মুসলিম বিশ্বে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিকাশ
- প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান
- ৩০ মে ২০২১, ২১:২৫, আপডেট: ৩০ মে ২০২১, ২১:২৮
বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তি হচ্ছে, পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ (experimentation and observation)। সেখান থেকে আসে প্রযুক্তি। ইতঃপূর্বে এই কলামেই বলেছি যে, বিজ্ঞান হলো তাত্তি¡ক বিষয়। প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞানের প্রায়োগিক রূপ। বিজ্ঞান ও গবেষণার মূল টার্গেট হলো প্রযুক্তি উদ্ভাবন। বিজ্ঞানকে প্রযুক্তিতে রূপান্তরের জন্য বিজ্ঞানীকে দীর্ঘ দিন গবেষণা করতে হয়, ধৈর্যসহকারে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। বিজ্ঞানের সুফল মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন দেশে আরঅ্যান্ডডি (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আরঅ্যান্ডডি ও ইনোভেশন- দু’টি ভিন্ন জিনিস। প্রথমটি হলো- কোনো প্রযুক্তি নিয়ে এসে সেটি আমার প্রয়োজনের উপযুক্ত করে উন্নত করা। আর ইনোভেশন হলো একেবারে নতুনভাবে জিনিস হাজির করা। আমাদের জানা মতে, বাংলাদেশে ‘সায়েন্স ল্যাবরেটরি’ হচ্ছে একমাত্র আরঅ্যান্ডডি প্রতিষ্ঠান। এখানে গবেষণার উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিজ্ঞানকে প্রযুক্তিতে রূপান্তর করে মানুষের হাতে পৌঁছে দেয়া। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সীমিত আকারে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রযুক্তিতে রূপান্তরের পর সেটির প্যাটেন্ট করে ওই প্রযুক্তি যে আমাদের, সেটি নিশ্চিত করা হয়।
আসলে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি একটি প্রক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে বেশি মৌলিক গবেষণা, পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের কাজ হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের দেশে সেই সুযোগ সীমিত- এ কথা আমি আগের লেখায় বলেছি। এর প্রধান কারণ, পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব। সরকারের একার পক্ষে এই তহবিলের ব্যবস্থা করা প্রায়ই সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ধারণাটি কাজে লাগানো যেতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে এটি খুবই সাধারণ একটি অনুশীলন। আমাদের দেশে সেটি নেই। আমি মনে করি, বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে এই তহবিল ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে। উন্নত দেশগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণাগারে গবেষণা করার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা তহবিল জোগান দেয়। তারাই ওই গবেষণা থেকে পাওয়া প্রযুক্তিকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগায়। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে ওষুধ শিল্পের কথা বলতে পারি। কোনো জিনিস উদ্ভাবনের জন্য টার্গেট করেও বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে কোভিড-১৯ ভাইরাসের টিকা উদ্ভাবনের জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং ওষুধ কোম্পানির বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা আমরা জানি। তারা এমআইটি, হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড প্রভৃতি বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিপুল অঙ্কের টাকা দেন। অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত টিকা তৈরি করার লাইসেন্স পেয়েছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। আমেরিকার মডার্না, ফাইজার, জার্মানির বায়োএনটেক এই টিকা তৈরির পেছনে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। টিকা উদ্ভাবনে মডার্নাকে সহায়তা করে এমআইটি। প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পর যখন প্যাটেন্ট হয়ে যায়, তখন এর রয়্যালটি থেকে বিনিয়োগকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল অঙ্কের মুনাফা করতে পারে। এভাবে তারা সম্মিলিতভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিচ্ছেন। দেশকে উন্নত করার পাশাপাশি নিজেরাও লাভবান হচ্ছেন। আমাদের দেশে এ ধরনের ফান্ডিং তেমন নেই বললেই চলে।
সুইস নোবেল বিজয়ী ভৌত রসায়নবিদ রিচার্ড রবার্ট আর্নস্ট ২০০৮ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তখন এক সেমিনারে তিনি বলেছিলেন, ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আবিষ্কারের মাধ্যমে অর্জিত শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি’। কিন্তু আমরা মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে চললেও এই গবেষণা ও আবিষ্কারের মাধ্যমে শক্তি অর্জনের প্রচেষ্টা খুবই দুর্বল। এ খাতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা উচিত, সেটি হচ্ছে না। সরকার সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা উদ্যোগ নিলেও এতে বেসরকারি অংশগ্রহণ তেমন নেই। যারা ভালো গবেষণা করেন, যারা ভালো পাবলিকেশন করেন, তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে, প্রণোদনা দিতে হবে। তাদের ক্যাপাসিটি বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের পিএইচডি শিক্ষার্থীরা যেন এখানে গবেষণা করতে পারেন সে জন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের স্কলারশিপের মান বাড়াতে হবে। এই পর্যায়ের একজন শিক্ষার্থীর মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা স্কলারশিপ পাওয়া উচিত। এখানে মেধাবী শিক্ষার্থীর অভাব নেই কিন্তু আমরা তাদেরকে ধরে রাখতে পারি না। তারা পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলে যাচ্ছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে যখন কথা বলি, তখন প্রায়ই একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সেটি হলো- মুসলমানরা কেন গবেষণা ও উদ্ভাবনে পিছিয়ে আছে?
অনেক মুসলিম দেশ আছে যাদের পয়সার অভাব নেই। তার পরও মুসলিম বিশ্ব কেন এগোতে পারছে না? ধনী মুসলিম দেশগুলো কোনো পণ্য তৈরি করে না, তারা মূলত ভোক্তা ও আমদানিনির্ভর। সৌদি আরবসহ ধনী মুসলিম রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন খাতে প্রচুর পয়সা খরচ করছে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সবচেয়ে বেশি পয়সা খরচ করে সৌদি আরব। সেখানকার ‘কিং সউদ ইউনিভার্সিটি’তে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। দেশটির আরেকটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় হলো ‘কিং আবদুল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’। সাধারণত পাশ্চাত্যের নামকরা বিশ্ববিদ্যালগুলোর কর্মরত মুসলিম শিক্ষকদের এখানে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলে। আমি দেখেছি, বেলা আড়াইটার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কেউ আর থাকে না। সেখানে ভালো গবেষণাগার আছে কিন্তু গবেষণা করার মতো শিক্ষার্থীর খুব অভাব। তারা একটি সমস্যার কথা বললেন। তা হলো কোনো ডিপার্টমেন্ট একজন সৌদি শিক্ষার্থীকে পিএইচডি কোর্সের জন্য এনরোল করতে না পারলে কোনো শিক্ষার্থীকে সেখানে পিএইচডি করার জন্য অনুমতি দেয়া যাবে না। সাধারণত সৌদি শিক্ষার্থীরা গবেষণায় কম আগ্রহী। গবেষণা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ ভালো স্কলারশিপ দেয়া হলেও সৌদি নাগরিকরা তার চেয়েও বেশি টাকা রোজগার করতে পারেন অন্য জায়গায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ অবস্থা।
এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা এখনো সৌদি আরবে আছে কি না, জানি না। অন্যান্য ধনী মুসলিম দেশেও একই পরিস্থিতি। সেখানে ভালো শিক্ষক আছেন, সুযোগ-সুবিধা আছে, ভালো মানের গবেষণাগার আছে কিন্তু গবেষক নেই। হয়তো বিরল কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেটি উল্লেখযোগ্য নয়। আগেই বলেছি, পিএইচডি পর্যায়ে ডেডিকেটেড স্টুডেন্ট ছাড়া ভালো মানের গবেষণা করা সম্ভব নয়। ভালো কোনো প্রযুক্তি হাসিল করাও সম্ভব নয়। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে মিসর। আমেরিকার বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক মিসরীয় শিক্ষককে পেয়েছি, পিএইচডি গবেষক শিক্ষার্থী পেয়েছি। মিসরীয় শিক্ষার্থীরা বেশ পরিশ্রমী ও নিবেদিত প্রাণ। গবেষণা হলে আবিষ্কার-উদ্ভাবনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গবেষণার জন্য সবচেয়ে বেশি যে দু’টি বিষয়ের দরকার- ধৈর্য (patience) ও গভীর ভালোবাসা বা ভালোলাগা (passion). গবেষণার আউটপুট পেতে অনেক সময় লাগে, অন্তত পাঁচ বছর। তাই গবেষকদের জন্য প্রণোদনা জরুরি। ভারতে সিএসআইআরের (Council of Scientific and Industrial Research) মতো প্রতিষ্ঠান আছে, যা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে। ফলে সেখানে গবেষণার জন্য প্রচুর তহবিল দেয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বহু ধরনের উদ্ভাবন হচ্ছে, বহু প্যাটেন্ট তারা করছেন। তারা গবেষকদের প্রচুর সুবিধা দিচ্ছেন, সেই সুফলও তারা পাচ্ছেন। মেধা থাকলেও ধৈর্য ও ভালোবাসা ছাড়া গবেষণা করা যায় না।
বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাহী দায়িত্বে শিক্ষকদের কমই দেখা যায়। শিক্ষক মানেই গবেষণা। তারা গবেষণা কাজে বেশি সময় ব্যয় করেন। আমেরিকাতে দেখেছি হাই প্রোফাইল প্রফেসররা প্রচুর অর্থ আয় করছেন মূলত গবেষণা প্রকল্পগুলো থেকে। তারা কোনো কোম্পানির কাছে কোনো প্রকল্প নিয়ে বললেন যে, তিনি অমুক জিনিস তৈরি করে দেবেন। তখন ওই কোম্পানি প্রকল্পটিতে বহু মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও টাকা আয় করে থাকে। সেই টাকা আবার গবেষক-শিক্ষার্থীদের পেছনে খরচ করে। আমেরিকার প্রায় ৮০ ভাগ গবেষক-শিক্ষার্থী বিদেশী। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয় সেখানে। এরপর আছে জাপান এবং তৃতীয় স্থানে জার্মানি। চীনও গবেষণার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আরঅ্যান্ডডি ফান্ডিং করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই আছে পর্যায়ক্রমে চীন, জাপান, জার্মানি, কোরিয়া ও ভারত।
আরঅ্যান্ডডি ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলো অনেক পেছনে। আরব বিশ্ব তাদের জিডিপির মাত্র ০.৬ শতাংশ গবেষণার পেছনে খরচ করে। অন্য দিকে আমেরিকা বা ইউরোপ খরচ করে জিডিপির ৩.৫ শতাংশ। গবেষণার পেছনে জাপান উদার হস্তে খরচ করে। তাই সেখানে উদ্ভাবন হচ্ছে, তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। জাপানে পিএইচডি গবেষকদের বেশির ভাগ নিজ দেশের। যুক্তরাষ্ট্রে তেমনটি নয়। শ্বেতাঙ্গরা তুলনামূলক কম গবেষণা করেন। তবে যারা করেন তারা সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত উঁচু দরের গবেষক ও শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কাজের তত্ত্বাবধান সাধারণত তারাই করেন। ইংল্যান্ডে পিএইচডি করতে গিয়ে (১৯৭৮-৮১) দেখি আমাদের ডিপার্টমেন্টে সাতজন পিএইচডি শিক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জনই বিদেশী। এভাবে তারা আমাদের মেধাগুলো নিয়ে নিচ্ছে। যেহেতু ‘কস্ট অব প্রডাক্ট’ তারা দিচ্ছেন, তাই গবেষণার ফল তারাই ভোগ করছেন। বিদেশী ছাত্ররা গবেষণা করে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছেন। সেগুলো হোস্ট কান্ট্রি পেয়ে যাচ্ছে। তারা সেগুলো কাজে লাগিয়ে উন্নত হচ্ছেন। সেই প্রযুক্তি তাদের কাছ থেকে আমাদেরকেই আবার পয়সা দিয়ে কিনে আনতে হচ্ছে।
বিদেশনির্ভরতা কমাতে হলে মুসলিম দেশগুলোতে গবেষক সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া কিছুটা এগিয়ে গেছে। সেখানেও আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। মালয়েশিয়ায় স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনেক বিদেশী শিক্ষার্থী গবেষণা করছেন। অনেক বাংলাদেশীও আছেন। বিশেষ করে চায়নিজ শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতা ও একাগ্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হয়েছে। গবেষণা করতে গেলে যে প্রচুর ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রমী হতে হয় সেই গুণ তাদের আছে। এ ক্ষেত্রে মুসলিম দেশগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ঘাটতি আছে বলে মনে হয়েছে। গবেষণার প্রতি আকর্ষণ না থাকলে ভালো গবেষক হওয়া যায় না।
আসলে গবেষক তৈরি করতে হয়। শুধু টাকা থাকলেও ভালো গবেষক হয় না। মেধার পাশাপাশি সময় ও কাজে উৎসাহের প্রয়োজন। সবগুলো মিলেই একজন ভালো গবেষক হতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ভালো গবেষকের অভাব নেই। কিন্তু সেখানে পয়সা আয় করা সহজ। ফলে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা গবেষণায় আগ্রহী হন না। আমাদের দেশেও ভালো ভালো গবেষক আছেন। কিন্তু আমরা তাদেরকে যথেষ্ট প্রণোদনা ও উৎসাহ দিতে পারি না। ফলে তারা বিদেশে চলে যান। আমেরিকা বা জাপানে পিএইচডি গবেষণা করতে গেলে যেখানে ৮০ হাজার বা এক লাখ টাকার স্কলারশিপ পাওয়া যায়, সেখানে আমরা দিই মাত্র ২০ হাজার টাকা। তা হলে এখানে কিভাবে গবেষণা হবে? এরপর পিএইচডি শেষ করে অনেকেই আর দেশে ফিরতে উৎসাহী হন না। তাদেরকে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। অন্য দিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো টাকা থাকার পরও নানা বিধিনিষেধের কারণে বাইরে থেকে গবেষক এনে গবেষণা করাতে পারছে না। সৌদি আরবের পক্ষে তো ইউরোপ, আমেরিকার পর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব। তা হলে কেন বিদেশী শিক্ষার্থীরা সেখানে গবেষণা করতে যাবেন না?
মুসলিম বিশ্বে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে তুরস্ক। দেশটির মাথাপিছু জাতীয় আয় ৮ হাজার ডলারের কাছাকাছি হলেও আরঅ্যান্ডডিতে তাদের ক্রম ১৪ এবং দেশটি ২০১৯ সালে এ খাতে ২৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। সৌদি আরবের মাথাপিছু জাতীয় আয় ২২ হাজার ৭০০ ডলার কিন্তু ২০১২ সালে তাদের আরঅ্যান্ডডিতে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। যদিও মালয়েশিয়ার মতো দেশও ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে আরঅ্যান্ডডিতে। চীনের ৫১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের তুলনায় কম হলেও ভারত ২১০ বিলিয়ন ডলার আরঅ্যান্ডডিতে ব্যয় করে অথচ দেশটির মাথাপিছু আয় মাত্র ১৯৪৭ ডলার । অন্য দিকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ২২৭ ডলার হলেও আরঅ্যান্ডডিতে ব্যয় করে বাজেটের মাত্র ০.৩ শতাংশ।
আমি মনে করি, সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত, কাতার, মালয়েশিয়া, ব্রæনাইসহ মুসলিম বিশ্বের ধনী দেশগুলো মিলে উচ্চমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সেখানে যদি গবেষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়, আকর্ষণীয় স্কলারশিপ দেয়া হয় তা হলে সারা বিশ্ব থেকে গবেষকরা সেখানে গিয়ে ভিড় করবেন। তাদের গবেষণার সাফল্য থেকে তখন মুসলিম বিশ্ব উপকৃত হবে। মুসলিম বিশ্ব একসময় গবেষণা-উদ্ভাবনে শীর্ষ স্থানে ছিল। তখন পৃথিবীর সব দেশ, ত্রয়োদশ শতকে ইউরোপ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীরা মুসলিম দুনিয়ায় বিশেষ করে কর্ডোভা ও বাগদাদে ভিড় জমাতেন জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করতে। তারা সে রকম সুযোগ-সুবিধাও পেতেন। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। এটি উল্টোমুখী করতে পারলেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের চেহারা বদলে যাবে।
লেখক : ফেলো, বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স এবং সাবেক ডিন ও অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল : cmhasan@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা