২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গবেষণাকে উন্নয়ন সহযোগী করতে হবে

- ফাইল ছবি

বাংলাদেশ নামক এই বদ্বীপের মানুষের পক্ষে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে রেশমি সুতায় সৌন্দর্যমণ্ডিত স্বপ্নজাল বোনা শুধু কঠিন নয়, নানা কারণে দুঃসাধ্যও বটে। বিশ্বে এই জনপদের নামের সাথে নেতিবাচক বহু বিশেষণ সংযুক্ত রয়েছে।

এমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাক নেই যা এই ভ‚খণ্ডের মানুষকে প্রতি বছর পোহাতে না হয়। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়ঝঞ্ঝা, তীব্র নদীভাঙন, খাদ্যাভাব, রোগ-শোকে শত শত মৃত্যু। এমন সব দুর্যোগের ফলে দুর্ভাগা এই দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার কৃষিসম্পদ, শত শত কোটি টাকার বাড়িঘর, নানা স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক, জনপথ, বহু অবকাঠামো, ব্রিজ-কালভার্ট ধ্বংস হয়ে যায়। এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি শুধু দেশের অর্থনীতিই নয়, গোটা উন্নয়ন কার্যক্রমে মারাত্মকভাবে আঘাত করে; দেশের মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রতি বছর এসব দুর্যোগের ফলে হতদরিদ্র; নানা রোগ-শোকের কারণে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বহির্বিশ্বের মানুষ আমাদের করুণা করে। ক্ষেত্রবিশেষে হৃদয়হীনরা পরিহাস করে বলে, এ দেশ দুর্যোগের দেশ। কিন্তু তার পরও হাজার বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষ ভেঙে না পড়ে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে আছে, পরাভব স্বীকার করেনি। নিয়ত স্বপ্ন ভাঙে, আবার নতুন স্বপ্ন রচনা করে দাঁড়িয়ে যায়। এ যেন জীবনযুদ্ধের এক শোকাবহ মহাকাব্য, যার সুর বিষাদের রাগিণীতে বাঁধা।

এসব দুর্যোগে ঘটে হাজার হাজার মানুষের জীবনাবসান। বিশ্বে মানুষের অসময়ে মৃত্যুর যে হার, সেখানে এই জনপদের অবস্থান, সেই তালিকার হয়তো শীর্ষেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই সেই সাথে আছে মহামারীর মতো ভয়ঙ্কর ও শোকাবহ যত অভিজ্ঞতা। দেশের এসব সমস্যা সামলানোর দায়িত্ব তো প্রশাসনের। তাদের চাকরির শর্ত তথা দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে রয়েছে ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ প্রতি বছর এমন দায়িত্ব পালন করা কর্তব্য বলে তাদের এসব সামলানোর ব্যাপারে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এ নিয়ে তাদের কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে দক্ষতা, সক্ষমতা, সফলতা উল্লেখ করার মতো নয়। যে পরিস্থিতি প্রতি বছর সৃষ্টি হয় সে বিবেচনায় সরকারি কর্মকর্তাদের ‘গুড ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন সে মানে উন্নীত হতে পারেনি। দক্ষ ব্যবস্থাপকের আরো পারঙ্গমতা থাকতে হয় সমাজের নানা সমস্যার জট খোলার ক্ষেত্রে, কিন্তু তারা জট খুলতে গিয়ে জটিলতা বরং বাড়িয়ে দেন।

অতীতের দুঃখ কষ্টে মুহ্যমান হয়ে থাকলে তো জীবন স্থবির হয়ে পড়বে। পক্ষান্তরে বিশ্ব থেমে নেই, রকেটের গতিতে সামনে চলছে। প্রশাসনের সম্বিত ফিরে পেতে হবে, বসে তো কাল কাটানো যাবে না। আগামী দিনের হার্ডলসগুলো সরাতে হবে। মানুষকে নতুন স্বপ্নে সঞ্জীবিত করে তুলতে হবে। কোভিডের গভীর ক্ষত বিশ্বের আরো শত দেশের মতো বাংলাদেশকেও পুরোপুরি সামলে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনেক হতাশা কাটানো গেছে। এখন আর একটু প্রচেষ্টা চালাতে হবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য, মানুষকে জাগ্রত করতে। কোভিড মোকাবেলার পাশাপাশি এখন আর যে কাজ করা উচিত বলে বিজ্ঞ ব্যক্তিরা মনে করেন তা হলো, জনগণের বৈষয়িক অগ্রগতি ও কল্যাণের জন্য উদ্যোগ হেলা-অবহেলায় যেন কোনোক্রমেই শেষ না হয়ে যায়।

কোভিড- পূর্বকালে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দেশবাসীকে ভাগ্য বদলের রঙিন আশার বাণী শোনানো হয়েছিল। সেটা পরিষ্কার ও জোরালোই ছিল বটে। তবে তার রূপকল্প অবয়ব স্বচ্ছ ছিল না। তা ছাড়া এই আশার কথা নিয়ে সংসদে কিংবা উপযুক্ত কোনো ফোরাম অথবা মুক্ত কোনো আলোচনা, এমনকি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কোনো পরিপত্রেও কোনো রূপরেখা দেখা যায়নি। তবে সে আশার বাণী তখন সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, নতুন স্বপ্নে বিভোর করেছিল।

কোভিডের অব্যবহিত পূর্বে বলা হয়েছিল আমরা খুব বেশি দূরে নই; মধ্যম আয়ের দেশের দিগন্ত ছোঁয়ার পথে। হয়তো কোভিড পরবর্তী সময়ে এই স্বপ্ন আলেয়ায় পরিণত হয়েছে। এখন এই প্রহেলিকায় সর্বত্র চলছে সুনসান নীরবতা। তবে হঠাৎ কিছুকাল আগে অর্থমন্ত্রী নীরবতা ভেঙে বলেছিলেন। আমরা দরিদ্র দেশের অবস্থান থেকে উপরে উঠে এসেছি। তবে ‘পৌঁছেছি’ উল্লেখ করা হয়নি।

মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে স্বপ্ন সাধ ছিল, তার পরিবর্তে কোথায় দারিদ্র্যের আওতামুক্ত হওয়ার কথা। দুইয়ের ব্যবধান তো আকাশপাতাল। তাই বুঝতে চাই, কোন সব তথ্য-উপাত্ত আর পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এমন সব কথা পূর্বাপর বলা হয়ে থাকে। এদিকে আবার আকাশ থেকে পড়ার দশা! অতি সম্প্রতি খবরের কাগজে দেখলাম আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘অতিসত্বর বাংলাদেশ উন্নত দেশের পর্যায়ে উপনীত হবে’। জানি না, দেশের হতদরিদ্র মানুষদের নিয়তি নিয়ে কী পরিহাস করা হচ্ছে! না, কর্তৃপক্ষ হঠাৎ আলাউদ্দিনের জাদুর চেরাগ হাতে পেয়েছেন। সে চেরাগের মন্ত্র বলে মুহূর্তে সব অসাধ্য সাধন হয়ে যাবে। দায়িত্বশীলদের এমন ভারসাম্যহীন কথা কতটা সাজে?

দেশের বিশেষজ্ঞ শ্রেণীর মানুষ তথা উন্নয়নবিষয়ক গবেষক, অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পনাবিদ, যারা উন্নয়নসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে কাজ করেন, তাদের কাছ থেকে তো এসব বিষয়ে মানুষ বক্তব্য আশা করে এবং আস্থা বিশ্বাস রাখতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তারাই ‘কম্পিটেন্ট পারসন। অবশ্য এসব কথা বলার জন্য প্রশাসনের দায়িত্বশীল শীর্ষ ব্যক্তি অথবা তার মনোনীত মুখপাত্রের কাছ থেকেই এমন গবেষণা আশা করা হয়। এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মর্জিমাফিক কথা বলে বাজিমাত করার ‘টেনডেনসি’ পরিহার করতে হবে। মানুষ তাতে ভুল বার্তা পায়, হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়।

উন্নয়নের সাথে সব মানুষের ষোলোআনা স্বার্থ রক্ষার কথা যেখানে সবার জন্য অন্ন, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে। এসব সবার জন্য নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত উন্নয়নের ধারণা হবে বায়বীয় অবাস্তব তথা মরীচিকার পেছনে ছোটা। দেশের মানুষের প্রকৃত সংখ্যা কারো পক্ষেই সঠিকভাবে বলা এখন সম্ভব নয় যে পর্যন্ত না যথাযথ কোনো শুমারি না হয়। সেই শুমারি থেকে বেকার মানুষের সঠিক তথ্য পাওয়া যেত। এসব বেকার মানুষের হাতে কাজ তুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত দারিদ্র্য বিমোচনের কথা ভাবা যাবে না। মানুষের জন্য খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজন পূরণ তখনই সম্ভব যখন মানুষ নিত্যদিন রুজি রোজগার করতে পারবে। তা না হলে সবই কেবল আকাশ কুসুম কল্পনা।

এ কথা সত্য, দেশের বহু লোক কাজের নিমিত্ত এখন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রয়েছে এবং কিছু অর্থপ্রাপ্তি হচ্ছে। পক্ষান্তরে ভুলনীতি ও কর্মপন্থার কারণে আমাদের লোকজন, ন্যায্য বেতনভাতা পাচ্ছে না সেই সাথে আরব দেশগুলোতে বাংলাদেশের মর্যাদা ভেঙে পড়েছে। আমরা সেসব দেশে নাম পেয়েছি ‘মিসকিন’ হিসেবে। অথচ ভারতের বহু লোক আরব বিশ্বে মর্যাদার সাথে কর্মে নিযুক্ত রয়েছে ও বিপুল অর্থ উপার্জন করছে এবং সেই মর্যাদার আসনে সমাসীন। কেননা ভারত থেকে যারা সেসব দেশে কাজের জন্য যায় তারা প্রশিক্ষিত দক্ষ এবং নিজের যোগ্যতার বলে উচ্চ পদে সম্মানের সাথে কাজ করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আরবরা তাদের সমিহ করে তাদের কর্মদক্ষতার কারণে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারতীয়রা বাইরে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় শিক্ষাদীক্ষা, উচ্চমানসম্পন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেদের পারঙ্গম ও উপযুক্ত করে তোলে। এসব কারণে তাদের বেতনভাতা উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া যোগ্যতার বলে নিজের বেতনভাতা সুযোগ-সুবিধার জন্য নিজেরাই দর কষাকষি করতে সক্ষম। উপরন্তু ভারতের সরকারি সংস্থা তাদের দেশের নাগরিকদের স্বার্থ ষোলোআনা আদায়ের জন্য তৎপর ও পাহারাদারের ভ‚মিকা রাখে। প্রকৃতপক্ষে প্রশিক্ষিত জনশক্তি নয় আমাদের বেশির ভাগ অশিক্ষিত অদক্ষ শ্রমিক। ন্যূনতম শিক্ষা-প্রশিক্ষণ কিছুই নেই। বেসরকারি ‘আদম’ ব্যবসায়ীরা নিছক অর্থ উপার্জন করা তাদের এক লক্ষ্য ও বিবেচনা। তাদের পাঠানো ব্যক্তিদের স্বার্থ সুযোগ-সুবিধা দেখার কোনো প্রয়োজন তারা বোধ করে না। বিরূপ পরিবেশে হাড় ভাঙা পরিশ্রমের বিনিময়ে নিয়োগকর্তাদের খেয়াল খুশি মতো পয়সা দেয়, তা যথাযথ ও ন্যায্য কি না সেটি দেখার, বলার কোনো পথ নেই। যারা কাজ করে তাদের দরকষাকষির যোগ্যতাও নেই, কিছু বললে কাজ হারাতে হবে। বাংলাদেশের দু-চার কর্মকর্তা সেখানে দেশের কর্মরত ব্যক্তিদের দেখভালের জন্য রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা এসব দেখার ব্যাপারে গাফেল এবং তাদের যোগ্যতার প্রশ্ন তোলা হয়। তাই আরব বিশ্বে কর্মরত বাংলাদেশীরা এতিমের মতো দিনাতিপাত করে। তার পরও তার সবটুকু আয় দেশে পাঠায়। বাংলাদেশের যে ভুলনীতির কথা বলেছি, তার সারমর্ম হচ্ছে- কতকাল দেশ থেকে জনশক্তি দেশের বাইরে যাচ্ছে। অথচ সেই ব্যক্তিদের উপযুক্ত দক্ষ করার জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। যদি থাকত, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও রাষ্ট্র বিরাট লাভবান হতো। যেমন ভারত হয়েছে।

বিশ্বের বহু দেশ উন্নয়নের মডেল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে পেরেছে। তার পরও তাদের কোনো স্বস্তি অহমিকা নেই। অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। নিজেদের কাজের কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার পরই বিশ্রামের বাড়ি ফেরা। কর্মীদের এমন দায়িত্ব পালনের ফলেই দেশগুলো উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রার দিগন্ত স্পর্শ করতে পেরেছে। এমন সফলতার পশ্চাতে যোগ্য দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিশ্রমী, উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী আর জনগণের আস্থাভাজন নেতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। সেই নেতৃত্বের পাশে তাকে সহায়তা দেয়ার জন্য এক দল সৎ কর্মঠ আর নিবেদিতপ্রাণ কর্মী থাকতে হয় যারা ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে জবাবদিহিতার সংস্কৃতির অনুক্ষণ অনুসরণ করার মানসিকতাকে লালন করে। তাদের সাফল্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নতুন উদ্ভাবন আর পুরাতনকে সময়ের সাথে ধরে রাখা এবং আরো উৎকর্ষ সাধনের জন্য গবেষণায় ব্রতী হওয়া বিশ্ব আজ যেখানে পৌঁছেছে। অর্থাৎ দেশ-বিশেষের মানুষের সমৃদ্ধি স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের যাবতীয় উপাদান যখন হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া হয়েছে, এসব সাফল্যের পেছনে রয়েছে মানুষের গবেষণালব্ধ জ্ঞান সাধনা। তাদের উদ্ভাবন জনসেবায় কাজে লাগাতে কোনো কালক্ষেপণ করা হয় না।

জীবনকে উচ্চতর সোপানে পৌঁছানোর জন্য শুধু বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলগত প্রতিষ্ঠান, ওষুধ প্রস্তুতকারী সব শিল্পপল্লীর মধ্যে গবেষণা কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা বিষয় নিয়ে অত্যন্ত উচ্চ মানসম্পন্ন গবেষণাগারে নতুন উদ্ভাবনের সাধনায় নিমগ্ন হয়ে আছেন হাজার হাজার জ্ঞানসাধক। তাদের অমূল্য সাধনার সুফল শুধু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোই নয়, আজ গোটা বিশ্বজাহানের মানুষ তাতে উপকৃত হচ্ছে।

আমাদের উন্নয়ন ভাবনার সাথে তাই গবেষণা কার্যক্রম চালু করে নতুন উদ্ভাবনে ব্রতী হতে হবে। দেশে যত গবেষণাগার রয়েছে, তার সংখ্যা ও মান বৃদ্ধির দিকে নজর দেয়ার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণের অবকাশ নেই। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের খবর- সচেতন ব্যক্তি, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। মাত্র কিছু দিন আগে দৈনিক যুগান্তরে সে খবরটি প্রকাশিত হয়। সে খবরে সন্নিবেশিত রয়েছে, সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কার্যক্রমে কর্তৃপক্ষের অর্থ ব্যয়ের ব্যাপারে আগ্রহের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। বরং আগের চেয়ে এখন ব্যয় বরাদ্দ অনেক কমেছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আর বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ বলতে গেলে, একেবারেই নেই। অথচ উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে মৌলিক গবেষণা ও নতুন জ্ঞানের অনুসন্ধান। এ জন্য কোটি কোটি ডলার তারা অকাতরে ব্যয় করে। শেষে ‘সুদেমূলে’ তা উঠে আসে।

এমন কৃচ্ছ্র গবেষণার ফলস্বরূপ নতুন সব উদ্ভাবন কার্যক্রমকে সব শিকায় নিয়ে উঠাবে। জ্ঞানের দুয়ার খুলতে না পারলে সমৃদ্ধির ফটক কখনোই খুলবে না। আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব যতটা রাজনীতিমনস্ক ঠিক ততটাই অন্যমনস্ক জ্ঞানবিজ্ঞান নিয়ে। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার অর্থ হচ্ছে জাতিকে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ রাখা। আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা তথা জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার কী করুণ অবস্থা! তবে এর বিপরীতে, সেখানে রাজনীতির বিকাশ ব্যাঙ্গাচির মতো। দলাদলি হানাহানি হাঙ্গামা এসব প্রতিষ্ঠানের এখন অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অথচ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শত শত উচ্চযোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক রয়েছেন যাদের মেধা যোগ্যতা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তা ছাড়া দেশে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও সম্মানিত বিজ্ঞানী ও গবেষকও রয়েছেন যারা বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় নিরলসভাবে গবেষণার কাজ করে যাচ্ছেন।
[বাকি অংশ আগামীকাল]
ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement