‘দাঈ’র জ্ঞান ও গুণাবলি
- শাহ্ আব্দুল হান্নান
- ১৩ আগস্ট ২০২০, ১৯:৪৬
আমি এ নিবন্ধে তিনটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করব। প্রথমত, ইসলামী দাওয়াতের জন্য কী কী কাজ করা যায়। দ্বিতীয়ত, একজন ইসলামী দাঈর কী কী জ্ঞান থাকতে হয়। তৃতীয়ত, দাঈর গুণাবলি কী কী হবে?
ইসলামের দাওয়াতের জন্য যেসব কাজ করা যায় তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যক্তিগত যোগাযোগ। একজন দাঈ যাদেরকে দাওয়াত দিতে চান তাদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করতে হবে এবং অনেক দিন পর্যন্ত কিছু না কিছু সময় দিতে হবে এ কাজে। বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে এবং ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে ক্ষুদ্র বিষয়গুলো তুলে না আনা এবং অতিরিক্ত বিতর্কমূলক বিষয় না তোলার জন্য। এতে আশা করা যায়, ওই ব্যক্তিরা ইসলামে প্রভাবিত হবেন এবং ইসলামের কর্মী হয়ে যাবেন। দাওয়াতের কাজে বই বিলি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দাওয়াতের আওতায় যারা আসবেন তাদেরকে এবং অন্যদেরকেও বই দিতে হবে। বই বিলি করার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ওই সব বই দেয়া ভালো যেগুলো ইসলামকে সুন্দরভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব দিয়েছে। দাওয়াতের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে কয়েকজনকে নিয়ে একটি ক্লাস নেয়া এবং সেসব ক্লাসে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা। এসব ক্লাস বছরব্যাপী চলতে পারে। তারপর আবার নতুন ক্লাসের পরিকল্পনা করা যায়। দাওয়াতের ক্ষেত্রে নিজের পরিবারের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং সবাইকে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলতে হবে। দাওয়াতের আওতায় প্রতিবেশীদের ওপর কাজ করতে হবে এবং আত্মীয়-স্বজনদের ওপরেও কাজ করতে হবে। ইসলামের দাওয়াতের প্রয়োজনে ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার করতে হবে। ভালো লেখা ছড়িয়ে দিতে হবে এবং অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে।
একজন দাঈ কী কী বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা দরকার সে বিষয়ে আলোচনা করব। তাকে তাওহিদ যা ইসলামের মূল ভিত্তি, এর তাৎপর্য সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। তাওহিদের অর্থ হচ্ছে, স্রষ্টা মাত্র একজন। আর বাকি সব সৃষ্টি। তাওহিদের অন্যতম তাৎপর্য হচ্ছে, মানুষের সমতা। ইসলামে যে খেলাফতের কথা বলা হয়েছে তারও তাৎপর্য হচ্ছে মানুষের সমতা। তারপর কুরআন ও সুন্নাহ, যা হচ্ছে ইসলামের মূল উৎস তা ভালো করে জানতে হবে। এই দু’টির মৌলিক বিষয়গুলো ভালো করে বুঝতে হবে। তারপর তাকে শরিয়াহর লক্ষ্য কী (মাকাসিদ আশ শরিয়া) ভালো করে জানতে হবে। শরিয়াহর মূল লক্ষ্য হচ্ছে জীবন রক্ষা, ঈমান রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, ভবিষ্যৎ বংশধরদের রক্ষা করা ইত্যাদি। সব আইন করার সময় এসব লক্ষ্যকে ভিত্তি করতে হবে। তারপর একজন দাঈকে আধুনিক বাস্তবতা (ফিক আল ওয়াকি) জানতে হবে, আধুনিক বাস্তবতা না জানলে তার সব কাজ ভুল পথে যাবে। দাঈকে তার কাজের পরিণতি কী হতে পারে সে সম্পর্কেও জানতে হবে। একজন দাঈকে ভেবেচিন্তে কাজ করতে হবে যেন ভালো করতে গিয়ে মন্দ না হয়ে যায়। একজন দাঈকে কৌশল এবং অগ্রাধিকার জানতে হবে। না হলে কাজ এলোমেলো হয়ে যাবে।
এখন আমি দাঈর গুণাবলি প্রসঙ্গে আলোচনা করছি। একজন দাঈকে আমল ও আখলাকের দিক দিয়ে মডেল বা আদর্শ হতে হবে। না হলে লোকেরা তার দাওয়াত গ্রহণ করবে না। একজন দাঈর মধ্যে ক্ষমা, বিনয়সহ সব ধরনের সৎ গুণাবলি থাকতে হবে। একজন দাঈকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কোনো প্রচেষ্টাই বাদ রাখা যাবে না। দাঈকে জানতে হবে, কী করে অন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক উন্নত করতে হয়। দাঈকে নিজের ইবাদতের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকা ঠিক হবে না। একজন দাঈকে সমাজসেবায় ব্যাপক অংশগ্রহণ করতে হবে। একজন দাঈর আত্মবিশ^াস থাকতে হবে। তার মধ্যে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া থাকবে না। অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া কাজের ক্ষতি করে। দাঈকে আশাবাদী হতে হবে এবং পজেটিভ মনের অধিকারী হতে হবে।
সবশেষে বলব, মুসলিম উম্মাহর ত্রুটির জন্য কেবল শত্রুদের ষড়যন্ত্র দাঈ, এ কথা মনে করা ঠিক হবে না। ষড়যন্ত্র অবশ্যই আছে। কিন্তু উম্মাহর অনেক ত্রুটি, অনেক ঘাটতি আমাদের নিজেদের দোষে; এটাও মনে রাখতে হবে। আমাদের সে ঘাটতি দূর করার চেষ্টা করতে হবে। আশা করি, ইসলামের দাওয়াতের ক্ষেত্রে উপরোক্ত বিষয়গুলো দাওয়াতি কাজের জন্য সহায়ক হবে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা