২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতের মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা

ভারতের মুসলমানদ - সংগৃহীত

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার জন্য সারা বিশ্বে ভারতের মুসলমানদের নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ উদ্বেগ বাংলাদেশেও আছে। কিছু দিন আগে ভারতের পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) সংশোধন করা হয়। এই আইনে সুস্পষ্টভাবে মুসলিমদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে ভিন্ন করা হয়েছে। সংশোধনীতে বলা হয়েছে- ‘বিদেশ থেকে যেকোনো ধর্মের লোক ভারতে এলে ভারতের নাগরিকত্ব পাবে, কিন্তু মুসলিমরা পাবে না।’ অথচ ভারতের সংবিধানে ধর্মভিত্তিক পার্থক্য করার কোনো অনুচ্ছেদ নেই।

এর বিরুদ্ধে সারা ভারতে মুসলমানরা আন্দোলন করছে। ভারতের অমুসলিম জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশও ওই আইনের সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে। ভারতের কংগ্রেস, তৃণমূল পার্টি ও অন্য অনেক দল এই সংশোধনীর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বিজেপি সংখ্যাধিক্যের জোরে পার্লামেন্টে এটি পাস করেছে। এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। আশা করি, একটি ভালো সমাধান ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট দেবেন।

এর বিরুদ্ধে দিল্লিতে মুসলিম জনগণ ব্যাপক আন্দোলন করেছে। দিল্লির শাহীনবাগে কেবল মুসলিম মহিলারা হাজারে হাজারে বিক্ষোভে নেমে এক-দুই মাস তারা রাস্তায় থাকে। সব নির্যাতন উপেক্ষা করেই তারা রাস্তায় থাকে। ভারতের অন্য সব অংশে একইভাবে মুসলিম নারী-পুরুষ এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশে দাঙ্গা হলো। এ দাঙ্গায় শতাধিক মুসলমান নিহত হয়েছে। তাদের সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়। তারা কিছুদিন ক্যাম্পে ছিল। এখন হয়তো তারা ঘরে ফিরে এসেছে। পুলিশ এ দাঙ্গায় সরাসরি পক্ষপাতিত্ব করেছে। অন্য দিকে, বিজেপির এক নেতা এ দাঙ্গার মূল উসকানিদাতা। বিজেপির একটি অংশ দিল্লির বাইরে থেকে লোক এনে এ দাঙ্গায় অংশ নিতে বাধ্য করে।

উপরোক্ত দুটি কারণে সারা বিশ্বে ভারতের মুসলমানদের নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নাকের ডগায়, দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশে এ দাঙ্গা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। যদি রাজধানীতে এ রকম হতে পারে, তাহলে রাজধানীর বাইরে কেমন হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়।

এখন ইতিহাসের দিকে যাবো। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। ইংরেজ সরকার এবং মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের সমঝোতার মাধ্যমে এই বিভাগ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় স্বাধীনতা আইনে (ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট অব ইন্ডিয়া) উল্লেখ ছিল- স্বাধীনতার পর পাকিস্তানে অমুসলিম সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকবে এবং ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুরা সে দেশে নিরাপদে থাকবে। মোটামুটিভাবে এটি পালিত হয়েছে যদিও পুরোপুরি নয়। ভারতে মুসলিমবিরোধী অসংখ্য দাঙ্গা হয়েছে গত ৬০-৭০ বছরে। বিশেষ করে, গুজরাটের দাঙ্গার কথা সবাই জানেন। সেখানে কয়েক হাজার মুসলমান হিন্দুদের হাতে নিহত এবং নারীরা ধর্ষিত হয়। এ অবস্থার মধ্যেই ভারতের মুসলমানরা ছিল বা আছে। তারা খুব কমই চাকরি পায়। পার্লামেন্টে তাদের প্রতিনিধিত্ব খুব কম।

এখন এ সমস্যার সমাধানের কথা বলব। এর সমাধান সহজ নয় এবং হবে, তা বলা যায় না। এর সমাধান করতে হলে এক দিকে ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপিকে তার উগ্র হিন্দুত্ববাদ ছাড়তে হবে। তারা জোর করে মুসলিমদের ধর্মান্তরিত করছে। অবশ্যই তা বাদ দিতে হবে, (‘ঘরওয়াপসি’ বা ঘরে ফেরার নামে, অর্থাৎ হিন্দু ধর্ম হচ্ছে আসল ঘর। মুসলমানদের ঠিক আসল ঘরে ফিরে আসতে হবে) বিজেপির যোগব্যায়াম সবার ওপর চাপিয়ে দেয়া বাদ দিতে হবে।

কারণ যোগব্যায়ামে সূর্যকে প্রণাম করতে হয়; তা মুসলমানরা করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস তৃণমূল পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টিকে মুসলিম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। তারা একটি বড় শক্তি এবং কোনো অংশে বিজেপির চেয়ে কম নয়। তৃতীয়ত, মুসলিমদেরকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তাদের শিক্ষা বেড়েছে। এটা আরো বাড়াতে হবে। তারা সরকারি চাকরি কম পায়। সুতরাং তারা বেসরকারি খাতে ব্যবসা এবং শিল্প গড়ে তুলবে। ভারতের মুসলমান সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। এটা বিশাল সংখ্যা এবং শক্তি। মুসলমানরা চাইলে সবকিছু করাই সম্ভব। তাদের মধ্যে এখন যোগ্য নেতৃত্বও রয়েছে। তাদের কয়েকটি রাজনৈতিক দল আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মুসলিম লীগ এবং ওয়েল ফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়া।

ইসলামপন্থী লোকেরা ওয়েল ফেয়ার পার্টি গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া রয়েছে, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ যা আলেমদের বিশাল সংগঠন। তা ছাড়া রয়েছে ভারতীয় জামায়াতে ইসলামী। এর কাজ ভারতের কোনায় কোনায় রয়েছে। তাদের আলাদা নারী ও ছাত্রসংগঠন আছে। তাদের নেতা একজন ৪৮ বছর বয়সের ব্যক্তি এবং অত্যন্ত যোগ্য। এ ছাড়া ভারতে রয়েছে আরো অনেক মুসলিম সংস্থা। এদের সম্মিলিত চেষ্টায় ভারতের মুসলিমরা তাদের মানমর্যাদা ও অবস্থান ধরে রাখতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement

সকল