২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

মঙ্গলে মানুষের উপস্থিতি দেখতে তাকিয়ে আছে পৃথিবী!

আবদাল আহমদ - ছবি : সংগৃহীত

মঙ্গলগ্রহ জয়ের বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টার আরো এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। এ সাফল্যে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা উৎফুল্ল। বিবিসি ও সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, নাসার মহাকাশযান পারসিভিয়ারেন্স রোভার বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় মঙ্গলগ্রহপৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করেছে। শুধু তা-ই নয়, মহাকাশযানটি মঙ্গলগ্রহ থেকে ছবি তুলেও পাঠিয়েছে। নাসা মঙ্গলের প্রথম ছবিটি টুইট করে লিখেছে, ‘Hello world, My first look at my forever home.’ যানটি মঙ্গলের সঙ্গে একটি সেলফি তুলেও পাঠিয়েছে।

নাসা ২০২০ সালের ৩০ জুলাই নতুন মঙ্গলযান পারসিভিয়ারেন্স যার বাংলা অর্থ অধ্যবসায়কে উৎক্ষেপণ করেছিল। মঙ্গলে পঞ্চম মহাকাশযান হিসেবে এটি যাত্রা করে। পৃথিবী থেকে লালগ্রহ মঙ্গলে যেতে রোভারটিকে সাত মাসে ৩০ কোটি মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। রোবট যানটি মঙ্গলগ্রহের বিষুব অঞ্চল জেজেরো ক্র্যাটার নামের গভীর এক খাদে অবতরণ করেছে। মঙ্গলের এ জেজেরো এলাকাটি কয়েক শ’ কোটি বছর আগে বিশাল একটি নদী ছিল যা পরে হ্রদ হয়। সেই হ্রদে প্রচুর পানি ছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা সেখানে সম্ভবত প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। একদিন হয়তো এই মঙ্গলগ্রহই হতে পারে পৃথিবীর মানুষের অন্যতম আবাসস্থল। ক্র্যাটার হলো খাদ বা গহ্বর। আর জেজেরো নামটি নেয়া হয়েছে বসনিয়া-হারজেগোভিনা শহরের নাম থেকে। জেজেরো অর্থ হ্রদ।

ছয় চাকার নাসার এই রোবটযান আগামী দুই বছর মঙ্গলগ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ করবে। প্রাচীন হ্রদ এলাকায় মাটি পাথরের মধ্যে খনন চালিয়ে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজবে। এক টন ওজনের এ যানে রয়েছে বিশেষ যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে আছে ১৯টি ক্যামেরা ও দু’টি মাইক্রোফোন। এবারই মঙ্গলের শব্দ ধারণ সম্ভব হবে বলেও নাসার বিজ্ঞানীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। প্রকল্পের বিজ্ঞানী কেন ফারলে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা যা খুঁজছি তা হলো একেবারে প্রাচীন প্রাণ। এ জন্যই যানটি অবতরণের জন্য হ্রদের খাদকে বেছে নেয়া হয়। কারণ ওখানে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। রোবটযানে একটি ছোট আকারের ইনজিনুইটি হেলিকপ্টারও যুক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলে হেলিকপ্টার চালানো যায় কি না সেটিরও পরীক্ষা চালানো হবে এ অভিযানে। হেলিকপ্টার ওড়ানো সম্ভব হলে সেই মুহূর্তটি হবে পৃথিবীর বাইরে ভিন্ন কোনো গ্রহ অর্থাৎ মঙ্গল বা লালগ্রহে প্রথমবারের মতো রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের উড়োজাহাজ ওড়ানো উপভোগ করার মতো ঘটনা’।

হেলিকপ্টারটি এরই মধ্যে নাসায় ফোন করে মঙ্গলে তার অবস্থানের কথা জানিয়েছে।

মঙ্গলে রোভার অবতরণের সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত গভীর উৎকণ্ঠায় কেটেছে নাসার বিজ্ঞানীদের। কারণ সুউচ্চ পাহাড়ে ধাক্কা লেগে কিংবা পাহাড়ের খাঁজে আটকে গিয়ে যানটি বিকল হয়ে যায় কি না, সেই ভয় ছিল প্রতিটি মুহূর্তে। তাই যে মুহূর্তে রেডিও সিগন্যাল ল্যান্ডির সাফল্যের খবর নিশ্চিত করে, তখন উল্লাসে ফেটে পড়েন নাসার বিজ্ঞানীরা। তারা আদর করে রোভারটিকে ‘পারসি’ বলে ডাকেন। করোনা মহামারীর চ্যালেঞ্জ কাটিয়েই পারসি মঙ্গলে যাত্রা করে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন টুইট করে বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আবার প্রমাণিত হলো বিজ্ঞান ও মার্কিন দক্ষতার কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। নাসার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক স্টিভ জুরসিয়েক পারসির সাফল্যে উৎফুল্ল হয়ে বলেন, এ অবতরণ গুরুত্বপূর্ণ এক মুহূর্ত। আমরা যখন জানতে পারি যে, আমরা আবিষ্কারের চূড়ায় রয়েছি, তখন পাঠ্যপুস্তক নতুন করে লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

চন্দ্র জয়ের পর মঙ্গলে অভিযান
মানুষের চন্দ্র জয়ের ৫০ বছর পার হয়েছে দুই বছর আগে। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের মাটিতে পা রাখেন মার্কিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং। তিনি অ্যাপোলো-১১ নভোযানের কমান্ডার ছিলেন। চাঁদে পা রেখেই তিনি সে দিন মন্তব্য করেছিলেন, ‘একজন মানুষের জন্য এটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এটা এক বিশাল অগ্রযাত্রা।’ নীল আর্মস্ট্রং চাঁদে আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করেছিলেন। নীলের পর অবতরণ করেছিলেন এডউইন বাজ অলড্রিন। এরপর ১৯৬৯-১৯৭২ পর্যন্ত সময়ে নাসা চাঁদে অ্যাপোলো-১৭ পর্যন্ত মিশন পরিচালনা করে। এতে ১২ জন নভোচারী চাঁদে নামার দুর্লভ সুযোগ পান।

চাঁদ জয়ের পর বিজ্ঞানীরা মঙ্গলগ্রহে অভিযান শুরু করেন। মঙ্গলে অভিযান চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। এরই মধ্যে নাসা সূর্য জয়ের অভিযানও শুরু করেছে। ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট নাসা মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে মনুষ্যবিহীন নভোযান- ‘পার্কার সোলার প্রোব’। এটা সূর্যের ৬০ লাখ কিলোমিটার মধ্যে গিয়ে পৌঁছাবে। সেখান থেকে সূর্যের নানা তথ্য-উপাত্ত পাঠাবে গবেষণার জন্য।

তবে বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে মঙ্গলগ্রহ নিয়েই বেশি কৌতূহল। এ জন্য মঙ্গলগ্রহে একের পর অভিযান চলছে। এরই মধ্যে আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান ও ইউরোপ এবং সম্প্রতি চীন, ভারত ও কাতারের পক্ষ থেকে ডজনেরও বেশি নভোযান পাঠানো হয়েছে মঙ্গল বা লালগ্রহে। এর মধ্যে রয়েছে অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার। মঙ্গলের মাটি কেমন, ভূত্বক ও জলবায়ু কেমন এবং ভূ-তত্ত্ব নিয়ে গবেষণাই ছিল এসব অভিযানের উদ্দেশ্য। যদিও অভিযানের বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে। মঙ্গলগ্রহের সঙ্গে পৃথিবীর তুলনামূলক মিল থাকায় এতে জীবন খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কারণ। জীবনের অস্তিত্ব প্রমাণিত হলে মঙ্গলে মানব বসতির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। এ জন্য ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব সন্ধান শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। এই গ্রহে জীবনের সম্ভাবনা নিয়ে মানবজাতিও বরাবরই ভেবে আসছে।

মঙ্গলগ্রহে বসতি স্থাপন
সাম্প্রতিককালে মঙ্গলে বসতি স্থাপনের বিষয়টি জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। বিশেষ করে স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী, প্রযুক্তিব্যক্তিত্ব ইলন মাস্কের উদ্যোগে বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। ইলন মাস্ক আগামী বছরেই মঙ্গলগ্রহে রকেট পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। তিনি ২০২৪ সালে আরএ কার্গো ও নভোচারী পাঠাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তার লক্ষ্য ২০৫০ সাল নাগাদ ১০ লাখ মানুষকে তিনি মঙ্গলগ্রহে বসবাসের জন্য পাঠাবেন।

তবে মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসার লক্ষ্য ২০৩৩ সালে মঙ্গলগ্রহে মানুষ পাঠাবে। নাসা ২০২৪ সালে আবার চাঁদে আরেকবার মার্কিন নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। নাসার প্রশাসক জিম ব্রাইডেনস্টাইন ইতোমধ্যে বলেছেন, চাঁদে আরেকবার নভোচারী পাঠানোর মাধ্যমে মঙ্গলে নভোচারী পাঠানোর পথে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। মঙ্গলে একজন নারীকে প্রথম পাঠানো হতে পারে বলে ব্রাইডেনস্টাইন উল্লেখ করেন। এলিজা কারসন নামে নাসার কনিষ্ঠ মার্কিন নারী নভোচারী মঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ লক্ষ্যে চাঁদের ২০২৪ সালে নারী নভোচারী পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলে যেকোনো অভিযান সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। একটি অভিযান শুরু করে শেষ করতে দুই বছর সময় লাগে। দুই গ্রহের বিশাল দূরত্ব। একবার পাড়ি দিতে লাগে ছয় মাস। যেখানে চাঁদে যেতে লাগে মাত্র তিন দিন।

পৃথিবী ও মঙ্গল যখন সূর্যের একপাশে চলে আসে তখন দূরত্ব কমে যায়। ২৬ মাস পর দুই গ্রহ সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে আসে। এ রকম একটি সময় মঙ্গলে অভিযানের জন্য উত্তম। সেটা বিবেচনায় রেখেই নাসা ২০৩৩ সালের কথা ভাবছে, যখন মঙ্গলে মানুষ পাঠানো হবে। এ জন্যই অতীতে মঙ্গলগ্রহ বাসযোগ্য ছিল কি না, বর্তমানে এ গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না তা জানার জন্য অভিযানে অনুসন্ধানগুলো চালানো হচ্ছে।

২০১৮ সালে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার আগ্রহী মানুষের নাম লেখাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। তাতে সাড়া দিয়ে এক লাখ মানুষ মঙ্গলে যাওয়ার আবেদন করে মার্স ওয়ান বরাবর। মঙ্গলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরই শুধু আবেদন করতে বলা হয়। মার্স ওয়ান জানায়, আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে মাত্র চারজনকে বাছাই করে মঙ্গলে পাঠাবে। সেখানে তাদের জীবন ধারণের জন্য উপকরণ সরবরাহ করা হবে। অভিযাত্রীদের নিজেদেরই চেষ্টা করতে হবে মঙ্গলে বেঁচে থাকার জন্য। এ অভিযানের ব্যয় ধরা হয়েছিল ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

নাসার ১৪ অভিযান
মঙ্গলগ্রহে নভোযান অবতরণের ১৪টি প্রচেষ্টা চালায় মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। এর মধ্যে সফল হয়েছে আটটি মিশন। ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর নাসা মঙ্গলগ্রহের প্লানিটিয়া ইউটোপিয়া অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ভূগর্ভের বরফের সন্ধান পায় বলে ঘোষণা দেয়। এতে যে পরিমাণ পানি আছে তা প্রায় সুপরিয়র হৃদের পানির সমান। ২০১৭ সালে নাসার বিজ্ঞানীরা রিপোর্ট করেন যে, কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে বোরনের সন্ধান পেয়েছে। এটি পৃথিবীর জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদানের একটি। এর আগে পাওয়া পানির সন্ধান মঙ্গলে একসময় জীবনের অস্তিত্ব ছিল এটিই সমর্থন করে। ২০১২ সালে নাসার কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে নামে যা ছিল নাসার চতুর্থ রোবটযান। এটিই ছিল বড় সাফল্য। এর ওজন ছিল এক টন। এটি নেমেছিল মঙ্গলের একটি পর্বতের জ্বালামুখে। পরে এটি মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করে। এর মাধ্যমে বিশাল আকৃতির আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ গেইলের ভূতত্ত্ব সম্পর্কে জানা যায়। কিউরিওসিটি যে ছবি পাঠিয়েছিল তাতে ধরা পড়ে, উঁচু-নিচু পাহাড়, মরুভূমির মতো বিস্তৃত রুক্ষ প্রান্তর যা পৃথিবীর মরুভূমির মতোই মঙ্গলের মরুভূমি।

ক্যালিফোর্নিয়ার মোজাভে মরুভূমির সঙ্গে এর মিল খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। অমিল যা ছিল তা হচ্ছে মঙ্গলের মরুভূমিতে তেজস্ক্রিয় বিকিরণও ঘটে। তাতে মঙ্গলে পানির অস্তিত্বও খুঁজে যায় কিউরিওসিটি। মঙ্গলে স্রোত প্রবাহিত নুড়ি পাথরের সন্ধানও পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে নাসা বলেছে, এ এলাকার ওপর দিকে প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া স্রোতের পানিতে এসব নুড়ি পাথর ভেসে এসেছে। ১৯৯৯ সালে একবার নাসার মঙ্গল মিশন ব্যর্থ হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ‘মেরিনার ৪’ নভোযান প্রথমবারের মতো মঙ্গল অভিযানে যায়। এরপর মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করে সোভিয়েত যান ‘মার্স-২’ ও ‘মার্স-৩’। এ দু’টি যান অবতরণের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মিশন কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার পর ১৯৭৬ সালে ‘ভাইকিং ১’ ও ‘ভাইকিং ২’ মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করে। ১৯৭৭ সালে মঙ্গলে নামে পাথ ফাইন্ডার। এগুলো সেখানে কয়েক বছর ছিল। এ সময় মঙ্গলের রঙিন ছবি রিলে করে পৃথিবীতে এসেছিল। ২০০৩ সালে নাসা মঙ্গলে রোভার উৎক্ষেপণ করে। ২০১১ সালে নাসা পাঠায় মার্স-রোভার। এটি ছিল ৯০০ কেজি ওজনের। পরে মঙ্গলে যে কিউরিওসিটি নাসা পাঠায় তাতে এক আলোকরশ্মি ধরা পড়ে। অনেকেই একে এলিয়েনের অস্তিত্ব বলে বর্ণনা করে। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই আলো সূর্য থেকে প্রতিফলিত হয়ে কিউরিওসিটিতে ধরা পড়েছে। কিউরিওসিটি মঙ্গল থেকে নানা উপাত্ত পাঠাচ্ছে।

লালগ্রহই মঙ্গল
মঙ্গল হলো সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী সৌরজগতের চতুর্থতম আর বুধের পরেই সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ। ইংরেজিতে একে বলা হয় মার্স। রোমান পুরাণের যুদ্ধদেবতা মার্সের নামানুসারে এর নাম। এই গ্রহরে পৃষ্ঠতলে আয়রন অক্সাইডের আধিক্যের জন্য গ্রহটিকে লালচে রঙের দেখায়। এ জন্য একে লালগ্রহও বলা হয়। মঙ্গল একটি শিলাময় গ্রহ। মঙ্গল সৌরজগতের শেষ অন্তর্বর্তী গ্রহ। পৃথিবীর পরেই এর অবস্থান। ফলে রাতের আকাশে উজ্জ্বল বস্তু হিসেবে একে দেখা যায় খালি চোখে। মঙ্গলগ্রহে পৃথিবীর মতো ভূতত্ত্ব রয়েছে। ভূতত্ত্বকে চাঁদের মতো অসংখ্য খাদ আর পৃথিবীর মতো আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি, উপত্যকা ও মরুদেশীয় বরফের টুপি রয়েছে। মঙ্গলের মরুভূমিতে শিলা, পাথর ও ধূলিবালু জমে আছে। মঙ্গলগ্রহেরও বায়ুমণ্ডল আছে; তবে পৃথিবীর চেয়ে এ বায়ুমণ্ডল অনেক ভারী। কারণ এ বায়ুমণ্ডলের ৯৭ শতাংশই হলো কার্বন-ডাই অক্সাইড।

মঙ্গলেও ঋতুর পরিবর্তন হয়। এসব তথ্য মঙ্গল অভিযান থেকেই বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। তবে মঙ্গল কেমন করে মানুষের আবাসস্থল হবে সেটাই বড় কৌতূহলের বিষয়। কারণ বর্তমানে মঙ্গলের আবহাওয়া বেঁচে থাকার জন্য অনুকূল নয়। আবহাওয়া এতই ঠাণ্ডা যে পানি সেখানে তরল অবস্থায় থাকতে পারে না। বায়ুমণ্ডলে চড়া আলোকরশ্মির বিকিরণ মাটির উপরিভাগের সব কিছু ধ্বংস করে ফেলে। সাড়ে তিন শ’ কোটি বছর আগে সেখানে পানি ছিল। বিভিন্ন খাড়ি দিয়ে পানি যে প্রবাহিত হতো তার ছাপও আছে। প্রাণের অস্তিত্বের জন্য পানি ও অক্সিজেন অপরিহার্য। তাই সেখানে পানির প্রবাহ সৃষ্টি এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের আধিক্য কমিয়ে অক্সিজেন প্রবাহ সৃষ্টি করে একটি ভারসাম্য পরিবেশ পাওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন রোবটযান পারসিভিয়ারেন্স বা অধ্যবসায় দুই বছরে অনুসন্ধান চালিয়ে কী তথ্য পাঠায় তার ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু। চাঁদের মতো মঙ্গলের বুকেও মানুষের উপস্থিতি দেখার জন্য তাকিয়ে রয়েছে পৃথিবী।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক


আরো সংবাদ



premium cement