২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ইসলামী মূল্যবোধ-২

-

আগের লেখায় বলেছিলাম যে, মুসলিম জাতি ও ব্যক্তির আখলাকের বা বিস্তারিত আচরণের ভিত্তি হচ্ছে ইসলামী মূল্যবোধ। কুরআন ও সুন্নায় শতাধিক মূল্যবোধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সংখ্যায় আমি পাঁচটি মূল্যবোধের কথা উল্লেখ করেছিলাম। আজ আরো কয়েকটি ইসলামী মূল্যবোধের উল্লেখ করছি :

১. পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ বা ভালো ব্যবহার : পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের কথা কুরআনের অনেক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। উদাহরণত সূরা বনি ইসরাঈলের কথা উল্লেখ করা যায়। সে আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের ইবাদতের পরেই পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের কথা বলেছেন। এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ।

পাশ্চাত্যে পরিবার ভেঙে যাওয়ার ফলে পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ নেই বললেই চলে। মুসলিম বিশ্বে এখনো পরিবার ভেঙে যায়নি। ফলে কিছু-না-কিছু সদাচরণ আছে। কিন্তু অনেকে পিতা-মাতাকে অবহেলা করেন। নিজের সঙ্গে রাখেন না। অনেকে পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো কোনো মতেই উচিত নয়।

২. সৎ কাজের আদেশ, মন্দ কাজের নিষেধ (আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার) এই মূল্যবোধটি কুরআনের অনেক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, সূরা তাওবার ৭১ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামী সমাজকে সঠিকপথে রাখার জন্য এটা হচ্ছে আল্লাহর দেয়া পদ্ধতি। এ পদ্ধতির অর্থ হচ্ছে যে সমাজে সৎ কাজের আদেশ অধিকাংশ লোক দিতে থাকবে এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতে থাকবে সে সমাজ খারাপ হতে পারবে না। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের অধিকাংশ লোক এটা করছি না। আমাদের এই ত্রুটি দূর করতে হবে। যদি ব্যক্তি পর্যায়ে এটি ব্যাপকভাবে চর্চিত হয় তাহলে সরকার যা-ই করুক না কেন সমাজ ভালো থাকবে। সূরা হজের ৪১ নং আয়াতে এটাকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৩. আদল বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কথা কুরআনের অনেক জায়গায় বলা হয়েছে। দ্রষ্টব্য সূরা নাহল ৯০ আয়াত। ইসলামে তাওহিদের পরে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে আদল বা ইনসাফের প্রতিষ্ঠা করা। এটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সব ক্ষেত্রে- রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, সমাজের ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, ব্যক্তিপর্যায়ে, সামষ্টিক পর্যায়ে। ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। যার অন্য নাম বলা যায় কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

৪. ইহসান বা সর্বক্ষেত্রে সদ্ব্যবহার প্রতিষ্ঠা করা : ইহসানের কথা সূরা নাহলের ৯০ নং আয়াতে আদলের পরেই উল্লেখ করা হয়েছে। আয়াতটি এরকম যে, আল্লাহ তোমাদের আদেশ করছেন সুবিচারের ব্যাপারে এবং ইহসানের ব্যাপারে। আল্লাহ আদেশ করেছেন মানে এটা ফরজ। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের ব্যবহার ভালো নয়। এটা দূর হওয়া দরকার। সদ্ব্যবহার হতে হবে সর্বক্ষেত্রে। সে নিজের দেশের লোক হোক বা অন্য দেশের বা নিজের ধর্মের লোক হোক বা অন্য ধর্মের, নিজের এলাকার হোক বা অন্য এলাকার। আমি আশা করি, আমরা আমাদের ব্যবহার উন্নত করব।

৫. ওয়াদা রক্ষা করা : কুরআনের অনেক জায়গায় ওয়াদা রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। যেমন সূরা মুমিনুনের প্রথম রুকুতে এ কথা বলা হয়েছে। ওয়াদা রক্ষা করতে না পারলে ওয়াদা করা উচিত নয়। ওয়াদা ভঙ্গ করলে গোনাহগার হতে হয়। আসুন আমরা ওয়াদা পালনের ক্ষেত্রে সতর্ক হই।

৬. আমানতের খেয়ানত না করা : আমানত অর্থ কোনো বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণ বা দায়িত্ব পাওয়া। আমানতের খেয়ানত করা কবিরা গোনাহ। এই আমানতের রক্ষা করার কথাও কুরআনের অনেক জায়গাতে বলা হয়েছে, যেমন, সূরা মুমিনুলের প্রথম রুকু। আমরা যে ভোট দিই এটাও একটা আমানত। ইসলামের শিক্ষামতে ভোট যোগ্য ব্যক্তিদের দেয়া উচিত বা দায়িত্ব, যোগ্য ব্যক্তিকে দেয়া উচিত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ যদি কিছু টাকা বা সম্পদ আমানত রাখে তাহলে তা ভালোভাবে রক্ষা করা এবং পরে ফিরিয়ে দেয়া জরুরি, বলা যায় ফরজ।

উপরের মূল্যবোধগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো সবারই উচিত অনুসরণ করা। আমি আশা করি, যারা এই লেখা পড়বেন তারা এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেবেন।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
বছরে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের দাবি বাংলাদেশ অরবিসের সাথে কাজ করতে আগ্রহী : অধ্যাপক ইউনূস ঢাবি সিন্ডিকেটে এখনো বহাল আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হাসিনা বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করতে দিগন্ত টেলিভিশনসহ অসংখ্য গণমাধ্যম বন্ধ করেছে : ফখরুল শীত শুরু হচ্ছে তবু কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যয়বহুল তদন্তেও শনাক্ত হয়নি লাশটি কার ‘রহস্যজনক’ কারণে নেয়া হয়নি ডিএনএ নমুনা নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন যুদ্ধবিরতির মার্কিন চেষ্টার মধ্যে লেবাননে ইসরাইলি হামলায় চিকিৎসাকর্মী নিহত অস্বস্তিতে ক্রেতারা : কমিয়ে দিতে হচ্ছে কেনাকাটা গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪৪ হাজার ছাড়াল আমরা মানুষের সম্মিলিত প্রজ্ঞাকে সম্মান করি

সকল