করোনা : রোজা ও তারাবি
- মীযানুল করীম
- ০৩ মে ২০২০, ২০:৫৮
পবিত্র মাহে রমজান ক’দিন আগে যথারীতি শুরু হয়ে গেছে ইসলামের প্রাণকেন্দ্র মক্কা-মদিনাসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত এর একদিন পরেই রোজা রাখার সূচনা হয়ে থাকে। এবার একদিকে করোনার মহামারী, অন্যদিকে রমজান মাসব্যাপী সিয়ামসাধনার মহান ইবাদত। করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণে মক্কার হারাম শরিফ এবং মদিনার মসজিদে নববী পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। আগেই কাবা ঘরে নামাজ ও তাওয়াফসমেত উমরাহ হজ বন্ধ হয়ে গেছে। সৌদি রাষ্ট্রে চলছে কারফিউ এবং তা করা হচ্ছে জনগণের নিরাপত্তার জন্যই। অতীতের আরো ৪০ বারের মতো এবারও হজ পালিত না হওয়ার শঙ্কাই অধিক। রমজানের সময়ে তারাবির নামাজ মসজিদে নয়, ঘরে পড়ার নির্দেশনা রয়েছে। মসজিদের বদলে ঘরে সালাত বা নামাজ আদায় কিংবা প্রয়োজনে ঈদের জামাত ও কোলাকুলি পরিহার- এ সব কিছুই ব্যতিক্রম। তবে এগুলো ইসলামের পরিপন্থী নয়। এ কারণে আলেম সমাজ এসব ঘোষণার বিরোধিতা করেন না।
রোজার মাসটি তারাবি, সাহ্রি, সিয়াম, ইফতারসহ ইবাদত-বন্দেগির দ্বারা পরম করুণাময় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তোষ ও নৈকট্য হাসিলের সর্বাধিক গুরুত্ববহ উপলক্ষ। এ মাস বিশ্ব মুসলিমের জন্য যুগপৎ সাধনা ও আনন্দের সময়। তাই এটা একই সাথে সংগ্রাম ও উৎসব। করোনার করাল ছায়া যতই কালো ও ভীতিপ্রদ হোক, সব উদ্বেগ ও ভীতি জয় করে রমজানের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ মাসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের পরামর্শ দিয়েছে পৃথিবীতে মানবজাতির স্বাস্থ্য সুরক্ষার বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান এবং করোনাসহ নানাবিধ মহামারী মোকাবেলায় নিয়োজিত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জাতিসঙ্ঘের অঙ্গ-সংস্থাটি রোজাদারদের বলে দিয়েছে কিছু নিয়মকানুন পরিপালনের জন্য। স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিয়েছে, ক. যেকোনো সমাবেশ বা জমায়েত পরিহার করুন। কোনো জমায়েত ডাকবেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধর্মীয় সমাবেশও বাঞ্ছনীয় নয়। খ. ভার্চুয়াল জমায়েত করা যায় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। কথা হোক টেলিফোনে; সাক্ষাৎ করুন ভিডিও কলে। টিভির সামনে বাড়িতেই হোক ধর্মীয় জমায়েত। তাছাড়া, রেডিওতে ধর্মীয় বক্তব্য শোনা যেতে পারে। গ. ইফতারের দাওয়াত দেবেন না এবং নেবেন না। ঘ. করমর্দন কিংবা কোলাকুলি নয়। বরঞ্চ বুকে হাত দিয়ে অথবা হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। ঙ. বয়স্কদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ব্লাড প্রেশার ও ডায়াবেটিস রোগীদের চলতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক। চ. সবাই সচেতন থাকা চাই নিজ নিজ খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে। এমনভাবে খাবেন না যাতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যেতে হয় (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বর্তমান সময়ে কোনো রোগের ক্ষেত্রেই হাসপাতালে যাওয়া উচিত নয়)। ছ. তারাবিসহ সব নামাজ ঘরেই আদায় করুন। জ. জাকাত দেয়া কিংবা দান করার সময়ে সোশ্যাল ডিসট্যান্স বজায় রাখতে হবে। ইফতার মাহফিলের পরিবর্তে খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা যায়।
সৌদি আরবে যদিও করোনোভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে কয়েক দিন আগে মক্কার বায়তুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববী বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, রমজানে তারাবির জামাতের জন্য বিশ্ব মুসলিমের এই দুটি প্রধান মসজিদ খোলার অনুমতি দিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। অন্যথায়, গত আড়াই শ’ বছরে এবার প্রথম রেকর্ড প্রতিষ্ঠিত হতো রোজার মাসেও ইসলামের সর্বাধিক পবিত্র দুই মসজিদে নামাজ পড়া বন্ধ রাখার কারণে। রমজানের আগে বেশ কয়েক দিন মসজিদ দুটিতে সময়মতো আজান হলেও নামাজ পড়া হয়নি।
একটি পত্রিকার ভাষায়, রোজা মানেই সৌদি আরবে ভিন্ন কিছু। সাহরি আর ইফতারকে ঘিরে ব্যাপক আয়োজন। মসজিদগুলোতে তারাবি নামাজের জন্য বিশেষ প্রস্তুতি। বড় বড় প্রতিষ্ঠান আর ধনাঢ্য ব্যক্তিদের উদ্যোগে জায়গায় জায়গায় তাঁবু খাটিয়ে রোজাদারদের ইফতারের আয়োজন। মক্কা-মদিনার পবিত্র দুই মসজিদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইফতার আয়োজন। সারারাত কর্মতৎপরতা। ফজরের নামাজ পড়ে জোহর পর্যন্ত ঘুম, রাস্তাঘাট আর বিপণিবিতানগুলোতে বর্ণিল আলোকসজ্জা। শপিংমলগুলোতে ডিসকাউন্টের ছড়াছড়ি।
পত্রিকাটির সৌদি প্রতিনিধি আরো বলেছেন, ইতিহাস আর ঐতিহ্য ধরে রেখে রোজা পালনের সব পরিকল্পনা আর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে করোনাভাইরাস মহামারী। রাষ্ট্রীয়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে মসজিদে নামাজ আদায়। গণজমায়েত এড়িয়ে বাসায় ইফতার আয়োজনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে ইফতারের যে আয়োজন রাষ্ট্র করে থাকে, সেটি এবার বিতরণ করা হবে দুই শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে। সৌদি আরবে দুই দশক ধরে প্রবাসী, এমন একজন বাংলাদেশী আলেম বলেছেন, ‘রমজানে সবাই মিলে একসঙ্গে সাহরি-ইফতার করা হতো। এবার করোনার কারণে একা সাহরি, ইফতার ও তারাবি আদায় করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা, রমজানকে উছিলা করে মহামারী থেকে সবাইকে বাঁচান।’ উল্লেখ্য, করোনা বিপর্যয়ে কড়াকড়িতে অনেক বাংলাদেশীসহ প্রবাসী বহু মানুষের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।
পাকিস্তান রোজার মাসে লকডাউনের কঠোরতা ত্যাগ করেছে। অথচ দেশটিতে কয়েক দিন আগেও ছিল এ ব্যাপারে বেজায় কড়াকড়ি। তখন অনেক ইমাম-মুয়াজ্জিন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার দরুণ। তবে মাহে রমজানে মসজিদে নামাজ আদায়ের অনুমতি দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। অবশ্য, সারা দেশে বলবৎ থাকবে করোনার বিস্তাররোধে লকডাউনের অন্যান্য কড়াকড়ি। রোজার মাসে মুসল্লিদের ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতে হবে। প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি ১৯ এপ্রিল এক ঘোষণার মাধ্যমে এটা জানালেন। দেশটির ধর্মীয় নেতারা রমজানে মসজিদে নামাজের অনুমতিদানের দাবি করে আসছিলেন। এ প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্টের সাথে তাদের আলোচনা হয়েছে। তিনি ২০ দফা কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছেন এ বিষয়ে।
এ দিকে, পাকিস্তানে মসজিদে নামাজের অনুমতি দানের পরদিন, ২১ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে সে দেশে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, তাদের সংখ্যা ৭৯৬। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জনগণের সহায়তা কামনা করেছেন। পাকিস্তানে মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হন ৯ হাজার ২১৬ জন আর মৃত্যু ঘটে কমপক্ষে ১৯২ জনের। গত ১৫ এপ্রিলের পর থেকে প্রতিদিন ছয় হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বশেষ, দেশটির স্পিকারও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়।
মাহে রমজানের দিনে বিশেষত হৃদরোগীরা খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। সাধারণত প্রচলিত ইফতারসামগ্রীর অনেক আইটেমই হৃদরোগের জন্য ক্ষতিকর। ছোলা, বেগুনি, পেঁয়াজু, পাকোড়া, জিলাপি প্রভৃতি হৃৎপিণ্ডের রোগীদের জন্য কিছুটা হলেও ক্ষতিকর। তাই তারা তেলেভাজা খাবার যথাসাধ্য কম খেয়ে বেশি গ্রহণ করা দরকার ফল ও সবজিজাতীয় খাদ্য। যেমন- তরমুজ, আপেল, কমলা, নাশপাতি, পেয়ারা, বেল, লিচু, টমেটো, শসা, ক্ষীরা, প্রভৃতি। সুষম খাদ্যের বিষয়ে প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। রোজার সময় পায়েশ, ফিরনি, তেহারি, বিরিয়ানি, ভুনা খিচুড়ি, কোরমা, পোলাও, রোস্ট, রেজালা, মিষ্টি, দই ইত্যাদির মধ্যে দু-একটির বেশি আইটেম প্রতিদিন একসাথে খাওয়া অনুচিত। আর তা খেলেও খুব বেশি না খাওয়াই উত্তম। ইফতারে ছোলা-পেঁয়াজু খেলে সে দিন যেন বেগুনি-জিলাপি পরিহার করা হয়। আবার রাতের বেলায় বিরিয়ানি খেলে কোরমা-পোলাও, দই-মিষ্টি, রোস্ট-রেজালা না খাওয়াই উচিত। অন্যথায় বিশেষ করে হৃদরোগী খাবারের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বেন। রোজার দিন বলে যথেচ্ছ খেয়ে হজমি শক্তিকে ক্ষুণ্ন করা যাবে না। প্রতিদিন যতটা শক্তি বা ক্যালরি দরকার, তা সংগ্রহ করার মতো খাবারই যথেষ্ট। এ অবস্থায়, গৃহীত খাদ্যের পুরোটাই দেহের জন্য খরচ হয়ে যাবে।
একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক বলেছেন, খাদ্য গ্রহণের মাত্রা পরিমিত কি না, তা বুঝতে হলে দেখতে হবেÑ দেহের ওজন একই রকম আছে কি না। ওজন বাড়লে ধরে নিতে হবে, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তেমনি, ওজন কমে গেলে বুঝতে হবে, অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ করা হয়েছে। হ
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা