২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আবার ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’?

আবার ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’? - নয়া দিগন্ত

গত ৪ জানুয়ারি কোনো কোনো পত্রিকার একটি ছোট খবর। বড় তাৎপর্য বহনকারী খবরটি আবার বিশ্বের মানুষকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। আসল ব্যাপার যা-ই হোক, অনেকে ভাবছেন বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় ট্র্যাজেডি নিয়ে। সর্বশেষ ঘটনাটি হচ্ছে, বাহামা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাগামী একটি নৌযান ২০ জন যাত্রীসমেত হাওয়া হয়ে গেছে। বিরমিনি দ্বীপ থেকে ৮০ মাইল দূরের লেকওয়ার্থ যাওয়ার সময়ে হঠাৎ নৌকাটি ২০ জনকে নিয়ে লাপাত্তা! দিনের পর দিন অনুসন্ধান চালিয়েও কোনো হদিস মেলেনি। নৌকাটি হারিয়ে যাওয়ার স্থানটি সেই কল্পিত ত্রিভুজের অন্তর্ভুক্ত যার নাম ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’। তা অবস্থিত আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তে এবং ক্যারিবীয় দ্বীপগুলোর কাছেই। জায়গাটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।

এ খবরকে সবাই হয়তো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেননি নিহতের সংখ্যার বিবেচনায়। ভেবেছেন, যেখানে প্রতিদিন করোনা ও দুর্ঘটনায় কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, সেখানে ২০ জন তো ‘নস্যি’! তাই কোনো কোনো পত্রিকা কয়েক দিন পর খবরটি ছোট করে ছাপিয়েছে।

জানা গেছে, ঘটনা বিগত ২৮ ডিসেম্বরের। পরদিন মার্কিন কোস্টগার্ড বাহিনীকে সতর্ক থাকার জন্য জানানো হয়, আলোচ্য নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে আসেনি। পরের তিন দিন ধরে বৃহৎশক্তি আমেরিকা ও ক্ষুদ্র দেশ বাহামার অনুসন্ধানীরা আকাশ থেকে এবং সাগরে যৌথভাবে সন্ধান করেছেন নৌযানটির। ১৭ হাজার বর্গমাইল বা ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় তল্লাশির পরও কাউকে না পেয়ে বছরের পয়লা দিনে অনুসন্ধান অভিযানের অবসান ঘোষণা করা হয়। তখন কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন স্টিফেন বার্ডিয়ান বলেন, ‘নিখোঁজ ব্যক্তিদের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি; আমরা উদ্বিগ্ন। কেউ তাদের ব্যাপারে জানতে পারলে এই বাহিনীকে জানাবেন।’

বারমুডা হচ্ছে একটি ক্ষুদ্র দ্বীপদেশ। বারমুডা, পুয়ের্টোরিকো দ্বীপ এবং ফ্লোরিডা উপকূল সংযোজক কল্পিত ত্রিভুজের মাঝে ক্যারিবিয়ান সাগরের যে উত্তরাংশ, সেটিই ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ নামে বহুল পরিচিত। এর অপর নাম ডেভিলস ট্রায়াঙ্গল (শয়তানের ত্রিভুজ)। এ নিয়ে নানা ভাষায় বইপত্র লেখালেখি হয়েছে। ঢাকা থেকে বাংলায় এ ধরনের বই বেরিয়েছিল। বারমুডার ত্রিভুজরহস্য অনুদ্ঘাটিত থাকায় মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। যে যতই উড়িয়ে দিতে চান না কেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের সুরাহা আসলে হয়নি। ফলে এ বিষয়ে সত্য মিথ্যা ও অতিকথন মিলিয়ে বই ও নিবন্ধ লেখার ধারা বন্ধ হচ্ছে না।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের পরিসর কতটা? এর এক মাথায় আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি, আরেক মাথায় বারমুডা এবং অন্য মাথায় পুয়ের্টোরিকো। তবে সবার দৃষ্টিতে, এর প্রান্তস্থল ও আয়তন এক নয়। তাই এর ক্ষেত্রফল ১৩ লাখ থেকে ৩৯ লাখ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে যা পাঁচ লাখ থেকে ১৫ লাখ বর্গমাইলের মতো। কিছু লেখকের মতে, সুদূর ইউরোপের আয়ারল্যান্ড উপকূল অবধি বিস্তৃত এই ত্রিভুজ। এর অর্থ, পুরো আটলান্টিক মহাসাগরই রহস্যময়। বলা হয়, একদা এখানে ছিল আটলান্টিস নামের মহাদেশ যা সাগরতলে এখন নিমজ্জিত।

যারা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের অদ্ভুত আচরণে বিশ্বাস করেন, তারা কয়েকটি কারণ দেখিয়েছেন। অস্বাভাবিক কারণ-কয়েকজন লেখক এই স্থানের সাথে সম্পৃক্ত অস্বাভাবিক বিষয়ের উল্লেখ করে ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করেছেন। এই প্রসঙ্গে কিংবদন্তির আটলান্টিস মহাদেশের ‘অবশিষ্ট’ প্রযুক্তির কথা বলে থাকেন কেউ কেউ। বাহামার বিরমিনি দ্বীপের অদূরবর্তী ‘বিরমিনি রোড’ নামের নিমজ্জিত শিলার প্রসঙ্গ তোলা হয় এই ক্ষেত্রে। এডগার কেইস নামের এক ব্যক্তির ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, ‘১৯৬৮ সালে আটলান্টিসের প্রমাণ মিলবে।’ বাস্তবে সে বছরেই বিরমিনি রোড আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে অনেকের মতে, এটি সাগরতলের একটি প্রাকৃতিক দেয়াল বা কাঠামো মাত্র।

আসুন, প্রাকৃতিক বিষয়ে ব্যাখ্যার প্রসঙ্গে। প্রথমেই বলতে হয় কম্পাসের কাঁটা ঠিক না থাকার কথা। এর কারণস্বরূপ চৌম্বক শক্তির খেয়ালিপনাকে দায়ী করা হয়। অন্য দিকে, অনেকের বক্তব্য, চুম্বকে ‘উল্টাপাল্টা কিছু নেই। শত শত বছর ধরেই কম্পাসের চুম্বক কিছুটা ‘এদিক সেদিক’ হচ্ছে। কারণ এটি স্বাভাবিক। বাস্তবে সাধারণত চুম্বকের উত্তর দিক আর ভূগোলের উত্তর দিকের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকে। ২০০০ সালে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে যেসব স্থান উইসকনসিন থেকে একই রেখা বরাবর দক্ষিণে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত অবস্থিত, কেবল সেখানেই ‘এই দুটি উত্তর দিক অভিন্ন।’

এবারে উপসাগরীয় স্রোতের বিষয়। মেক্সিকো উপসাগরে উৎপন্ন এই স্রোত ফ্লোরিডা প্রণালী দিয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এটিকে ‘সাগরের নদী’ বলা যায় এবং অনেক বস্তুকে এটা ভাসিয়ে নিতে পারে। সেকেন্ডে ৬.৬ ফুট বেগে উপসাগরীয় স্রোত বয়ে যাচ্ছে। কোনো ছোট বিমান সাগরে অবতরণ করলে কিংবা কোনো নৌকার ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দিলে এই স্রোত তাকে কিছুটা হলেও ভাসিয়ে নেয়।

মানবিক ভুলের কথাও এসেছে। কোনো যান বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে হারিয়ে গেলে এ ক্ষেত্রে ভুলের কারণ ঘটতে পারে। যেমন, ১৯৫৮ সালের প্রথম দিবসে ব্যবসায়ী হার্ভে কনোভার হয়তো তার অনমনীয়তার দরুন নৌকাসহ ফ্লোরিডার দক্ষিণে ঝড়ের মুখে পড়েছিলেন। এই ত্রিভুজে উত্তাল আবহাওয়া অনেক ক্ষতি করেছে। যেমন, হারিকেন বা প্রচণ্ড ঝড়ে হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, এর সর্বপ্রথম রেকর্ডকৃত ঘটনা, ১৫০২ সালে ফ্রান্সিসকো দ্য বোবাদিলার নেতৃত্বাধীন স্প্যানিশ নৌবহর ধ্বংস করে দেয় এই হারিকেন।

বারমুডা ত্রিভুজে ১৯৮৬ সালের ১৪ মে ডুবে যায় ‘প্রাইড অব বাল্টিমোর’ জাহাজ। এর কারণ ঠাণ্ডা বাতাসের প্রচণ্ড ধাক্কায় তলিয়ে যাওয়া। হঠাৎ বাতাসের গতিবেগ বেড়ে ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার থেকে ১৪৫ কিলোমিটার হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের উপগ্রহ বিশেষজ্ঞ জেমস লুশাইনের ভাষায়, ‘আবহাওয়া খুব খারাপ হয়ে গেলে উপর থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বোমার মতো আঘাত করে। তখন বাতাস আর পানি মিলে দানবের মতো বিস্ফোরণ ঘটায়।’ একই ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলের কাছে ২০১০ সালে ‘কনকর্ডিয়া’ জাহাজের বেলায়। এভাবে ‘হাওয়া বোমা’ ২৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে আঘাত হানতে পারে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার কিছু ঘটনার সম্ভাব্য কারণ, সাগরে প্রাকৃতিক গ্যাস মিথেন হাইড্রেটের বিশাল ক্ষেত্র। পানির নিচে ‘কন্টিনেন্টাল শেলফ’গুলোতে এর অবস্থান। অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা দেখেছেন, বুদবুদ পর্যন্ত পানির ঘনত্ব কমিয়ে জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে। তখন বিধ্বস্ত জাহাজের কোনো অংশ ভেসে উঠলেও উপসাগরের স্রোতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, মাঝে মাঝে মিথেন উদগীরণ (কখনো তা ‘কাদার অগ্নিগিরি’) সাগরবক্ষে ফেনাযুক্ত পানির জন্ম দেয়। ফলে আর জাহাজ পানিতে ভেসে থাকতে পারে না। তখন কোনো হুঁশিয়ারি ছাড়াই জাহাজ দ্রুত ডুবে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সৈকতের অদূরে ‘ ব্লেক রিজ’ এলাকাতে এবং বিশ্বজুড়ে, পানির নিচে হাইড্রেটের বিরাট মজুদ বিদ্যমান। তবে মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে দফতর মনে করছে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে গত ১৫ হাজার বছরেও এই গ্যাসের উদগীরণ ঘটেনি।

ফ্লাইট-১৯ ছিল ‘অ্যাভেঞ্জার’ নামের টর্পোডো পাঁচটি বোমারু বিমানের প্রশিক্ষণ। বিশ্বযুদ্ধের কিছু দিন পরে ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর এগুলোর সব ক’টি নিখোঁজ হয়ে যায় একত্রে। তখন তারা উড়ছিল আটলান্টিকের উপর দিয়ে। কথা ছিল, বিমানগুলো উড়বে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট লডারডেল থেকে প্রথমে ২২৭ কিলোমিটার সোজা পূর্বদিকে, এরপর ১১৭ কিলোমিটার উত্তর দিকে এবং সবশেষে ২৩০ কিলোমিটার উড়ে ট্রেনিং উড্ডয়ন শেষ করবে। তবে বিমানগুলো ঘাঁটিতে আর ফেরেনি। নৌবাহিনীর অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, উড্ডয়নে ভুল করায় বিমানগুলোর জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়েছিল। তবে এর সন্ধান ও উদ্ধার কাজে নেমে আরেকটি বিমান ১৩ জন ক্রুকে নিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল কেন? ফ্লোরিডা উপকূলের অদূরবর্তী একটি ট্যাংকার জানায়, বিমানটি ব্যর্থ অনুসন্ধান অভিযান চালানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে এবং এর জ্বালানি পড়ে যায়। এর পরই ঝড়ো আবহাওয়া দেখা দেয়। জানা যায়, হারিয়ে যাওয়া অনুসন্ধানী বিমানটিতে তেল বেশি ভরলে ত্রুটিবশত বিস্ফোরণ ঘটত। হয়তো সে দিন দীর্ঘসময়ের জন্য, জ্বালানি বেশি নেয়া হয়েছিল।

১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি স্টার টাইগার নামের বিমান যাচ্ছিল অ্যাজোর্স থেকে বারমুডা। পরের বছর ১৭ জানুয়ারি বারমুডা থেকে জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টনে যাচ্ছিল ‘স্টার অ্যারিয়েল’ বিমানটি। দুটিই ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজের বিমান। দুটিই নিখোঁজ, যদিও তাদের গতিবেগ ছিল স্বাভাবিক। ন্যূনতম ভ্রান্তি বা ত্রুটির কারণেও গন্তব্যে তাদের পৌঁছার কথা নয়।

১৯৪৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর একটি ডগলাস ডিসি-৩ বিমান হারিয়ে যায়। যাচ্ছিল পুয়ের্টোরিকোর সান জুয়ান থেকে ফ্লোরিডার মিয়ামি। বিমানটি বা এর ৩২ যাত্রীর কোনো খোঁজ মিলেনি। কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অপর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিমানটি নিরুদ্দেশ হওয়ার সম্ভাব্য কারণ জানা গেল না।’

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে কেন এত রহস্য ভীতি আর উদ্বেগ? কিছু ঘটনা এর কারণ। এর মধ্যে কয়েকটি নমুনাস্বরূপ উল্লেখ করা হলো।

যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো মার্কিন নৌবাহিনীর ইতিহাসে এত বেশি মানুষ প্রাণ হারায়নি। ব্যাপার হলো, ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ ৩০৯ জন নাবিকসমেত একটি জাহাজ ‘সাইক্লপস চিরনিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এই জাহাজের আর কোনো দিন হদিস মেলেনি। বার্বাডোজ দ্বীপ থেকে এটি ছেড়েছিল ম্যাঙ্গানিজ বোঝাই করে। নৌযানটির এক ইঞ্জিন ছিল অকার্যকর। কেউ বলছেন ঝড়ের কথা; কেউবা দুর্ঘটনাবশত ডুবে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। আবার কারো বক্তব্য হলো, প্রথম মহাযুদ্ধকালে আমেরিকার শত্রুরা জাহাজটিকে ডুবিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার পরপর জাহাজটির ঘনিষ্ঠ দুটি জাহাজ ‘প্রটিয়াস’ আর ‘নিরিয়াস’ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে হারিয়ে যায়। দুটোই ধাতুর আকরিকে ছিল বোঝাই। তিনটি জাহাজে একই ধাতু বোঝাই করা হয়। ডুবে যাবার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত বোঝা নেয়ায় এটা ঘটেছিল।

১৯২১ সালের ৩১ জানুয়ারি এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলিনার কেপ হ্যাটেরাস উপকূলের চরে ‘ক্যারল এ ডিয়ারিং’ নামের পাঁচটি মাস্তুল যুক্ত একটি জাহাজকে পরিত্যক্ত এবং শক্তভাবে আটকা পড়া অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। মাত্র দুই বছর আগে এটি তৈরি করা হয়। গুজব রটে, জাহাজটি ডাকাতির শিকার। সম্ভবত, নিষেধাজ্ঞা বিরোধী ও বেআইনি মদের পরিবহন ব্যবসার সাথে এই ঘটনা সম্পৃক্ত। হয়তো একই কারণে, একই সময়ে ‘হিউইট’ নামের আরেক জাহাজ হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পরে একটি স্টিমার ডিয়ারিং জাহাজটির পথ ধরে যাচ্ছিল পাল তুলে। ধারণা করা হয়েছে, জাহাজের সব সঙ্কেত অমান্যকারী এই স্টিমারই ‘হিউইট’ জাহাজ এবং এটাই ডিয়ারিং-এর সব নাবিককে সরিয়ে নিয়েছিল।

১৯৫৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বারমুডার দক্ষিণে, আটলান্টিক মহাসাগরে দেখা যায়, একটি বিনোদন নৌকা পড়ে আছে। প্রায়ই উল্লেখ করা হয়, সাগরে তিন তিনটি ঝড়ের মোকাবেলার সময় এর নাবিকরা হাওয়া হয়ে গেছেন আর নৌকাটি টিকে আছে। সে বছর আটলান্টিকের ঝড়ের মৌসুমে সেপ্টেম্বর মাসের হারিকেন প্রভাব ফেলেছিল বারমুডাতেও। ২২ সেপ্টেম্বর সকালে দেখা গেছে- কারলিসলে উপসাগরের কাছে খোলা জায়গায় ‘কনেমারা’ নামের এই নৌযান দৃঢ়ভাবে নোঙর করা। আসন্ন ঝড়ের আশঙ্কায় শক্ত রশি দিয়ে এবং অতিরিক্ত দুটি নোঙরের সাহায্যে এটি প্রোথিত ছিল তখন। ঝড়ের পর উপসাগর ভয়াবহ ও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তদন্তে জানা যায়, তখন নোঙর ছিঁড়ে নৌযানটি সাগরে চলে গিয়েছিল।


১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট মার্কিন বিমানবাহিনীর দুটি বিমান (স্ট্র্যাটোট্যাংকার) পারস্পরিক সংঘর্ষে বারমুডার ৩০০ মাইল পশ্চিমে বিধ্বস্ত হয়ে মহাসাগরে গিয়ে পড়ে। বিমান দুটির সংঘর্ষ বাঁধলেও পরস্পর থেকে ২৬০ কিলোমিটার দূরে ছিল বিধ্বস্ত হওয়ার স্থান দুটি। মার্কিন বিমানবাহিনীর তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায়, এই দুটি জায়গার দ্বিতীয়টিতে পুরনো একটি বয়াতে কিছু আগাছা ছাড়া আর কোনো বস্তু পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement