নববর্ষ ঐতিহাসিক পর্যালোচনা
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ১৫ এপ্রিল ২০২১, ২০:৫৯
আমাদের নববর্ষ কি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে পালিত হচ্ছে? নাকি এটা আমাদের সংস্কৃতিকে পাশ্চাত্য এবং বিজাতীয়করণের একটি মাধ্যমে পরিণত হচ্ছে? এটাকে কি সাংস্কৃতিক দূষণ ছড়াবার একটি নতুন পন্থা বানানো হচ্ছে? ঐতিহাসিকভাবে এটা কিভাবে পালিত হতো?
আমার নিজের বাল্যকালের কথা মনে পড়ে। আমাদের এলাকায় ব্যবসায়ীরা সাদামাঠাভাবে হালখাতা করতেন। আমাদের এলাকার কাছেই একটি মেলা হতো। এ ছাড়া আর কিছু হতো না। কিছু লোক আমাকে বলেছেন যে, মোমেনশাহী শহরে একটি মেলা হতো এবং সেখানে হিন্দু জনগণ চড়ক পূজা করত। বেশির ভাগ ব্যক্তি যাদের আমি জিজ্ঞাসা করেছি, তারা শুধু এতটুকু বলেছেন যে, নববর্ষ উপলক্ষে হালখাতা হতো, মেলা হতো এবং হিন্দু জনগণের একটি অংশ চড়ক পূজা করত। আমি আমার জীবনেও ঢাকা শহরে পয়লা বৈশাখে মেলা ছাড়া অন্য বিশেষ কিছু দেখিনি। অবশ্য ব্যবসায়ীরা নতুন বছরের জন্য নতুন হালখাতা করতেন এবং অনেক ব্যবসায়ী দোকানে মিষ্টিমুখ করাতেন।
এখন যা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। তাতে রয়েছে পাশ্চাত্য ধরনের কনসার্ট ও ভারতীয় কালচারের মুখোশ, উল্কি আঁকা। আরো রয়েছে বয়স্ক মেয়েদের সারা দিন ধরে নাচ-গান। এ সম্পর্কে আরো আলোচনার আগে একজন অত্যন্ত জ্ঞানী শিক্ষকের বক্তব্য থেকে কিছু উল্লেখ করছি। তিনি বলেছিলেন যে, আমাদের সাংস্কৃতিক কোনো সীমানা আছে কি-না এবং তা রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না? তিনি বলেন, বাংলাদেশের ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি এক নয়। বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রধানত ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত। অন্য দিকে ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি হিন্দু ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত। এ দু’টি কখনো এক নয়। যারা এটিকে মুছে দিতে চাচ্ছে তারা তা করছে অসৎ উদ্দেশ্যে। আমাদের স্বকীয়তা আমরা কেন হারাব? এ বিষয়টি আবুল মনসুর আহমদ তার পাক-বাংলার কালচার বইতে ব্যাখ্যা করেছেন।
বাংলাদেশে পয়লা বৈশাখে যা হচ্ছে তাতে সংস্কৃতি খুব বেশি নেই, আছে বাণিজ্য ও অশ্লীলতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পয়লা বৈশাখে কনসার্ট হয়। এটাকে পয়লা বৈশাখের পাশ্চাত্যকরণ ছাড়া কী বলব? এতে থাকে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও পোশাক-আশাকের ছড়াছড়ি।
চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয় তাতে প্রধানত মুখোশের ছড়াছড়ি দেখা যায়। আর গালে উল্কি তো রয়েছেই। ছেলেদের গালে মেয়েরা উল্কি এঁকে দেয় আর মেয়েদের গালে ছেলেরা উল্কি এঁকে দেয়। এটা নাকি আধুনিক কালচার।
রমনা পার্কের মঞ্চে ভোর থেকে ছেলেমেয়েদের গানবাজনা হয়। এদের বেশির ভাগ আবার যুবতী, আকর্ষণীয় পোশাকে সজ্জিত। আর রয়েছে চার দিকে দোকানপাট ও ব্যবসা। মানুষকে সুস্থ করে, নৈতিক মান বৃদ্ধি করে এমন কিছু দেখা যায়নি। সাজসজ্জার প্রদর্শনী, বখাটে ছেলেদের উৎপাত, নারীদের বিরক্ত করা- এসবই বেশি দেখা যায়।
এসব আগে ছিল না। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, পয়লা বৈশাখকে পরিকল্পিতভাবে পাশ্চাত্যকরণ ও ভারতীয়করণ করা হয়েছে। তাও আবার সুস্থ কিছু নয়। সংস্কৃতি সামান্য, ব্যবসা ও কদর্যতাই প্রধান। এ ক্ষেত্রে আমরা পাশ্চাত্য নববর্ষ উদযাপনের ধারার দিকেই ঝুঁকে পড়েছি।
পাশ্চাত্যে ৩১ ডিসেম্বর রাত থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ আনন্দের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা, মাতলামি, অবৈধ যৌনাচার চলে। আমরা কি সেটিই নেব? অন্য দিকে মুসলিম ঐতিহ্যে দেখতে পাই হিজরি সনের আগমনে কোনো অনুষ্ঠান করা হতো না।
মুসলিম ঐতিহ্যে বর্ষের আগমন, মৃত্যু দিবস ও জন্ম দিবস হচ্ছে সাধারণ বিষয়। এগুলোর কোনো বিশেষ গুরুত্ব নেই। এ জন্য বেশির ভাগ মুসলিম জনপদের বর্ষবরণে খুব বেশি হলে মেলা ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।
আমাদের সরকার, জাতীয় নেতৃবৃন্দ, সুশীলসমাজকে ভাবতে অনুরোধ করি কিভাবে আমাদের অনুষ্ঠানগুলোকে অশ্লীলতা থেকে, পাশ্চাত্যকরণ ও ভারতীয়করণ থেকে উদ্ধার করা যায়। বিশেষ করে বাইরের কদর্যতা, যৌন এবং সাংস্কৃতিক বিকৃতি আমরা গ্রহণ করতে পারি না। আশা করি সবাই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন। আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী বৈশাখের অনুষ্ঠান কেবল মেলা, খেলাধুলা, হালখাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা