স্বপ্নের স্বাধীনতা
- সৈয়দ আবদাল আহমদ
- ২২ মার্চ ২০২১, ২০:১০, আপডেট: ২২ মার্চ ২০২১, ২০:১১
মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছে। ২৬ মার্চ আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস। আগামী শুক্রবার আমরা পালন করব অনন্য এক স্বাধীনতা দিবস। কারণ আমাদের স্বাধীনতার এবার সুবর্ণজয়ন্তী, ৫০ বছর পূর্তি।
মার্চ আমাদের দিয়েছে জাতীয় পতাকা। সেই পতাকা লাল-সবুজে আঁকা। মার্চ আমাদের দিয়েছে জাতীয় সঙ্গীত। আমরা এই মহান দিনে তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সঙ্গীতটি গেয়ে জাতীয় পতাকাকে সম্মান জানাব।
আমরা সম্মান জানাব অজস্র মুক্তিযোদ্ধাকে, যারা একাত্তরের রণাঙ্গনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। আমরা শ্রদ্ধা জানাব তাদের স্মৃতির প্রতি, যারা মুক্তিযুদ্ধে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তাদের গৌরবদীপ্ত আত্মত্যাগেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার কথা আমরা ভুলব না, তাদের কথা শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করব স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই আনন্দঘন দিনটিতে। স্বাধীনতাযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর প্রতীক ও বীর বিক্রমদের প্রতি মহান এই দিনে আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম।
মার্চ আমাদের দিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন নির্ভয়চিত্তের তেজোদীপ্ত নেতাকে, যিনি আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক। মার্চ আমাদের দিয়েছে বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীকে, যিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধান সেনাপতি হিসেবে। মার্চ আমাদের দিয়েছে মেজর জিয়াউর রহমানের মতো একজন অকৃত্রিম দেশপ্রেমিককে, যিনি একাত্তরের ২৬ মার্চ জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আমাদের কাছে তাদের স্মৃতি অমলিন। তাদের জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের অনন্য ভাষণের কথা আমরা স্মরণ করব। সে দিন এই ভাষণ গোটা জাতিকে মুক্তির মন্ত্রে ও স্বাধীনতার স্পৃহায় উদ্দীপ্ত করেছিল। সে দিন বঙ্গবন্ধু বাংলার জনগণকে যে বার্তা দেন তা হলো- ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
অনন্য সাধারণ এই ভাষণ সম্পর্কে কেউ বলেছেন, ৭ মার্চ এক বাঁশিওয়ালা অনুপম মধুর সুরে শুনিয়েছিলেন তার বাঁশি। কেউ বলেছেন, এক কবি সারা জাতিকে শুনিয়েছিলেন মহাকাব্যের মতো এক কবিতা। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু চমৎকারভাবে কবিতার মতো করে বলেছেন। এ সম্পর্কে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, তখনই মনে হলো পৃথিবীর বুকে একটি নতুন জাতির জন্ম হয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে বলেছিলেন, ‘আমার বাংলাদেশ আজ স্বাধীন হয়েছে, আমার জীবনের সাধ পূর্ণ হয়েছে, বাংলার মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে। আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’
মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সে দিন বলেছিলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব কেউ মুছে ফেলতে পারবে না’। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর স্মৃতি চির অম্লান থাকবে’।
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী বলেছিলেন, ‘১৯৫৪ সালেই আমার এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল যে, পাকিস্তানের কবল থেকে আমাদের পুরোপুরি মুক্ত হতে হবে। সে সময় থেকেই আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের কথা চিন্তা করি। মুক্তিযুদ্ধকালে আমার, আমার অধিনায়ক ও মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধাদের সবসময় এমন মনে হতো যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষই যেন আমাদের সাথে শ্বাস নিচ্ছে।’ বীর উত্তম জিয়াউর রহমান তার ডায়েরিতে লিখেছেন, ‘২৬ মার্চ স্বাধীনতার জন্যই আমরা বিদ্রোহ করলাম।’
মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান এ কে খোন্দকার লিখেছেন, ‘একাত্তরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া স্বাধীনতা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা’। মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম লিখেছেন, ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা’। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম লিখেছেন, ‘স্বাধীনতার জন্যই একাত্তরে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম’।
স্বাধীনতার ৫০ বছরের পূর্তির দিনে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কথাও স্মরণীয়। একাত্তরের ৯ মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভায় তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, “আলোচনায় কিচ্ছু হবে না, ওদের ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানিয়ে দাও।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একাত্তরের ২৫ মার্চের কথাও কেউ ভুলতে পারবে না। বাঙালি জাতির জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকাময় রাত ছিল সেটি। দানবীয় নৃশংসতায় এই রাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালিদের ওপর। ২৫ মার্চের রাতটি ইতিহাসে এক বর্বর গণহত্যার সাক্ষী হয়ে আছে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের এই অভিযানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালির ওপর। বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, এই অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকাসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শহরগুলোতে এই অপারেশন চালানো হয়। সেই রাতেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।
স্বাধীনতা এক গোলাপ ফোটানো দিন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে অনন্য সাধারণ কিছু গান রচিত হয়েছে। গীতিকার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান তার গানে বলেছেন, ‘স্বাধীনতা এক গোলাপ ফোটানো দিন।’ গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান তার গানে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা, লক্ষ প্রাণের দান।’ হেলাল উদ্দিন খোকা লিখেছেন, ‘স্বাধীনতা তুমি এসেছো বলেই বেতস বনের পাতায় পাতায় সূর্যটা খেলা করে।’ আর নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা গানে বলা হয়েছে, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার। তোমার স্বাধীনতা গৌরব সৌরভে।’
বিবিসি বাংলার শ্রোতারা সর্বকালের সেরা ২০টি গান মনোনীত করেছিলেন। এর মধ্যে ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’, ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানগুলো উল্লেখযোগ্য। রমানাথ সেনের গাওয়া ‘একটি মুক্ত পাখি, একটি সুনীল আকাশ, একটি স্বাধীন স্বদেশ আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ’- আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে অনুপম একটি গান।
তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা
বাংলাদেশের অজস্র কবিতায় স্বাধীনতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ছয়টি কবিতা স্বাধীনতা নিয়ে মানুষের মনে অনুরণন সৃষ্টি করেছে। দেশবরেণ্য কবি শামসুর রাহমান স্বাধীনতা, বিজয় ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকগুলো কবিতা লিখেছেন। তার ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ এবং ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতা দুটো অসাধারণ, কালজয়ী। নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’, আসাদ চৌধুরীর ‘রিপোর্ট ১৯৭১’, আবুল হাসানের ‘উচ্চারণগুলো শোকের’ ‘রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ এবং হেলাল হাফিজের ‘একটি পতাকা পেলে’ মানুষের মনকে আলোড়িত করেছে।
কবি শামসুর রাহমান আজ আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু তার কালজয়ী কবিতায় তিনি সজীব আমাদের মাঝে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে শামসুর রাহমান ও তার কবিতার কথা বলতেই হয়। এ দু’টি কবিতারও ‘বয়স’ ৫০ বছর হয়ে গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও চারুশিল্পী শাহাদত চৌধুরী (সাপ্তাহিক বিচিত্রা সম্পাদক) এবং হাবীবুল আলম বীর প্রতীক ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা থেকে শামসুর রাহমানের কবিতা সংগ্রহ করে নিয়ে যেতেন। সেগুলো সাইক্লোস্টাইল করে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে ছড়িয়ে দেয়া হতো। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আবৃত্তি করা হতো। কলকাতার ‘দেশ’ পত্রিকাতেও ছাপানো হতো।
‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’ শামসুর রাহমানের দু’টি বিখ্যাত কবিতা। এ কবিতা দু’টি তিনি তার গ্রামের পুকুরপাড়ে বসে মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে লিখেছিলেন। কী করে লিখেছিলেন, সে কথাও তিনি বলে গেছেন।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার পর ঢাকার এবাড়ি-ওবাড়িতে পালিয়ে বেড়ানোর পর অন্য অনেকের মতো কবি শামসুর রাহমানও চলে গিয়েছিলেন তার দেশের বাড়ি, নরসিংদীর রায়পুরা থানার পাড়াতলী গ্রামের মুন্সিবাড়ীতে। ‘কালের ধুলোয় লেখা’ আত্মজীবনীতে তিনি সেখানে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। সুনির্দিষ্ট তারিখের কথা সেখানে লিখেননি। তবে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের কোনো এক দিন বলে উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন-
‘সকাল ১০টা সাড়ে ১০টার সময় ঢাকা থেকে চেপে রওনা হলাম নরসিংদীর উদ্দেশে। সেখান থেকে নৌকায় মেঘনা নদী পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় আমাদের পাড়াতলীর আলুঘাটায়। সেখানে কিছু পথ পেরোলেই আমাদের মুন্সিবাড়ী। এটি বলা তো খুবই সহজ মনে হচ্ছে, কিন্তু সে দিন পাড়াতলী পৌঁছাতে পারাটা তেমন অনায়াস ছিল না। শুরু হলো আমাদের যাত্রা বাসের দুলুনি খেতে খেতে। মনে সংশয়, বিপদের আশঙ্কা পদে পদে। ডেমরার কাছে এক জলাশয়ে দেখতে পেলাম ভাসমান চার-পাঁচটি মৃতদেহ। পাক হানাদারদের করুণ শিকার। চোখ ফিরিয়ে নিলাম সেই দৃশ্য থেকে পলায়নপর আমি।’
কিভাবে লিখলেন বিখ্যাত দু’টি কবিতা, সেই বর্ণনা আত্মজীবনীতে লিখলেন এভাবে, ‘৭ অথবা ৮ এপ্রিল দুপুরের কিছুক্ষণ আগে বসেছিলাম আমাদের পুকুরের কিনারে গাছতলায়। বাতাস আদর বুলিয়ে দিচ্ছিল আমার শরীরে। পুকুরে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে, কিশোর-কিশোরীও ছিল ক’জন; সাঁতার কাটছিল মহানন্দে। হঠাৎ আমার মনে কী যেন বিদ্যুতের ঝিলিকের মতো খেলে গেল। সম্ভবত একেই বলে প্রেরণা। কবিতা আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি চটজলদি আমার মেজ চাচার ঘরে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে একটা কাঠপেন্সিল ও কিছু কাগজ চাইলাম। সে কাঠপেন্সিল ও রুলটানা খাতা দিলো। এই কাঠপেন্সিল ও খাতা দিয়ে সে যেন নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করল। আমি সেই কাঠপেন্সিল ও খাতাটি নিয়ে তাড়াতাড়ি পুকুরের দিকে ছুটলাম। পুকুর মুন্সিবাড়ীর একেবারে গা ঘেঁষে তার অবস্থান ঘোষণা করছে যেন সগর্বে। পুকুরের প্রতিবেশী সেই গাছতলায় আবার বসে পড়ে খাতায় কাঠপেন্সিল দিয়ে শব্দের চাষ শুরু করলাম। প্রায় আধঘণ্টা কিংবা কিছু বেশি সময়ে পর পর লিখে ফেললাম দু’টি কবিতা- ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা।’
তার কবিতা কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে, কলকাতার ‘দেশ’ পত্রিকায় এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পৌঁছে যায়, সে প্রসঙ্গে তিনি ‘কালের ধূলোয় লেখা’ আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে একদিন বিকেলে আমাদের বাসায় এসে হাজির হলেন তেজী মুক্তিযোদ্ধা আলম (হাবীবুল আলম বীর প্রতীক) এবং তার সহযোগী শাহাদত চৌধুরী। কিছুক্ষণ ওঁরা আমার সাথে কথাবার্তা বললেন। আমি তাঁদের কয়েকটি কবিতা পড়ে শোনালাম। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রচিত কবিতাগুলো শুনে ওঁরা কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন বলে স্থির করলেন। কয়েকটি কবিতা শেষ পর্যন্ত শিল্পী আলভীর মাধ্যমে শাহাদত চৌধুরী কলকাতায় শ্রদ্ধেয় আবু সয়ীদ আইয়ুবের কাছে পাঠাতে পেরেছিলেন। আবু সয়ীদ ও তার সহধর্মিণী গৌরী আইয়ুবের উদ্যোগ ও উৎসাহে আমার ‘বন্দিশিবির থেকে’ কাব্যগ্রন্থটি কলকাতায় প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের দু-চারটি কবিতা কলকাতার সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ‘মজলুম আদিব’ ছদ্মনামে তখন বেরিয়েছিল। এ ছদ্মনামটি রেখেছিলেন খোদ আবু সয়ীদ আইয়ুব। মজলুম আদিবের অর্থ হচ্ছে, নির্যাতিত লেখক।... আমার কয়েকটি কবিতা শার্ট ও প্যান্টের কোথাও কোথাও অংশে লুকিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ পর ওরা আমার এখান থেকে বেরিয়ে গেলেন।’
কবি শামসুর রাহমান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পারিবারিক কারণে ঢাকা ছেড়ে ভারতে যেতে পারেননি। কিন্তু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার ভাষায় ‘বন্দিশিবিরে’ দুঃসহ দিন কাটিয়েছেন এবং লুকিয়ে লুকিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা লিখেছেন। সেই কবিতা রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিপাগল বীর বাঙালি জনতাকে উদ্বেলিত করেছে, সাহস জুগিয়েছে। ফলে তার কবিতা মুক্তিযুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে ‘স্বাধীনতা তুমি’ ও ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা’। কবিতা দু’টিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সজীব প্রতিচ্ছবি হিসেবে বলা যায়। এ কবিতা পড়ে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা