পার্থিব জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ১৯ নভেম্বর ২০২০, ২০:২৭
‘আর পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও তামাশার ব্যাপার ব্যতীত কিছুই নয়। যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য পরকালের আবাসই শ্রেয়, তোমরা কি অনুধাবন করো না?’ (সূরা আল-আনআম : ৩২)
শব্দের ওপর আলোচনা
লাহুয়ান ও লাবুন শব্দ দু’টি সমাথর্ক। কেননা, উভয়ই বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে অবান্তর কাজে উৎসাহ দান করে এবং হালাল-হারাম নির্বিশেষে অযথা চিত্তবিনোদন বা আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত করে। লাবুন খেলাধুলা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। লাহুয়ান বলতে ওই বস্তুকে বোঝায় যা মানুষকে কষ্টের কাজে লিপ্ত এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে।
মুফাসসিরদের মতামত
ক. আল্লামা আলুসি র: লিখেছেন, আগের আয়াতে এ পার্থিব জীবনের পেছনে বিপদসঙ্কুুল আরেকটি জীবন আছে তা বলার পর এ উভয় জীবনের মধ্যে মূলত কী পার্থক্য, এ আয়াতে তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ কতটুকু পার্থিব উদ্দেশ্যে, পার্থিব জীবনের কাজ এবং ফলাফল ক্ষণস্থায়ী হওয়ার দৃষ্টিতে ক্রীড়া-কৌতুকের সমতুল্য ছাড়া কিছু নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ মুফাসসিরের মতে- ইবাদত, নেক আমল এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজকর্ম ও শ্রম এ কথার আওতাবহির্র্ভূত হয়ে যাবে।
সাইয়েদ কুতুব শহীদ র: তার তাফসিরে লিখেছেন- এই আয়াতের বক্তব্য একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য; কিন্তু ইসলামী দৃষ্টিতে জীবনের সংগঠন সহজসাধ্য নয়। ইসলামে বৈরাগ্যবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলামী ধ্যান-ধারণা জীবনের যে জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি পেশ করে, তাতে পার্থিব জীবনের কোনো অংশ তুচ্ছ ও অবহেলিত হবে না এবং প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই বর্জন করা হবে না। এ ব্যাপারে সাহাবিদের জীবনকে আদর্শ মনে করতে হবে। সম্পূর্ণ জীবন সম্পর্কে এরূপ ধারণার অবস্থান, লালন ও বাস্তবায়ন তাদেরকে সফল করেছিল ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক জীবনেও। তারা দুনিয়ায় দাস হয়ে বাস করেননি। দুনিয়ার ওপর তারা আরোহণ করেছিলেন, দুনিয়া তাদের ওপর আরোহণ করতে পারেনি।
সামাজিক তাৎপর্য
ইহকালীন জীবনে মুসলিম জাতির দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে- এ আয়াত থেকে তার স্পষ্ট দিকদর্শন পাওয়া যায়। এ জীবন পরকালীন জীবনের তুলনায় নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী। জীবনের স্বার্থের জন্য কোনো মুসলিম ব্যক্তি বা সমাজ পরকালীন জীবনের কল্যাণকে পরিত্যাগ করতে পারে না।
কুরআনের প্রায় প্রতি সূরাতেই এ ধরনের আয়াত রয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, এটা হচ্ছে ইসলামের একটি মৌলিক শিক্ষা। ইসলামের এ দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে মুসলিম ব্যক্তি ও সমাজের বৈষয়িক ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভিত্তি হতে হবে। যদি তা হয়, তাহলে একজন মুসলিম এ দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের সামগ্রী সংগ্রহের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে না এবং সে জন্য কোনো বাতিল পন্থা বা উপায় অবলম্বন করবে না। মুসলমানের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনেও এ নীতি অবলম্বিত হবে। এ নীতির প্রভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিচার, সাম্য, ত্যাগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
কেননা, পরকালের প্রাধান্য বর্জন-ভিত্তিক দর্শন জুলুম, অত্যাচার, অবিচার ও হিংসা-বিদ্বেষ এবং সঙ্কীর্ণ স্বার্থবুদ্ধির কারাগার থেকে ব্যক্তি মুক্ত করে এবং সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থ-সামাজিক জীবনের বিভ্রান্তি থেকে সমাজকে রক্ষা করতে পারে। বর্তমানে তা যে হচ্ছে না, তার কারণ সমাজে ইসলামী শিক্ষা সঠিকভাবে প্রসার লাভ করেনি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তার কোনো প্রতিফলন নেই। ব্যক্তি ও সমাজ জীবনেও ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়িত হয়নি।
এ শিক্ষা এবং আদর্শ বাস্তবায়িত হলে সমাজ ও রাষ্ট্র এমন ব্যবস্থা কায়েম করবে, যাতে কোনোরূপ শোষণ ও জুলুমের মাধ্যমে কেউ ভোগ-বিলাসের সামগ্রী সংগ্রহ করতে না পারে। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় এরূপ কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে না, যাতে সাধারণ মানুষের মৌলিক প্রয়োজন উপেক্ষা করে মুষ্টিমেয় কিছু বিত্তশালী লোকের ভোগ-বিলাসের সামগ্রী জোগানের সুযোগ বেশি হয়। কারণ এ আদর্শ ও শিক্ষা ভোগবাদের মূলোৎপাটন করে একটা সরল ও মধ্যপন্থী জীবন ব্যবস্থা কায়েম করতে মুসলিম ব্যক্তি ও সমাজকে অনুপ্রাণিত করে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা