২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না

জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না - ছবি : সংগৃহীত

জিয়াউর রহমান আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য পাওয়া তার রাষ্ট্রীয় ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের অপতৎপরতাকে কেন্দ্র করে জিয়াকে নিয়ে এই নতুন আলোচনা।

কয়েক দিন আগেও আলোচনার ঝড় বইছিল আলজাজিরায় প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার মেন’ নিয়ে। কিন্তু হঠাৎ করে এ আলোচনা উধাও হয়ে গেছে। নতুন ইস্যু হিসেবে এসেছে জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের প্রসঙ্গ।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান খবরে বলা হয়, পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের প্রস্তাবে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯ ফেব্রুয়ারির সভায় জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জামুকা প্রধান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। খবরে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেয়া হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর জামুকা এ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম আলোকে শাজাহান খান জানিয়েছেন, জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদও বাতিল করা যায় কি না, সেটিও তারা খতিয়ে দেখছেন।

শাজাহান খান বলেন, ‘জিয়ার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বঙ্গবন্ধু হত্যায় মদদ দেয়ার জন্য।’ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী লোকজন নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছেন।’ পরে আইমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলে আইনগত কোনো বাধা নেই।’ তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করেন, কেউ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নষ্ট করলে তার কি খেতাব রাখার অধিকার আছে? এ ছাড়া সরকারের মন্ত্রীরা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদকও প্রত্যাহার করা হয়।

জিয়ার রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলে জামুকার সিদ্ধান্ত ও সরকারি তৎপরতা এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের পূর্তিও এই মার্চে। এটি স্বাধীনতার প্রতি এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতিই অবমাননা। কেননা বঙ্গবন্ধুই এই খেতাব দিয়েছিলেন।

কিন্তু এটি তো প্রমাণিত সত্য যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে মামলা করা হয় আওয়ামী লীগ আমলে এবং এর বিচারও সম্পন্ন হয়। এ মামলায় জিয়াউর রহমানকে আসামি করা হয়নি এবং মামলার রায়েও তা আসেনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড রোধে তৎকালীন সেনা কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা ছিল। তবে এর মূল দায়িত্ব ছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহ, ঢাকায় ৪৬ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডের কমান্ডার এবং রক্ষীবাহিনীর কর্মকর্তাদের। বঙ্গবন্ধু নিজে সেনাপ্রধানকে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়, তাতে ২৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২২ জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। এ মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন এইচ টি ইমাম। নতুন সরকারের প্রতি আনুগত্য জানিয়েছিলেন তিন বাহিনী প্রধান। এদের একজন পরে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। আরেকজন এমপি।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা যখন হয় তখন জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টের বাসায় গৃহবন্দী। তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাটি হয় রক্তপাত এড়ানোর জন্য ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের সাথে আপস আলোচনার অংশ হিসেবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি জিয়া এটি কি ঠিক? বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাষ্ট্রপতি হন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক। তিনিই সামরিক শাসন জারি করেন।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক খেতাব
মুক্তিযুদ্ধের দলিল ও বাংলাপিডিয়া থেকে জানা যায়, একাত্তরে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসিকতা প্রদর্শন ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বসূচক খেতাবে ভূষিত করার জন্য তখনই চিন্তা করা হয়। এটি করা হয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীরত্ব, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা সৃষ্টির জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতেই মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানী একাত্তরের ১৬ মে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদে বিষয়টি প্রস্তাব আকারে পেশ করলে তা অনুমোদিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপষিদ সভায় চার ধরনের বীরত্বসূচক খেতাবের নামকরণ করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ- সর্বোচ্চ পদপমর্যাদার খেতাব, বীর উত্তম-উচ্চ পদমর্যাদার খেতাব, বীর বিক্রম-প্রশংসনীয় পদমর্যাদার খেতাব ও বীর প্রতীক- বীরত্বসূচক প্রশংসাপত্রের খেতাব। ১৯৭২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরত্বসূচক খেতাবের জন্য নির্বাচন করা হয়। এরপর একই বছরের ২৬ মার্চ এই ৪৩ জনসহ মোট ৫৪৬ জন মুক্তিযোদ্ধা খেতাবের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ইউনিট, সেক্টর, ব্রিগেড থেকে পাওয়া খেতাবের জন্য সুপারিশগুলো এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি নিরীক্ষা করে। এরপর ১৯৭৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খেতাব তালিকায় স্বাক্ষর করে তাদের বীরত্বসূচক খেতাবে ভূষিত করেন।

মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা
একাত্তরের রণাঙ্গনে জিয়াউর রহমান একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন অন্যতম সংগঠক, একজন সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের প্রধান। একাত্তরের ২৬ মার্চের সূচনায় তিনিই প্রথম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘উই রিভোল্ট’ বলে বিদ্রোহ এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেন। এরপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ বলে স্বাধীনতা ঘোষণার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়ে মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্দীপ্ত করেন।

এ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের রেডিও ঘোষণাতেই আমি পরবর্তী দিকনির্দেশনা পেয়েছিলাম ২৭ মার্চ ফরিদপুর শহরে বসে।’ (সত্যের সন্ধানে প্রতিদিন, রিয়াজউদ্দীন আহমেদ)

একাত্তরের ১১ এপ্রিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তাজউদ্দীন আহমদ উল্লেখ করেন, ‘চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলের সমর পরিচালনার ভার পড়েছে মেজর জিয়াউর রহমানের ওপর। পাকিস্তানিদের নৌ, স্থল ও বিমানবাহিনীর আক্রমণের মুখে চট্টগ্রাম শহরে যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে এবং আমাদের মুক্তিবাহিনী ও বীর চট্টলার ভাইবোনেরা যে সাহসিকতার সাথে শত্রুর মোকাবেলা করেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই প্রতিরোধ স্ট্যালিনগ্রাদের পাশে স্থান পাবে।’ (মুক্তিযুদ্ধের দলিল ও বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১, এইচ টি ইমাম)

এখন দেখা যাক, মুক্তিযুদ্ধের কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার, সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে কী আছে; মেজর রফিক-উল-ইসলাম বীর উত্তম মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার। তার ‘অ্যা টেল অব মিলিয়নস’ (লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে) গ্রন্থের ১০৫-১০৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘২৭ মার্চের বিকেলে তিনি (মেজর জিয়া) আসেন মনদঘাটে এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেন। প্রথমে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান রূপে ঘোষণা করেন। পরে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন।’

মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। তিনি তার ‘বাংলাদেশ অ্যাট ওয়ার’ গ্রন্থের ৪৩-৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেন, মেজর জিয়া ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সদলবলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং তার কমান্ডিং অফিসার জানজুয়া ও অন্যদের প্রথমে গ্রেফতার ও পরে হত্যা করে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে ২৬ মার্চে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মোকাবেলার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। প্রথমে রাষ্ট্রপ্রধান এবং পরে আরেক ঘোষণায় শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।’

মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক এ কে খন্দকার, মঈদুল হাসান ও এস আর মির্জার কথোপকথন নিয়ে প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর কথোপকথন’ বইতে বিরাট অংশজুড়ে স্থান পেয়েছে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ও যুদ্ধের বিবরণ। এ কে খন্দকার বলেন, ‘২৭ মার্চ সন্ধ্যার কিছু আগে মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। অবশ্য মেজর জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে এসে প্রথম যে ঘোষণা দেন সেটি ভুলভাবে দেন। সেই ঘোষণায় তিনি নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন। যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর একজন বাঙালি মেজরের কথা শোনা সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। আমি নিজে জানি, যুদ্ধের সময় জানি এবং যুদ্ধের পরবর্তী সময়েও জানি যে, মেজর জিয়া এ ঘোষণাটি পড়ার ফলে সারা দেশের ভেতরে এবং সীমান্তে যত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাদের মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের মনে সাঙ্ঘাতিক একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করল যে, হ্যাঁ এবার বাংলাদেশ একটা যুদ্ধে নামল। জিয়ার ২৭ মার্চের ঘোষণা শোনার সাথে সাথে সারা দেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে যারা, তাদের মধ্যে যে একটা প্রচণ্ড উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়, সে সম্পর্কে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়।’

মঈদুল হাসান বলেন, ‘অন্যের কথা কী বলব, মেজর জিয়ার বেতার ঘোষণা শুনে আমি নিজে মনে করেছিলাম যে, না, সত্যি তা হলে সামরিক বাহিনীর বিপুলসংখ্যক লোক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। এটি আমার মনে বিরাট প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং আমি উৎসাহিত বোধ করি।’

এস আর মীর্জা বলেন, ‘২৫ মার্চের পর আমি সবসময় রেডিও সাথে রেখেছিলাম। ২৭ মার্চ বিকেলে পরিষ্কার শুনলাম, বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। এ ঘোষণা শুনে আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম এই ভেবে যে, হ্যাঁ এখন মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কারণ তাদের সাথে বাঙালি সেনারাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত রয়েছে।’

জিয়ার ঘোষণাটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে নিউজ বুলেটিন আকারে বারবার পড়ছিলেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও ক্যাপ্টেন শমসের মোবিন। সুবিদ আলী ভূঁইয়া বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এবং আওয়ামী লীগের এমপি। ‘মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস’ গ্রন্থে তিনি লিখেন, ‘মেজর জিয়াকে ২৭ মার্চের সন্ধ্যায় দেখে উৎসাহ-উদ্দীপনায় ফেটে পড়ল বেতার কেন্দ্রের কর্মীরা। ঘণ্টা দেড়েক চেষ্টার পর তিনি তার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ তৈরি করে নিজেই ইংরেজি ও বাংলায় পাঠ করেন।’

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত বই লেখা হয়েছে, প্রায় সবগুলোতেই রয়েছে এমন বিবরণ। মুক্তিযুদ্ধে ‘জেড ফোর্সের’ যুদ্ধগুলোর বীরত্বপূর্ণ বিবরণ লিপিবদ্ধ আছে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিক মুক্তিযুদ্ধের দলিলে।

তাকে মুছে ফেলা যাবে না
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে শাহাদতবরণ করেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেদিন ঢাকায় তার নামাজে জানাজায় লাখ লাখো মানুষের অংশগ্রহণ ছিল তার প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। জানাজার পরদিন পত্রপত্রিকায় লেখা হয়, ‘জীবিত জিয়ার চেয়ে মৃত জিয়া আরো শক্তিশালী।’ পত্রিকার শিরোনাম হয়, ‘একটি কফিনের পাশে বাংলাদেশ।’ সেদিনের কথাগুলো পত্রিকায় তো এমনি এমনি ছাপা হয়নি।

প্রতিপক্ষ শক্তি জিয়াউর রহমানের নাম নিশানা চিরতরে মুছে দেয়ার জন্য কত অপচেষ্টাই না করে যাচ্ছে। জিয়াকে ঘায়েল করার জন্য, তার প্রতি বিদ্বেষ তৈরির জন্য নতুন নতুন ইস্যু তুলে আনা হচ্ছে। কখনো স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে, কখনো মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার ভূমিকা নিয়ে তাকে খাটো করার চেষ্টা চলছে। একবার সরিয়ে দেয়া হয় ক্রিসেন্ট লেকে জিয়ার মাজারের যাওয়ার ব্রেইলি ব্রিজ। আরেকবার লুই কানের সংসদ ভবনের মূল নকশার অজুহাত তুলে জিয়ার মাজার সরিয়ে ফেলারও অপচেষ্টা চলে। এখন তার ‘মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম খেতাব’ বাতিলের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। কিন্তু জিয়াকে নিয়ে যতই নতুন বিতর্ক তোলা হচ্ছে, ততই তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছেন। প্রাদপ্রদীপের আলোয় স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। তিনি যে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম নায়ক, তিনি যে বাংলাদেশের ত্রাতা ছিলেন, তিনি যে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা সে কথাই বেশি আলোচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের জিয়াউর রহমান এক অনন্য নাম। মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ ও জিয়াউর রহমান কার্যত সমার্থক। ইতিহাস থেকে, মানুষের হৃদয়-মন থেকে জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলা যাবে না।

লেখক : সাংবাদিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাব


আরো সংবাদ



premium cement