বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার যুগ : মিথ বনাম বাস্তবতা
- মুসা আল হাফিজ
- ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:০৫
(প্রথম কিস্তি)
ইউরোপের ইতিহাসে একটি তিমিরাচ্ছন্ন কাল রয়েছে। সেখানকার চিন্তা-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং সমাজ ও ধর্মজীবনে তখন ছিল এক বিশেষায়িত বাস্তবতা। সময়টিকে The Dark Age বা অন্ধকারের যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়। ইটালিয়ান পণ্ডিত ফ্রান্সিসকো পেত্রার্ক (১৩০৪-১৩৭৪) পরিভাষাটির প্রথম প্রবর্তন করেন। মধ্যযুগীয় বর্বরতার জন্য সময়টিকে দায়ী করা হয় এবং দিন শেষে দেখানো হয় এর ব্যাপ্তি হচ্ছে ষষ্ঠ শতক থেকে পঞ্চদশ শতক অবধি। প্রায় এক হাজার বছর। এ সময়ে স্পেন-পর্তুগাল ও সিসিলির মুসলিম শাসিত অঞ্চলে সভ্যতার প্রখর প্রদীপ জ্বললেও বৃহত্তর ইউরোপে চেপে বসেছিল নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। চতুর্দশ শতক থেকে মুসলিম প্রভাব এই অন্ধকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আওয়াজ ছড়িয়ে দেয় এবং ইউরোপে তৈরি হতে থাকে রেনেসাঁর প্রস্তুতি পর্ব। সেখানকার দীর্ঘস্থায়ী অন্ধকারকালে জ্ঞানবিজ্ঞান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, বিজ্ঞানীদের জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছিল, পোপতন্ত্রের স্বেচ্ছাচার সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল, দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ গণমানুষের জীবনের শ্বাসনালী চেপে ধরেছিল প্রবলভাবে। দাসত্ব ও ভূমিদাসত্ব হয়ে উঠেছিল গরিবের নিয়তি, প্লেগের হামলা ছিল বন্যার মতো, চিকিৎসাহীনতা ও গণমৃত্যু ছিল ধারাবাহিক বাস্তবতা, ধর্মীয় যুদ্ধ কামড়ে ধরেছিল সমাজ-সংস্কৃতি-রাষ্ট্রকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস হচ্ছিল গোষ্ঠীসঙ্ঘাতে, ইসলামবিরোধী ক্রুসেডে, ঈশ্বরের নামে চলত সব অনাচার, সমাজচ্যুতি। বৈরাগ্যের বিস্তৃতি ছিল সীমাতিরিক্ত। বর্বরতা সব শক্তি নিয়ে শাসন জারি রাখছিল বহু শতাব্দী ধরে। মননশীলতা ও সৃজনীশক্তির আলোকশিখা ছিল একেবারে নির্বাপিত। মানববৈরী সব ধরনের হীনতা ও মানুষের অবনতি-অপমান পৌঁছে ছিল চরমে।
কিন্তু মুসলিম দুনিয়ায় ছিল সভ্যতা-সংস্কৃতি, শিক্ষা-দর্শন, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সুশাসন, নগরায়ন, উদ্ভাবন-আবিষ্কার, মনন-সৃজন এবং মানব মহিমা ও অধিকারের উন্নত ও ধারাবাহিক অনুশীলন। এ সময়ে ইউরোপে বিদ্যমান অন্ধকারের শাসনকে যেমন অস্বীকারের উপায় নেই, তেমনি মুসলিম জাহানে সভ্যতার আলোকমণ্ডিত বাস্তবতাকেও না মানলে সত্যকেই অমান্য করতে হয়। মুসলিম বাংলা ছিল সভ্যতা-সংস্কৃতির সেই উন্নত অনুশীলনের ধারায় যুক্ত। ইসলাম যখন বাংলায় জয়ী হয়ে আসে, তখন আক্ষরিক অর্থেই সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলিমরা ছিলেন বিশ্ব নেতৃত্বে সমাসীন। যেখানেই তাদের পদপাত হয়েছে, আলোর বিস্তার ও উন্নত সংস্কৃতির চর্চা হয়ে উঠছিল একটি বাস্তবতা।
মুসলিম বাংলাও এ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। লামা তারানাথের জবানিতে পরিষ্কার, স্থানীয়দের আমন্ত্রণে বখতিয়ার খিলজি বাংলায় অভিযান করেন। সময়টা ১২০৩-০৪। স্থানীয়রা বিদ্যমান বর্ণভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ও নিপীড়ক শাসনব্যবস্থার কবল থেকে মুক্তি চাইছিল। মুসলিম বিজয় তাই জনগণ দ্বারা অভিনন্দিত হয় এবং কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই নিশ্চিত হয়। রাজনৈতিক ও সামরিক বিজয়ের আগেই এখানে ইসলাম প্রচারিত হয় এবং স্থানীয়দের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইসলামে দীক্ষিত হয়। তাদের মুখের ভাষা ছিল বাংলা। বহিরাগত মুসলিমরা প্রধানত ফারসি ও তুর্কি ভাষাভাষি হলেও এখানকার ভাষা ও লোকায়ত সংস্কৃতিকে তারা আপন করে নেন। স্থানীয়দের সাথে যোগসূত্রের প্রয়োজনে প্রচারক ও সূফিরা এ ভাষাকে অবলম্বন করেন। ফলে বাংলার সাথে মুসলিমদের প্রগাঢ় বন্ধন তৈরি হয়ে যায় বখতিয়ারের বিজয়ের আগেই। বিজয়ের পরে সেই বন্ধন কেবলই দৃঢ়তা পেয়েছে অব্যাহতভাবে।
কিন্তু মুসলিম বিজয়ের সময় থেকে বাংলা ভাষায় অন্ধকার যুগের সূচনার যে দাবি, তা তো বিপরীত বক্তব্য উপস্থাপন করে। তার বক্তব্য হলো ১২০০ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বৈরিতার কবলে পতিত হয়ে বন্ধ্যাত্বের সম্মুখীন হয়। তখন অনাসৃষ্টি, বিনষ্টি ও ধ্বংসের কবলে পড়ে বাংলা ভাষা। এই দাবির কয়েকজন সোচ্চার উপস্থাপকের বয়ান শোনা যাক।
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯২-১৯৭০) তার ‘বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘তুর্কিরা শুধু দেশ জয় করেই সন্তুষ্ট হয়নি, তারা বাংলার জীবনে গুরুতর আঘাত হেনেছিল। তুর্কি মুসলমানরা হিন্দু মন্দির ও বৌদ্ধ মঠবিহারের মধ্যে একটি ব্যাপক ধ্বংস অভিযান চালিয়েছিল। এই হিন্দু মন্দির ও বৌদ্ধ মঠই ছিল সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র এবং এ কারণেই বোধহয় তুর্কি বিজয়ের প্রায় দু’শত বছর ধরে বাংলা সাহিত্য রচনার আর কোন নিদর্শন মেলে না। মঠ-মন্দিরে রক্ষিত গ্রন্থাবলি বিনষ্ট হয়েছিল এবং এই অন্তর্র্বর্তীকালে সব বাংলা রচনাও এই বিনাশের অন্তর্ভুক্ত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। সেই জন্য চর্যাপদের পর বড়– চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন (১৩৫০) পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে একটি বিরাট শূন্যতার যুগ।’
অগ্রগণ্য ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৯০-১৯৭৭) কণ্ঠেও একই আওয়াজ। তিনি লিখলেন-
‘বাঙ্গালা ভাষার উৎপত্তি হইতে খ্রিষ্টীয় ১২৮০ পর্যন্ত হইল বাঙ্গালা ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম বা আদি যুগ। তুর্কিদের বাঙ্গালা বিজয়ের কালে দেশের উপর দিয়া একটা ঝড় বহিয়া গিয়াছিল। ১২০০ হইতে প্রায় দেড়শত বছর ধরিয়া দেশময় মারামারি, কাটাকাটি, নগর ও মন্দির ধ্বংস-পণ্ডিতদের উচ্ছেদ প্রভৃতি অরাজকতা চলিয়াছিল। এরূপ সময়ে বড় ধরনের সাহিত্য সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব।’
ভাষাতাত্ত্বিক ও সাহিত্যবিশারদ ড. সুকুমার সেন (১৯০১-৯২) অন্ধকার যুগের প্রচারক। তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব ও পুরাণতত্ত্ব আলোচনায় তার বৈদগ্ধের পরিচয় থাকলেও এ প্রসঙ্গে তিনি নতুন কিছু উন্মোচন করেননি। নতুন বিশ্লেষণ বা তথ্য-উপাত্তও হাজির করেননি। শ্রীকুমার-সুনীতির অভিমতকে রাষ্ট্র করেছেন কেবল। তিনি লিখেন- ‘তুর্কি আক্রমণের ফলে বাঙালির বিদ্যা ও সাহিত্যচর্চার মূলে কুঠারাঘাত পড়িল। প্রায় আড়াই শত বৎসরের মতো দেশ সকল দিকেই পিছাইয়া পড়িল। দেশে শান্তি নাই, সুতরাং সাহিত্যচর্চা তো হইতেই পারে না। প্রধানত এই কারণেই ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ এই দুই শতাব্দীতে রচিত কোনো বাঙ্গালা সাহিত্য পাওয়া যায় নাই।’
পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক ও সাহিত্য সমালোচক ড. ভূদেব চৌধুরী। ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা ’ গ্রন্থের সপ্তম অধ্যায়ে তিনি এক অনুচ্ছেদের শিরোনাম দেন, ‘তুর্কি আক্রমণ এবং বাঙালি চেতনার উন্মোচনপ্রয়াস’, আরেকটির শিরোনাম,‘তুর্কি আক্রমণের অতিচার এবং বাঙালি সংস্কৃতির শূন্যতাময় যুগ। এর পরের অনুচ্ছেদ- তুর্কি শাসনের সুসংস্থান ও বাংলার মুক্তিচেতনার সৃজনশীলতা। অনুচ্ছেদগুলোতে ক্ষোভ ও উত্তেজনার মিশেলে তিনি অন্ধকার যুগীয় বয়ানের বিস্তার ঘটিয়েছেন।
ভূদেব লিখেন, ‘বখতিয়ার খিলজি মুসলিম বিজেতাদের চিরাচরিত প্রথামত বিগ্রহ-মন্দির বিধ্বস্ত করে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গড়ে তুলেছিলেন নতুন মসজিদ। মাদ্রাসা ও ইসলামিক শিক্ষার মহাবিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠা করে, বিধর্মীদের ধর্মান্তরিত করে ধর্মীয় উৎসাহচরিতার্থ করেন। বিদেশি তুর্কিদের শাসনসীমা থেকে দীর্ঘকাল শাসিতেরা পালিয়েই ফিরেছে; পালিয়েছে প্রাণের ভয়ে, মানের ভয়ে, এমনকি ধর্ম সংস্কারের বিলুপ্তির ভয়ে। বস্তুত বখতিয়ারের জীবনান্তের পরে তুর্কি শাসনের প্রথম পর্যায়ের নির্মমতা ও বিশৃঙ্খলার প্রাবল্যের দরুন এই পলায়নপ্রবণতা আরো নির্বারিত হয়েছিল। ১৩৪২ সালে ইলিয়াস শাহি সুশাসন প্রবর্তনের আগে পর্যন্ত বাঙালির সার্বিক জীবন এক অন্ধকার যুগ, নীরন্দ্র বিনষ্টির ঐতিহ্যে ভরপুর হয়েছিল। স্বভাবতই জীবনের সংশয়ে কালজয়ী কোনো সর্জনকর্ম সম্ভব হয়নি। নিছক গতানুগতিক ধারায় যা কিছু রচিত হয়েছিল, তাও সর্বাত্মক ধ্বংসের হাত থেকে প্রায়ই রক্ষা না পাবারই কথা। প্রধানত এই কারণেই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আনুমানিক ১২০০ সাল থেকে চৌদ্দ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত কাল সৃজনহীন ঊষরতায় আচ্ছন্ন বলে মনে হয়।’ ‘বাংলার মাটিতে রাজ্যলিপ্সা, জিঘাংসা, যুদ্ধ, হত্যা, আততায়ীর হস্তে মৃত্যু নারকীয়তার যেন আর সীমা ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর প্রজাসাধারণের জীবনের উৎপীড়ন, লুণ্ঠন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ধর্মহানির সম্ভাবনা উত্তরোত্তর উৎকট হয়ে উঠেছে। স্বভাবতই জীবনের এই বিপর্যয়লগ্নে কোনো সৃজনকর্ম সম্ভব হয়নি।’
এর প্রতিধ্বনি করলেন গোপাল হালদারও। বিশিষ্ট এই কমিউনিস্ট নেতা ও সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের রূপরেখা গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে আলোচনা করেন প্রাচীন ও মধ্যযুগ নিয়ে। মুসলিম বিজয়ের পরে তিনিও দেখলেন অন্ধকার। লিখলেন- তখন বাংলার জীবন ও সংস্কৃতি তুর্ক আঘাতে ও সঙ্ঘাতে, ধ্বংসে ও অরাজকতায় মূর্ছিত অবসন্ন হয়েছিল। খুব সম্ভব, সে সময়ে কেউ কিছু সৃষ্টি করবার মতো বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রেরণা পায়নি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান এবং পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমির সভাপতি ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লোকান্তরিত হয়েছেন ২০০৩ সালে। ৯ খণ্ডে প্রকাশিত তার বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত বিখ্যাত এক গ্রন্থ। গ্রন্থটিতে তিনি গবেষকসুলভ বিচারশীলতার চেষ্টা করেছেন নানা ক্ষেত্রে। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ প্রসঙ্গে তার বয়ান মুসলিম বিজয়ের প্রতি ঘৃণায় ফেনায়িত। তিনি লিখেন- “শারীরিক বল, সমরকুশলতা ও বীভৎস হিংস্রতার দ্বারা মুসলমানরা অমানুষিক বর্বরতার মাধ্যমে বঙ্গসংস্কৃতির ক্ষেত্রে তামসযুগের সৃষ্টি করে। তিনি মনে করেন, বর্বর শক্তির নির্মম আঘাতে বাঙালি চৈতন্য হারিয়েছিল এবং পাঠান, খিলজি, বলবন, মামলুক, হাবশি সুলতানদের চণ্ডনীতি, ইসলামী ধর্মান্ধতা ও রক্তাক্ত সংঘর্ষে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় কূর্মবৃত্তি অবলম্বন করে কোন প্রকারে আত্মরক্ষা করছিল।... তুর্কি রাজত্বের আশি বছরের মধ্যে বাংলার হিন্দুসমাজে প্রাণহীন অখণ্ড জড়তা ও নাম-পরিচয়হীন সন্ত্রাস বিরাজ করছিল। কারণ সেমিটিক জাতির মজ্জাগত জাতিদ্বেষণা ও ধর্মীয় অনুদারতা। ১৩শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই বাংলা মুসলমান শাসনকর্তা, সেনাবাহিনী ও পীর ফকির গাজীর উৎপাতে উৎসন্নে যাইতে বসেছিল। শাসনকর্তাগণ পরাভূত হিন্দুকে কখনো নির্বিচারে হত্যা করে, কখনো বা বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে এ দেশে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে আরম্ভ করেন। হিন্দুকে হয় স্বধর্মত্যাগ, না হয় প্রাণত্যাগ, এর যে কোন একটি বেছে নিতে হত।” ....“বীভৎস হিংস্রতার দ্বারা বাংলা ও তার চতুস্পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ইসলামের অর্ধচন্দ্রখচিত পতাকা প্রোথিত হলো। খ্রি: ১৩শ হতে ১৫শ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত প্রায় দুই শত বছর ধরে এই অমানুষিক বর্বরতা রাষ্ট্রকে অধিকার করেছিল; এই যুগ বঙ্গসংস্কৃতির তামসযুগ, য়ুরোপের মধ্যযুগ The Dark Ages-এর সাথে সমতুলিত হতে পারে।”
এমন উচ্চারণ নিনাদিত হয়েছে বহু কণ্ঠে। এর আছে ধারাবাহিকতা। হুমায়ুন আজাদ একটি নমুনা। তিনি লিখেন- “১২০০ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত কোনো সাহিত্য কর্মের পরিচয় পাওয়া যায় না বলে এ-সময়টাকে বলা হয় ‘অন্ধকার যুগ’। পণ্ডিতেরা এ-সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছেন, অনেক আলোচনা করেছেন, কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেননি। এ-সময়টির দিকে তাকালে তাই চোখে কোনো আলো আসে না, কেবল আঁধার ঢাকা চারদিক।”
এসব বয়ানের মূল দাবি হচ্ছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উপর অন্ধকার চাপিয়ে দেয় মুসলিম বিজয় ও মুসলিম শাসন। দাবিটিকে খাড়া করা হয়েছে যেসব খুঁটির উপর, সেগুলো হচ্ছে- (ক) মুসলিমরা হিন্দু মন্দির ও বৌদ্ধ মঠ ধ্বংস করেন, যেখানে বাংলা সাহিত্যের নিদর্শনগুলো বিদ্যমান ছিল। (খ) সীমাহীন নারকীয়তা, নির্মমতা, বীভৎসতা, প্রলয় ধ্বংস ও প্রাণহীন অখণ্ড জড়তা বাঙালির সৃষ্টিশীল সত্তাকে অসাড় করে দিয়েছিল। (গ) স্বধর্ম ত্যাগ বা প্রাণ ত্যাগের কোনো একটাকে বেছে নিতে হতো (ঘ) ইউরোপের মধ্যযুগের সমতুল্য অন্ধকার বাংলায় চেপে বসেছিল। ফলে (ঙ) এই সময়ের মধ্যে কোনো সৃষ্টিশীলতা নেই, সাহিত্যসম্ভার নেই, কেবল আঁধার ঢাকা চার দিক।
গুরুতর সব দাবি। আসলেই কী এমন ঘটেছিল? অনুসন্ধান ও বিচার না করলে তো চলে না। কিন্তু এ বিচারে সমস্যা হলো, যেসব ঐতিহাসিকের কণ্ঠে দাবিগুলো উচ্চারিত, তাদের জবানিতে কেবল দাবিই শোনা যায়, কোনো নির্ভরযোগ্য ও বিস্তারিত প্রমাণ উপস্থাপনের প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় না। দাবিগুলো একত্র করলে মূল কথা যা দাঁড়ায়, তা হলো পাশবিক জবরদস্তির মাধ্যমে ধর্মপ্রচার এবং হিংস্রতার মাধ্যমে স্থানীয়দের জীবন ও সংস্কৃতির স্বাভাবিকতাকে বিপন্ন করা। সামনের আলোচনায় আমরা দাবিটির সারবত্তা তলিয়ে দেখব।
লেখক : কবি, গবেষক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা