পুতিনের পারমাণবিক হুমকি ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
- মাসুম খলিলী
- ০১ মার্চ ২০২২, ২০:২৬, আপডেট: ০২ মার্চ ২০২২, ০৬:১৭
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার পারমাণবিক স্থাপনাকে সতর্কাবস্থায় রাখার নিদের্শনা জারি করেছেন। এর আগে তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধে জড়ানোর ব্যাপারে আমেরিকার প্রতি একই ধরনের হুমকি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ইউক্রেনে এলে আপনারা এমন পরিণতি দেখবেন যা অতীতে কোনো সময় দেখেননি। এসব হুমকি যে পুতিন মুখে মুখে উচ্চারণ করে চলেছেন এমনই নয়, তিনি ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ প্রস্তুতি ও মহড়ায় আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইস্কান্দ্রিয়া ও সুপারসনিক সমরাস্ত্রও উপস্থিত করেছেন।
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের পাশে সর্বাত্মকভাবে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে সেনা না পাঠানোর ঘোষণার পেছনে তিনি পারমাণবিক সঙ্ঘাত এড়াতে চেয়েছেন বলেই উল্লেখ করা হচ্ছে। বাইডেন অবশ্য পরে প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন যে, তার সামনে দু’টি পথ ছিল। একটি হলো ইউক্রেনে সেনা পাঠিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটানো। আর অন্যটি হলো অর্থনৈতিক ও অন্যান্য নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে পুতিনের ধ্বংসকারী যুদ্ধ করার ক্ষমতাকে হ্রাস করা। আমি শেষোক্ত পথটিই বেছে নিয়েছি।
ভ্লাদিমির পুতিনের আচরণকে যারা পাঠ করছেন তাদের ধারণা তিনি ১৯৩০-এর দশকে এডলফ হিটলারের সিনড্রমে আক্রান্ত হয়েছেন। হিটলার সে সময় যে ধরনের অজুহাত তুলে অস্ট্রিয়া চেকোস্লাভাকিয়া, পোল্যান্ড এবং অবশেষে রাশিয়া আক্রমণ করেছিলেন ঠিক সেভাবে পুতিন একের পর এক জর্জিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, ইউক্রেনে সামরিক হস্তক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছেন। সবশেষে পাশ্চাত্যকে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন।
এই হুমকি এমন এক সময় পুতিন দিলেন যখন গতানুগতিক লড়াইয়ে রাশিয়ান সেনাবাহিনী পরিকল্পনানুসারে ইউক্রেনকে জয় করতে সক্ষম হচ্ছেন না। এভাবে সামরিক ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয়ে পড়লে পুতিন সিরিয়া ও চেচনিয়ার মতো বিধ্বংসী অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারেন বলে মনে হয়। একই সাথে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিলে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার যে হুমকি পুতিন দিয়েছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।
ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত স্বপ্ন দেখছেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্তৃত্ব ফিরে পেতে। এ জন্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের দেশগুলোতে একের পর এক শাসন পরিবর্তন প্রচেষ্টা, সেনা প্রেরণ ও অনুগত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। একই সাথে নজর রাখছেন পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিও। ইউক্রেনের ব্যাপারে তিনি পরিষ্কার বলেছেন রাষ্ট্র হিসেবে এর টিকে থাকার অধিকার নেই। জর্জিয়া বা বেলারুশ এমনকি মধ্য এশিয়ার অন্যান্য প্রজাতন্ত্রের ব্যাপারেও তার দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম। তিনি যেভাবে এগোচ্ছেন তাতে বাধা না পেলে তিনি জারের রুশ প্রজাতন্ত্রের মতো একটি সর্বাত্মকবাদী উগ্র জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন, যার প্রত্যাশা থাকবে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো ক্ষমতাধর হওয়া।
রাশিয়ার অর্থনীতি এ ধরনের একটি প্রভাবশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার উপযুক্ত না হওয়ার কারণে চীনের সাথে তিনি বোঝাপড়া তৈরি করেছেন। একই সাথে আমেরিকাবিরোধী যেসব দেশ এশিয়া আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকায় রয়েছে সেগুলোকে নিয়ে আলাদা বলয় তৈরি করছেন। এর মাধ্যমে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যে বৈশ্বিক ব্যবস্থা সেটিকেও চ্যালেঞ্জ করছেন। এ ক্ষেত্রে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তার বেশ কিছুটা মিল রয়েছে। যদিও দুইজনের স্বার্থ সব ক্ষেত্রে এক বিন্দুতে নেই।
একজন রাশিয়ান বিশ্লেষক জানিয়েছেন, ভ্লাদিমির পুতিন আর পশ্চিমা প্রধান বিশ্বব্যবস্থার অংশ হিসেবে থাকতে রাজি নন। তিনি নতুন এক বিশ্বব্যবস্থা নির্মাণ করতে চান অথবা পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমন এক বলয় তৈরি করতে চান যেখানে সমান্তরাল বৈশ্বিক অর্থ ও বাণিজ্যব্যবস্থা কার্যকর হবে।
রাশিয়া ও চীন দু’টি দেশই পাশ্চাত্যনির্ভর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করার এই বিষয়ে সম্মত রয়েছে বলে মনে হয়। অবশ্য বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো শক্তিশালী নয় রুশ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। দেশটির অর্ধেক আয় আসে জ্বালানি রফতানি করে। বাকি আয়ের বড় অংশ আসে প্রতিরক্ষাশিল্প থেকে। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করার পর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পর গত ছয় বছরের বেশি সময় নিষেধাজ্ঞার মধ্যে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করেছে রাশিয়া।
পুতিন জানতেন, ইউক্রেন দখলে কোন অভিযান চালালে পশ্চিমা দেশগুলো সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করতে পারে। যুদ্ধের প্রথম চার-পাঁচ দিনের গতি প্রকৃতি দেখে ইউরোপ রুশ আগ্রাসনের ব্যাপারে প্রচণ্ডভাবে ভীত হয়ে পড়েছে। ফলে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ অথবা সুইফট থেকে বিছিন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণে তারা এগিয়ে যায়। এ সব পদক্ষেপের প্রভাব ইউরোপীয় অর্থনীতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকার পরও সব দেশই শেষ পর্যন্ত এর সাথে সম্মত হয়।
সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি জো বাইডেন ইউক্রেন আগ্রাসন শুরুর আগে থেকেই দিয়ে এসেছিলেন। ২০১৪ সালে আংশিক বিধি নিষেধের পর রাশিয়াও মনে করেছিল পরবর্তী সময়ে বড় কিছু করা হলে পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক বিধিনিষেধে পড়তে হবে রাশিয়াকে। এর প্রস্তুতি হিসেবে রাশিয়া অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের জন্য এসপিএসএফ নামে বিকল্প আর্থিক বার্তা স্থানান্তর করার সিস্টেম চালু করে। পরের বছর চীন এসআইপিএস নামে একটি সিস্টেম চালু করে। চীন-রাশিয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় এই সিস্টেম চালু করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সুইফটের সার্বজনীন সিস্টেম থেকে বিচ্ছিন্নতার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে রাশিয়ান অর্থনীতির ওপর।
রাশিয়ার ভিন্ন কোনো ব্যবস্থার চিন্তা এককভাবে করার সুযোগ নেই। চীনের সহায়তা পেলে ইউরোপের বিকল্প জ্বালানির বাজার পাবে মস্কো। আর গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী যে বলয় চীন রাশিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে সেটিকে সামনে নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির জন্য একসাথে তাদের সামনে এগোতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইউক্রেন আক্রমণ করার জন্য রাশিয়ান অভিযানের সাথে, আমরা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছি। যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি এবং আমরা জানি না কখন হবে। যুদ্ধের ক্ষেত্রে স্থলভাগে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে প্রতিদিনই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। এমনকি সবচেয়ে উদ্যমী সামরিক বিশ্লেষকরাও যুদ্ধ সম্পর্কে অনুমান ও ভবিষ্যদ্বাণী প্রদানে সতর্কতার সাথে কাজ করছেন। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু দেশগুলোর বৈদেশিক নীতিতে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দেয়।
প্রথমত, রাশিয়ান এই অভিযান স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর থেকে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে সঙ্ঘাতের সৃষ্টি করে। অল্প সময়ের মধ্যে, ইউক্রেনীয় সঙ্ঘাত ন্যাটো সদস্যদের ঐক্যকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এমনকি যারা ন্যাটোকে ‘মগজ-মৃত’ বলতেন, যারা ট্রান্স-আটলান্টিক জোট সম্পর্কে প্রায়ই কথা বলতে শুরু করেছিলেন, তারাও এখন ন্যাটোর প্রয়োজন বিশেষভাবে উপলব্ধি করছেন। রাশিয়ার এই অভিযানটি পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পদ্ধতিগত পার্থক্যও গুচিয়ে দিয়েছে। নর্ড স্ট্রিম ২ বন্ধ করার এবং ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর জার্মানির সিদ্ধান্তে এটি মনে হয়েছে। ইউক্রেন আক্রমণের ঠিক আগে, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের সফরের সময়, সাংবাদিকদের বারবার প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও, শোলজ এই অঞ্চলের প্রতি কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান।
দ্বিতীয়ত, পশ্চিমারা কিভাবে অন্যদের বিরুদ্ধে তার প্রতিরোধ কৌশল প্রণয়ন করবে তারও নতুন আকার দেবে এই সঙ্ঘাত। স্পষ্টতই, রাশিয়ার সামরিক অভিযানের আগে নিষেধাজ্ঞার হুমকি পুতিনকে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু থেকে বিরত রাখতে ব্যর্থ হয়। এটা আশ্চর্যের কিছু নয়, কারণ পূর্ববর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টদের হুমকি ও সতর্কবার্তা সিরিয়ার বাশার আসাদকে তার নিজের দেশের নাগরিকদের হত্যা করা থেকেও বিরত করেনি। ‘লাল রেখা’ বিবৃতি এবং এর পরে যা ঘটেছিল তাতে বিশ্বজুড়ে অনেকে বিশ্বাস করেছিল যে মার্কিন রাষ্ট্রপতিরা যা বলেন তা সব সময় করেন না।
তৃতীয়ত, আমরা এই সঙ্ঘাতের সময় একটি অত্যন্ত জটিল অপারেশন প্রত্যক্ষ করছি। পক্ষগুলো, বিশেষ করে রাশিয়া, এই সংঘর্ষের সময় তার টুল কিট থেকে একটি খুব আলাদা সেট ব্যবহার করছে। ইউক্রেনের অভিযানকে কেন্দ্র করে তথ্যযুদ্ধ, সরকারি সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ, পশ্চিমা সরকারগুলোর দ্বারা গৃহীত নিষেধাজ্ঞা এবং অবশেষে, ইউক্রেনের রাস্তায় বোমা হামলা এবং সংঘর্ষ যুদ্ধাঞ্চলের একটি জটিল চিত্র প্রদর্শন করছে। প্রচলিত যুদ্ধের আবহ থেকে এটি ভিন্ন, আমরা তথ্যের টর্নেডো এবং স্থল থেকে বিভ্রান্তির হারিকেনের মুখোমুখি হচ্ছি। ঘটনা সম্পর্কে সত্যে পৌঁছানোর আগে ফিল্ডের উন্নয়নের প্রতিটি পর্যবেক্ষককে প্রথমে বিভ্রান্তি ও ভুল তথ্য প্রচারণার সাথে লড়াই করতে হয়।
চতুর্থত, এই যুদ্ধ বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলোর মধ্যে সম্পর্ককেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। রাশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে সম্পর্ক একটি উল্লেখযোগ্য সময়ের জন্য আবার একই পর্যায়ে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। যদিও যুদ্ধ সমাপ্তির পরে নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা যেতে পারে, ইউরোপীয় দেশগুলোতে সংলাপ এবং সহযোগিতায় জড়িত হওয়ার ব্যাপারে রিজার্ভেশন সৃষ্টি হতে পারে। তবে অবশ্যই, মার্কিন-রাশিয়া সম্পর্ক এই যুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হবে। রাশিয়াকে কেন্দ্র করে অন্তত ২০১৬ সালের নির্বাচনের পর থেকে মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একটি ফল্ট লাইন সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের ঠিক আগে এই ফল্ট লাইনে এক ধরনের ভূমিকম্পের ধাক্কা দেখা যায়। তবে সামরিক অভিযানের পরে, আমেরিকান রাজনীতিতে বিভাজন কেবল রাশিয়ার প্রতি কঠোরতার স্তর নিয়ে কেন্দ্রীভূত হতে পারে। ইউক্রেনের যুদ্ধের আগে চীন, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গতিশীল হবে বলে মনে করা হয়েছিল। অনেক কট্টরপন্থী ভাষ্যকারও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ইউক্রেনে রাশিয়ান আক্রমণ তাইওয়ানেও চীনা আক্রমণ নিয়ে আসতে পারে। এমনকি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টও যুদ্ধের আগে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। যুদ্ধের ঘটনার পরে, এই বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ হবে।
পঞ্চমত, আগামী সময়ের মধ্যে ইউরোপ এবং ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্কের জন্য শক্তি একটি মূল বিষয় হবে। যুদ্ধের আগে, মার্কিন-জার্মান সম্পর্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফল্ট লাইনগুলোর মধ্যে একটি ছিল নর্ড স্ট্রিম ২ এবং রাশিয়ান প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রতি জার্মান-নির্ভরতা বৃদ্ধি। রাশিয়া এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশের বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ইউরোপের প্রায় ২৫ শতাংশ তেল সরবরাহ করে। এই সঙ্কটের পরে, জ্বালানিসম্পদ এবং রফতানিকারকদের বৈচিত্র্য নিয়ে আরো বিতর্ক হবে। এতে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বড় বিনিয়োগ এবং নতুন ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রয়োজন হবে। মধ্যপ্রাচ্যের জীবাশ্ম জ্বালানির প্রধান রফতানিকারকদের সাথে ইউরোপের সম্পর্কের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
প্রতিটি যুদ্ধ তার সাথে একটি বড় মানবিক ক্ষতি নিয়ে আসে। ইউক্রেনের যুদ্ধ প্রতিবেশী দেশগুলোতে একটি বড় শরণার্থী প্রবাহ আনতে পারে। কিছু ধারণা অনুসারে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কমপক্ষে ১০ লাখ ইউক্রেনীয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে পৌঁছাবে। এই উদ্বাস্তু ও অন্য ইউক্রেনীয়দের সাহায্য করার জন্য একটি টেকসই এবং আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা থাকা উচিত, যারা আগামী সময়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হবে। ইউরোপে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কতটা পড়ছে সেটি সুইডেনের একটি গণভোটে দেখা যায়। এই গণভোটে ৫৩ শতাংশ ন্যাটোতে যোগ দেয়ার পক্ষে মত জানিয়েছে, যা আগের চেয়ে ২৪ শতাংশের মতো বেশি।
যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব দ্রুত হয়ে যেতে পারে। তবে এমন অনেক জিনিস রয়েছে যা অন্যান্য যুদ্ধের মতোই শেয়ার করা ছবির প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভয়, আতঙ্ক ও সহিংসতা দেখা যায়। ইউক্রেনের লোকদের জন্য যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান মস্কোর সাথে আলোচনার সময় কিয়েভ জানিয়েছে তা বাস্তবে পরিণত হলেও জিনিসগুলো আবার একই রকম হবে না এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্যও জিনিসগুলো আলাদা হবে। সবচেয়ে যে ভয় এবার এসেছে সেটি হলো পারমাণবিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কা এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি। বিদ্যমান বিশ্বব্যবস্থা কার্যকর কতটা থাকবে সেই প্রশ্নও উঠেছে। এই ইস্যুতে সম্ভবত চীন পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পুরোপুরি একমত নয়, যার কারণে শি জিনপিং পুতিনের পদক্ষেপের প্রতি এখনো সেভাবে সমর্থন জানাননি। নিরাপত্তা পরিষদে তিনি ভোটদানে বিরত ছিলেন। এ পর্যন্ত ক্রেমলিন পূর্ণাঙ্গ সমর্থন লাভ করেছে কেবল সিরিয়া এবং মিয়ানমারের। যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে ইউক্রেনের সাথে আলোচনায় সম্মত হওয়ার পেছনে সম্ভবত এই প্রতিক্রিয়াটিকে পুতিন বিবেচনায় এনেছেন। সঙ্ঘাত নিরসনে বড় কোনো আশা এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান না হলেও অন্তত ক্ষীণ আশা এখন দেখা যাচ্ছে প্রথম দফা শান্তি আলোচনা শেষ হওয়ার পর। যদিও এতে অন্য কোনো জোটে যোগ না দেয়া, সামরিক বাহিনী বিলুপ্ত করা এবং ক্রাইমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মতো যেসব শর্ত রাশিয়া দিয়েছে তা মান্য করা ইউক্রেনের জন্য অনেকটাই অসম্ভব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা