২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘প্রতিরক্ষা সঙ্কট’ ও একটি সূচক

-

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রতিরক্ষা অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর প্রতিরক্ষাই প্রতিটি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ। যে দেশের প্রতিরক্ষা যত শক্তিশালী সে দেশের স্বাধীনতার ভিতও ততই মজবুত। সঙ্গত কারণেই বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের জাতীয় বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য বা ক্ষেত্রবিশেষে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়। আর এ বরাদ্দ প্রতি বছরই বাড়ে। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও তা মোটেই আলাদা নয়। তবে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা বিবেচনায় আমাদের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ খুবই অপর্যাপ্ত। অবশ্য এ ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও উপেক্ষা করার মতো নয়।

ব্যয় বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এবারো আমাদের জাতীয় বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে ৩৭ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা মোট বাজেটের ৬.২৪ শতাংশ। এবার প্রতিরক্ষা খাতে গত বছরের চেয়ে দুই হাজার ৩২৭ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই বরাদ্দে অবশ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক খরচ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন কয়েকটি বিভাগের ব্যয়ও ধরা হয়েছে। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। গত ১২ বছরে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, যা খুবই যৌক্তিক ও একটি চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু তারপরও আমাদের প্রতিরক্ষা পর্যাপ্ত হয়নি বরং নানা কারণে সঙ্কট আরো বেড়েছে।

এ বছর প্রতিরক্ষা বাজেটের আকার নিয়ে গণমাধ্যমে কিছু আলোচনা-পর্যালোচনা এসেছে। এ কথা ঠিক যে, করোনা অতিমারীর সময়ে আমরা আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার সম্ভাব্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও সার্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭.২ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সার্বিক বিবেচনায় প্রতিরক্ষা খাতে ১.২ শতাংশ ব্যয়ই যৌক্তিক বলেই মনে করছেন অনেকেই যদিও বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। সেই সাথে যোগ হয় সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ এবং তিন বাহিনীর প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো বাজেট প্রস্তাবগুলো। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ বা সংসদের বাইরে খুব একটা আলোচনা হয় না। প্রতিরক্ষা নীতিমালা বা এ বিষয়ে অ্যাকাডেমিক জগতে বাংলাদেশ এখনো কোনো ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ বা ‘চিন্তক গোষ্ঠী’ গড়ে তুলতে পারেনি, যারা এ বিষয়ে গবেষণা ও পরামর্শ দিতে পারেন। বিষয়টি আমাদের প্রতিরক্ষার নেতিবাচক দিক। কিন্তু বৃত্ত থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি। আর আপাতত এর কোনো সম্ভবনাও দেখা যাচ্ছে না।

এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামরিক নীতি প্রণয়ন এবং কার্যকর করার প্রধান প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান। সাধারণত আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের রেওয়াজ রয়েছে। সশস্ত্রবাহিনী, আন্তঃবাহিনী দফতর, প্রতিরক্ষা সহায়ক অন্যান্য দফতর ও সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব। আর এই গুরু দায়িত্ব অর্পিত থাকে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর হাতেই যা ইতিবাচকই বলতে হবে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য ১৯৭১ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীকে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সক্ষম ও উপযুক্ত বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা, অন্যান্য রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায়, শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণের দায়িত্ব এই অতিগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত। সঙ্গত কারণেই এই মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অন্য সব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। তাই এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী। স্বাধীনতার পর এখনো এর ব্যত্যয় দেখা যায়নি।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো প্রতি অর্থবছরে আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়লেও পরিস্থিতি, পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় আমাদের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ যথেষ্ট মনে করে না অভিজ্ঞ মহল। এমনিতেই আমাদের প্রতিরক্ষা বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। তাই এই খাতের বরাদ্দের যথাযথ ব্যয়ই প্রত্যাশিত ও কাক্সিক্ষত। একই সাথে রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের ঝুঁকি উদ্বেগজনক, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। কিন্তু আমাদের প্রতিরক্ষা খাত নিয়ে সম্প্রতি বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করেছে যা রীতিমতো উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বিষয়টিকে আমাদের একটা সঙ্কট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানটি অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, বৈশ্বিক সূচকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত ‘দুর্নীতির উচ্চ ঝুঁকি’তে রয়েছে।

সম্প্রতি গভর্নমেন্ট ইন্টিগ্রিটি ইনডেক্স (জিডিআই) বা সরকারি প্রতিরক্ষা শুদ্ধাচার সূচক ২০২০ প্রকাশ করে সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ‘অতি দুর্বল’। ৮৬টি দেশ নিয়ে প্রকাশিত এ সূচক অনুযায়ী ৬২ শতাংশ দেশেরই প্রতিরক্ষা খাত ‘উচ্চ থেকে সঙ্কটজনক’ দুর্নীতির ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইয়ের এই সূচকের ফলাফল তুলে ধরেছে। সূচকে বাংলাদেশের ফলাফলে উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবির পক্ষে বলা হয়েছে, ‘এ সূচক বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতি বিরাজ করছে এমন কোনো তথ্য বা বিশ্লেষণ দিচ্ছে না। তবে খাতটিতে শুদ্ধাচার ঘাটতি ও দুর্নীতির ব্যাপক ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে।’ তা দেশের প্রতিরক্ষার জন্য কোনো সুখবর নয়।

একটি দেশের সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে সার্বিক প্রতিরক্ষা ও কাঠামোতে দুর্নীতির ঝুঁকি কতটা, ঝুঁকি কমাতে কী ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক নীতিকাঠামো ও চর্চা আছে এবং সেগুলো কতটা কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক ‘এসব বিবেচনা করে’ এ সূচক প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি।

সংস্থার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৭৭টি প্রশ্নের বিপরীতে ২১২টি নির্দেশকের ভিত্তিতে একটি দেশের প্রতিরক্ষা খাতের পাঁচটি ঝুঁকির ক্ষেত্র বিশ্লেষণ করে জিডিআই ২০২০ সূচকটি তৈরি হয়েছে। এ পাঁচটি ঝুঁকির ক্ষেত্র হলো- রাজনৈতিক, আর্থিক, জনবল, পরিচালনা ও ক্রয়। এসব ক্ষেত্রে একটি দেশের প্রাপ্ত নম্বর (শূন্য থেকে ১০০ স্কেলে) ‘এ’ থেকে ‘এফ’ শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ‘এ’ শ্রেণী হলো সবচেয়ে কম ঝুঁকিসম্পন্ন এবং ‘এফ’ শ্রেণী হলো সঙ্কটজনক দুর্নীতির ঝুঁকিসম্পন্ন। সূচকের ফলাফল বলছে, ৮৫ স্কোর করে প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে রয়েছে নিউজিল্যান্ড। এরপরই রয়েছে যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে (স্কোর ৭৬), বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসের স্কোর ৭৩। আর পাঁচ স্কোর করে সর্বোচ্চ মাত্রায় সঙ্কটজনক দুর্নীতির ঝুঁকিতে রয়েছে সুদান। এরপরই রয়েছে মিসর (স্কোর ছয়), মিয়ানমার ও আলজেরিয়া (স্কোর আট) এবং ইরাক (স্কোর ৯)। টিআই বলছে, জিডিআই সূচকে কম নম্বর পাওয়া দেশগুলোতে প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে থাকা সুরক্ষাপদ্ধতি বা কার্যক্রম দুর্বল কিংবা অস্তিত্বহীন। একই সাথে এসব দেশ অস্থিতিশীল, সঙ্ঘাতপূর্ণ কিংবা তার জনগণ শোষণের শিকার।

সার্বিকভাবে ২৫ স্কোর করে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাত এ সূচকে দুর্নীতির ‘অতি উচ্চ ঝুঁকি’তে রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সূচকে বিচার্য পাঁচটি ঝুঁকি ক্ষেত্রের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি স্কোর করেছে সামরিক জনবল ব্যবস্থাপনায় স্কোর ৫২। আর স্কোর শূন্য পেয়েছে পরিচালনা ঝুঁকির ক্ষেত্রে। রাজনৈতিক ঝুঁকিতে স্কোর ২৬, আর্থিক ঝুঁকিতে স্কোর ১৯ আর সামরিক ক্রয়ে স্কোর ২৯।

এ বিষয়ে টিআইবি পরামর্শ দিয়ে বলেছে, ‘সূচকের ফলাফলকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আমাদের প্রতিরক্ষা শুদ্ধাচার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো এবং তার মাধ্যমে সম্ভাব্য দুর্নীতির প্রতিরোধক সক্ষমতা কাঠামো সুদৃঢ় করা অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে প্রথম ও অতিগুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, অবিলম্বে একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল-২০১০ এর ধারাবাহিকতায় একটি প্রতিরক্ষা শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন ও তার চর্চা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে খসড়া প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞজনের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের মতো সব অংশীজনকে সম্পর্কিত করলে এর গ্রহণযোগ্যতা ও জাতীয় মালিকানাবোধ বাড়বে।’ জিডিআইয়ের ফলাফল বলছে, বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলে প্রতিরক্ষাসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং সেগুলোর পরিচালনা কার্যক্রম গোপনে পরিচালনার যে রীতি অনুসৃত হয়ে আসছে, তা সঠিক ও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং গোপনীয়তা কোনোভাবেই শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজ্য শর্ত নয়, এটি মূলত একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

মূলত, সামরিক বা প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং এ খাতের দুর্বল শাসন বা ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত। এ ক্ষেত্রে জিডিপির ১ ভাগ সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি মানে, জিডিআই স্কোর পাঁচ পয়েন্ট কমে যাওয়া। এটি প্রমাণ করে, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি দুর্বল শাসনের ক্ষেত্রে হয়তো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখে যেটি বিদ্যমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে শাসনব্যবস্থার দুর্বলতাকে ব্যবহার করে দুর্নীতির সুযোগ বা ঝুঁকি সৃষ্টি করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এটি খুবই হতাশাজনক যে, বিশ্বে সামরিক ব্যয় এখন বার্ষিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা দুর্নীতির মাত্রা ও ব্যাপকতাকে বাড়িয়ে চলেছে।

জিডিআইয়ের তথ্য বলছে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অস্ত্র বাণিজ্যের ৮৬ শতাংশই হয়েছে সেসব দেশ থেকে, যেসব দেশের প্রতিরক্ষা খাত মধ্যম থেকে উচ্চ দুর্নীতির ঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। শীর্ষ পাঁচ রফতানিকারক দেশ- যুক্তরাষ্ট্র (৫৫), রাশিয়া (৩৬), ফ্রান্স (৫০), জার্মানি (৭০) এবং চীন (২৮)। এই পাঁচ দেশ বিশ্ব অস্ত্রবাণিজ্যের ৭৬ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। আবার বিশ্বের মোট অস্ত্র আমদানির ৪৯ শতাংশের গন্তব্যই ছিল প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির ‘উচ্চ’ থেকে ‘সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশগুলোতে।

আমাদের দেশে দুর্নীতি এখন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। রাষ্ট্রের এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতি ও অনিয়ম কালো থাবা বিস্তার করেনি। এমনকি দেশের প্রতিরক্ষা খাতও পড়েছে দুর্নীতির উচ্চঝুঁকির মধ্যে। তাই বিষয়টি নিয়ে নির্লিপ্ত থাকার কোনো সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় ‘টিআই’ সূচকের ফলাফল বিবেচনায় নিয়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। দুর্নীতির সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতাসহ গ্রহণ করতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা। একই সাথে একটি অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় জাতীয় প্রতিরক্ষা শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের মতো সব অংশীজনকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে তা আরো গতিশীল ও কার্যকর হবে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের প্রতিরক্ষাবাহিনী নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে যেসব প্রশ্ন উঠেছে সেসব প্রশ্নেরও জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য নিরসন হওয়া দরকার। দেশ ও জাতি সংশ্লিষ্টদের কাছে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে। কারণ, সঙ্কটপূর্ণ প্রতিরক্ষা কোনো জাতিরাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর বা ইতিবাচক হয় না।

smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement