২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দুর্দিনে মিডিয়া কি নতুন করে ভাববে

দুর্দিনে মিডিয়া কি নতুন করে ভাববে - ছবি : সংগৃহীত

করোনা মহামারীর বিপর্যয়ে প্রিন্ট মিডিয়ার প্রচারসংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে। মহামারী ইলেকট্রনিক মিডিয়ার দর্শক-শ্রোতা কমায়নি। তবে উভয় মিডিয়ার বিজ্ঞাপন থেকে আসা আয় কমে গেছে। তাই সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়ের মধ্যে এখন সঙ্গতি নেই। মালিক ও কর্তৃপক্ষ অনেকে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আবার অনেকে এ পরিস্থিতির একটা সুযোগ গ্রহণ করে কর্মী ছাঁটাই ও মজুরি কমিয়ে দেয়ার জন্য এটিকে ব্যবহার করছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের এখন বড় দুর্দিন। বেকার সাংবাদিকদের সাথে নতুন করে আরো অনেক বেকার যোগ হয়েছেন। যারা এখনো কোনো রকমে টিকে আছেন, তারাও আশঙ্কা করছেন শেষ পর্যন্ত তারা এ পেশায় টিকে থাকতে পারবেন কি না।

একটা সময় ছিল ‘সাংবাদিক’ পরিচয় দিলে মানুষ জিজ্ঞাসা করতেন, এর সাথে আর কী করেন আপনি। অর্থাৎ সাংবাদিকতা নিছক শৌখিন কাজ বলেই অনেকে ধারণা করতেন। আর এ পেশা থেকে যথেষ্ট আয় আসে না, গড়পড়তা এমন ধারণা ছিল। তাই সাংবাদিকতার পাশাপাশি অন্য একটি পেশা গ্রহণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। সাংবাদিকতার এই দশা অনেকটা কাটিয়ে ওঠা গিয়েছিল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার বিপুল বিস্তারের মাধ্যমে। তবে এটা যে সাংবাদিকতা পেশার একটা দৃশ্যমান কসমেটিক উন্নয়ন, করোনা আমাদের সেটি দেখিয়ে দিয়েছে।

মিডিয়া মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের অনেক সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠন সাম্প্রতিক সময়ে দেশের মিডিয়া ও সাংবাদিকতার সঙ্কট কাটানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার মাহামারীর ক্ষতি কাটানোর জন্য ব্যাপক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্য থেকে মিডিয়ার প্রতি কোনো ধরনের সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের মনোভাব দেখা গেল না। স্বাভাবিক সময়ে সাংবাদিকদের যেসব ন্যায্য দাবি-দাওয়া সরকারের প্রতি ছিল সেগুলোর প্রতি সাড়া দিতেও সরকার রাজি নয়। সম্পাদক পরিষদ ২৪ আগস্ট এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সেবা শিল্প হিসেবে সংবাদপত্র কোনো সহযোগিতা পায়নি। পৃষ্ঠাসংখ্যা কমিয়ে, প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয়সঙ্কোচন করে সংবাদপত্র বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। সাহায্যের বদলে এই নাজুক পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। এ জন্য ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’কে উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্পাদক পরিষদ অনুভব করছে এর বিরুদ্ধে সংবাদপত্র ও সংবাদকর্মীদের জন্য আলাদা রক্ষাকবচ দরকার।

এ দিকে সরকার ৩৪টি নিউজ পোর্টালকে অনলাইন নিবন্ধন দিয়েছে। এ তালিকায় দেশের পরিচিত, প্রধান ও গ্রহণযোগ্য সংবাদপত্রগুলোর পোর্টালের নাম নেই। বোঝা যাচ্ছে, প্রতিটি নামী-দামি সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানকে অনলাইনের জন্য আলাদা অনুমোদন নিতে হবে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের প্রধান ধারার সংবাদপত্র কত উদারভাবে এ সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। অনেক সময় সত্য নয়, এমন বিষয় আশয়কেও সরকারের সুবিধার স্বার্থে সংবাদমাধ্যম এড়িয়ে গেছে। তার পরও সরকার বৈধ ও প্রাপ্য সুযোগগুলোও সংবাদমাধ্যমকে দিতে রাজি হচ্ছে না।
এর তিন দিন আগে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন ‘নোয়াব’ এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সংবাদপত্র শিল্প একেবারে খাদের কিনারে এসে উপস্থিত হয়েছে। নোয়াবের পক্ষ থেকে আগের দাবি-দাওয়া আবারো পেশ করা হয়। সংবাদপত্রকে ৩৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স দিতে হয়। লাভজনক পোশাক শিল্পকে মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। সেবাশিল্প হিসেবে নোয়াবের প্রার্থনা, সংবাদপত্রের জন্য এ ট্যাক্স যেন ১০ শতাংশের বেশি না হয়। আমদানি করা নিউজপ্রিন্টের ওপর থেকে যেন ভ্যাট প্রত্যাহার এবং বিজ্ঞাপন আয়ের উৎস থেকে ট্যাক্স ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়।

এর সাথে আরো কিছু দাবি-দাওয়া নিয়ে নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে অনেকবার ধরনা দেয়া হয়েছে। সরকার এসব দাবি-দাওয়া পূরণের কোনো প্রয়োজন অনুভব করেনি। টেলিভিশন চ্যানেল মালিকদের সংগঠন ‘অ্যটকো’র পক্ষ থেকে একই ধরনের দাবি-দাওয়া পেশ করতে দেখা গেল। এই দুর্দিনে তাদের করুণ প্রার্থনার বিষয়কে সরকার গুরুত্বের সাথে নিয়েছে এমন দেখা গেল না। বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর অবস্থা করোনা মহামারীর মধ্যে আরো করুণ অবস্থায় পতিত হয়েছে।

এই দুঃসময়ে মিডিয়ার অঙ্গীকার ও দায়বোধ নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন; যাতে মিডিয়া কেন সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাবে তার যৌক্তিকতা অনুধাবন করা যায়। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক দেশ পরিচালিত হয় আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মাধ্যমে। গণতন্ত্র চর্চা করতে গিয়ে দেখা গেছে আরেকটি স্বাধীন সম্মিলিত প্রতিষ্ঠানের দরকার। কারণ এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জট বেঁধে যেতে পারে বা কাজের মধ্যে ‘ব্লক’ সৃষ্টি হতে পারে। ঠিক মানুষের দেহে যেমন রক্তের নালীতে ব্লক হয়ে মানুষটি রোগগ্রস্ত হতে পারে তেমনি ব্যাপার। এ জট বা ব্লক প্রতিনিয়ত ছুটানোর প্রয়োজন পড়ে। অলিখিতভাবে এ জায়গাটি দখল করে নিলো সংবাদমাধ্যম। এটি সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপ করে না; সরকারের তিনটি বিভাগের কর্তৃত্ব বা নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সঠিক ও স্বচ্ছ রাখতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় এর অপরিহার্য অবস্থানের কারণে সংবাদমাধ্যম ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইন বিভাগ বলতে যেমন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বোঝায়, একইভাবে ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ বলতে রাষ্ট্রের সব সাংবাদিককে একসাথে বোঝায়।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কাঠামোগত বিন্যাসের কারণে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ দেশের নাগরিক সাধারণের কাছে যায়। শেষ পর্যন্ত তাই এসব প্রতিষ্ঠান জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। ওয়াচডগের ভূমিকা পালনকারী মিডিয়ার দায়বদ্ধতা কোথায় যাবে? মিডিয়া আসলে কার কাছে দায়বদ্ধ হবে? না, মিডিয়ার দায়বদ্ধতার কোনো প্রয়োজন নেই। তারা কার স্বার্থে একটি রাষ্ট্রের মধ্যে কার্যকর হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে পশ্চিমা গণতন্ত্রের সফলতার মধ্যে। পশ্চিমে দেখা গেল জনগণের পক্ষ নেয়া একটি স্বাধীন ও মেরুদণ্ডসম্পন্ন মিডিয়াব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা আসলে জনসাধারণের স্বার্থকে পাহারা দিয়েছে। ফলে তাদের অনেক উন্নয়ন যেমন হয়েছে, সেটাকে তারা জনগণের স্বার্থে রক্ষাও করতে পেরেছে।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের কাছে একই প্রশ্ন জনসাধারণের পক্ষ থেকে ওঠা উচিত। বিগত দিনে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম জনসাধারণের প্রতি কী আচরণ করেছে সেটা মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। এটা এ কারণে প্রয়োজন যে, এ সংবাদমাধ্যমকে টিকে থাকতে হলে তাদের প্রতি জনসমর্থন প্রয়োজন। যেমন সাংবাদিক ও মিডিয়া মালিকদের প্রায় সব সংগঠন নিজেদের পেশাগত বিপত্তি নিয়ে সরকারের কাছে যাচ্ছে। সরকার তো আলাদা কিছু নয়। তারা জনসাধারণের প্রতিনিধি। তারা যদি প্রয়োজন মনে করে মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সাহায্য দরকার তাহলে সেটা তারা দেবে।

বাস্তবে এ দেশের মিডিয়া নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে বিভক্ত মতামত রয়েছে। জনসাধারণের একটা বিপুল অংশ মনে করে, এ দেশের মিডিয়া জনসাধারণের সম্মিলিত স্বার্থ পূরণ করে না। মিডিয়া আউটলেটগুলোর অনেকেই এমন সংবাদ ও মূল্যায়ন প্রচার করে, যার সাথে দেশের স্বার্থ সম্পৃক্ত নয়। মতভিন্নতা গণতান্ত্রিক সমাজে একটা সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এর পরও জনসাধারণকে এ আস্থা পেতে হবে যে, মতভেদ থাকার পরও সম্মিলিত মিডিয়া সমগ্র জনসাধারণের স্বার্থের পক্ষে রয়েছে।

বিগত দিনের অনেক ঘটনাই এমন রয়েছে, যা উল্লেখ করলে বুঝতে সুবিধা হবে, কেন এ দেশের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যম জনগণের আস্থা হারিয়েছে। আর কেন তারা এখন সরকারের কাছেও খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করা যায়। এই বিকল্প মাধ্যমটি মেইনস্ট্রিম জার্নালিজমকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র ও জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায় না। সেগুলো ঠিকই বিকল্প মাধ্যমে পাওয়া যায়। করোনা মহামারী ছাড়াও এ দেশের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমের দুর্গতির প্রধান কারণ এটি।

গণমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে বেসরকারি সংস্থা ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এআরডিআই) একটি গবেষণা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম পরিচালিত ওই জরিপে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক তথ্যপ্রাপ্তির উৎস হিসেবে পত্রিকার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। তথ্যপ্রাপ্তির জন্য ৯ শতাংশ মানুষ ফেসবুকের ওপর নির্ভর করে। পত্রিকার ওপর নির্ভর করে ৮ শতাংশ মানুষ। এ গবেষণার বিস্তারিত আমরা জানি না, তবে এ ফলাফলের মধ্যে একটা বার্তা রয়েছে। কেন প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্র্র বাঁচিয়ে রাখবে বা এর প্রয়োজনীয়তাটা কী?

শাহবাগের ‘গণজাগরণ’ মঞ্চের কথা সবার মনে থাকার কথা। এ মঞ্চে কিছু তরুণ-তরুণী জড়ো হয়েছিল। তাদের দাবি ছিল কিছু নির্দিষ্ট মানুষের ফাঁসি দিতে হবে। একটি বিচারাধীন বিষয়ে এ আন্দোলন চলছিল। মঞ্চে সমবেত তরুণ-তরুণীদের খাবার দাবার সরবরাহ করা হতো। মঞ্চের নেতৃস্থানীয় অনেকের জন্য আরো ‘বিশেষ’ আয়োজন ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের যাবতীয় সাহায্য করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিñিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। কয়েকটি বিদেশী দূতাবাস থেকে তাদের এমন চেতনা জাগার জন্য উৎসাহ ও বাহবা দেয়া হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের আন্দোলন আগে কখনো দেখা যায়নি যেখানে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য কোনো ধরনের ঝুঁকি ছিল না। খোদ সরকার এর সমর্থক, ছিল সব সাহায্য সহায়তা ও দামি খাবারের আয়োজন।

বাংলাদেশের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমের আচরণ তখন ছিল বিস্ময়কর। তারা মানুষকে ফাঁসি দেয়ার এ দাবির মধ্যে ‘মহান’ কিছু খুঁজে পায়। প্রতিদিন এর সপক্ষে খবর ও মন্তব্য ছাপতে শুরু করে। বিশেষ কাভারেজের ধরন দেখে মনে হচ্ছিল, পৃথিবীতে এর চেয়ে আর কোনো ‘বড়’ আন্দোলন কখনো হয়নি। দিনের পর দিন মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার লিড নিউজ ছিল এটি। পত্রিকাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে পোস্টার করে জ্যাকেট করে একে কাভার করেছে। টিভি চ্যানেল দিনরাত এর খবর প্রচার করেছে। এসব খবর ও মন্তব্য দেখে সারা দেশের মানুষ ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিল, ব্যাপারটা কী। মানুষ ছুটে আসে এ আন্দোলন দেখার জন্য। প্রায় একই সময় আমরা মিসরের তাহরির স্কয়ারে নিপীড়িত জনতাকে সমবেত হতে দেখেছি। নিকটাতীতে সমগ্র আরবে বঞ্চিত জনতার ফেটে পড়া দেখেছি। প্রত্যেকটি আন্দোলনে মানুষের আত্মত্যাগ দেখা গেছে। আত্মবলিদানে রক্তের স্রোত বয়েছে ওই সব আন্দোলনে। অন্য দিকে শাহবাগে সরকারি হেফাজতে তরুণ-তরুণীদের জমায়েত নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমের সীমাহীন উৎসাহ জনসাধারণের কাছে তাদের নেতিবাচকভাবে চিহ্নিত করেছে। একই সময় ওই জমায়েতের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট আন্দোলনের প্রতি মিডিয়া ঠিক বিপরীত আচরণ গ্রহণ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কঠিনভাবে দমিয়ে দেয়। মিডিয়াও এ দমন-পীড়নের অন্যতম সহযোগী ছিল।

বাংলাদেশের মিডিয়ার কাছে কী উত্তর রয়েছে কিছু তরুণ-তরুণীর জমায়েতকে মহান আন্দোলনকে বলে উসকানি দেয়া এবং এর বিপরীতে ‘প্রতিক্রিয়াশীল’দের বিরুদ্ধে সরকারি দমনের পক্ষে প্রপাগান্ডা চালানোর ব্যাপারে। বিগত এক দশকে বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় এ ঘটনাটি সবচেয়ে প্রভাব সৃষ্টিকারী একটি ঘটনা বলে আমরা এর উল্লেখ করলাম। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য ওই ঘটনাটির যুগান্তকারী ভূমিকা রয়েছে। আজ বাংলাদেশের সমাজে বিপুল অনিয়ম দুর্নীতি অপরাধ প্রবণতার লাগামহীন বিস্তারের পেছনে তখনকার দমন-পীড়নের সম্পর্ক রয়েছে। ‘হেফাজত’ একটি প্রতিক্রিয়াশীল প্রান্তিক গোষ্ঠী এ কথা বলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

জাতীয় স্বার্থের এ ধরনের আরো অনেক প্রসঙ্গ রয়েছে যেগুলো নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমকে জনসাধারণ প্রশ্ন করতে পারে। কেন এ দেশের মিডিয়াকে জনসাধারণকে তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হবে? এ প্রশ্নের উত্তর মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিক নেতাদের দেয়া প্রয়োজন। কাউকে প্রান্তিক প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী বলে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ওয়্যারে নেমে যাওয়ার অধিকার মিডিয়ার থাকতে পারে না। মিডিয়াকে অবশ্যই অতীতের কৃতকর্ম থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আজ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার সংবাদ দিতে গিয়ে সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে অনেক প্রার্থনা অনুনয় বিনয় করেও এ দেশের সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা গুরুত্ব পাচ্ছেন না, ব্যাপারটি অতিশয় দুঃখজনক।

jjshim146@yaho

 


আরো সংবাদ



premium cement