কর্তৃত্ববাদ ও উদার গণতন্ত্রের লড়াই ও বাংলাদেশ
- মাসুম খলিলী
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:১৯, আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:২৮
নতুন স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হবার বর্তমান পর্যায়ে বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা ও এর পৃষ্ঠপোষকতার সাথে উদার গণতন্ত্রবাদের পৃষ্ঠপোষকদের এক বৈশ্বিক লড়াই শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ল্যাটিন আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্য হয়ে দক্ষিণ এশিয়া পর্যন্ত এই লড়াই সুনির্দিষ্ট অবয়ব নিতে শুরু করেছে। শুধু মতাদর্শিক লড়াই এর একমাত্র নির্ণায়ক হয়তো নয়, এর পাশাপাশি জাতিবাদী হিসাব-নিকাশ, নিজস্ব স্বার্থ, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানও ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের মতাদর্শিক বিবেচনা এখন আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতার মুখ্য স্থান পেতে শুরু করেছে।
আর এই বিবেচনায় আমেরিকা তার মিত্রদের সাথে নিয়ে চীন-রাশিয়ার সাথে সর্বাত্মক দ্বন্দ্বের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। আমেরিকানরা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিক আদর্শের গুরুত্ব ভুলে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের নামে ‘ইসলামাবাদ’কে প্রধান প্রতিপক্ষ করার ভুল শোধরে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে যারা চ্যালেঞ্জ করছে তাদের বিরুদ্ধে বহুমুখী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লড়াইয়ের একটি ক্ষেত্র এখন ইউক্রেন হলেও শিগগিরই তার আরেকটি ক্ষেত্র ল্যাটিন আমেরিকার ভেনিজুয়েলা হতে যাচ্ছে। এরপর সেটি প্রবল হয়ে উঠতে পারে শিন-রাখাইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মিজোরাম মনিপুর নাগাল্যান্ড অঞ্চলকে ঘিরে। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি অঞ্চলও এর মধ্যে নতুন করে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে।
কেন আবার গণতন্ত্র মানবাধিকার?
সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের দুই দশকে আমেরিকা ও তার মিত্ররা মুখে যাই বলুক না কেন যেসব রাষ্ট্র ও জনপদে তারা সামরিক ও অন্য উপায়ে হস্তক্ষেপ করেছে সেখানে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে মানবাধিকার। এসব দেশে গণতন্ত্রের পরিবর্তে স্থান লাভ করেছে এক ধরনের অরাজকতন্ত্র। ইরাক, সিরিয়া, ইয়ামেন, আফগানিস্তান, লিবিয়াসহ আরো অনেক দেশকে এর উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের এসব ক্ষেত্রের মধ্যে প্রায় কোনোটিই চূড়ান্তভাবে আমেরিকান কর্তৃত্বে থাকেনি। ইরাকে দুর্বল ও কর্তৃত্বহীন সরকারে সবচেয়ে বেশি প্রভাব এখন ইরানের। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের অবস্থা কী দাঁড়ায় তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আমেরিকান প্রভাব যে কাবুলে থাকবে না সেটি অনেকখানি নিশ্চিত। ইয়েমেন ও লেবাননের মতো দেশে আমেরিকান নিয়ন্ত্রণ একেবারেই শিথিল। অন্য দিকে আমেরিকান কোম্পানি ও পুঁজির মালিকরা সস্তা শ্রম ও কাঁচামালের লোভে একসময় ব্যাপক বিনিয়োগ নিয়ে গেছে চীনে। এতে চীনা অর্থনীতি ক্রমাগতভাবে শক্তিমত্তা অর্জন করে ক্রয়ক্ষমতা অনুপাতে বিশ্বের বৃহত্তম এবং নমিনাল হিসাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে রূপ নিয়েছে। আর শক্তিমত্তা অর্জন করে ব্রেটন উড ব্যবস্থার বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের আনুপাতিক নিয়ন্ত্রণ দাবি করছে চীন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলার ও সুইফট এর বিকল্প ব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টাও হাতে নিয়েছে মস্কো-বেইজিং। এর পরিণতি যে বিশ্ব ব্যবস্থায় আমেরিকান প্রভাব ও আধিপত্যকে বিদায় করার প্রচেষ্টা তাতে সন্দেহের অবকাশ কমই মনে হয়েছে।
অন্যদিকে আগে থেকে যেসব দেশে কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার ছিল এবং নতুন করে সৃষ্ট একনায়কতান্ত্রিক সরকারগুলো চীন-রাশিয়ার সাথে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি করতে থাকে। নানা ইস্যুতে সেসব দেশের সাথে দূরত্ব তৈরি হয় যুক্তরাষ্ট্রের। এই গতিধারা ও প্রবণতা বিবেচনা করে আমেরিকান গভীর ক্ষমতা বলয় তাদের স্বার্থের জন্য দুটি মৌলিক সিদ্ধান্তে আসে। প্রথমটি হলো, আমেরিকা ও তার মিত্রদের প্রধান প্রতিপক্ষ হবে চীন আর সেই সাথে রাশিয়া। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমা প্রভাব বিস্তারের জন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। কারণ উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলো মোটা দাগে আমেরিকান মিত্র।
এই দুই নীতি সিদ্ধান্তের পরবর্তী যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তার সূচনার মধ্য দিয়ে এখন অগ্রসর হচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি। তাইওয়ান, ইউক্রেন, ভেনিজুয়েলা অথবা মিয়ানমারের আজকের যে উত্তেজনা তার সাথে যুক্ত বিষয়গুলোকে গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে এটি স্পষ্ট হবে।
কী করছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা
আমেরিকা যাকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে চিহ্নিত করেছে সেই চীন এর মধ্যে বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। পশ্চিমা প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ চীনা অর্থনীতিকে এর মধ্যে এমন এক স্থানে এনে দিয়েছে যাতে পাশ্চাত্যকে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দুই ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ করে বসেছে বেইজিং। বিশ্বব্যাক-আইএমএফ গ্রæপের বিপরীতে বিকল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে ব্রিকস দেশগুলোকে সাথে নিয়ে। পশ্চিমা প্রভাবিত বিনিয়োগ সহায়তার বিকল্প হিসাবে আবিভর্‚ত হয়েছে চীন। আমেরিকান মিত্ররাও চীনা বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্বাভাবিক অবস্থায় এ ধারা চললে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকান প্রভাব সঙ্কুচিত হতে হতে দন্তহীন বাঘের পর্যায়ে চলে যাবে। ফলে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা।
এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেসব পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে তার মধ্যে রয়েছে চীন থেকে তাদের বিনিয়োগ গুটিয়ে নিয়ে অন্য দেশগুলোতে স্থানান্তর করা। চীনা পণ্যের জন্য পশ্চিমা বাজারে নানা বিধিনিষেধ দেয়া। চীনা উন্নয়ন সহায়তা ও ঋণের বিকল্প ব্যবস্থাকে শক্তিমান করা। পশ্চিমা বলয়ের মধ্যে যে ভাঙন এর মধ্যে দেখা দিয়েছিল সেটি পুনর্গঠন করতে চাইছে বাইডেন প্রশাসন। আর সে সাথে পুরনো স্নায়ুযুদ্ধ সময়ের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র্রসমূহকে পাশ্চাত্য বলয় ও চীন-রাশিয়ার মধ্যে বিভাজিত করার চেষ্টা করছে। পাশ্চাত্যের অর্থনীতির বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা-প্রযুক্তিগত সহায়তা মিত্র বলয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট করার প্রচেষ্টা নিয়েছে। আমেরিকান প্রতিরক্ষা জোট ন্যাটো ও অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক জোটগুলোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এখন যে যুদ্ধ ও উত্তেজনা বিশ্বের নানা কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তা এই বিভাজন ও মেরুকরণকে একটি সুনির্দিষ্ট অবয়ব দিতে পারে। সংশয়ী ও দ্বিধাযুক্ত দেশগুলোকে এক পর্যায়ে একটি পক্ষকে বেছে নিতে হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার অতি সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এ সময় নজরে আনা যেতে পারে। আমেরিকার সাথে ব্যাপকভিত্তিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের পর ধারণা করা হয়েছিল ভারত তার বলয়কে পুরোপুরি পরিবর্তন করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে রাশিয়ার সাথে এস৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ আরো কিছু কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি করার পর সেই ধারণায় ব্যত্যয় সৃষ্টি হয়। এমনকি কোয়াডের ব্যাপারে ভারতের আগ্রহেও ভাটা দেখা যায়। কিন্তু দিল্লির সর্বশেষ একটি সিদ্ধান্ত থেকে ভিন্ন বার্তা পাওয়া যায়। ভারত আগেই ঘোষণা দিয়েছিল দেশটি বেইজিং অলিম্পিকে অংশ নেবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বয়কটই শুরু করছে না একই সাথে চীনের সাথে ক‚টনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টির মতো কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রশ্ন হতে পারে কেন এই পদক্ষেপ? এর অনেকগুলো জবাব সামনে আসতে পারে। প্রথমত, চীন থেকে পাশ্চাত্য বলয়ের বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও বাজার নিষিধাজ্ঞার ফল ঘরে তুলতে চায় নয়াদিল্লি। ইতোমধ্যে অনেক আমেরিকান করপোরেশন তাদের উৎপাদন ইউনিট ভারতে খোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এর ফলে দেং শিয়াও পিং-এর পর চীনে পাশ্চাত্য বিনিয়োগের যে প্রবাহ দেখা দিয়েছিল সেটি ভারতের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু করপোরেশন তাদের ইউনিট ভারতে সরিয়ে এনেছে। একই সাথে ভারতীয় পণ্যের জন্য পাশ্চাত্য বলয়ে একটি বড় রকমের সুবিধারও সৃষ্টি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের অভিভাষণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বড় অংশই পাশ্চাত্যনির্ভর। চীন-রাশিয়া বলয়ের সাথে বাড়তি ঘনিষ্ঠতা এ ক্ষেত্রে নানা বাধানিষেধ তৈরি করতে পারে। তৃতীয়ত, চীনের সাথে যে সীমান্ত সঙ্ঘাত ভারতের রয়েছে তা নিরসনে রুশ মধ্যস্থতা পরিস্থিতিকে শান্ত করবে বলে যতটা আশা তৈরি করেছিল বাস্তবে তা হয়নি। এমনকি বেইজিং অলিম্পিকের মশাল এমন ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে যিনি গ্যালওয়ান যুদ্ধে অধিনায়কত্ব করেছেন যে লড়াইয়ে টেঁটা ধরনের অস্ত্রের আঘাতে ২০ জনের বেশি ভারতীয় সেনার মৃত্যু ঘটানো হয়েছিল ।
ধারণা করা হচ্ছে বাইডেন প্রশাসনের সাথে মোদি সরকারের বোঝাপড়ার মাত্রা যতই অগভীর হোক না কেন কৌশলগত অবস্থানে দিল্লি পাশ্চাত্য বলয়ের আশ্রয়ে স্থান নেবে। কিন্তু বাস্তবে শেষ পর্যন্ত নানা ঘটনায় ভারত পাশ্চাত্য বলয়েই থেকে যাচ্ছে। বেইজিং অলিম্পিকের ঘটনার পর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো বলেছেন চীন কাশ্মির ফ্রন্টে ভারতের ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা দখল করে রেখেছে। এটি চীনের সাথে ভারতের দ্ব›দ্ব সঙ্ঘাত একপাশে সরিয়ে সহযোগিতার সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেবার ফর্মুলাকে আর কাজ করতে দেবে না। এমনকি এর প্রভাব কম বেশি ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ওপরও পড়তে পারে। মাদক কেলেঙ্কারির কারণে রুশ ক্রীড়াবিদরা বেইজিং অলিম্পিকে অংশ না নিলেও এর উদ্বোধন করতে গেছেন পুতিন। আর ইউক্রেন উত্তেজনার পর চীন রাশিয়ার জন্য এতটাই দরকারি হয়ে পড়েছে ভারতের সাথে সম্পর্কের চেয়ে বেইজিংকে পাশে রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মেরুকরণের প্রভাব মিয়ানমার নীতিতেও সামনে কিছুটা দৃশ্যমান হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কোন পথে যাবে?
এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদিতা আর উদার গণতন্ত্রের আমেরিকা-চীন ও রাশিয়ার এই লড়াইয়ে কোন পক্ষে থাকবে। ভারতের মতো বাংলাদেশী বংশোদ্ভ‚তদের অভিভাষণ ও বৈশ্বিক পড়াশোনা বা কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র হলো পশ্চিমা দেশগুলো। বাংলাদেশে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ বা আমলারা তাদের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থসম্পদ পাশ্চাত্যের দেশসমূহেই মূলত পাচার করেছে। আর বাংলাদেশের উন্নয়ন সহায়তা ও বৈদেশিক ঋণের দায়দেনার প্রধান অংশ পাশ্চাত্যের দেশ ও প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। এই অবস্থায় উন্নয়ন সহায়তা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার জন্য চীন-রুশ বলয়ে ভারসাম্যহীনভাবে গেলে আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক প্রবল চাপের মুখে পড়তে পারে দেশ ও সরকার। এরপরও ভেনিজুয়েলা ইরান উত্তর কোরিয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে কঠোর পদক্ষেপ রাজনৈতিক নেতৃত্ব নিতে চাইলে তাতে গভীর ক্ষমতা বলয়ের প্রতিষ্ঠানসমূহের সমর্থন শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে কি না সংশয় থাকতে পারে।
আরেকটি বড় শঙ্কা দেখা দিতে পারে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ইস্যুটি ঘিরে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সীমান্ত অঞ্চলে নানা ধরনের অস্থিরতা দেখা দিতে শুরু করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের চাপ তৈরি করে আছে। ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর মতো একসময়ের সরকারের ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী ভারত-মিয়ানমার-বাংলাদেশের পার্বত্য সীমান্ত অঞ্চলে বাফার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশ্চাত্য পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছেন যার সাথে ইসরাইলের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হচ্ছে। বান্দরবানের সাম্প্রতিক ঘটনায় এ ধরনের কিছুর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এতদিন পর্যন্ত ঢাকার সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব না দিলেও ক্ষমতাকে কণ্টকমুক্তভাবে এগিয়ে নিতে ভারত-চীন দুই নিকট প্রতিবেশীকে এক সাথে তুষ্ট করতে চেয়েছে। আকস্মিকভাবে বৃহৎ শক্তিসমূহের মধ্যে যে সিদ্ধান্তকারী মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে তাতে দিল্লির ভূমিকায় পরিবর্তন আসবে বলে মনে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারতের পত্রপত্রিকাগুলো একতরফাভাবে মিয়ানমারের জান্তার সাথে সম্পর্ক না রেখে বিরোধী পক্ষের সাথেও সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথা গুরুত্বপূর্ণ থিংকট্যাংগুলো বলছে। তার অর্থ হলো দ্বৈত ট্রাকের ক‚টনীতি অনুসরণের অংশ হিসেবে সু চির দল ও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথেও ভারতের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। তার অর্থ এটিও যে মিয়ানমারে ভারতের নীতি পাশ্চাত্যের সাথে কিছুটা হলেও একই ধারায় এগোবে যা এতদিন ভিন্ন ধারায় ছিল। বাংলাদেশের ওপরও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ চীন-রাশিয়ার সাথে কৌশলগত মৈত্রী এগিয়ে নিতে চাইলে বিরোধিতা নিষেধাজ্ঞা বয়কটের সাথে সাথে ভারতের বৈরিতাও তার সাথে যুক্ত হবার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রের গভীর ক্ষমতা বলয় বা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবনাচিন্তা কী হয় সেটিও দেখার বিষয়। আগামী মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সংলাপ বাংলাদেশের শুরু হবার কথা। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এটি কেবল তখনই সামনে এগোবে যদি বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বলয়ের দিকে অগ্রসর হয় এবং বাস্তবে কিছু পদক্ষেপ নেয়।
এ অবস্থায় রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিতে পারে। দেশের অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি অবকাঠামো উন্নয়ন বা দল বিশেষের ক্ষমতা থাকা না থাকার সাথে ক্রমেই সাংঘর্ষিক অবস্থানে চলে আসছে। সব কিছুকে রাজনীতি ঘিরে বিন্যাস করতে গিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নানা ক্ষেত্রে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের চেয়েও পিছিয়ে গেছে নিরাপত্তা সক্ষমতা। পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিরতায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ইন্ধনের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আর এ সময়ে বিরোধী এনএলডি জোট রোহিঙ্গাদের প্রতি অতীত আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দিয়ে রাখাইনে ফিরিয়ে নেবার অঙ্গীকার করেছে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার স্বার্থ আর বৈশ্বিকভাবে বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার বাইরের বিকল্প আত্মঘাতী হতে পারে কি না ভাবতে হবে। যেকোনো ভুল বা আত্মঘাতী এবং দলান্ধ চিন্তা ও নীতি রাষ্ট্রকে বড় রকমের বিপর্যয়ের খাদে নিয়ে ফেলতে পারে।
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা