ সালে ২৭ মার্চ রাতে প্রচণ্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টি বয়ে যায় লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ ও হাতিবান্ধা উপজেলার ওপর দিয়ে। বহু জায়গায় টিন ও খড়ের ঘরের চাল পর্যন্ত ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। একই সাথে অতি বৃষ্টির ফলে তীব্র বন্যা হচ্ছে। ১৯৯৮ সালে বন্যার পর বন্যাপ্রবণ এলাকার পরিধি ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০০৯ সালে পূর্ব মধ্যাঞ্চলের ৩৪ জেলা শহর বন্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দেশে নদীভাঙন তীব্র হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বহু বর্গ কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ভূমিকম্প, সুনামি, সমুদ্রস্তর উচ্চতা বৃদ্ধি হলে বাংলাদেশের ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল ভাগ থাকায় দিনে দিনে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে ডুবে যাবে বা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি ১ মিটার বৃদ্ধি পায় তবে বাংলাদেশের অন্তত ১৭ শতাংশ ভূমি সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। তাতে বহু মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশে নানাভাবে নানা রকম প্রাকৃতিক সম্পদ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। অনেক প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে। গাছ, মাছ, পাখি, ফুল, ফল সব কিছুতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এমনকি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী তিনটি বিভাগ চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ৪০টি দ্বীপ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে তা গবেষণার বিষয়। এসব দ্বীপের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ২১টি, বরিশাল বিভাগে ১৮টি, খুলনা বিভাগে একটি দ্বীপ রয়েছে। এসব দ্বীপের ভাগ্যে কী ঘটবে বলা মুশকিল।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষিভিত্তিক উৎপাদন হ্রাস কোথাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে; তাতে খাদ্যসঙ্কট তীব্র হবে; অপুষ্টি দেখা দেবে, কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত মানুষের ঘর বাড়ি ধ্বংস হবে, তারা কাজ হারাবে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে গোটা দেশের মানুষ শ্বাসকষ্ট, হিট স্ট্রোক বা গরমজনিত মৃত্যু কিংবা ঠাণ্ডাজনিত কারণে মানুষের মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যাওয়া অঞ্চল থেকে ২০৫০ সাল নাগাদ ৩ কোটি মানুষ গৃহহীন হতে পারে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির দেয়া তথ্যমতে। তা ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকার দুর্যোগে মানুষ সহায় সম্বল হারাতে হয় গৃহস্থ পরিবারের গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, মুরগি, বৃক্ষাদি, শস্য, মৎস্যসম্পদ, শস্যবীজ, গবাদি পশুর শুকনো খাদ্য। এতে মানুষ আর্থিক অনটন কিংবা দুর্যোগের মুখোমুখি হবে।
যাই হোক, জলবায়ুজনিত ক্ষতির যতটুকু বর্ণনা দেয়া হয়েছে, এসব বিষয় নিয়ে প্রশাসন বা সরকার ওয়াকিবহাল নন, বা তারা আসন্ন বিপর্যয় নিয়ে পূর্ণ খবর রাখেন না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিন্তু অবাক বিস্মিত হচ্ছি এবং পরিতাপও বোধ করছি এ জন্য যে, তাদের কথাবার্তায় অনেক বিষয়ই আসছে। উন্নয়ন নিয়ে নিয়ত তো বাগাড়ম্বর হচ্ছেই। কিন্তু জলবায়ুজনিত আসন্ন বিপর্যয় নিয়ে কিছুমাত্র উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তাদের ভাব ভঙ্গিমায় বা ভাষায় নেই। কখনো কখনো কিছুকথা উড়ে আসে। যেমন একটি জাতীয় দৈনিকে সম্প্রতি প্রকাশিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক নিবন্ধ থেকে জেনেছি, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৪৫ কোটি ডলারের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছে। ইতঃপূর্বে কৃষিমন্ত্রীও বলেছেন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা করব। এ বাবদ ক্ষয়ক্ষতির যে ধারণা পাওয়া গেছে, এসব প্রয়াস নিছক বারি বন্ধুর মতোই হবে। প্রতি বছর বাজেটে এ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে। তা ছাড়া কপ-২৬ থেকে সাহায্যের যে প্রতিশ্রুতি এসেছে, তার জন্য লাগাতার কাজ করার চেষ্টা তদবির জারি রাখা উচিত। এখন আমাদের ‘ফরজ’ হিসেবেই ভাবতে হবে ভূ-রাজনীতির কারণে।
দেশের জলবায়ু নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করা অত্যন্ত জরুরি, এ জন্য পৃথক সেল বা অনুরূপ কিছু সংস্থা গঠন করা প্রয়োজন, তারা প্রতিনিয়ত এর অগ্রগতি অবনতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ গবেষণা করে যাবে। দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে সচেতন করা, ব্যক্তিবিশেষের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, সে মতামত গ্রহণ করা উচিত। জলবায়ুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে এখন একটা আন্দোলন গড়া দরকার। কেউ যদি একটি বৃক্ষও রোপণ করে সেটিও গণ্য করা উচিত। সবার মধ্যে এ জন্য একটা বোধ জাগাতে হবে। সর্বোপরি এ জন্য দ্রুত নীতি প্রণীত হওয়া এই মুহূর্তের দাবি।
ndigantababor@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা