তাহলে রাজনীতিবিদরা কী করবেন?
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ১৯:৪৯
‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’। কিন্তু আড্ডা তো আছে। গ্রামের আড্ডা মাঠে-ঘাটে-হাটে। শহরের আড্ডা চায়ের দোকানে, ক্লাবে, পার্কে অথবা রেস্টুরেন্টে। যাতায়াত পথে বাস-ট্রেন-লঞ্চেও আড্ডা জমে বন্ধুদের, স্বজনের অথবা সহকর্মীদের। তেমনি এক আড্ডার কথা বলছি। ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবাসে যাতায়াতকালের আড্ডা। মাইক্রোবাস- সুতরাং যাত্রীর সংখ্যাটি এত বেশি নয় যে, কমিউনিকেট করা যায় না। এত কম নয়, জমানো যায় না। গড়ে ২০ জনের সে আড্ডা। কখনো কখনো জমে ওঠে তা। কেউ একজন শুরু করলেই হলো। সে দিন ১২ ডিসেম্বর আমাদের মাইক্রোবাস আড্ডার সরস বয়ান এখন তুলে ধরছি। আগে থেকেই বলে রাখি- এই আড্ডার কথাবার্তা সাধারণ নয়। ‘অসাধারণ’ এই জন্য যে, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের সবাই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বেশির ভাগই পিএইচডি ডিগ্রিধারী। তবে বয়স সবার সমান নয়। নবীন ও প্রবীণের এক অসম সমাহার। আবার রাজনৈতিক সমীকরণেও অসম। ডান-বাম, চরম ডান, চরম বাম, মধ্যপন্থী, নরমপন্থী সবাই আছেন। তাহলে বলতে পারেন ‘ইউনিক’। প্রতিনিধিত্বশীল। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপিংয়ে তাদের বেশির ভাগই সরকারি দলের সমর্থক। আজকাল সবাই আওয়ামী লীগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তো এ মাটিতেই বসবাস করেন। সুতরাং তাদের বেলায় ব্যতিক্রম হবে কেন? তবে আলোচনায় বোঝা গেল- বেশির ভাগই মুক্তমনা। হয়তো বা শিক্ষকসুলভ দোষের কারণে! যা হোক, অনেক সময় বিশেষ আয়োজন করেও এ রকম বুদ্ধিজীবীদের সমাবেশ ঘটানো যায় না। বিনা পয়সায় বিনা শ্রমে তাদের মতামত শুনতে পেলাম। এখন সংলাপ আকারে সেই আলোচনা নিবেদন করতে চাই। মানুষ হিসেবে কেউ থাকেন সরব, কেউ বা নীরব। ধরুন, নাম তার ক। আলোচনার সূত্রপাত করলেন।
-দেশটা তো আবার গরম হবে বলে মনে হচ্ছে। কেন? কেন? রাজাকারদের রুখতে এবার সচিব-ওসি-ডিসিরা মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। -তাতে দোষের কী হলো? -না, আমি দোষের কথা বলছি না। রাজনীতি তো রাজনীতিকরাই করেন; তাই বলছিলাম...না, ঠিকই আছে। রাজাকাররা বড় বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল। -পাইকারি রাজাকার দেখো? -ভুলে যাও কেন? এ দেশের বেশির ভাগ মানুষই মুসলমান, তাও আবার ধর্মভীরু। -ধর্মের নাম দিয়ে ১৯৭১ সালে তারা মানুষ হত্যা করেনি? ঘরে আগুন দেয়নি? মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেনি? -সে তো ৫০ বছর আগের কথা। তাদের বিচার হয়নি? তারা তো তাদের ফল ভোগ করেছে। -যারা ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে তারা তো ওদেরই দোসর। রাজাকারদের পক্ষে কথা বলা যায় না। -তা ঠিক। তবে বিষয়টির আরো গভীরে যাওয়া উচিত। লক্ষ করে দেখবেন, সেই জামায়াত-শিবির মাঠে নেই। যে আলেম-ওলামা মাঠে নামছেন তারা কিন্তু রাজনীতি করেন না। বেশির ভাগই কওমি মাদরাসার লোক। যাত্রাবাড়ীতে যে আলেম দিয়ে ঘটনার শুরু তিনি কিন্তু দল করেন না। -যাই হোক, আমি বুঝলাম না। ভাস্কর্যতে কী অসুবিধা? অন্যান্য মুসলিম দেশে তো ভাস্কর্য আছে। -বিষয়টি সম্পর্কে সত্যি কথা বলতে কী আমার কোনো ধারণা নেই। তবে এটুকু বুঝি, একজন ডাক্তার যেমন চিকিৎসা বিষয়ে জানেন, একজন ইঞ্জিনিয়ার যেমন তার বিষয়টি ভালো বুঝেন তেমনি আলেম-ওলামারা যারা কুরআন-হাদিস বোঝেন তার ইসলামের বিষয়টি ভালো জানেন। -বিষয়টিকে এত সহজ করবেন না। এর পেছনে রাজনীতি আছে। -রাজনীতি থাকতেই পারে। রাজনীতির বাইরে কিছুই নয়। বুঝলাম রাজনীতি আছে। তাহলে তো রাজনৈতিক উপায়েই বিষয়টি সমাধান হওয়া উচিত। সরকারি কর্মচারীদের মাঠে নামানো হচ্ছে কেন? তারাই যদি সব কিছু করেন, তাহলে রাজনীতিবিদরা করবেন কী? গ্রামদেশে বলে- ‘যার কাজে তারেই সাজে, আরের বেলা ঠ্যাংগা বাজে’। গত রাতে নিউজ দেখতে পারিনি। বিষয়টি কেউ ভালোভাবে বলতে পারেন। আমি আজ ইত্তেফাক দেখেছি। ওরা ভালো কভারেজ দিয়েছে। মোবাইল থেকে সেটি পড়ে শুনাচ্ছি।
‘প্রজাতন্ত্রের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জাতির পিতার ভাস্কর্যবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মাঠে নামছেন আজ। পুলিশবাহিনীসহ সব ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজকের কর্মসূচিতে যোগ দিবেন। কেন্দ্রীয়ভাবে এই দিন ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। তবে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এতে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানা গেছে। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর এবং উপজেলা শহরেও অনুরূপ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই কর্মকাণ্ড সমন্বয় করছে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন আহমদ ইত্তেফাককে জানান, আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয়ভাবে প্রজাতন্ত্রের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত জাতির পিতা। তার বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কোনো মন্তব্য; তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে পরিচালিত কোনো অপতৎপরতা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বরদাশত করবে না। যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করবে। সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির যে অপতৎপরতা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে একটি কঠিন বার্তা এই সমাবেশ থেকে জানানো হবে। তিনি বলেন, ধাপে ধাপে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই অশুভ গোষ্ঠীর চক্রান্ত প্রতিহত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা বদ্ধপরিকর।’ (দৈনিক ইত্তেফাক, ১২ ডিসেম্বর ২০২০)
এটি হুবহু পাঠ করার পর সংলাপ আবার শুরু হয়। একজন বললেন, বিষয়টি তো বড় ধরনের সঙ্ঘাতের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হয়। আজ সব জায়গাতেই উগ্রপন্থা। সরকারও উগ্র। আলেমরাও উগ্র। সবাই উগ্র নয়। প্রাথমিক অবস্থা কাটিয়ে ওঠার পর উভয়পক্ষে সংযম পরিলক্ষিত হয়েছিল। ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে বিষয়টি দেখছেন। তার মানে একটা সমঝোতা বা রাজনৈতিক সমাধান আসছে। আলেমরা আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। মুজিব মিনারের কথা বলেছেন। কবিগুরু বলেছেন, ‘রাজা যা বলে পারিষদ বলে তার শতগুণ’। নিশ্চয় এর মধ্যে অতি উৎসাহীদের কারবার আছে। হয়তো বা কোনো আমলা এর নেতৃত্ব নিয়ে ফায়দা হাসিল করতে চান। হতে পারে। ইতঃপূর্বে সাগর-রুনির বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা যখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করলেন তখন প্রধান নেতাকে অ্যাডভাইজার করার পর আন্দোলন থেমে যায়। এই প্রবণতা ভালো নয়। আওয়ামী লীগের তো আকাল পড়েনি। তারা এখন ক্ষমতাসীন। সুতরাং ইতঃপূর্বে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো যে আন্দোলন করছিল তাই সঠিক ছিল। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হয়। রাজনীতির বদলে যদি আমলাতন্ত্র বা সন্ত্রাসতন্ত্র স্থান নেয়, তা রাজনীতির অসারতাই প্রমাণ করে।
মাইক্রোবাসটি গন্তব্যে পৌঁছলে সংলাপ অসমাপ্ত রেখেই এর সমাপ্তি ঘটে। তার পরদিন এই লেখক আগ্রহী হয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। ওইদিন প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি ছিল এরকম- প্রশাসন, পুলিশসহ বিসিএস ক্যাডারভুক্ত সব পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনোরকমের অবমাননা ও অসম্মান হতে দেবেন না তারা। বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাঙচুর নিয়ে যারা নেপথ্যে থেকে ‘হাওয়া’ দিচ্ছে, তাদেরও খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। ‘জাতির পিতার সম্মান, রাখব মোরা অম্লান’- স্লোগানে গত শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ, মানববন্ধন করে এমন প্রতিজ্ঞা করেন ২৯টি বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সরকারি কর্মকর্তা ফোরামের ব্যানারে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিহ হয়। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, সচিবসহ কয়েক হাজার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, ময়মনসিংহসহ সারা দেশের সবজেলা ও উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয় একই ধরনের কর্মসূচি। নিম্ন আদালতের বিচারকরাও রাস্তায় প্রতিবাদ করার পাশাপাশি এসব সমাবেশে অংশ নেন। নন-ক্যাডার কর্মকর্তারাও যোগ দেন প্রতিবাদী এসব কর্মসূচিতে। তবে এভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের সমাবেশ করার নজির খুব একটা নেই। শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা গতকালের সমাবেশে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতা হিসেবে স্বীকৃত। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব সংবিধানকে সমুন্নত রাখা। এ ছাড়া রাষ্ট্রের কর্মচারীদের পাশাপাশি তারা রাষ্ট্রের নাগরিকও। রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে আসছে কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ৪ ডিসেম্বর রাতে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য ভাঙার পর সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলছে। এর মধ্যে গতবৃহস্পতিবার ঢাকায় হেফাজতে ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ভাস্কর্য নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ঢাকায় গতকালের সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবদ্দশায় জাতির পিতার কোনোরকমের অন্যায়-অসম্মান হতে দেবো না। এটাই হচ্ছে আজকের অঙ্গীকার। আমরা জনগণের সেবক। সংবিধানে জাতির পিতা রয়েছে। আমাদের দায়িত্ব সংবিধানকে সমুন্নত রাখা। আমরা যদি থাকি, তাহলে জাতির পিতার অবমূল্যায়ন হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সমগ্র জাতির কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে এসেছি, এরকম কোনো ঘটনা হতে দেবো না।’ এখন থেকে সবাইকে ‘জয় বাংলা’ শব্দটি বলার আহ্বান জানিয়ে আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘জয় বাংলা’ শব্দটি মুক্তিযুদ্ধের। এখন থেকে শব্দটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনে সরকারের কাছে অনুমতি চাওয়া হবে। এ সময়ে তিনি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিলে উপস্থিত কর্মকর্তারাও জয় বাংলা বলেন। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র এখনো এই মহান নেতাকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। তারা হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ওপর কোনোরকম আঘাত, কোনো অপমান মেনে নেয়া হবে না, সহ্য করা হবে না। সংবিধান ও রাষ্ট্রের ওপর আঘাত কঠোরভাবে মোকাবেলার ঘোষণা দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সংবিধানের অংশ। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু দেশ ও পতাকা দিয়েছেন। মানচিত্র দিয়েছেন। তার ওপর হামলা হলো সংবিধান, রাষ্ট্র ও জনগণের ওপর হামলা। রাষ্ট্র অবশ্যই তার প্রচলিত আইন বিধিবিধানের মাধ্যমে তা কঠোরভাবে মোকাবেলা করবে। বেনজীর আহমেদ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘রাষ্ট্র মহাপরাক্রমশালী। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারণ করার দুঃসাহস দেখাবেন না।’ তিনি বলেন, ‘মসজিদ ও মাদরাসা বানানো রাষ্ট্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত। তবে খাস জমি দখল করে যেন না হয়। নিম্ন আদালতের বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিকাশ কুমার সাহা বলেন, ‘আমাদের ভাবতে খুব অবাক লাগে, ১৬ ডিসেম্বরের মাত্র তিন দিন আগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা ও ভাঙচুরের উসকানি দেয়ার জন্য প্রতিবাদ সভায় মিলিত হতে হচ্ছে। এটা খুব দুঃখের ও কষ্টের।’ ধর্মীয় ও মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থাকে তদারকির মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানান বিসিএস খাদ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: মনিরুজ্জামান। সমাবেশে ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন। (প্রথম আলো, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০)
একটি ভিন্নধর্মী বিবৃতি দিয়েছে জাসদ। ভবিষ্যতে ভোটাধিকার, আইনের শাসন এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রশ্নেও সাংবিধানিক চেতনা রক্ষার্থে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। এক বিবৃতিতে দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব এবং সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন এ আহ্বান জানান। অবশ্য আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এভাবে সরকারি কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নতুন নয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সে নির্বাচনকে ‘বেআইনি’ আখ্যা দিয়ে ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন গণপ্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গঠিত ‘জনতার মঞ্চে’ এসে প্রকাশ্যে একাত্মতা প্রকাশ করেন তারা। এ ছাড়া ২০১৩ সালের যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। সেই সময়ে আইন সংশোধন করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা ‘গণজাগরণ মঞ্চে’র সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন সচিবালয় থেকে সরকারি কর্মচারীরা। স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৭৫ সালে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আমলা প্রমুখ সবাই সরকারি দলে যোগ দেয়ার বিধান করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংলাপ, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং আশেপাশের ভেসে আসা কথাবার্তায় মনে হয়, বিষয়টি সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছে না। তারা যুক্তি দিচ্ছেন, মুক্তিযুদ্ধের মতো বা যুদ্ধাবস্থায় এ ধরনের আনুগত্য প্রকাশ করা যায়। স্বাভাবিক সময়ে নয়। সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্তিগুলোও অগ্রাহ্য করা যায় না। তবে তা রাজনৈতিক সরকারের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে। সফলতা নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কোনো বিতর্কের বিষয় হতে পারেন না। তিনি এই জাতির স্থপতি। তার প্রতি কারো কোনো অশ্রদ্ধা নেই। শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রক্রিয়া ভিন্ন রকম হতেই পারে। চরমোনাই পীর বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করেন। তিনি মনে করেন, ভাস্কর্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর পারলৌকিক জীবন মহিমান্বিত হবে না। এভাবে, শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যাপারে ভিন্ন মত ও পথ থাকতেই পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে আমলাতান্ত্রিক পথে মোকাবেলা করে সংগঠনটি অরাজনৈতিক আচরণ করেছে। দু’জন মাদরাসা ছাত্রের অন্যায় অপকর্মকে রূপ-রস গন্ধ দিয়ে যেভাবে পরিবেশন করা হয়েছে তাতে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ রয়েছে। আলেম সমাজের পক্ষ থেকে বারবার নিশ্চিত করা হয়েছে যে, তারা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করেন। তাদেরকে অরাজনৈতিক পথে, প্রশাসনিক তাঁবেদারিতে ছেড়ে দেয়া রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচায়ক নয়। তাদের যে অস্বীকার করা যায় না, হেফাজতে ইসলাম প্রধান আল্লামা শফীর গণভবনে গমন তা প্রমাণ করে। তিলকে তাল করা বা সামান্য ঘটনাকে অসামান্য করায় বঙ্গবন্ধুর ইমেজের ক্ষতি হচ্ছে কি না তা-ও ভাবনার বিষয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিরোধী দল এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। অপর দিকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ভাস্কর্যের অবমাননা করেছে। তবে এটাও সত্য, আদর্শিকভাবে বিএনপির রাজনীতি ভাস্কর্যের পক্ষে নয়।’ বস্তুত বিষয়টি ভাবাদর্শের সঙ্ঘাত সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগ স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে এর একটি সম্মানজনক রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে পারত। অতীতে এর উদাহরণ রয়েছে। মনে রাখতে হবে, আমলার কাজ যেমন রাজনীতিকরা করতে পারেন না, তেমনি রাজনীতির কাজও আমলারা করতে পারেন না। ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা