২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইউএফও এবং একটি ঘটনা

ইউএফও এবং একটি ঘটনা - ছবি : সংগৃহীত

‘গ্যালাক্সি বা ছায়াপথজুড়ে রয়েছে আমাদের এ চিরচেনা পৃথিবীর মতো গ্রহগুলো।’ চমকানো এ তথ্য দিয়েছেন প্রফেসর আভি লোয়েব। তিনি বিশ্বখ্যাত মার্কিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভার্ডের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং ইউএফওদের উদ্ভাবিত সম্ভাব্য প্রযুক্তির বিষয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক একটি টিমের প্রধান। গ্যালিলিওর মতো প্রখ্যাত বিজ্ঞানীর নামে নামকরণকৃত এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের পেছনে বেসরকারি খাতের তহবিল রয়েছে পৌনে দুই মিলিয়ন ডলারের। ইতোমধ্যে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে মাঝারি সাইজের দূরবীন, ক্যামেরা আর কম্পিউটার, পৃথিবী বহির্ভূত প্রাণীদের সভ্যতার বিষয়ে মূল্যবান গবেষণার উদ্দেশ্যে।

প্রফেসর লোয়েব বলেন, মানবজাতির আগেও সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, যার সম্ভাবনা আর উড়িয়ে দেয়া যায় না। তিনি সাংবাদিকদের আরো জানান, আনআইডেন্টিফাইড ফ্লায়িং অবজেক্ট বা ইউএফওগুলোর অনুসৃত প্রযুক্তি আবিষ্কার করা গেলে আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসমেত গোটা বিশ্বদৃষ্টিতে বিশাল প্রভাব পড়বে। উল্লিখিত ‘গ্যালিলিও’ প্রকল্পে শামিল রয়েছেন হার্ভার্ড, প্রিন্সটন, ক্যামব্রিজ, ক্যালটেক ও স্টকহোমের মতো খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক দফতর পেন্টাগন রহস্যময় মহাশূন্যের কিছু কর্মকাণ্ডের বিষয়ে রিপোর্ট দিয়েছিল। এর এক মাস পরই গ্যালিলিও প্রকল্পটির উদ্ভব। পেন্টাগন বলেছে, ইউএফওর কার্যকলাপ ‘অস্পষ্ট’।

এর সূত্র ধরে প্রফেসর আভি লোয়েব মনে করেন, ‘আকাশে আমরা যা দেখি, তার ব্যাখ্যা দেয়া রাজনৈতিক অথবা সামরিক লোকদের কাজ নয়। কারণ তারা বিজ্ঞানীদের মতো প্রশিক্ষিত নন। বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ই প্রকৃত ব্যাপারে জানতে পারেন।’ এ জন্য গবেষণায় বাজেট ১০ গুণ বাড়বে বলে তার আশাবাদ।

ইউএফওর মতো ব্যাপকভাবে আলোচিত বিষয়ে গবেষণার পাশাপাশি উল্লিখিত প্রকল্প ওসব বস্তু নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে চায় যেগুলো মাঝে মাঝেই আমাদের সৌরজগতে ঘুরতে চলে আসে এবং অ্যালিয়েনদের উপগ্রহের সন্ধান করে থাকে। এসব রহস্যজনক বস্তু আসে তারকাগুলোর মধ্যবর্তী স্থান থেকে এবং তাদের অনুসন্ধান করা উপগ্রহগুলোর গবেষণার টার্গেট হতে পারে আমাদের এ পৃথিবী। অধ্যাপক আভি লোয়েবের ভাষায়- জোতির্বিজ্ঞানের এ শাখা হলো ‘মহাশূন্য প্রত্নতত্ত্ব’। বর্তমানে অ্যালিয়েনদের বেতারসঙ্কেত নিয়ে কাজ করছে SETI অর্থাৎ Search for Extraterrestrial Intelligence। এর পরিপূরক ভূমিকা রাখার কথা ‘মহাশূন্য প্রত্নতত্ত্বে’র। এ জন্য বর্তমান ও ভবিষ্যতের মহাশূন্য জরিপের সাহায্য জরুরি। এ ব্যাপারে দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতে অবস্থিত ভেরা সি রুবিন অবজারভেটরিও সাহায্য করতে পারে। ২০২৩ সালে এটা অনলাইন কার্যক্রম শুরু করবে, যার জন্য বিজ্ঞানীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ।

প্রফেসর আভি লোয়েব (৫৯) একজন মার্কিন নাগরিক এবং কয়েক শত গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তিনি সহযোগী ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ও সম্প্রতি পরলোকগত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের। তবে একটি বিষয়ে তাকে নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তা হলো- তিনি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধে এবং Extraterrestrial : The first Sign of Intelligent Life Beyond Earth (এক্সট্রাটেরেসট্রিয়াল : দ্য ফার্স্ট সাইন অব ইনটেলিজেন্ট লাইফ বিয়ন্ড আর্থ) গ্রন্থে তার প্রাসঙ্গিক যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেছেন। বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনেকের সাথে এ নিয়ে মতভেদকে কেন্দ্র করে তার সম্পর্কের নিদারুণ অবনতি ঘটে।

আলোচ্য নয়া প্রজেক্টের নাম স্মরণ করিয়ে দেয় ইতালির মধ্যযুগীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিওকে। তিনি প্রমাণ দেন, বিশ্বের কেন্দ্রস্থল এ পৃথিবী নয়। এ কথিত অপরাধে গ্যালিলিওকে কঠোর সাজা পেতে হয়েছিল।

গ্যালিলিও প্রজেক্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফ্রাংক লকিয়েন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে রসায়ন এবং রাসায়নিক জীববিজ্ঞান বিভাগে ভিজিটিং স্কলার। তিনি নিজেকে মনে করছেন ‘আবাসিক সংশয়বাদী’। অবশ্য তিনি অন্যের ধ্যানধারণা বা আইডিয়াকে সরাসরি নাকচ করে না দিয়ে বরং সন্দেহের পথে হলেও রেকর্ড করে রাখেন। তিনি সব ডাটার বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের সপক্ষে।

বিশ্বের মানবসমাজে যুগ যুগ ধরে সর্বাধিক আলোচিত রহস্যপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে পৃথিবীর জলভাগে ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ এবং মহাশূন্যে ইউএফও সর্বাগ্রগণ্য।

কথা হলো, আমাদের দেশেও অতীতে একজন সাধারণ অশিক্ষিত ব্যক্তি পর্যন্ত আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের গতিবিধি বুঝতে পারতেন। মার্কিন বিজ্ঞানী আভি লোয়েবের বক্তব্যমাফিক, এসব নিরক্ষর গেঁয়ো মানুষ রাজনীতি বা সামরিক বিষয় দূরের কথা, এমনকি কোনো বিজ্ঞানী কিংবা বিজ্ঞান প্রযুক্তির সাধারণ ছাত্রও নন। তাহলে কিভাবে তারা আকাশের গ্রহ তারকার

গতিবিধি অনুধাবন করতেন?
আমেরিকার গ্যালিলিও প্রকল্পের পরিচালক বলেছেন, ‘আকাশে আমরা যা দেখি, তার ব্যাখ্যা দেয়া রাজনীতি বা সামরিক বিষয় সংক্রান্ত লোকদের কাজ নয়।’ তাদের পক্ষে এটা ‘অসম্ভব’ বলে তিনি মনে করছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের একটি ঘটনা তুলে ধরছি।

বিগত শতাব্দীর সত্তর দশকের শেষ দিকের একটি ঘটনা আমাকে বলেছিলেন ভার্সিটির এক বড় ভাই। তিনি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং আমাকে বানোয়াট কথা বলার কোনো দরকার তার ছিল না। তিনি বলেছিলেন, ‘একদিন অপরাহ্ণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে বন্দরনগরে যাওয়ার পথে ক্যাম্পাসের ২ নং রাস্তার পূর্ব মাথা থেকে পরিষ্কার পশ্চিমাকাশে কয়েক মুহূর্তের জন্য দেখা গেল একটা অদ্ভুত দৃশ্য। তা হচ্ছে, আকাশের বুকে একটি সামুদ্রিক জাহাজ।’ এটা বেশ কয়েক মাইল দূরের সমুদ্র উপকূলের কোনো জাহাজের প্রতিচ্ছবি কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রশ্ন হলো, এমন প্রতিফলন ঊর্ধ্বাকাশে ঘটতে পারে কি না। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এর ব্যাখ্যা কী?


আরো সংবাদ



premium cement