করোনার ওষুধ : আশঙ্কার মাঝে আশা
- মীযানুল করীম
- ১৭ মে ২০২০, ২১:২১, আপডেট: ১৭ মে ২০২০, ২১:১৯
বাংলাদেশে জুন মাসে করোনার ওষুধ আসতে পারে। এর পাশাপাশি বিশ্বের প্রায় ১০০টি গবেষণাগারে করোনা মহামারীর ভ্যাকসিন বা ওষুধ আবিষ্কারের জন্য চলছে নিরন্তর গবেষণা। কোনো কোনোটার কাজ ‘অনেকদূর এগিয়ে গেছে’ বলে জানা গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদিও বলেছেন, চলতি বছরের শেষ দিকে কোভিডের প্রতিষেধক উদ্ভাবন সম্ভব হবে, তার দেশের শীর্ষস্থানীয় জীবাণুবিদ অ্যান্থনি ফউসির মতেÑ ২০২১ সালের শুরুর দিকে এ ধরনের ওষুধ মিললেও এতে ঝুঁকি থাকবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) এবং রাশিয়া ছাড়া ইউরোপের ৪০ দেশের নেতারা কয়েক বিলিয়ন ডলারের একটি বিশাল তহবিলের মাধ্যমে করোনা মহামারীর মহৌষধ উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা চালাতে একমত। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন এই বিশ্বজনীন মহতি উদ্যোগে শামিল নেই। সংশ্লিষ্টরা জোর দিয়েছেন করোনার কার্যকর, ব্যয়সাশ্রয়ী, নিরাপদ, সহজপ্রাপ্য ও সর্বজনীন প্রতিষেধক বের করার ওপর। ইউরোপের নেতারা ভার্চুয়াল সম্মেলনে আট বিলিয়ন ডলারের তহবিল কাজে লাগিয়ে কোভিড মোকাবেলার উদ্যোগ নিলেন। এতে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল এবং ইইউর প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফনডার লিয়েন যোগ দিয়েছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেডরোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছেন, ‘তাদের এ উদ্যোগ বিশ্বের সংহতির শক্তিশালী প্রদর্শনী।’
অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র আলাদাভাবে গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। করোনার ভ্যাকসিন তৈরির জন্য হোয়াইট হাউজের কয়েকজন বিজ্ঞানীর একটা টিম operation warp speed নামে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। করোনার ওষুধ উদ্ভাবনই এর লক্ষ্য। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, করোনা জীবাণুর সম্ভাব্য ১৪টি ভ্যাকসিন শনাক্ত করে কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। সিএনএন বলেছে, প্রকল্পের নামটি বিজ্ঞানীদের পছন্দ এবং একটি বিশেষ ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজকে কেন্দ্র করে, ‘সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা’ করে তারা এগিয়ে যাবেন। এই ভ্যাকসিন দ্রুত উৎপাদন, বিতরণ ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাদের তা প্রাপ্য, এসব নির্ধারণের কাজ চলছে। শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফউসির মতে, ‘উৎপাদনের আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না। এ কাজ ঝুঁকিপূর্ণ এবং আগেভাগেই ধরে নিতে হয়, ভ্যাকসিনটা কার্যকর হবে।’ এটি যে নিরাপদ, তা নিশ্চিত হতে হবে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বছরের মধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন পেতে উৎসাহী, হোয়াইট হাউজের করোনা মোকাবেলা কমিটির সমন্বয়ের দায়িত্বশীল ডা: ডেবোরাহ বাক্স মনে করছেন, ‘সংশ্লিষ্ট কাজগুলো যথাযথভাবে শেষ করা উচিত। তবে আগামী জানুয়ারি মাসের আগে কাগজে কলমেও এ ভ্যাকসিন হাতে আসা অসম্ভব।’ যখনই আসুক, ব্রিটেনের একদল গবেষকের কথাই যদি সত্য হয়, অর্থাৎ করোনায় আক্রান্তদের দেহে অ্যান্টিবডি যদি তৈরি হয়ে যায়, তা হলে ভ্যাকসিনের গুরুত্ব ও চাহিদা কমে যাবে অনেকটা।
দুনিয়ার দেশে দেশে কোভিড-১৯ এর ওষুধ আবিষ্কারের জন্য প্রাণপণ প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেমনÑ জার্মান এক কোম্পানি করোনার টিকা আবিষ্কারের লক্ষ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাবে। ১৮-৫৫ বছরের ২০০ সুস্থ ভলান্টিয়ারের ওপর এই ভ্যাকসিন বা টিকা পরীক্ষা করে দেখা হবে। অনেকে বলছেন, ভাইরাস গবেষণায় দেশটি আরো এগিয়ে রয়েছে। জার্মানিতেই ডিপথেরিয়া, টিটেনাস ও ইবোলার সুচিকিৎসা পদ্ধতি বহু দিন আগে উদ্ভাবন করা হয়েছিল। এ জন্য ১৯০১ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে সর্বপ্রথম নোবেল বিজয়ী হন জার্মানির গবেষক এমিলফন রেরিং।
এশিয়ার জাপানও কম নয়। ফ্লু চিকিৎসার জাপানি ওষুধ ‘এভিগান’ করোনা চিকিৎসার বেলায়ও আশার আলো হয়ে উঠেছে। তাই প্যাটেন্ট নিয়ে আরো কয়েক দেশ এই ট্যাবলেট বানাচ্ছে। জাপানি চিকিৎসকরা কেবল ওষুধ নয়, করোনার নতুন ১৩ উপসর্গ শনাক্ত করেও এর মোকাবেলায় অবদান রেখেছেন। জাপানি মিতসুবিশি কোম্পানির অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান কানাডায় গবেষণা চালিয়ে দাবি করেছে, তারা করোনার মতো ‘পার্টিকল’ তৈরি করেছেন, যা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়ক। ব্রিটেনে প্লাজমা বা রক্তের সারবস্তু দিয়ে চিকিৎসা করার ওপর গবেষণা চলছে। করোনামুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের শরীরের রক্ত নিয়ে, ভাইরাস রোগীদের নিরাময়ের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করা হবে। সংরক্ষণের দ্বারা পরেও এর ব্যবহার সম্ভব। এ ধরনের অ্যান্টিবডি বানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রেও গবেষণা চলছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এ জন্য সিয়াটলে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী পেয়েছে। তাদের দেহে সফলভাবে এটা প্রয়োগ করা হলে তা হবে করোনার বিরুদ্ধে একটি বড় সাফল্য। পাশের ভারতও বসে নেই। মুম্বাইতে একটি কোম্পানি কোভিড চিকিৎসার্থে জাপানের ‘ফাভিপিরভির’ ওষুধ তৈরি করবে কয়েক মাসের মধ্যেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার ওষুধ হিসেবে এর স্বীকৃতি দিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রবীণ চিকিৎসক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর এ কে এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ সবার অভিমত, করোনাভাইরাসজনিত ব্যাধি নিরাময়ের কোনো কার্যকর ওষুধ এখনো বাজারে নেই। এ ব্যাপারে গবেষণা চলছে কয়েকটি দেশে। তবে জনমনে প্রশ্ন, করোনার পরীক্ষিত ও প্রমাণিত ওষুধ না থাকলেও কী করে সরকার হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইনকে অনুমোদন দিতে এবং তা কোনো কোনো দেশে রফতানি করতে পারে? এটি মূলত ম্যালেরিয়ার ওষুধ। তাই এটা ব্যবহার করার পর কোনো রোগী মারা গেলে দায় নেবে কে?
মে মাসের গোড়াতেই মার্কিন ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) ‘রেমডিসিভির’ নামের ওষুধকে করোনা চিকিৎসার জন্য অনুমোদন করেছে। করোনা নিরাময়ের বিষয়ে এখনো চূড়ান্তভাবে কিছু বলা না গেলেও আপাতত ধারণা করা হচ্ছে, রেমডিসিভির ‘অনেকটা কার্যকর’। পরীক্ষা চালানোর পরে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ বিজ্ঞানী ফউসির মতে, ‘যেসব করোনা রোগীকে রেমডিসিভির দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে, তারা অন্যদের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ আগেই নিরাময় লাভ করেছেন।’ করোনার প্রকৃত ওষুধ ১৮ মাসের মধ্যে উদ্ভাবনের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ‘ভ্রান্তির’ দরুন রেমডিসিভির পাদপ্রদীপের আলোতে এসে আলোচ্য হয়ে উঠেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন অল্প সময়ের জন্য ভেসে উঠেছিল, যাতে দাবি করা হয়, “করোনা নিরাময়ের জন্য চীনে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহার করা ‘রেমডিসিভির’ ওষুধটি পুরোপুরি ব্যর্থ।” তবে কিছুক্ষণ পরই জানিয়ে দেয়া হয়, এ তথ্য ‘সঠিক নয়’। তাই প্রতিবেদনটি সরিয়ে ফেলা হলো ওয়েবসাইট থেকে। খবরটি প্রকাশ করে ব্রিটেনের সংবাদপত্র ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বলে যে, খসড়া রিপোর্ট ‘ভুলের কারণে’ দেখানো হয়েছে। এভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে রেমডিসিভির।
৪ মে’র পত্রিকায় উঠেছে, ভয়ঙ্কর করোনা রোগ (কোভিড-১৯) থেকে রেহাই পেতে প্রতিষেধকের বিকল্প নেই মনে করা হচ্ছে। তাই এর উদ্ভাবনে প্রাণপণ গবেষণায় লিপ্ত বহু দেশ। চীন ও আমেরিকা তো বটেই; ব্রিটেনের অক্সফোর্ডসহ একাধিক বিখ্যাত ভার্সিটিও এই সারিতে শামিল। বিল গেটসসমেত বড় ধনীরা কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থ ঢালছেন করোনার প্রতিষেধক সম্পর্কিত গবেষণার পেছনে।
এ প্রেক্ষাপটে জানা যায়, চীনের কোনো কোনো ল্যাবে করোনার ওষুধ কত শিগগির বের করা যায়, এ জন্য চলছে জোর তৎপরতা। বেইজিংয়ের একটি ল্যাবরেটরি করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক উদ্ভাবনে ‘আশার আলো’ দেখাচ্ছে বলে চীন সরকারের অভিমত। এবার দেশটিতে অনুমতি দেয়া হয়েছে ৪টি প্রতিষেধক পরীক্ষা করে দেখার জন্য। এর একটির কাজ চালাচ্ছে ‘সিনোভাক বায়োটেক’। তাদের দাবি, একটি প্রতিষেধকের বেলায় ফলাফল ‘আশানুরূপ’। মানুষের দেহে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। ইতোমধ্যে বানরের শরীরে পরীক্ষা চালিয়ে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে, এ প্রতিষেধক তৈরির কাজ এক বছর থেকে দেড় বছর সময় নেবে। এটি যেকোনো প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক। ‘সিনোভাক’ কোম্পানি বলেছে, বাজারে কখন ওষুধটি আনা যাবে, তা বলা যায় না। তবে তারা সান্ত্বনা বাণী শুনিয়েছেন, ‘শিগগিরই ভালো খবর দেয়া যাবে।’ ২০০৯ সালে এই সিনোভাক মহামারী সোয়াইন ফ্লুর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছিল।
চীনের জন্য করোনা ইস্যু নিজের মানসম্মান রক্ষা, সমালোচনার ঝড় বন্ধ করা এবং বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের বিষয়। এ কারণে ক্রমবর্ধমান শক্তি অর্জনকারী বৃহৎ শক্তি, চীনের রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, ‘করোনার সংক্রমণ আমরা ঠেকিয়েছি যেভাবে, একইভাবে এর প্রতিষেধক সবার আগেই বাজারে নিয়ে আনতে সক্ষম হবো।’ তারা এটি সবার আগে করতে পারেন, নাকি প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র তাদের হারিয়ে দেয়Ñ তা দেখার জন্য বিশ্ববাসী উদগ্রীব।
গত ৪ মে’র খবরÑ আফ্রিকার দেশ তাঞ্জানিয়ার প্রেসিডেন্ট একই মহাদেশের বৃহৎ দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্টের ‘আবিষ্কৃত’ একটি হারবাল টনিককে করোনা মহামারীর মহৌষধ মনে করেছেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও সাথে সাথে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, এটাকে করোনার ওষুধ মনে করা ঠিক নয়। একই দিন টিভিতে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে সাক্ষাৎকারে বলছেন, ‘এ বছর শেষ হওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্র করোনার দাওয়াই বের করতে পারবে।’ অর্থাৎ ট্রাম্প আশা করেন, তার বহুল কাক্সিক্ষত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ে মানে আগামী নভেম্বরে, করোনা ক্রাইসিসের নিদান মিলে যেতে পারে তার দেশে। তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে করোনা নিয়ে অনেক উল্টাপাল্টা কথা বলে এবং উদ্ভট কাণ্ড ঘটিয়ে ইতোমধ্যেই নিজেকে আরো বিতর্কিত করে তুলেছেন।
যা হোক, করোনার প্রতিষেধক বা ওষুধ উদ্ভাবন নিয়ে বিশেষত চীন আর আমেরিকায় গবেষণা প্রয়াসের অন্ত নেই। একসময়ে তদানীন্তন বিশ্বের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই বৃহৎশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাশূন্য কে কার আগে ‘জয়’ করতে পারবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকত। এখন পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি বৃহৎ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আর চীন মেতে উঠেছে করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের তীব্র প্রতিযোগিতায়। দেশ দু’টি দুনিয়ার অর্থনীতিতে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় শক্তি। তদুপরি করোনার মহামারীর সূচনা চীনে এবং এই প্যান্ডেমিক বিশ্বে সর্বাধিক প্রাণহানি ও সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকায়। উভয়ের মাঝে কিছু দিন ধরে অব্যাহত ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ এখন রূপ নিয়েছে করোনাযুদ্ধে। এ দিকে দেশে দেশে হাজার হাজার মানুষ করোনা জীবাণুতে সংক্রমিত হচ্ছেন, মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারাচ্ছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চীনবান্ধব, তথা বৈষম্যকারী মনে করে এর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে এনেছেন এবং এখন সংস্থাটির এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে করোনার ওষুধ বের করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। দৃশ্যত, এর পেছনে মানবজাতির কল্যাণের চেয়েও তার পুনর্নির্বাচনের দলীয় রাজনৈতিক তাগিদটা বড়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বে বর্তমানে ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরির কাজ চলছে ১০২টি সংস্থায়। এত দিন এ সংস্থা ছিল মাত্র ৭টি। এগুলো মানব দেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলোর চারটি চীনের। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে একটি করে ভ্যাকসিনের কাজ চলছে। জার্মান ও মার্কিন দু’টি বায়োটেক প্রতিষ্ঠান একটি উদ্ভাবনের কাজ করছে বলে ‘হু’ জানিয়েছে।
অন্য দিকে আমাদের বাংলাদেশের ৬টি প্রতিষ্ঠান আমেরিকার ‘রেমডিসিভির’ ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি পেয়েছে। এটি অন্তত ৭০ শতাংশ সফল বলে দাবি করা হয়েছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে। উল্লিখিত ওষুধ কোম্পানিগুলো হচ্ছে বেক্সিমকো, বীকন, এসকেএফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার ও হেলথকেয়ার। উৎপাদন মে মাসে শুরু হতে পারে। অবশ্য তাদের উৎপাদিত ওষুধ সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। এই ‘রেমডিসিডি’র করোনাকে কতটা কাবু করবে, তা এ মুহূর্তেই বলা না গেলেও জানা যায়, নিকটাতীতে সার্স ও ইবোলা জীবাণুর বিরুদ্ধে ‘বেশ ভালো করেছে’ এটি। এর প্রধান কাজ হচ্ছে, ভাইরাস মানবকোষে ঢুকে যে বংশবৃদ্ধি ঘটায়, তা রোধ করা, অন্তত এর গতি হ্রাস করা। অবশ্য কিডনি ও লিভারে এর ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উদ্বেগের বিষয়।
বাংলাদেশের মতো পশ্চাৎপদ দেশগুলোর ভুক্তভোগী মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতাসঞ্জাত প্রশ্ন : করোনার ওষুধ আবিষ্কারের পর তা এ দেশের মানুষের কাছে আসতে কত দিন লাগবে? এটা যদি দরিদ্রবান্ধব ও নিরাপদ না হয়, যদি সহজে পাওয়া বা কেনা না যায়, তা হলে কী লাভ? তাই উদ্ভাবনের সাথে সুষ্ঠু বণ্টন ও বিপণন ব্যবস্থাও জরুরি।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে করোনার ভ্যাকসিন থাকতে হবে জনসাধারণের নাগালের মধ্যে এবং দাম থাকতে হবে তাদের ক্রয়সীমার ভেতরে। তদুপরি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, ‘করোনা ভ্যাকসিন উদ্ভাবন নয়, আসল চ্যালেঞ্জ হলো এর সুষ্ঠু বণ্টন।’ দেখা যাক, আগামী দিনগুলোতে এটি কতটা নিশ্চিত করা হয়।
অন্যথায় মার্কিন বা অন্য কোনো দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এ ভ্যাকসিন বৈষম্যমূলক ও ধনিকবান্ধব বলেই প্রতিপন্ন হবে। তখন করোনা মহামারীর তাণ্ডব অব্যাহত থাকবে কিংবা দুনিয়ায় হানা দেবে আবার।
পুনশ্চ : চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে দুনিয়ার মানুষ অতিষ্ঠ ও আশঙ্কাগ্রস্ত। এ লড়াই সম্প্রতি মোড় নিয়েছে করোনার দিকে। করোনাকাণ্ডে চীন শুরুর দিকে কিছুটা দিশেহারা হলেও ‘মহাবিপদ ঠেকাতে পেরেছে অনেকটা’। অন্য দিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র নিজের ‘সর্বশ্রেষ্ঠত্ব’ নিয়ে যতই হুঙ্কার দিক আর অহঙ্কার করুক, করোনার ছোবল সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই দিকেই আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মার্কিন প্রশাসনের এহেন ব্যর্থতাকে ব্যঙ্গ করে চীন বানিয়ে ফেলেছে ‘অ্যানিমেশন কার্টুন’। এক যে ছিল ভাইরাস (Once upon a virus) এই রূপকথাধর্মী শিরোনামের অ্যানিমেশনে প্রধান দুই চরিত্র মূলত চীন ও আমেরিকার প্রতীক। রয়টার্স এটা জানায়।
অবশ্য বাচাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গলাবাজি থামছে না। ৩০ এপ্রিল তার দাবি, চীনের উহানের জীবাণু গবেষণাগারই করোনার উৎস- এ ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। ট্রাম্প অন্য অনেক বিষয়ের মতো এ ইস্যুতেও বিনা প্রমাণে প্রতিপক্ষকে চেয়েছেন জব্দ করতে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা