২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মধ্যবিত্ত কি হারিয়ে যাচ্ছে?

-

অর্থনৈতিক অগ্রগতি, তার স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সরকারের দায়িত্ব পালনের দিক থেকে অগ্রাধিকার পাওয়া নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন তোলার কিংবা দ্বিমত করার সুযোগ বলতে গেলে একেবারেই নেই। এটাও যথার্থ যে, অর্থনীতির সাথে আরো বহু বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অর্থনীতিতে টানাপড়েন দেখা দিলে তাবৎ বিষয়ে দেখা দেবে নানা সমস্যা, সামগ্রিক পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে উঠতে পারে।

যা হোক, জনগণের ভালো থাকার জন্য খাদ্যপ্রাপ্যতা, দৈহিক মানসিকভাবে সুস্থ সবল থাকা, স্বস্তি প্রশান্তি বোধ করা ও নিরাপত্তার বেষ্টনীতে জীবন যাপন করা প্রয়োজন, যার অর্থ হচ্ছে সামগ্রিক সুব্যবস্থার আয়োজন দেশের প্রশাসন করে রেখেছে। আর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই জনপদে ইতিবাচক মন-মানসিকতাসম্পন্ন প্রশাসন রয়েছে। তাদের যোগ্যতা সাধ্যমতো এবং জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা প্রশংসনীয়। এ জন্য নাগরিকদের শ্রদ্ধাও তারা পাচ্ছেন। নিঃসন্দেহে এটাই উত্তম সংবেদনশীল প্রশাসনের একটি অনন্য নজির। তা ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ফলে সাধারণের পক্ষে তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জীবন নির্বাহ করা প্রকৃত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতারই নিদর্শন। সত্যি কথা বলতে কী, এমন আদর্শিক অবস্থা আমাদের দেশে বিরাজ করছে না। দেশের যে কাহিল অবস্থা তার উত্তরণ যদি ঘটানো যায় তার পরই ভালো কিছু তথা স্বপ্ন দেখা যাবে। এখন যে আর্থসামাজিক অবস্থা, তথা দেশ-বিদেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও জলবায়ুর মারাত্মক বৈরিতার জন্য এই মুহূর্তে সেই বাঞ্ছনা পূরণ করা মনে হয় সুদূর পরাহত। পরিস্থিতি ইতিবাচক মোড় যদি নেয় তবে সুড়ঙ্গের অপরপ্রান্তে হয়তো আলোর ক্ষীণ রেখা দেখা যেতে পারে। তবে কর্তৃপক্ষের এতটুকু নিশ্চিত করা উচিত, অন্তত বাজার পরিস্থিতিটা যেকোনো মূল্যে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা-তদবির করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সেখানেও প্রশাসন সময়োপযোগী ব্যবস্থা নিতে সক্ষমতা দেখাতে পারে না। বরং বাজার পরিস্থিতি এতটা সঙ্গীণ যা বলার অপেক্ষা রাখে না।

কোভিড ছিল ভয়ঙ্কর এক স্বাস্থ্য ও জীবন-মরণ সমস্যা। অসংখ্য মানুষ এই জীবনঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজারের মতো মানুষ এতে প্রাণ হারিয়েছে। এখনো হারাচ্ছে। গোটা বিশ্বেই কোভিডের ছোবল ছিল মারাত্মক। বাংলাদেশে এর রূপও তেমনি ছিল গুরুতর। তবে এখন এই বালা কিছু স্তিমিত বটে, তবে ভবিষ্যতে কোন চেহারা নিতে পারে তা আল্লাহই ভালো জানেন। এ নিয়ে দেশের শীষ নির্বাহী সজাগ, তিনি জনগণকে হুঁশিয়ার-সতর্ক থাকতে এবং যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ না করুন, এই ভাইরাস যদি ফের মারমুখী হয়ে ওঠে তবে তার বিরুদ্ধে লড়তে প্রশাসন কোভিডের প্রথম পর্যায়ের মতো ভয়ভীতি আর অনভিজ্ঞতার কারণে হতভম্ব কিংবা বিমূঢ় হয়ে পড়বে না হয়তো। তাই সমস্যাটা ততটা গভীর না-ও হতে পারে। তা ছাড়া এখন কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধের, প্রথম সারির যোদ্ধারা তথা নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসকরা, সেবিকারা এই বালা মোকাবেলায় আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে অনেক অভিজ্ঞ-দক্ষ হয়ে উঠেছেন। আগামীতে যদি কোভিড সমস্যা প্রকট হয় তবে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসার অনেক কিছু রপ্ত হওয়ায় আরো বেশি পারঙ্গমতার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ তথা রোগীদের সুস্থ করে তুলতে সক্ষম- এই ধারণা পোষণের সাথে সাথে স্রষ্টার কাছে সে জন্য প্রার্থনাও করি। তা ছাড়া ইতোমধ্যে বহু মানুষ কোভিড প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নিতে পেরেছেন, এটি বিরাট আশার কথা। এ নিয়ে দু’টি অনুরোধ সরকারের প্রতি- ভ্যাকসিন আরো দ্রুত বাকিদের দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং চিকিৎসক ও সেবিকাদের দায়িত্ব পালনকালে তাদের সুরক্ষার জন্য ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়া। এ নিয়ে অতীতে অনেক অভিযোগ উঠেছিল।

দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, নানা দুর্যোগ যেন একের পর এক হাত ধরাধরি করে আসছে বিরামহীনভাবে। কোথাও অতিবৃষ্টির জন্য অসময়ে মারাত্মক বন্যা, নদীভাঙন, কোথাও অনাবৃষ্টির কারণে ফসলহানি। বন্যার ফলে বহু বাড়িঘর স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র কেউ এখন ভালো নেই। এমন দুর্যোগজনিত কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এর জেরে অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত পড়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে স্বপ্ন সবাই দেখেছে তা যেন বিচূর্ণ হয়ে যেতে বসেছে।

মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অর্থ, ধনিক শ্রেণীর আয় রোজগার হয়তো তেমন বৃদ্ধি পাওয়া নয়। যদি সরকারের নীতিতে ভুল না থাকে কিংবা বিত্তবানদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, অনুরাগ দুর্বলতা প্রদর্শিত না হয় সে ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তের হারই ক্রমাগত বাড়ত আর নিম্নবিত্তের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমার কথা; কিন্তু এখন তো দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরিস্থিতি; ঠিক তার উল্টো। দেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তে এবং নিম্নবিত্তের মানুষ হতদরিদ্র হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দা, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, যথাসময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়ার মতো প্রত্যুৎপন্নমতিত্বসম্পন্ন কর্মকর্তাদের অভাব। এমন সব কারণেই মধ্যবিত্তের জীবন ধারণের মান দ্রুত হ্রাস পেতে চলেছে। তাই প্রশ্ন, এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কী ভাবনা উদ্যোগ ব্যবস্থাপনার, তার রূপরেখাইবা কী, সেটি কারো কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না। মধ্যবিত্তের সংখ্যা যদি বর্তমান হারে নামতে থাকে। তবে নানা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সমাজে পড়বে। প্রতিটি দেশে মধ্যবিত্ত একটি বড় সামাজিক শক্তি। কোভিড ও অন্যান্য দুর্যোগ দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডে যে প্রচণ্ড আঘাত করেছে তাতে মধ্যবিত্তের গায়ে সবচেয়ে বেশি আঁচড় পড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যবিত্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। এ দিকে এক গবেষণাপত্র থেকে অবহিত হওয়া গেছে, দেশে গত বছর মার্চ থেকে কোভিডের ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ১৮ মাসে নতুন করে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। মার্চে এই সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪৫ লাখ। সম্প্রতি এক ওয়েবিনারে ‘জীবিকা খাপ খাইয়ে নেওয়া ও উত্তরণে কোভিড-১৯-এর প্রভাব’ শীর্ষক ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের জরিপে চতুর্থ ধাপের গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরেছেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুুর রহমান। গবেষণায় উঠে আসে, এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এই দরিদ্র ব্যক্তিরা তো আকাশ থেকে নেমে আসেনি। মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে পতিত হয়ে দরিদ্র হয়েছে। ভবিষ্যতে এসব মানুষকে মধ্যবিত্তের পর্যায়ে তুলে আনা খুবই কঠিন ব্যাপার। যারা মধ্য আয় থেকে দরিদ্র হয়েছেন তাদের মনোবেদনা কে প্রশমিত করবে? আর এটাও অঙ্কের মতোই সহজ হিসাব যে, মধ্যবিত্ত পতিত হলে দরিদ্র মানুষ তো ভয়ঙ্কর অবস্থায় পড়বেই।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বাজার অর্থনীতিতে মন্দা স্বাভাবিক। মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা কমার সাথে সাথে পণ্যের বিকিকিনিতে কৃচ্ছ্র সৃষ্টি হওয়া অনিবার্য। তাতে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। এসবই অর্থনীতিতে মন্দা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়ার অর্থ- যারা পণ্যের উৎপাদক, কৃষক হোক বা ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাই হোক তাদের ওপরও আঘাত না এসে পারে না।

মধ্যবিত্তের অধঃগতিতে সমাজের অগ্রসর চিন্তাবোধ বিবেচনারও অবনতি অবধারিত। এই শ্রেণীর মানুষ সমাজকে ‘এনলাইটেড’ করে। সেই আলো নিভে গেলে যে আঁধার নামবে তাকে কি ঠেকানো যাবে? মধ্যবিত্ত শুধু আমাদের দেশেই নয়; সব সমাজেই রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত অবদান রেখে থাকে। দেশে এই শ্রেণীর ক্রমহ্রাস সৃষ্টি নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। চিন্তা ও বিবেচনার জগতে যদি দেউলিয়াত্ব আসে তার ক্ষতির হিসাব করা যাবে না। মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছার যে লক্ষ্য সেখানে মধ্যবিত্তই যদি হারিয়ে যায় তবে তার গতিটা হবে কী!

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখন যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে তার দায় পুরোপুরি প্রশাসনের কাঁধে চাপানো যাবে না, এটা ঠিক। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মনিটরিং করে, তার জন্য ‘প্রিকশন’ নেয়ার ব্যাপারে যদি তারা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারতেন, তবে যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষতি অন্তত কিছুটা হলেও কমানো যেত। তা ছাড়া ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও এমনটা লক্ষ করা যায়নি যে, কর্মকর্তারা দুস্থদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান অথচ সংবিধানে এটা এভাবে স্পষ্ট করা আছে অনুচ্ছেদ ২১(২)তে ‘সকল সময় জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’

অন্য দিকে প্রশাসনিক দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্বৃত্ত আর দুরাচারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অবৈধ পন্থায় অর্থসম্পদ কামিয়ে নিচ্ছে হৃদয়হীন একশ্রেণীর মানুষ। সেই অসাধু বড় ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের কারণে বিভিন্ন পণ্যের অকারণ মূল্য বাড়িয়ে নিজেদের আর্থিক মেরুদণ্ড মজবুত করে তুলছে এরা। অপর দিকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটেপুটে তাদের বপু ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে স্ফীত করছে। অপর দিকে, নানা অনিয়ম অব্যবস্থায় মানুষ ক্ষোভ হতাশায় নিমজ্জিত। অথচ সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্র এমন অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করিবেন, সেখানে সাধারণ নীতি হিসাবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবেন না...।’ এই নির্দেশের পরেও দুর্নীতিবাজরা কিভাবে অবৈধ পন্থায় আয় করে যাচ্ছে? সাংবিধানিক নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও তা মান্য না করা তো মারাত্মক অপরাধ। তার বিহিত কেন হচ্ছে না? গত পাঁচ দশক থেকেই আইনের প্রতি এমন বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর দুঃসাহস এরা কিভাবে পায় যদি না এদের পেছনে কোনো শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক থাকে? রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লক্ষ্যই তো হওয়া উচিত এসব ‘কালপ্রিটদের’ মূলোৎপাটন করা। কিন্তু এদের নিয়ে রাজনীতিকদের নিষ্ক্রিয়তা দেখে মনে হয়, ‘দিল্লি দূর অস্ত’।

এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশে অসাধু ব্যবসায়ী, পণ্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তার প্রয়োগ নেই কেন? এসব সমাজবিরোধী, জনগণের জন্য দুর্ভোগ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের এমন অনীহা দুর্বোধ্য। বিশেষ ক্ষমতা আইনে রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত এই আইন নির্বিচারে প্রয়োগ করে তাদের হয়রানি ও কষ্ট দেয়া হয়েছে। যদি পরিসংখ্যান নেয়া যায় তবে দেখা যাবে শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই এই আইন রাজনীতিকদের বিরুদ্ধেই প্রয়োগ করা হয়েছে। আর ১০ ভাগ মাত্র দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে।

বোদ্ধাসমাজ, সংবেদনশীল মানুষ এসব অবলোকন করে দুঃখ শোকে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এমন মানুষগুলো মনে করেন সমাজের হলাহল দূর করার জন্য সরকারের উচিত একটি বলিষ্ঠ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া। একটি শুদ্ধাচারের নীতি গ্রহণ করা সংক্রান্ত খবর পত্রিকায় দেখেছি। সুশীলসমাজের জিজ্ঞাসা, সরকারের শুদ্ধাচারের নীতি বাস্তবায়নের পরিবর্তে এখনো কেন তা পাহাড় চূড়ায় তুলে রাখা হয়েছে? এই মুহূর্তেই প্রশাসনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের মন-মানসের ইতিবাচক পরিবর্তন, দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি, নৈতিকতার বোধ বিবেচনাকে উচ্চকিত করার মাধ্যমে সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড দ্বারা জনগণের কল্যাণ সাধন তথা দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য শুদ্ধাচারের নীতির আলোকে আন্দোলন গড়তে বিলম্ব কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পত্রপত্রিকা পড়ে জানা গেছে, বহু আগে সরকারের প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর গতি বাড়ানোর পাশাপাশি জনসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এসব তথ্য কি শুধু ‘তথ্য’ হয়েই থাকবে জনগণের কাছে? এসব কথা তখনই গুরুত্ব পেতে পারে, যখন বাস্তব কিছু অগ্রগতি লক্ষ করা যাবে। দক্ষ প্রশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি পরিকল্পনা ও বিভিন্ন কর্মকৌশল প্রণয়ন ও দ্রুত কার্যকর করা। এসব নীতিবাক্য শুধু কথায় ও প্রশাসনের দলিল দস্তাবেজে থাকলেই চলবে না। তাতে জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না। মানুষের ভোগান্তি দিন দিন কেবল বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের পারদ কেবল উপরেই উঠবে।

এখন এমন কথা শোনানো হচ্ছে, বাংলাদেশ নাকি হবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, শুদ্ধাচারী সমাজ, সব নাগরিকসহ তাদের পরিবারপরিজন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সমাজের সব কিছু হবে দুর্নীতিমুক্ত শুদ্ধাচারী; ব্যক্তির জীবন-সম্পত্তির নিরাপত্তা, সব মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামগ্রিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোন জিনিসটাকে ভিত্তি করে ন্যায়নীতির কার্যক্রম শুরু হবে, এর ‘মরালিটি’ কোন উৎস থেকে আসবে? প্রশাসন এখানে নীরব। বস্তুত ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকেই তো সততা সত্যনিষ্ঠতার চেতনার স্ফুরণ ঘটে। ইসলাম ন্যায়, সততা, বিশ্বস্ততার প্রেমপ্রীতির উৎস। সে কথা একবারও বলা হচ্ছে না। সততা মূল্যবোধ ব্যতিরেকে সবই হবে অন্তঃসারশূন্য ও অপূর্ণাঙ্গ। একটা কথা আছে ‘চ্যারিটি বিগিনস ফ্রম হোম’। তাই প্রশাসন থেকেই শুরু হোক সেই শুদ্ধাচারের আন্দোলন।

শুনি, অনেক কিছু কেবল ‘হবে’ কিন্তু হচ্ছেটা কোথায়? দেশে একটি প্রবাদ আছে : শুকনা কথায় চিঁড়া ভিজে না। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয় আমাদের প্রশাসন যেন কোনো মন্ত্রবলে কথা দিয়েই চিঁড়া ভিজাতে চায়! অবাক লাগে অভিধানে ‘ত্বরিত, দ্রুত’ শব্দগুলো খুঁজে পাননি? কথায় আছে যা না হয় ৯ দিনে, তা ৯০ দিনেও হবে না। গত ৫০ বছরে যা হয়নি, এখন কতকাল আশায় মানুষকে বুক বাঁধতে হবে সে জন্য? প্রতিটি সকালই বলে দেয়, দিনটি কেমন হবে। আমরা তো এমন সকালের অপেক্ষায় আছি, যা বলে দেবে আজকে দিনটা রৌদ্রকরোজ্জ্বল হবে; মেঘলা দিনের স্যাঁতসেঁতে অবস্থাটা থাকবে না। সেই রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনের কামনায় আসুন, আমরা প্রার্থনা করি।

আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থার স্বরূপ কিছুটা গণমাধ্যমে উঠে আসে। বিভিন্ন মধ্যম আয়েরও উন্নত দেশে সমাজের যে চিত্র দেখা যায় তার সাথে আমাদের পার্থক্য এমন যে, আমাদের অবস্থা সেখানে ‘গ্লুমি’ বা অন্ধকারাচ্ছন্ন। পক্ষান্তরে সেসব দেশে সমাজচিত্র জনগণকে আশান্বিত করে; ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা পুলকিত হয়। হতাশা আমাদের কেবল গ্রাস করে যাচ্ছে। কেননা আমাদের সমাজে দেখা যায় ব্যর্থতা, সীমাহীন দুর্ভোগ, প্রশাসনিক অদক্ষতা, নানা অনিয়মে দেশের মানুষ হীনম্মন্য হয়ে পড়ে।

দেশের যে হালহকিকত, সে সম্পর্কে সমাজের অগ্রসর মানুষ নিত্য সংবাদ পাঠ করে, তাদের কাছে সব কিছু পরিষ্কার। তাদের মন-মস্তিষ্ক ‘ইকুইপ্ড’ তথা দেশের যাবতীয় তথ্য-উপাত্তে ভরপুর। চলমান ঘটনা ও অন্যান্য বিষয় তাদের নখদর্পণে তবে অনেক মানুষই নানা তথ্যপ্রবাহ থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন। তাদের জন্যই কিছু খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্ধৃত করব। আমাদের নীতি নৈতিকতার দেউলিয়াত্ব, দুর্বৃত্তায়নের সকল সীমা অতিক্রম হয়েছে। এসব সেই সব মানুষকে অবহিত করব।

এখন পত্রিকার নির্বাচিত সামান্য কয়েকটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করতে চাই। দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত এক খবরের শিরোনাম ছিল, ‘রাজনীতি ও অর্থের পিছনে ছুটছেন অনেক শিক্ষক।’ প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত রয়েছে, ‘শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের মহানায়ক। এ শাশ্বত বাণী চিরন্তন, চির সত্য। যারা জাতি গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে দেবেন তাদের প্রত্যেকের চেয়ে অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে শিক্ষকদের। কিন্তু মহান এই পেশা আজ মহা সঙ্কটে ঘুরপাক খাচ্ছে। বেশির ভাগ শিক্ষক রাজনীতির দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

ক্ষমতার রাজনীতি না করলে প্রত্যাশিত পদসহ কোনো কিছুই মেলে না। এ কঠিন বাস্তবতার মুখে নীতি বিসর্জন দিয়ে শিক্ষকসমাজের অনেকে আজ প্রকাশ্য রাজনীতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন। যাদের চাওয়াপাওয়ার শেষ নেই। আরো বেশি কিছু পাওয়ার জন্য তারা রাত দিন ছুটছেন রাজনীতি ও অর্থের পেছনে।’

দৈনিক সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘যশোর শিক্ষা বোর্ডের পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘চেয়ারম্যান-সচিব লাপাত্তা।’ এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন ও সচিব অধ্যাপক এ এম এইচ আলী আর রেজা আট দিন ধরে উধাও। তাদের দু’জনকে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ও তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না। বিপুল অর্থ আত্মসাতের দায়ে গত ১৮ অক্টোবর তাদেরসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।’ এ প্রতিবেদন থেকে এটাই বোঝা যায়, দুর্নীতি কোন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। সরকারি ব্যবস্থায় তদারকি ও জবাবদিহিতা কোন পর্যায়ে নেমে এসেছে।

যুগান্তরে প্রকাশিত অপর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘ধনাঢ্য পরিবারে মাদকের হানা, আইসের ভয়াবহতা শিউরে ওঠার মতো।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আইস’ ইংরেজি শব্দ। অর্থ বরফ। এই আইস দেখতে বরফের মতো হলেও আসলে বরফ নয়। এটি এখন মাদকের সর্বশেষ সংস্করণ। এক ভয়ঙ্কর মাদকের নাম ‘আইস’। এর পরিচিতি রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নামে। অভিজাত শ্রেণীর কাছে ‘স্কোর’ কেউ বলে ‘স্টাফ’। কারো কাছে আবার ‘সাদা’ নামে পরিচিত। তবে গোপন যোগাযোগের সময় অনেকেই ডাকে ‘বরফ’ নামে। স্বাদ-গন্ধ ও বর্ণহীন বলে বহির্বিশ্বে পরিচিত ‘ক্রিস্টাল মেথ’ হিসেবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক হিসেবে আইসের ভয়াবহতা শিউরে ওঠার মতো। ইয়াবার চেয়ে শতগুণ শক্তিশালী। আইসের জালে একবার জড়ালে একমাত্র মৃত্যুই হতে পারে মুক্তি। কারণ একবার আইস সেবনে অন্তত ৩০টি ইয়াবা সেবনের চাইতেও বেশি ক্ষতি হয়। এ কারণে আইসে আসক্ত হওয়ার মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ব্যক্তির কেন্দ্রীয় নার্ভ সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। আইস ব্যয়বহুল নেশা। এক গ্রাম আইসের বাজারমূল্য ১৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। ফলে স্বাভাবিকভাবে আইসের ব্যবহার হচ্ছে ধনাঢ্য শ্রেণীর মধ্যে। এই মাদক দেশের নতুন প্রজন্মকে শেষ করে ফেলছে। এর সরল অর্থ, যারা ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার কথা, তারা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর পরিণতি নিয়ে ভাবলে সব অন্ধকার হয়ে যায়।

নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক খবরের শিরোনাম ‘সিলেটে মাদক মাফিয়ারা অপ্রতিরোধ্য।’ সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ক্রেজি ড্রাগ’ ইয়াবা এখন অনেকটা অপ্রতিরোধ্য রূপ নিয়েছে সিলেটে। শহর থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি গ্রামের আনাচেকানাচে বিস্তার ঘটেছে নীরব ঘাতক ইয়াবা ট্যাবলেটের। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বহন করে এই মাদক। আর রাজনীতিকদের একটি অংশ এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। পুলিশ, ছাত্র, জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি তরুণী, যুবতী ও গৃহবধূরাও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। আসলে শুধু বড় শহর নয়, ছোট শহর, উপজেলা সদর এমনকি নিভৃত পল্লীতেও এই মাদক ছড়িয়ে পড়েছে।’ নয়া দিগন্তের অপর এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘রাজউকের প্লানিংয় ব্যর্থতার নজির হয়ে দাঁড়াল পূর্বাচল’ এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প প্লানিং ব্যর্থতার একটি উজ্জ্বল নজির। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ব্যয় করা হবে সাত হাজার সাত কোটি টাকা। শুরুতে শহরটির জন্য যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল এখন নতুন প্রকল্প নিয়ে আগের পরিকল্পনার অনেক কিছুই বাদ দেয়া হয়েছে এবং সেই সাথে পরিবর্তন হচ্ছে ব্যয়ের হিসাব।’ ভুলের মাশুল হিসেবে যে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে সেটি জোগাবে কোন গৌরী সেন? দরিদ্র দেশে এভাবে অকাতরে অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে এটা কত বড় ব্যর্থতা।

দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে, ‘রাশিয়ায় বসে ওয়েবসাইট খুলে বাংলাদেশে জুয়া’। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশী তিন যুবক রাশিয়া থেকে জুয়ার ওয়েবসাইট পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। জড়িত সন্দেহে ছয়জন গ্রেফতার। বাংলাদেশে জুয়ার আসর চালানোর একটি ওয়েব সাইটের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। তারা সাইটটি পরিচালনা করে রাশিয়া থেকে। এটি চালাচ্ছেন তিন বাংলাদেশী যুবক। তারা রাশিয়ায় থাকেন। গতকাল শুক্রবার এতে প্রবেশ করে দেখা যায়, আইসিসিটি-২০ ওয়ার্ল্ড কাপ, ইউরোপীয় ফুটবল লিগ, ক্রিকেট লিগসহ বিভিন্ন ধরনের খেলায় বাজি ধরার ব্যবস্থা আছে। চাইলে যে কেউ ক্যাসিনোতে খেলতে পারেন। ওয়েব সাইটের পাশাপাশি তাদের মুঠোফোন অ্যাপও রয়েছে। ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়েছে যারা বাজি ধরতে আগ্রহী, তাদের প্রথমে নিবন্ধন নিতে হবে। খেলার জন্য ভার্চুয়াল বা ক্রিপ্টো কারেন্সি কিনতে হবে। ওয়েবসাইটে কয়েকজন মিলে জুয়ার আসর বসানো যায়। পুরো লেনদেন হয় ভার্চুয়াল মুদ্রায়। কি ভয়ঙ্কর ব্যাপার, রাশিয়ায় বসে বাংলাদেশের আইন বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে দেশকে রসাতলে নেয়ার জন্য।

রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে জুয়া ক্যাসিনো খেলোয়াড় নিয়ে পুলিশ যে তৎপরতা ও দক্ষতা দেখিয়েছে তাতে আমরা আনন্দিত। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কিছুকাল পূর্বে যখন জুয়া, ক্যাসিনো নিয়ে পুলিশের ঘরের দুয়ারে বসে ধুমধাম আয়োজন হয়েছিল, তখন তাদের চোখ কান বন্ধ ছিল কেন? কারণটা অবশ্য আমরা জানি, সেখানে রাজনৈতিক শক্তিধর ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা ছিল বলে তাদের দাঁত ফোটানো কঠিন ছিল। কিন্তু তারা জানত না, সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘জুয়া খেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ তখন তাদের চোখ মুদ্রিত মূক ও বধিরের মতো ভূমিকা পালন কি সংবিধানের পরিপন্থী ছিল না? জানি না, পরে কোথা থেকে সবুজ সঙ্কেত আসায় সে বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে তৎপর হয়েছিল পুলিশ। তাই জানতে ইচ্ছা করে, তাদের সেই সঙ্কেত বড় না সংবিধানের মর্যাদা গুরুত্বপূর্ণ?

দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘সন্তানদের অবহেলায় শয্যাশায়ী মা বাসায় গিয়ে মামলা নিলেন বিচারক’ সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসার অভাবে শয্যাশায়ী ৭৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধা তার দুই সন্তানের বিরুদ্ধে তাকে অবহেলা ও ভরণপোষণ না দেয়ার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছেন। ওই বৃদ্ধা নিজে আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা করতে না পারায়, বিচারক নিজে বৃদ্ধায় বাসায় গিয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন। বরিশালের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ মামলা গ্রহণ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়ার জোড়পুকুর এলাকায় জাহানুর বেগম মামলাটি করেছেন তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে। মামলার বাদি উল্লেখ করেন, ‘খুলনায় আমি স্বামীর ঘরে থাকতাম। আমার চিকিৎসার খরচের জন্য আমি খুলনার সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই। ক্রেতা বরিশাল এলে তাদের সাথে কথা বলি। আসামিরা বরিশাল এসে সম্পত্তি বিক্রি করতে দেবে না বলে জানায়। এমনকি কোনো টাকাপয়সাও দিতে পারবে না বলে জানায়। এরপর আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। আমি অসুস্থ, কিন্তু তারা আমার ভরণপোষণ দিতে পারবে না।’ সমাজের মানবিক অবস্থার কতটা বিপর্যয় ঘটেছে। রিপোর্টে তাই প্রতিবাদ হয়ে উঠেছে।

ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement