২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মার্কিন সিনেটে নাটকের প্রস্তুতি

-

যুক্তরাষ্ট্র নামের দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর গণতান্ত্রিক দেশ এবং বলতে গেলে, বর্তমান বিশ্বের একক নেতা। বিশ্বে পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিকাশ ও সংরক্ষণে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করে এই দেশটি। গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার হলো বাহ্যত এই দেশের আদর্শ। সেই আদর্শের ভিত্তিতেই এযাবৎ দেশটি পরিচালিত হয়ে আসছে। কেবল গত চারটি বছর সামান্য ব্যত্যয় ঘটেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর। গণতন্ত্রের পরিবর্তে ট্রাম্প অনেকটাই একনায়কতন্ত্রী স্বৈরশাসন কায়েমের চেষ্টা করেছেন। তবে এত বছরের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মাত্র চার বছরের মধ্যে উপড়ে ফেলা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবু তিনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে বড় রকমের আঘাত হানতে পেরেছেন এবং এই মুহূর্তে চূড়ান্ত আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

দেশটিতে গত ৩ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাতে হেরে গেছেন ট্রাম্প। প্রচলিত রীতি ও প্রথা অনুযায়ী, তিনি বিজয়ী প্রার্থী জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানানো দূরের কথা; নির্বাচনে নিজের পরাজয়ও স্বীকার করেননি। তিনি প্রথম থেকেই এই নির্বাচনকে ষড়যন্ত্র ও জালিয়াতির নির্বাচন বলে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। একের পর এক মামলা করেছেন এবং সব মামলায় হেরেছেন। কারণ, নির্বাচনী জালিয়াতি বা ভোট নিয়ে প্রতারণা বা অনিয়মের কোনো অভিযোগ তিনি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মূলত এ নির্বাচন যে, বাংলাদেশের মতো হয়নি আমেরিকার মতোই সম্পূর্ণ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে, তাতে সন্দেহ করার মতো একটি দৃষ্টান্তও তিনি বা তার দল হাজির করতে পারেনি।

তার পরও নির্বাচনের ফলাফল বানচাল করার সব রকম অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সেই অপচেষ্টার সর্বশেষ ‘নাটক’টি আজ (৬ জানুয়ারি, বুধবার) ঘটতে যাচ্ছে মার্কিন কংগ্রেসে। উচ্চকক্ষ বা সিনেটে আজ জো বাইডেনের বিজয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যয়ন বা সার্টিফাই করার কথা। আর এই প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করতে ঘোঁট পাকাচ্ছেন ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলের কিছু সিনেটর। ট্রাম্পের অনুগত অন্তত ১২ জন সিনেটর এই কদর্যকর্মে যোগ দেবেন বলে বিবৃতি দিয়েছেন। অবশ্য সিনেটে রিপাবলিকান দলেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে এবং তারা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এই বিষয়টি মানতে চান না। কিন্তু বাস্তবে এতে কোনো কিছুই পাল্টাবে না, তা-ও সবাই জানেন।

তবে এতে প্রমাণিত হলো, আমেরিকার মতো দেশেও প্রভাব প্রতিপত্তি, অর্থবিত্ত দিয়ে সিনেটরদের ‘কিনে ফেলা যায়’। ট্রাম্পের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও এই হঠকারী উদ্যোগে সমর্থন দিয়েছেন। ট্রাম্প নগদ টাকা দিয়ে কাউকে কেনেননি। কারণ তার দরকার হয়নি। পেন্সসহ এই ১২ জন ‘বিক্রি হয়েছেন’ প্রভাবের কাছে। রিপাবলিকান দলে উপরে ওঠার সিঁড়ির একটি বড় ধাপ হলেন ট্রাম্প স্বয়ং। সে জন্যই যারা আগামীতে এই দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পাওয়ার স্বপ্ন দেখেন বা পার্টির উচ্চতর পদে আসীন হওয়ার খায়েশ রাখেন তারা ট্রাম্পের প্রতি আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে সবরকম নীতি-নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে তার অযৌক্তিক ও অসভ্য কর্মকাণ্ডে সমর্থন দিচ্ছেন। আজকের নাটক তাদের সেই আনুগত্যের মহড়ামাত্র। তবু এসব নোংরা রাজনীতির খেলা আমেরিকার আবহাওয়ায় উত্তাপ ছড়িয়েছে। গতকাল জর্জিয়ায় দুটি সিনেট সদস্যপদে নির্বাচন হয়েছে। তাতেও ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নোংরা নাক গলানোর প্রবণতা দেখা গেছে। এর ফলাফল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে গেলে সিনেটে দুই দলের ভারসাম্যে সমতা সৃষ্টি হবে।

সিনেটে বাইডেনের বিজয় প্রত্যয়নের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠলেও ভোটের ফল পাল্টে যাবে না বা বাইডেনের অনুমোদন পেতে কোনো সমস্যা হবে না, তা নিশ্চিত। কারণ, এ ধরনের আপত্তি তখনই গৃহীত হবে যখন তা কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পাবে। প্রথমে উত্থাপিত আপত্তির ওপর দু’ঘণ্টা আলোচনা হবে। তারপর এ বিষয়ে ভোটাভুটি হবে। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে ডেমোক্র্যাট দলের। সেখানে এমন প্রস্তাব নাকচ হয়ে যাবে স্বাভাবিকভাবেই। আর সিনেটে রিপাবলিকান সদস্যদের ওই ১২ জনের বাইরে অন্য সব সদস্যই এতে সমর্থন দেবেন এমন মনে হয় না। অনেক রিপাবলিকান সিনিয়র নেতা যাদের মধ্যে দলনেতা ম্যাককনেলও আছেন, এই দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। সিনেটর মিট রমনিও তাদের একজন। তারা অনেক আগেই জো বাইডেনের বিজয় মেনে নিয়ে তাকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। ফলে বিজয়ী হিসেবে বাইডেনের প্রত্যয়ন তারা ঠেকাতে পারবেন না, এই সত্যটা রিপাবলিকানরা জানেন না, এমন নয়। তবে তারা জেনেশুনে কেন এটি করতে যাচ্ছেন? একটি ব্যাখ্যায় তারা বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ‘নস্যাৎ’ করতে নয়, বরং এর প্রতি জনগণের ‘আস্থা’ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই তাদের এই উদ্যোগ। ব্যাখ্যাটি আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না সেটি বিচার করে দেখা যেত। কিন্তু তার আগেই আরেকটি বড় ঘটনা ঘটে গেছে মার্কিন মুলুকে।

বড় ঘটনাটি হলো- জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ট্রাম্পের একটি টেলিফোন সংলাপ ফাঁস করে দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা আর সিএনএন টেলিভিশন। জর্জিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্র্যাড রাফেনসপারজার সে রাজ্যের নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সে পরাজয় নিশ্চিত হওয়ারও আগে রাফেনসপারজারকে ফোন করে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ভোট খুঁজে বের করুন, আমি শুধু এটাই চাই’। তিনি বলেছিলেন, ‘দেখুন, আমি চাই, ১১ হাজার ৭৮০ ভোট, যেন আমরা জয় পাই।’ নির্বাচনে এ রাজ্যে ট্রাম্প হেরেছেন ১১ হাজার ৭৭৯ ভোটের ব্যবধানে। স্বয়ং দেশের প্রেসিডেন্ট ফোন করে প্রায় ঘণ্টাকাল ধরে চাপ দিতে থাকলে অন্য কেউ ঠিক কী করতেন, আমাদের জানা নেই। কিন্তু রাফেনসপারজার নতি স্বীকার করেননি। তিনি বিনীতভাবে ট্রাম্পের চাপ মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। কিন্তু কথা সেটা নয়।

কথা হলো- এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ায় ট্রাম্পের চেহারা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। যে ট্রাম্প নির্বাচনকে জালিয়াতি বলেছেন, ষড়যন্ত্র বলেছেন, নির্বাচন লুট করা হয়েছে বলে অবিরাম চিৎকার করেছেন, সেই তিনিই যে মূলত ষড়যন্ত্রকারী তা প্রমাণিত হয়েছে। যারা ট্রাম্পের প্রচারণার কারণে সংশয়ে ছিলেন যে, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র বা জালিয়াতি হলেও হয়ে থাকতে পারে, এখন তারা হতভম্ব। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাম্প যে চাপ দিয়েছেন, এখন সেটিই বরং নির্বাচনী জালিয়াতি হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই জালিয়াতির হোতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে। তবে কংগ্রেসে অনাস্থা আনার মতো কিছু হয়তো হবে না। ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার এই শেষ মুহূর্তে কেউ সেটা করতে যাবেন বলে মনে হয় না। তা ছাড়া এর আগেও একই ধরনের আরেকটি ফোনালাপ ফাঁস হলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। তাতে তাকে ক্ষমতা থেকে উপড়ে ফেলা যায়নি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা একজোট হয়ে ট্রাম্পের পক্ষে থাকার কারণে। সেই ফোনকলটি ট্রাম্প করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে। ফোন করার আগে ট্রাম্প ইউক্রেনকে দেয়া মার্কিন সামরিক সহায়তা তহবিল আটকে দেন। তারপর সে দেশের প্রেসিডেন্টকে ফোন করে বলেন, তিনি যদি বাইডেনের ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা না করেন তাহলে সামরিক সহায়তা দেয়া হবে না। বাইডেনের ছেলের ব্যবসা আছে ইউক্রেনে এবং বাইডেন তখন প্রেসিডেন্ট পদে নিজের দলের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। ছেলের বিরুদ্ধে বিদেশী রাষ্ট্রকে দিয়ে দুর্নীতির মামলা চাপিয়ে ট্রাম্প চেষ্টা করেছেন নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করতে। এ জন্য ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করতেও পিছপা হননি। কিন্তু মিট রমনি ছাড়া বাকি সব রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের পক্ষে ছিলেন। ফলে ট্রাম্পকে সরানো যায়নি।

তবে সন্দেহ নেই, ট্রাম্পের এই ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনাটি গণতন্ত্রের পক্ষে বিরাট ভূমিকা রাখবে। আমেরিকার মানুষ বুঝতে পারবেন, তাদের গণতন্ত্র, তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস হয়ে যায়নি, সার্বিকভাবে অনাস্থার কোনো কারণ ঘটেনি। স্বাধীন গণমাধ্যম এভাবেই সঙ্কটময় সময়ে জাতিকে পথ দেখায়। সেটা আমাদের দেশে এখন পুরোপুরিই অনুপস্থিত।

মোদ্দা কথা হলো, যেকোনো উপায়ে প্রতিপক্ষের বিজয় উল্টে দিয়ে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার জন্য ট্রাম্পের নির্লজ্জ প্রয়াস ব্যর্থ হয়ে গেছে। এরপরও তিনি দেশকে নতুন কোন হুমকির মুখে ঠেলে দেন সেটি দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে। কারণ, তিনি নিজের উগ্র সমর্থকদের নিয়ে রাজধানী ওয়াশিংটনে যে শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা করছেন সেটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কেউ কেউ সহিংসতার আশঙ্কাও করছেন। আমরা আমেরিকার গণতন্ত্রের শক্তিমত্তা সম্পর্কে অতটা নিরাশ নই। ২০ জানুয়ারির মধ্যে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ থেকে বিদায় নিলে পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত হয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তবে ট্রাম্পের সৃষ্ট বর্ণবাদী সামাজিক বিভাজন মার্কিন সমাজে আরো গভীর হবে, তাতে সন্দেহ নেই।

গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে-পরে যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই একটি ভিডিও পোস্ট দেখে থাকবেন। তাতে দেখানো হয়, নির্বাচনে হেরেও ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। আর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে টেনেহিঁচড়ে, মাটিতে ছেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। একপর্যায়ে চ্যাংদোলা করে বাইরে ছুড়ে ফেলছে। এটি দেখে অনেকে খুব মজা পেয়েছেন, অনেকে হেসেছেন। কিন্তু ভিডিওটি মোটেও শোভন ছিল না। একজন সিটিং প্রেসিডেন্টের জন্য এটি নিঃসন্দেহে অমর্যাদাকর। কিন্তু ট্রাম্প তো নিজেই প্রেসিডেন্ট পদের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি মিথ্যাবাদী, বর্ণবাদী, নারীলোলুপ, স্বৈরতন্ত্রী, আইন লঙ্ঘনকারী, কর ফাঁকিবাজ এবং ক্ষমতালিপ্সু। এগুলোর কোনোটিই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশের প্রেসিডেন্টের পদমর্যাদার সাথে মানায় না।

আজ সিনেট বাইডেনের বিজয় প্রত্যয়নের পর ট্রাম্প কী করবেন সেটাই দেখার বিষয়। তিনি মানে মানে কেটে পড়বেন, সবার এটিই প্রত্যাশিত। এফবিআইয়ের সদস্যরা তাকে গলাধাক্কা দিচ্ছে এমনটা যেন বাস্তবে না ঘটে।

e-mail: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় নয়া সঙ্কট নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর দাবি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট শিডিউল ঘোষণা করুন : মুজিবুর রহমান পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীসহ নিহত ১১ শতকোটি টাকা নয় শুধু ছেলেকে ফেরত চান শহীদ আমিনের মা কামরুল, মহিববুর, হেনরী ও এস কে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের ৮ মামলা অনুপ্রবেশ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের তুমুল বিতর্ক সরকার প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করতে পারছে না : রিজভী ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের রেলওয়ের দরপত্রে অংশগ্রহণের প্রতিবাদ বিদ্যুৎ বিল বাবদ বাংলাদেশের কাছে ২০০ কোটি টাকা চায় ত্রিপুরা শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে হাসান আরিফের দাফন

সকল