২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গণতন্ত্রের রুগ্নদশায় গণচীনের যৌবন

গণতন্ত্রের রুগ্নদশায় গণচীনের যৌবন -

চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে দেশটির ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের প্রকাশ নতুন মাত্রায় ঘটেছে। গণচীন ক্রমেই যে তার বর্ধিত শক্তির প্রদর্শন করে বিশ্বপর্যায়ে এর একটি সুফল নিতে চাইবে, তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে তার এই বক্তব্যে। কেউ চীনের ক্ষতি করতে চাইলে মহাপ্রচীরে তাদের মাথা চূর্ণ করার হুমকি দেয়ার মধ্যে নতুন বার্তা রয়েছে। তাইওয়ানকে মূল চীনে পুনঃএকত্রীকরণ, হংকংয়ে নিজেদের মনমতো সরকার চালান ও পূর্বচীন সাগরের উত্তেজনায় শত্রুদের উঠানো মাথাকে নমনীয় করতেই যে তিনি এভাবে বলছেন তা বোঝা যাচ্ছে। ভাষণে তিনি চীনা ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’র সক্ষমতার কথা তুলে ধরেন।

মহাকাশ অভিযানে চীন ধারাবাহিক চমক দেখাচ্ছে। সিপিসির শতবার্ষিকীতে তার উল্লেখের আগে থেকে তা ফলাও করে বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে চলেছে চীন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অবিশ্বাস্য সফলতার কথা তিনি বলেছেন। চীনা অগ্রগতির এসব দৃষ্টান্ত উপস্থাপনের পাশাপাশি এবার তিনি জোর দিয়ে প্রকাশ করলেন নতুন আরেক বিশ্বব্যবস্থার কথা। তার মতে পুরনো বিশ্বব্যবস্থাকে চীনারা পেছনে ফেলে দিয়ে নতুন এক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলছে। বৈশ্বিক নেতৃত্বের অবস্থান থেকে ঠিক এ ধরনের কথা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র্রকে এর আগে বলতে দেখা গেছে। অপেক্ষাকৃত লাজুক ও লুকিয়ে থাকা চীনের, ঘোষণা দিয়ে বিশ্বআসর জমানোর ইঙ্গিত অবাস্তব কিছু নয়। এর সূচনা ধরতে গেলে আমেরিকাই প্রথম করেছে। আমেরিকার নেতৃত্বে বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের প্রধান টার্গেট চীন। দেশটির নতুন প্রশাসন ইউরোপসহ বিশ্বের বাকি ধনী দেশ ও বন্ধুদের নিয়ে এ লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। সম্মিলিতভাবে তারা চীনকে মোকাবেলা বা দাবিয়ে রাখতে চায়। মোট কথা, ঘোষণা দিয়েই আমেরিকা বিশ্ব চালকের আসনে চীনকে নিয়ে এসেছে।

করোনাও যেন চীনের ‘যৌবন’ প্রকাশ করার জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসল। এর উৎপত্তিস্থল হিসেবে ঘৃণা লাঞ্ছনা পাওয়ার পর দেখা গেল চীন একমাত্র দেশ যারা সর্বোচ্চ সফলতার সাথে এর ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখতে পেরেছে। করোনায় বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে তারাই সবার আগে উদ্ধার করে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে পেরেছে। প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে মহামারীর বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল। অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পরের দুই প্রান্তিকে তারা তার রিকভারি করে এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে গিয়ে তাদের অর্থনীতি করোনা পূর্ববতী অবস্থায় ফিরে যায়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রক্ষেপিত হিসাবে উন্নত দেশের জিডিপি ২০২০ সালে সাড়ে পাঁচ শতাংশের বেশি সঙ্কুচিত হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, চীন প্রায় দুই শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বছরটি শেষ করেছে। ২০২১ সালে চীন বাকি বিশ্বকে বিপুল ব্যবধানে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে। আইএমএফের হিসেবে চলতি বছর চীনের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ হবে; ইউরোজোনের ৫ দশমিক ২ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রের হবে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। এরপরের বছরগুলোতে সারা বিশ্বে উৎপাদন ও উন্নয়নের যে হিসাব-নিকাশ সেখানে সব দেশকে পেছনে ফেলে চীন প্রথম অবস্থানে থাকছে। সিপিসির শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে শি জিন পিংয়ের দেয়া বক্তৃতায় এই শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

চীন তার উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে যাচ্ছে গরিব দেশগুলোতে। তারা নির্মাণ করে দিচ্ছে অবকাঠামো। রোড অ্যান্ড বেল্ট নামে তাদের বৈশ্বিক এ প্রকল্প চলমান। এই চীনকে আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্ব ঠেকানোর চেষ্টা করছে। এ জন্য তারা পুরনো ভোঁতা অস্ত্র ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ প্রয়োগ করতে চায়। বিগত বেশ কয়েক দশকে আমেরিকার নেতৃত্বে এগুলোর প্রয়োগ ও কার্যকারিতা দেখলে আমরা বুঝতে পারব, এগুলো সম্পূণর্ রকমে রুগ্ণ ও ভগ্ন অবস্থার মধ্যে রয়েছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মধ্যে এখন নৈতিক শক্তি খুব কমই রয়েছে, যা তাগড়া চীনকে মোকাবেলা করতে পারে। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের পছন্দ অনুযায়ী সরকার পরিচালনা। এই সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে এবং জনগণ সরকার পরিবর্তনের সম্পূর্ণ অধিকার সংরক্ষণ করবে। সব মিলিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ সার্বভৌম কর্তৃত্বের মালিক। গণতন্ত্রের মূল চেতনা হচ্ছে, সর্বজনীন মানবাধিকার। জন্মগতভাবে সবাই এ অধিকার পাবে। ধর্ম বর্ণ ভাষা লিঙ্গ জাতীয়তা অথবা অন্য কোনো পরিচয়ের কারণে এ অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। জীবন ধারণের অধিকার, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। এসবকে আমেরিকার নেতৃত্বে পরিচালিত বিশ্ব নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যতটা ব্যবহার করেছে, তার খুব সামান্য তারা ব্যবহার করেছে বিশ্ব মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এখন ক্ষয় হয়ে গেছে। এগুলোর নিবু নিবু অবস্থার কথা জানাচ্ছে তাদের নিজেদের সৃষ্ট নানা প্রতিষ্ঠান।

এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ফ্রিডম হাউজ’। গণতন্ত্রের বিকাশ ও ক্ষয় দুটো নিয়ে গবেষণা করে বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করে বছর বছর। তারা জানাচ্ছে, ২০০৬ সাল থেকে গণতন্ত্র জৌলুস হারাচ্ছে। ক্রমেই যৌবন হারানোর গতি দ্রুত ও গভীর হচ্ছে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে তারা জানাচ্ছে, গত বছর বিশ্বের ৭৫ শতাংশ দেশ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান ভ্যারাইটিস অব ডেমোক্র্যাসি সংক্ষেপে ভি-ডেম বৈশ্বিক গণতন্ত্রের মান নিরীক্ষণ করে নির্বাচন, উদারতা, অংশগ্রহণ, পরামর্শ গ্রহণ ও সুযোগের সমতা এই পাঁচ ভাগে। তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে টানা ১০ বছর ধরে গণতন্ত্র ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। হিসেব করে তারা দেখাচ্ছে ২০২০ সালে এসে গণতন্ত্র ১৯৯০ সালের জায়গায় ফিরে গেছে। অর্থাৎ বিগত ত্রিশ বছরে এটি কিছুটা ওপরের দিকে উঠে আবার তলানিতে ঠেকেছে। পতনের এই রেখা আবার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার বদলে এটি সরাসরি পতনের দিকে রয়েছে। তাদের মতে ৮৭টি দেশে স্বৈরশাসন চলছে। এগুলোতে বিশ্বের ৬৮ শতাংশ মানুষ বাস করে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের গণতন্ত্র রূপ নিয়েছে নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রে। গত দশকে উদার গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা ছিল ৪১টি। বর্তমানে সেটা কমে ৩২টি হয়েছে। জনসংখ্যার মাত্র ১৪ শতাংশ এখন উদার সমাজে বসবাস করে।

এসব দেশে মানবাধিকারের অবস্থা আরো করুন। সারা বিশ্বে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো মানবাধিকার সংস্থা গজেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ আবার নিপীড়ক শাসকদের সহযোগী। তবে মানবাধিকারের সঠিক পরিস্থিতিও অনেক প্রতিষ্ঠান তুলে ধরে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন স্বৈরশাসকরা আমলে নেয় না, তারা এসবের কোনো পাত্তা দেয় না। এই অবস্থায় চীনকে ঠেকানোর জন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উন্নত মূল্যবোধ জনগণের সামনে ঠাট্টা মশকরা করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। আমেরিকার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিশ্ব শেষ চেষ্টা চালাচ্ছে এগুলো দিয়ে ‘বালির বাঁধ’ দেয়ার জন্য।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বলতে যা বোঝায় তার পরিপূর্ণ বিকাশ আমেরিকা ও ইউরোপে হয়েছে। ওই সব দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে তারা শতভাগ মূল্যায়ন করে। জনগণ সেখানে ক্ষমতার কেন্দ্রে রয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলে তাদের পছন্দ সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাচ্ছে। ব্যক্তির স্বাধীনতা মানবাধিকারের শতভাগ চর্চাও তারা করছে। তবে এ স্বাধীনতার কিছু বিকৃতি রয়েছে। তাদের অনেক দেশ সমকামিতাসহ নানা ধরনের অনাচারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। এগুলো শেষ পর্যন্ত ধ্বংস ডেকে আনবে। গণতন্ত্র, মানবাধিকারের সুফল কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া খুব কম ক্ষেত্রে তারা বাকি বিশ্বের জন্য চেয়েছে। একই ধরনের গণতন্ত্রকে তারা এশিয়ার তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। এ দু’টি দেশের জনগণ গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের সুফল ইউরোপের মর্যাদায় ভোগ করে। অর্থনৈতিক বিকাশও তাদের পূর্ণ মাত্রায় হয়েছে।

এরাই আবার মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বাদশাহী পছন্দ করেছে। সেখানে রাজতন্ত্র তাদের শতভাগ সমর্থন পেয়ে আসছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর জনগণের ওপর চেপে বসে আছে নানা মাত্রার নিপীড়ক ও স্বৈরাচারী রাজা-বাদশা। আবার তাদের পছন্দ না হলে সাদ্দাম গাদ্দাফির মতো ভয়াবহ পরিণতি। ইরাক আফগানিস্তান ও সিরিয়া নীতি থেকে আমেরিকার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক বিশ্বের ভণ্ডামি কপটতা প্রমাণিত হয়ে যায়। এসব দেশে লাখ লাখ মানুষ তারা হত্যা করেছে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের তকমাধারী ইউরোপীয় দেশগুলো এসব কাজে আমেরিকাকে বাধা দেয়নি। সম্পূর্ণ অন্যায় অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডকে তারা সমর্থন দিয়েছে। এমনকি সৈন্যবাহিনী অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে তাদের সহযোগী হয়েছে।

ইউরোপ আমেরিকা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে স্বর্গ রচনা করেছে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জনগণ এসবের সুফল বাইরে থেকে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে। এগুলো তাদের জন্য আঙ্গুর ফল টকের পর্যায়ে থেকে গেছে। এসবের বিকাশ এশিয়া আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দরিদ্র দেশগুলোতে ঘটুক, তা সচেতনভাবে আমেরিকার নেতৃত্বে থাকা বিশ্ব চায়নি। বাংলাদেশ থেকে আমরা একটি উদাহরণ দিতে চাই। আমাদের প্রতিবেশী ভারতকে ‘সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ’ বলা হয় যদিও গণতান্ত্রিক নীতি আদর্শ দেশটিতে কখনো আন্তরিকভাবে পরিপালন হয়নি। তবুও পশ্চিমাদের একটি উচ্ছ্বাস রয়েছে এ ব্যাপারে। তাদের মতে, কেবল অল্প কিছু জনসংখ্যা নিয়ে তারাই গণতন্ত্র চর্চ্চাকারী দেশ নয়, ভারতেও এর চর্চা হয়। তারা এ সুযোগে দেশটিকে চীনের মোকাবেলা করার জন্য দাঁড় করিয়ে দিতে চায়।

নির্বাচনী সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেয়েছে ভারতের ক্ষেত্রে, এতটুকু বলা যায়। কিন্তু সেটা প্রতিবেশী দেশে রফতানির উদারতা তারা দেখাতে পারেনি। বরং প্রতিবেশীর নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার নজির তৈরি করেছে তারা। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের আগে সেটা উলঙ্গভাবে প্রকাশ পেয়ে যায়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং বাংলাদেশে এসে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অপচেষ্টায় প্রকাশ্যে লিপ্ত হন। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জোর চাপ দেন তিনি। তার যুক্তি ছিল এরশাদ নির্বাচনে অংশ না নিলে দেশে জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় চলে যাবে। এ কথা এরশাদ নিজে প্রকাশ করে দেন। সেই সময়ের মিডিয়া এর সাক্ষী হয়ে রয়েছে। আমলাদের ক্ষমতা বেশি হয়ে যাচ্ছে বলে এখন সংসদে হইচই হচ্ছে, তাদের সম্মানে ঘা লাগছে। তখন বাংলাদেশী এসব রাজনীতিবিদের কোনো আত্মমর্যাদাবোধ দেখা যায়নি। একজন সামান্য আমলা হয়ে প্রতিবেশী দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকদের নিয়ে ঘুঁটি চালার পরও তখন কারো আত্মসম্মান জেগে ওঠেনি। অথচ তিনি মৌলবাদের জুজুর যে ভয় দেখাচ্ছিলেন তার আসল বাস্তবায়ন ঘটল ভারতে। বাংলাদেশকে পাঠ দেয়ার কিছু দিনের মধ্যে ২০১৪ সালে প্রথম নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসেন। গুজরাটে দাঙ্গা বাধিয়ে কয়েক হাজার মানুষ হত্যার দায়ে তিনি তখন অভিযুক্ত। নির্বাচনে জয়ের পর বিজেপি ও তার উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সারা দেশে তাণ্ডব চালায়। দলটি ও তাদের নেতারা ভারতে উগ্র সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড বহুকাল ধরে চালিয়ে আসছে। অথচ সুজাতা প্রতিবেশী দেশে এমন একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালালেন যাদের বিরুদ্ধে এমন উগ্র সাম্প্রদায়িকতার কোনো অভিযোগ নেই। এখন বাংলাদেশে কোনো পর্যায়েই ভোটাধিকার নেই। সরকারের কাছে জনগণের কোনো পাত্তাই নেই। হিসাব মতে, সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ তার প্রতিবেশী দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার কাজই করেছে।

দরিদ্র দেশগুলোতে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদীরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার যখন দুমড়ে মুচড়ে দেয় আমেরিকার নেতৃত্ব তখন সুযোগ বুঝে চুপ থাকে। অন্য দিকে তারা মানবাধিকারের অস্ত্রটি সবসময় শানাতে থাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কার্ড হিসেবে। যেমন- তারা অপেক্ষায় থাকে উইঘুরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বিশ্বসম্প্রদায়ের সামনে ছুড়ে দেয়ার জন্য। জাতিগত মুসলিম সম্প্রদায়টির ওপর চীনের চালানো নিপীড়ন নিয়ে আমেরিকা যতটা চীনকে শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছে তার সামান্য চেষ্টাও তারা করেনি উইঘুরদের নিপীড়ন থেকে বাঁচাতে। আমেরিকা তেমন চেষ্টা করলে এতদিনে উইঘুররা তাদের অধিকার রক্ষায় সফল হতো। উইঘুর সম্প্রদায় যদি মানবাধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবন ধারণের অধিকার পায় তাহলে চীনকে মানবাধিকার ইস্যুতে চাপ দেয়ার অস্ত্র আমেরিকার কাছে অবশিষ্ট থাকে না। মানবাধিকার নিয়ে ভণ্ডামি এ অঞ্চলে রোহিঙ্গা ও কাশ্মির ইস্যু লক্ষ করলেই বুঝতে পারব। রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত উৎখাত অভিযান চালাচ্ছে সেটা কখনো সম্ভব হতো না আমেরিকা ও তার মিত্ররা আন্তরিকভাবে প্রতিরোধ করলে। একই ধরনের বঞ্চনা থেকে বেঁচে যেতে পারত কাশ্মিরিরাও।

বিশ্ব শক্তির ভরকেন্দ্র পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ গণতন্ত্রের রুগ্ণ দশা। এই ব্যবস্থা যেসব উন্নত জনবান্ধব নীতির কথা বলে এর পৃষ্ঠপোষকরা সেগুলো বিশ্বকে সমানভাবে দিতে পারেননি। এই জোট অনেক দেশের উন্নয়নেও কোনো ভূমিকা রাখেনি। কিন্তু তারা গণতন্ত্র মানবাধিকারের নামে অনেক কিছু চাপিয়ে দিতে চান। একজন বঞ্চিত সচেতন মানুষ আর কতদিন এসব সহ্য করবে? চীন তার উদ্বৃত্ত অর্থ নিয়ে যাচ্ছে গরিব দেশগুলোতে। তারা নির্মাণ করে দিচ্ছে অবকাঠামো। এতে অন্তত উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ বাড়ছে। চীনা নীতিতে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নেই। চীনারা এটা জাহির করে না যে, আমরা ভালো। তবে ভালো নামধারীদের ভণ্ডামির অত্যাচার থেকে বাঁচতে মানুষ চীনাদের আমন্ত্রণ জানাবে অদূর ভবিষ্যতে। কারণ এ বিকল্পটি সহজ।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement