০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

সৌদি আরবে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিবর্তন

- ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরব পৃথিবীর দুই শ’ কোটি মুসলমানের সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ দেশ। পবিত্র মক্কা ও মদিনা তীর্থস্থান (হারামাইন) হওয়ায় এ দেশের প্রতি প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ের বিশেষ টান বিদ্যমান। বিশ^নবী রাহমাতুল লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মস্থান ও রওজা মোবারক এ দেশে অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ সা:-এর ২৩ বছরের নবুওয়তি জীবনের কর্মস্থল, দাওয়াত, জিহাদ, ইসলামী বিধিবিধানের বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রপরিচালনা সৌদি আরবকে ঘিরে আবর্তিত হয়। এ দেশে নাজিল হয়েছে পবিত্র কুরআনুল করিম। হাদিসে রাসূলের চর্চার ক্ষেত্র ছিল এ পবিত্র ভূমি। বিপুলসংখ্যক সম্মানিত সাহাবি ও তাবেঈন এ দেশে ইসলামের বহুমাত্রিক খিদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। এখান থেকে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ইসলামের মর্মবাণী। প্রতি বছর গোটা দুনিয়া থেকে লাখ লাখ ঈমানদার পবিত্র ওমরাহ ও হজব্রত পালনে সৌদি আরব সফর করে থাকেন। অন্যান্য আরব দেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিগত চৌদ্দ শ’ বছর ধরে এ পবিত্র ভূমির যারা শাসক ছিলেন বিশেষত খোলাফায়ে রাশেদিন, উমাইয়া, আব্বাসীয়, সেলজুক, ফাতেমি ও উসমানীয় খলিফারা ইসলামী সংস্কৃতি, তাহজিব, তামাদ্দুন ও ঐতিহ্য লালন করেছেন।

১৯৩২ সালে বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আল-সাউদ সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ (মৃত্যু ২০১৫ খ্রি.) পর্যন্ত ৮৩ বছর ধরে সৌদি আরব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী, ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগ ও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে এবং এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা ও ল্যাটিন আমেরিকায় মসজিদ, কালচারাল কমপ্লেক্স নির্মাণ ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও সম্প্রীতি সমাবেশের আয়োজন করে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরার চেষ্টার কমতি করেনি। বাদশাহরা নিজেদের পবিত্র দুই মসজিদের সেবক (খাদেমুল হারামাইন আশ-শারিফাইন) হিসেবে পরিচয় দিতে গৌরব বোধ করতেন। পবিত্র মক্কা ও মদিনার মসজিদের সম্প্রসারণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও হাজীদের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণে দৃশ্যমান প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় মদিনায় কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ ভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ ও তাফসির ছাপিয়ে বিনামূল্যে হাজীদের মধ্যে লাখ লাখ কপি বিতরণ করা হয়।

২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি সালমান বিন আবদুল আজিজ ক্ষমতায় আরোহণের পর সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা, ক্রাউন প্রিন্স নিয়োগে নতুন নিয়ম, পররাষ্ট্র ও অর্থনীতিতে পরিবর্তন সূচিত হয়। ৮৬ বছরের অসুস্থ বাদশাহর পক্ষে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব নয়। তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্র ক্রাউন প্রিন্স (২০১৫-১৭) মুহাম্মদ বিন নায়েফকে সব পদ থেকে সরিয়ে ছেলে এমবিএস নামে পরিচিত মুহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স ও ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার নিয়োগ করেন। তিনিই বর্তমানে রাষ্ট্রপরিচালনার নিয়ামক শক্তি ।

ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ‘সৌদি ভিশন ২০৩০’ নামে কৌশলগত উন্নয়ন কাঠামো ঘোষণা করেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে তেলের নির্ভরতা কমানো, অর্থনৈতিক অগ্রগতি তরান্বিতকরণ, তেলবিহীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নমনীয় ও অধিকতর সেকুলার ইমেজ বৃদ্ধি, জনসেবা খাতের উন্নয়ন তথা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, বিনোদন, পর্যটন, বিনিয়োগসুবিধা সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রীয় অর্থব্যয়ে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সরঞ্জাম উৎপাদনপূর্বক সামরিক খাতকে সমৃদ্ধকরণ। এর মাধ্যমে সৌদি তরুণ-তরুণীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নারীদের কর্মশক্তিকে কাজ লাগানো। বাহ্যত এ ভিশনের বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে, যেগুলোর ওপর সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার।

বিশেষত চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্প কারখানা নির্মাণ ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রভৃতি অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। এসব পরিবর্তন দু-চার বছরে সম্ভব নয়, কয়েক দশকের প্রয়োজন। ভিশনের নেতিবাচক দিক মাত্রাতিরিক্ত ভীতিপ্রদ ও ঐতিহ্যপরিপন্থী। অন্য দিকে সে দেশের সাধারণ জনগণ শ্রমবিমুখ। তারা কাজ না করে আরাম আয়েশে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত। সরকার আইন করে প্রতিটি বিদেশীর দোকানে উচ্চতর বেতনে একজন সৌদি নাগরিককে চাকরি দেয়ার বাধ্যতামূলক আইন করেছে। বেশির ভাগ সৌদি কর্মচারী দোকানের কোনো কাজ করেন না, বসে বসে বেতন গুনেন।

সৌদি আরবে ইকামা নিয়ে বসবাসকারী প্রতিটি বিদেশীর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ইকামা ফি, কফিলের (স্পন্সর) ফি, ইকামা পরিবর্তন ফি প্রভৃতি চার্জ কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়ায় বিদেশীরা চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। একজন শ্রমিক মাসে যে অর্থ উপার্জন করেন সরকারি ও কফিলের পাওনা আদায়ের পর তার আর বেশি সঞ্চয় থাকে না। সৌদি আরবের সড়ক, মহাসড়ক, অট্টালিকা ও অবকাঠামো নির্মাণে বিদেশী শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়নের পেছনেও রয়েছে বিদেশী শ্রমিকদের মেহনতের ঘাম। ‘সৌদি ব্যবসা সৌদিদের দ্বারা পরিচালিত হবে’ এমন একটা পলিসি কার্যকর করতে চাচ্ছে সরকার। পলিসির ভবিষ্যৎ নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কোনো বিদেশী ব্যবসা করতে গেলে অর্থবিনিয়োগ, দোকানের বরাদ্দপত্র, লাইসেন্স, মিউনিসিপালিটির ছাড়পত্র প্রভৃতি কফিলের নামে নেয়া বাধ্যতামূলক।

সৌদি আরবে ঐতিহ্যগতভাবে চালু রয়েছে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় বিধিবিধান। বিচারব্যবস্থায় রয়েছে শরিয়াহ আইনের প্রাধান্য। ‘নমনীয় ও অধিকতর সেকুলার ইমেজ’ বাড়তে গেলে সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কামাল পাশা তুরস্কে ইসলামী খিলাফত, ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিলুপ্তি ঘটিয়ে সেকুলারিজমের নামে যে নাস্তিক্যবাদ চালু করেছিলেন তা টিকেছিল পঞ্চাশ বছর। তুরস্ক ধীরে ধীরে ইসলমাইজেশনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। আয়া সোফিয়া জাদুঘর এখন মসজিদের মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। সৌদি সরকার সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটন ও বিনোদন খাতকে অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জেদ্দা, রিয়াদ, জাজান, ইয়ানবু, আবহা, তায়েফ ও অন্যান্য শহরে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পপ সঙ্গীত, গীতিনৃত্য ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। এমন আয়োজনের আরো পরিকল্পনা রয়েছে। এতে সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশের তরুণ-তরুণীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। দুবাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মিলান, ন্যাপলস, ভেনিস ও প্যারিসের মতো সৌদি আরবকে গড়ে তুলতে চায় রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ। সেটি কতটুকু সম্ভব হবে বা করা গেলেও কত দিন টিকে থাকবে আগাম মন্তব্য করা বেশ কঠিন।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে রিয়াদের উপকণ্ঠে অনুষ্ঠিত হলো মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সঙ্গীত উৎসব। সাত লাখ দর্শক এমডিএলবিস্টের সাউন্ডস্টর্ম ইভেন্টটিতে চার দিন ধরে অংশ নেন, ডিজেতে নৃত্য করেন এবং আমোদ ফুর্তিতে গা ভাসিয়ে দেন। উৎসবে নারী-পুরুষরা এমনভাবে মেলামেশা করেছেন, যা সৌদি আরবে একসময় ছিল অকল্পনীয়। বিবিসির তথ্য মতে, স্থানীয় এবং বিদেশী অনেক নারী অভিযোগ করেছেন, তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকে আবার সেসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছেন। বেশ কিছু ভিডিও প্রচারিত হয়েছে যেগুলোতে পুরুষদের দল বেঁধে নারীদের হেনস্থা ও হয়রানি করতে দেখা গেছে। সৌদি কর্তৃপক্ষও ২০১৮ সাল থেকে যৌন হয়রানিকে বড় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। মোটা অঙ্কের জরিমানা ও পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তির বিধান করা হয়েছে। তার পরও যৌন হয়রানি বন্ধ করা যায়নি। একজন নারী বলেন, স্থানীয় নারীদের কোনো প্রকৃত সুরক্ষা দেয়া হয়নি। একজন সৌদি নারী যখন হয়রানির শিকার হন তখন খুব কম মনোযোগ দেয়া হয়। কিন্তু যখন বিদেশী নারী পর্যটক হয়রানির শিকার হন তখন কর্তৃপক্ষ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। সৌদি নারীরা বিবিসিকে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি। (যায়যায়দিন, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১)।

আরব নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, ভয়াবহ এক মরুঝড়ের কারণে সৌদি আরবে ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কোরিয়ান পপ সঙ্গীতের একটি কনসার্ট বাতিল হয়েছে। তীব্র গতির এ বালুঝড়টি ঘণ্টায় ৩১ কিলোমিটার বেগে ধুলা-বালুসহ আঘাত হেনেছিল। সূর্যাস্তের পরও পুরো শহরে বৃষ্টিপাত হয়। বিপুল ধুলা-বালুসহ বালুঝড় শুরু হয়। এই কোরিয়ান পপ কনসার্ট বাতিল হওয়ার এক সপ্তাহ আগে সৌদি আরবের জাজান প্রদেশে অর্ধনগ্ন নৃত্যের অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছিল দেশটির সরকার। ওই নৃত্যানুষ্ঠানে নারীরা অর্ধনগ্ন হয়ে ব্রাজিলের সাম্বা নৃত্য করেছিল। এ কোরিয়ান পপ কনসার্ট বাতিল হওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। অনেক নেটিজেন বলেন, এ খারাপ আবহাওয়া ও বালুঝড় হলো অশ্লীলতার বিরুদ্ধে আল্লাহর গজব (নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১৭ জানুয়ারি, ২০২২)।

২০১৮ সালে সৌদি আরব সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরপরই নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণ, প্রদর্শন, প্রযোজনার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এরই মধ্যে হলিউডি স্বপ্নের এ শিল্পে দেশটি ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। পুরো দেশে ৩০০টি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে পবিত্র মদিনায় নির্মিত হবে ১০টি। অ্যান্থনি ম্যাকি (মার্ভেলের নতুন ক্যাপ্টেন আমেরিকা) অভিনীত অ্যাকশন ফ্লিক ‘ডেজার্ট ওয়ারিয়র’ সম্পূর্ণভাবে সৌদি আরবে চিত্রায়িত হচ্ছে। জেরার্ড বাটলারের সর্বশেষ থ্রিলার ‘কান্দাহার’ আল-উলা অঞ্চলে প্রধান ফটোগ্রাফি শুরু করছে। আল-উলা অঞ্চলটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি স্থান (দেশরূপান্তর, ৭ নভেম্বর, ২০২১)। মুসলিম বিশে^র অন্যতম স্কলার বিচারপতি মুফতি তকি উসমানী এক টুইটবার্তায় লিখেছেন, ‘এ পরিবর্তনে আমি আহত হয়েছি। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই।’

২০১৭ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরবে নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের কর্মশক্তি কাজে লাগানোর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। একা একা নারীদের ভ্রমণ, অবস্থান, নারীদের গাড়ি চালানো, রেস্তোরাঁগুলোতে নারী-পুরুষ একসাথে বসে পানাহার, বাইরে বের হলে বোরকা বা হিজাব পড়ার বাধ্যতামূলক বিধান রহিতকরণ, বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড, মিউজিক কনসার্টে নারীদের অংশগ্রহণ, বিভিন্ন শপিংমলে নারী সেলসগার্ল নিয়োগ, পবিত্র কাবাগৃহ ও মদিনার মসজিদ চত্বরে ইউনিফর্ম পরা নারী পুলিশের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন লক্ষ করা যায়। ইদানীং পাশ্চাত্যের আদলে বিনোদন কর্মকাণ্ড চোখে পড়ার মতো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে।

তেলের নির্ভরতা কমিয়ে অর্থনীতির চাকা অন্য দিকে ঘোরানোর উদ্যোগ ইতিবাচক। রাষ্ট্রীয় অর্থে শিল্পায়ন ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আগামীতে খনিজ তেলমুক্ত বিশ্বে নিজেদের অবস্থান সুসংহত রাখতে সৌদি আরব দুই ট্রিলিয়ন ডলারের একটি সার্বভৌম তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সৌদি তেলের মজুদ এখনই শেষ হচ্ছে না। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, সৌদি আরবে মাটির তলায় তেলের মজুদ রয়েছে প্রায় ২৬৮.৫ বিলিয়ন ব্যারেল। বিশেষ করে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশেই বেশির ভাগ তেলের খনি অবস্থিত।

বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, বিশ্বের মোট খনিজ তেলের পাঁচভাগের এক ভাগ মজুদ আছে শুধু সৌদি আরবেই। কিন্তু এই বিশাল পরিমাণ তেলের মজুদ থাকলেও সমস্যা অন্যখানে। সৌদি আরবের খনিতে প্রচুর পরিমাণে তেল থাকলেও, তাদের খনির সংখ্যা খুবই কম। অল্পসংখ্যক খনি থেকে বিপুল পরিমাণ তেল উত্তোলনে বেশির ভাগ সময়ই সৌদি আরবকে বাধ্য হয়ে বেশি তেল উত্তোলন করতে হয়। গত বছরে নভেম্বরে গড়ে প্রতিদিন এক কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়েছে। যে পরিমাণ তেল মজুদ আছে তার মাত্র ৫ শতাংশ বিক্রি করা গেলে আয় হবে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নের ফান্ড হিসেবে ব্যবহার করা হবে (এমটিনিউজ২৪ডট কম, ০২ এপ্রিল, ২০১৬; জাগো নিউজ২৪ ডট কম, ১০ জানুয়ারি, ২০১৯)। ঐতিহ্য ভঙ্গ করে বিনোদন, স্টর্ম কনসার্ট, পপ সঙ্গীত, ডিজে পার্টি, সিনেমা তৈরি ও প্রদর্শন এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে পাশ্চাত্যের অনুকরণ ‘ভিশন ২০৩০’ কী পরিমাণ সফলতা বয়ে আনে তা রীতিমতো অনিশ্চিত ও চ্যলেঞ্জিং।

সেকুলারিজমের বিকাশ ও পাশ্চাত্য কৃষ্টির প্রবর্তন সৌদি সমাজ কতটুকু গ্রহণ করে তা দেখার বিষয়। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার পালাবদল ও ভূরাজনীতির পরিবর্তন ঘটলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। সৌদি আরব ধর্মীয় কৃষ্টি ও উত্তরাধিকার ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক, দুই শ’ কোটি মুসলমানের এটিই প্রত্যাশা ও আকুতি।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement