২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসলামী মূল্যবোধ-৪

ইসলামী মূল্যবোধ-৪ - ছবি : নয়া দিগন্ত

আমরা এই সিরিজের চতুর্থ লেখায় আছি। এতেও আমি কয়েকটি ইসলামী মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোচনা করব এবং এই প্রসঙ্গে আমাদের দায়িত্ব কী, প্রশাসনের দায়িত্ব কী তা আলোচনা করব।

১. আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসায় কয়েদিদের সাহায্য করা। (সূরা দাহার, আয়াত নং-৮) কয়েদিদের জন্য আরবি শব্দ আসির। আল্লাহ তায়ালা তার ভালোবাসায় এতিমদের, মিসকিনদের ও কয়েদিদের খাবার খাওয়াতে বলেছেন। এখানে খাবার খাওয়ানোর অর্থ নিতে হবে কয়েদিদের সর্বউপায়ে সাহায্য করা।

কুরআন যখন নাজিল হচ্ছিল তখন আরব দেশে জেলখানা ছিল না। জেলখানার রেওয়াজ পরে হয় তখন কয়েদিদের ব্যক্তির হাতে সোপর্দ করা হতো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা কয়েদিদের খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত নেক কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এখন সারা দুনিয়াতে কয়েদিদের কারো কাছে ব্যক্তিগতভাবে সোপর্দ করা হয় না। কয়েদিদের এখন হাজতি হোক বা দণ্ডপ্রাপ্ত হোক, জেলখানায় রাখা হয়। সুতরাং আজকে কয়েদিদের কিভাবে সাহায্য করতে হবে তা আমাদের বুঝে নিতে হবে।

আমি আমাদের দেশের কথা বলছি। এখানে অনেক বানোয়াট মামলা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য রাজনৈতিক কারণে হোক কিংবা নিজেদের দুর্নীতির কারণে হোক, বানোয়াট মামলা তৈরি করেন, এদের গ্রেফতার করেন এবং জেলে রাখেন। আমাদের দেশের ওই সব জেলে থাকা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নির্দোষ। সুতরাং তাদের সাহায্য করা একান্ত জরুরি। কিভাবে তাদের সাহায্য করা যায়। একটি পথ হচ্ছে- তাদের জামিনের ব্যবস্থা করা। এ জন্য উকিল নিয়োগ করা এবং উকিলদের ফি দেয়া। কয়েদিদের সাহায্যের জন্য সংগঠন থাকতে পারে। বর্তমানে যেসব আইন সহায়তা সংস্থা আছে সেগুলোকে আরো বড় এবং ব্যাপক করা। সুতরাং এখানে সাহায্যের অর্থ হচ্ছে জামিন নেয়া, উকিল নিয়োগ এবং কোর্ট ফি এবং উকিলের খরচ বহন করা। এই কাজটি সবার হলেও, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির এলাকার সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের এই দায়িত্ব নেয়া প্রয়োজন।

সাহায্য করার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে এসব ব্যক্তির অনেকের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের সংসার দেখার কেউ থাকে না। ছেলেমেয়েদের দেখার কেউ নেই। এসব ব্যক্তির পরিবারের দেখভালের জন্য সহায়তা প্রদান করাও কয়েদিদের সাহায্যের অন্তর্ভুক্ত।

এ ব্যাপারের সরকারের দায়িত্ব আছে। কারণ আল্লাহ তায়ালার আদেশ সবার জন্যই প্রযোজ্য। বর্তমানে যেসব আইন আছে সেগুলোর মধ্যে যেগুলো সহজে গ্রেফতারের সুযোগ করে দেয়, সহজে রিমান্ড নেয়ার সুযোগ করে দেয় বা অন্যভাবে হয়রানির সুযোগ করে দেয়; এসবের পরিবর্তন করা দরকার। আইনের চেয়ে অসহায়দের জন্য বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে বিধিবিধান, সার্কুলার ইত্যাদি। এসবের রিভিউ করা দরকার। আসল কথা হচ্ছে- আইন ব্যবস্থাকে সার্বিকভাবে পুনর্মূল্যায়ন করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আইনে এবং রুলসে ব্যাপক পরিবর্তন আনা। কাজটি সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আমি আমার নিজের জীবনের একটি ঘটনা বলি। একজন সাবেক চিফ জাস্টিসের সাথে দেখা করে আইনের নামে যেসব অবিচার হচ্ছে তা উল্লেখ করেছিলাম। সব কিছু শোনার পর তিনি বলেন, আইন ঠিক আছে; সব গোলমাল হচ্ছে প্রয়োগে। তখন আমি তাকে বলেছিলাম- আইনের প্রয়োগে জুলুম করার সুযোগ সৃষ্টি হয়, সে আইনকে ভালো বলা যায় না। সে আইনকে বদলিয়ে এমন করা দরকার, যাতে অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা কমে যায়। তবে আমি স্বীকার করি, যত ভালো আইনই হোক প্রয়োগকারীরা যদি অসৎ হয় তবে কিছু না কিছু অন্যায়-অবিচার থেকেই যাবে।

২. আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের লক্ষ করে কুরআনে বলছেন ‘কুনতুম খাইরা উম্মাতিন, উখরিজাতমিন নাস’ (তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত) তোমাদের মানবজাতির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-১১০) এই ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের সারা মানবজাতির কল্যাণ করার দায়িত্ব দিচ্ছেন। সে সব জাতি কালো হোক কি সাদা, আরব হোক কি অনারব, খ্রিষ্টান হোক কিংবা হিন্দু হোক, মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম হোক। সবার কল্যাণ করার দায়িত্ব মুসলিমদের ওপর।
এই কল্যাণ কামনা কিভাবে করতে হবে। আমার মনে হয় গোটা মানব জাতির মধ্য থেকে দারিদ্য দূর করা। এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হতে হবে। তেমনি সারা বিশ্ব থেকে অশিক্ষা দূর করা তার আরেকটি লক্ষ্য হবে। সারা দুনিয়া থেকে জুলুম-অত্যাচার বন্ধ করা এর আরেকটি লক্ষ্য হবে।
আমি আশা করি, এই লেখা থেকে আপনারা সবাই উপকৃত হবেন। হ
লেখক : সাবেক সচিব বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল